![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের একের পর এক শীর্ষ নেতার সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে। অপরদিকে দলের সাবেক আমির ও আধ্যাত্মিক নেতা গোলাম আযমের মৃত্যুতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে দলের নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কা তো রয়েছেই। খাতাকলমে নিষিদ্ধ না হলেও সারা দেশে সংগঠনটির প্রায় সব কার্যালয় কার্যত বন্ধ রয়েছে। ১৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে জামায়াত নিষিদ্ধের বিল। এই বিল পাস হলে জামায়াত চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে।
জামায়াত নেতাদের মতে, এর আগে এমন দুঃসময়ের মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দী রয়েছেন। হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। দলের কঠিন দুঃসময়ে ইসলামপন্থি অন্য দলগুলোও পাশে নেই। এমনকি যে ২০ দলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জামায়াতে ইসলামী সেই জোটের প্রধান দল বিএনপিও তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শোক জানানো হয়নি। গোলাম আযমের বাসায় কেউ যাননি। এমনকি তার জানাজা অনুষ্ঠানেও শরিক হননি বিএনপি নেতারা। গোলাম আযমের মৃত্যুতে বিএনপির চুপ থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা চরমভাবে নাখোশ। প্রথম থেকেই জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে না। এমনকি এ ইস্যুতে তাদের ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থনও মিলছে না বিএনপির কাছ থেকে। অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে বিএনপিকে পাশে না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, আমাদের কঠিন দুঃসময় চলছে। আর এ দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। জামায়াত এককভাবে আন্দোলন করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবে না। এ জন্য চাই বিএনপির সহযোগিতা। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকেও আন্দোলনের কোনো সাড়া মিলছে না। আমাদের কোনো কর্মসূচিতেই বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোট এগিয়ে আসছে না। জানা গেছে, দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়ানোয় ক্রমান্বয়ে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপির একটি অংশও জামায়াতকে ত্যাগ করে আসার জন্য নীতিনির্ধারকদের চাপ দিচ্ছে। আবার আরেক অংশ মনে করছে, জামায়াতকে এ মুহূর্তে ছেড়ে গেলে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হবে। এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির এমন সিদ্ধান্তে জামায়াত নাখোশ।
সূত্রমতে, অনেকটা হতাশা থেকেই আগের মতো হরতাল কর্মসূচিতে মাঠে নামছেন না জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বশেষ দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা হরতাল কর্মসূচিও ছিল জামায়াতের। কিন্তু আগের মতো মাঠে ছিলেন না নেতা-কর্মীরা। গত সপ্তাহে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। যে কোনো দিন কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হতে পারে। ইতিমধ্যে সরকার যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অনেকের রায় অপেক্ষমাণ। এ অবস্থায় মানসিক ও সাংগঠনিক বিপর্যয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে জামায়াতের ডাকা হরতালে। আগের মতো আর মাঠে নামছেন না নেতা-কর্মীরা।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় জামায়াত। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের নামে-বেনামে বিদ্যমান অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কা। দলীয় তহবিল যাদের হাতে ছিল তাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেফতার ও দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে নেতা-কর্মীরা অনেক আগেই দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ করেছেন। এখন অনলাইন আর বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। গোপন স্থান থেকে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি, বিবৃতি পাঠাচ্ছেন। অফিস ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ড বা গোপন জায়গা থেকে পরিচালিত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পল্টনে মহানগর ও শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ।এদিকে মামলার জালে আটক জামায়াতের হাজার হাজার নেতা-কর্মী। দলের ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১২ জন কারাগারে। সাতজন বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে। বাকি দুজনের একজন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক প্রায় এক বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। আরেকজন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাছের মো. আবদুজ জাহের দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রয়েছেন। দলের ঢাকা মহানগর কমিটির সবাই ফেরার। আত্মগোপনে থেকে দল চালাচ্ছেন মধ্যম সারির নেতারা। দলের নেতাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকেই পরিচালনা হচ্ছে দল। জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে এখন হরতালসহ যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে তা শুধুই নিয়ম রক্ষার। ধীরে চলার কৌশল অবলম্বনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যেহেতু আগের সেই সাংগঠনিক শক্তি এখন আর নেই, তাই এ মুহূর্তে শক্তিক্ষয় করে আন্দোলন করার পক্ষপাতী নন তারা।
‘জামায়াত আদালতের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকেনি’ : জামায়াতে ইসলামী আদালতের বিরুদ্ধে কখনো হরতাল ডাকেনি বা এ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্যও দেয়নি বলে দাবি করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহকারী মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক ধারার শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দেশের আইন ও আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯
কিবর বলেছেন: গোলাম আযমের মৃত্যুতে যতটা না জামাত বিচলিত তার চেয়ে বেশী আপনারদের মাথা খারা হয়ে গিয়েছে, কারণ রাজনীতি করার একটা অবলম্বন হারালেন।