![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল দুপুর ২টা। ফার্মগেট ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের দক্ষিণ পাশের সড়কে প্রচুর গাড়ি চলছে। ব্যস্ত মানুষও ছুটছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। ফুটপাত দিয়ে ছুটছেন গার্মেন্ট কর্মীরাও দল বেঁধে। অদূরেই সংসদ ভবন, ন্যাম ভবন, আর টেলিফোন ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অবরোধে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে সেখানে। হঠাৎ বোমার বিকট শব্দ। রাস্তা থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি পাকিয়ে ওপরের দিকে উঠছে। মুহূর্ত নীরবতা। এর পরই ছোটাছুটি। লোকজন যে যেভাবে পারছেন, ছুটছেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আরও তিনটি বোমার বিস্ফোরণ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। রাস্তা তখন পুরো ফাঁকা। শুধু নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেলে করে দুই যুবককে দ্রুত পালাতে দেখা গেল। ঢুুকে পড়ল তারা রাজাবাজারের গলির ভিতর। গত পরশু মঙ্গলবার রাত ৮টা। গুলশান দুই নম্বর গোলচত্বর। অবরোধ চলাকালে রাস্তায় গাড়ি চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। পথচারীরা ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। খোলা দোকানগুলোতে মানুষের জটলা। রাস্তায় পুলিশের টহল। বিপণিবিতান ও রাস্তাতেও প্রচুর পুলিশ। এরই মধ্যে হঠাৎ পাশের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের ঠিক সামনেই ‘ধুম ধুম’ বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হলো। কান ফাটানো শব্দে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আতঙ্কে দিগিবিদিক ছোটাছুটি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের সামনে সরকারি একটি বাস যানজটে আটকে যায়। হঠাৎ কোথা থেকে দৌড়ে এলো ৭-৮ যুবক। বাসে ওঠেই পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে বাস। যুবকরা হাওয়া। রাজধানীতে হঠাৎ এমন চোরাগোপ্তা হামলা শুরু হয়েছে। দিনের বেলায় বিচ্ছিন্নভাবে এসব হামলা চললেও সন্ধ্যার পর এর মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণে। কোথাও পেট্রল বোমা, আবার কোথাও ককটেল বোমায় হামলা হচ্ছে। ঝটিকা মিছিল নিয়ে রাজপথে বেরিয়েই দুর্বৃত্তরা যাত্রীবাহী যানবাহনে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন নগরবাসী। বাসা থেকে বের হওয়ার পর অক্ষত অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারবেন কিনা এ নিয়ে দুর্ভাবনার অন্ত নেই সাধারণ মানুষের। কেবল তাই নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও রয়েছেন বিপাকে। এরই মধ্যে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের শিকার হয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এসব চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। এদিকে রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ের ভিতরে তিনটি ককটেল ছোড়ে অজ্ঞাতরা।
গতকাল রাত পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে শতাধিক স্থানে চোরাগোপ্তা বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। একই সময়ে অন্তত ২০টি যানবাহনে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সহিংসতার এই আগুনে পুড়ে দগ্ধ ব্যক্তিরা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। হামলাকারীদের কেউ গ্রেফতার না হলেও পুলিশ বলছে এরা অবরোধ কর্মসূচি পালনকারী বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী। হামলা চালিয়েই তারা পালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তাদের ধরা যাচ্ছে না। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোয়েন্দা কার্যক্রমে অবশ্যই গাফিলতি রয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা হয়তো প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হচ্ছেন না। নইলে এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অপরাধ বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ২০১৩ সাল থেকেই মূলত সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের দেশ। এখন হরহামেশাই পেট্রল বোমা, ককটেলের ব্যবহার হচ্ছে। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না হাসপাতাল কিংবা গণমাধ্যমের গাড়িকেও। তুলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে ট্রেনের ফিশপ্লেট। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি আরও বলেন, সভাসমাবেশ করার অধিকার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত। এখন যদি বিরোধী দলকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় তখন তো তারা আত্মগোপনে থেকে চোরাগোপ্তা হামলার দিকে যাবে। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কোনোভাবেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হওয়া উচিত হবে না। নইলে জনগণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিরোধের বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ককটেল ও বোমা তৈরির কারিগরদের অতীতে আমরা গ্রেফতার করেছিলাম। সম্প্রতি অবরোধ শুরুর আগেও আমরা ককটেলসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলার প্রতিরোধে টহল টিমসহ সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানিকারক এবং বিক্রেতাদের ওপর বিশেষ নজরদারি রয়েছে।এক ঘণ্টায় ৬ গাড়িতে আগুন, বোমাবাজি : গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে গতকাল এক ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে ৬টি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যায় মিরপুর, পল্টন, শ্যামপুর, বাড্ডা, আজিমপুর এবং সদরঘাট এলাকায় ৫টি বাস এবং একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। একের পর এক বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সন্ধ্যার পর রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে এসব গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিজিবি বা পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ের ডিউটি অফিসার নাজমা আক্তার জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। এর কিছুক্ষণ পর পল্টনের ক্রীড়া ভবনের সামনে একটি বাসে, আজিমপুরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি মিনিবাসে পেট্রল দিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মধ্যবাড্ডা এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মিরপুরের ১১ নম্বরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিলে যাত্রীরা দ্রুত নেমে যায়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া রাজধানীর অন্তত ৩০টি স্থানে গতকাল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে।
২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৬
নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: পুলিশ যদি দেখামাত্র গুলি না করত, তাহলে এরকম চোরাগুপ্তা হামলা হোত না বলেই আমার বিশ্বাস
৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১০
আমিনুর রহমান বলেছেন:
পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ানক হয়ে পড়ছে। যদিও আমাদের রাজনৈতিক কোন দলের প্রতি আমার সমর্থন আর বিশ্বাস নেই শুধু একটাই আশা করি তাদের কাছে ঘর থেকে বের হয়ে যেনো লাশ হয়ে ফিরে আস্তে না হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২২
খেলাঘর বলেছেন:
এরা মোটামুটি শিবির; কিছু বিএনপি'র।
কিছু অংশ ভাড়া করা সন্ত্রাসী।
আওয়ামী লীগ কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে: এরা নানক, মায়া, শামীম ওসমান, হানিফ, নাসিমদের সন্ত্রাসী।