![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেস সদস্যের স্বাক্ষর-সংবলিত বিবৃতি তৈরি করেছে স্বার্থান্বেষী একটি পক্ষ। ওই বিবৃতি লন্ডনের একটি পত্রিকার অনলাইনে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমও তা প্রকাশ করে। তবে গতকাল শুক্রবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও র্যাংকিং সদস্য এলিয়ট ইঙ্গেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলেও কোনো বিবৃতি তাঁরা দেননি। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে ভুয়া বিবৃতি তৈরি করে কোনো দলের ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশিদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ ও সংলাপের আহ্বান-সংবলিত বক্তব্য-বিবৃতির খোঁজে একটি রাজনৈতিক পক্ষ জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ওই বিবৃতি-জালিয়াতির ঘটনা রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এদিকে গতকাল রাত ১১টার দিকে লন্ডনের ওই পত্রিকাটি ওই খবর প্রত্যাহার করে জালিয়াতির শিকার হওয়ার কথা জানায়। পরিবর্তিত প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জ্যেষ্ঠ সহকারী হুমায়ুন কবির পত্রিকাটিকে ওই ভুয়া বিবৃতি সরবরাহ করেন। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর হুমায়ুন কবির ওই পত্রিকাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি গতকাল এ বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর তাঁর দল বিএনপি তদন্ত শুরু করেছে। কবির এ ঘটনাকে ‘বিব্রতকর’ উল্লেখ করে তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন করে তাঁর অসুস্থতার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন বলে বিএনপি যে তথ্য দিয়েছিল তাও সঠিক নয় বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানান, খালেদাকে অমিত শাহর ফোন করার খবর মিথ্যা ও বানোয়াট। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফও গতকাল সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অমিত শাহ বিএনপি চেয়ারপারসনকে কোনো টেলিফোন করেননি। তবে খালেদা জিয়া ও অমিত শাহর ফোনালাপ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা উদ্দেশ্যমূলক বলে গতকাল জানিয়েছেন মারুফ কামাল খান সোহেল। এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে সবাইকে আবারও জানাতে চাই, সংবাদমাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক।
লন্ডনের গণমাধ্যমে ভুয়া বিবৃতি : বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেস সদস্যের নামে ভুয়া বিবৃতিটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় দৃশ্যত লন্ডন থেকে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস ইউকের অনলাইনে গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ১টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে) “ইউএস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি ‘স্ট্রংলি কনডেমন্স’ বাংলাদেশ পুলিশ ক্র্যাকডাউন” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও আরো পাঁচ কংগ্রেস সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর বলপ্রয়োগ, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ রাজনৈতিক অচলাবস্থায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রতিবেদনটির সঙ্গে ছয় কংগ্রেস সদস্য স্বাক্ষরিত ভুয়া বিবৃতিটিও প্রকাশ করা হয়।
গত ৭ জানুয়ারি তারিখ উল্লেখ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস, কংগ্রেস সদস্য এলিয়ট ইঙ্গেল, স্টিভ শ্যাবট, জোসেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং ও গ্রেস মেঙের নাম ও স্বাক্ষর সংযুক্ত করে তৈরি ভুয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়।
তাতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সম্পর্কের ভিত্তি বন্ধুত্ব, গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘জ্যেষ্ঠ বিরোধী নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশ না করতে আদালতের নির্দেশনা এবং গণমাধ্যমের ওপর অবৈধ সেন্সরশিপ আরোপের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।’
ভুয়া বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হয়। বলা হয়, কয়েক দিন ধরে খালেদা জিয়াকে ‘অবৈধভাবে’ আটকে রাখার ঘটনায় ওই ছয় কংগ্রেস সদস্য উদ্বিগ্ন। ভুয়া বিবৃতিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে সংঘাত-সহিংসতা বাড়বে বলে ছয় কংগ্রেস সদস্যের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে আগামীতেও নজর রাখার কথা বলা হয়।
এড রয়েস ও এলিয়ট ইঙ্গেলের নাকচ : ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসে ছয় কংগ্রেস সদস্যের বিবৃতি প্রকাশের পরও যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বা এর কোনো সদস্যের ওয়েবসাইটে ওই বিবৃতি ছিল না। গতকাল শুক্রবার ভোরের দিকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির ওয়েবসাইটে চেয়ারম্যান এড রয়েস ও র্যাংকিং সদস্য এলিয়ট ইঙ্গেল বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের বিবৃতি জালিয়াতি করা হয়েছে বলে জানান। তাঁদের ওই বিবৃতির শিরোনাম ছিল- ‘বাংলাদেশ বিষয়ে সংবাদ বিবৃতি জালিয়াতি নিয়ে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি চেয়ারম্যান রয়েস ও র্যাংকিং সদস্য ইঙ্গেলের বিবৃতি।’
যুক্তরাষ্ট্র সময় গত ৮ জানুয়ারি ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে রয়েস ও ইঙ্গেল বলেন, বাংলাদেশি কয়েকটি গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও র্যাংকিং সদস্য এলিয়ট ইঙ্গেলসহ কংগ্রেস সদস্য স্টিভ শ্যাবট, জোসেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং ও গ্রেস মেঙের নামে ভুয়া বিবৃতির বরাত দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
রয়েস ও ইঙ্গেল বলেন, ‘কমিটি ও কংগ্রেসের অনেক সদস্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলেও কমিটি ও এর সদস্যরা এ ধরনের কোনো বিবৃতি দেননি। কোনো দল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে তৈরি ভুয়া বিবৃতি ব্যবহার করবে- এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
তারেকের সহকারীই ভুয়া বিবৃতির সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক ইয়ান সিলভেরার সঙ্গে গতকাল বিকেলে ই-মেইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একটি সূত্র তাঁকে ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিলেন। ওই ডকুমেন্টে কংগ্রেস সদস্যদের স্বাক্ষর রয়েছে। পরে রাত ১১টার দিকে ওই খবর প্রত্যাহার করে প্রকাশিত পরিবর্তিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারীর পাঠানো একটি ডকুমেন্টের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস ইউকে ৮ জানুয়ারি ‘ভুয়া’ খবর প্রকাশ করে।” প্রতিবেদনে এর পরের অংশেই তারেকের সহকারী হিসেবে হুমায়ুন কবিরের নামও স্থান পেয়েছে। ইয়ান সিলভেরা কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন, ওই হুমায়ুন কবিরই তাঁকে ভুয়া বিবৃতিটি দিয়েছেন।
এদিকে বিডিনিউজে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ভুয়া বিবৃতি প্রচারের জন্য দায়ী করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বৈদেশিক দূত জাহিদ এফ সরদার সাদীকে। বিডিনিউজ জানায়, জাহিদ এফ সরদার সাদী গত ৮ জানুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে (৬ জানুয়ারি) নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়। কংগ্রেস সদস্য হাকিম জেফরি বিষয়টি হাউসে উত্থাপন করেন। এ বিষয়টিও সত্য নয় বলে কংগ্রেস সদস্য হাকিম জেফরির কার্যালয় থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়েছে।
জাহিদ এফ সরদার সাদীর ফেসবুক পাতায় কংগ্রেসের একটি ‘বিশেষ বিবৃতি’ এবং উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের প্রতি ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ উচ্চারণের কথাও লেখা হয়েছে, যদিও তার কোনো সত্যতা মেলেনি।
বিডিনিউজ জানায়, জাহিদ এফ সরদার সাদী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাস করেন। ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে দুই ডজনের বেশি প্রতারণা মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে সাজাও খেটেছেন তিনি। অ্যারিজোনায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার একটি মামলার নথিতে দেখা গেছে, সাদী কখনো সর্দার জাহিদ ফারুক, কখনো সর্দার ফারুক, এস ফারুক, আবার কখনো ফারুক সর্দার নাম নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে এসেছেন। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁকে বিএনপির বৈদেশিক দূত এবং বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে নিউ ইয়র্ক বিএনপির নেতারা জানান।
এ রকম একজন ‘বিতর্কিত ব্যক্তিকে’ দলের বৈদেশিক দূত নিয়োগ দেওয়ায় দুই সপ্তাহ আগেই নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্ময় প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ সম্রাট। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আরেক নেতা মো. বশির বলেন, ‘এই ব্যক্তি কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করে ভুয়া বিবৃতি প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইমেজ ভূলুণ্ঠিত করল।’
অমিত শাহর ‘ফোন’ নিয়ে বিতর্ক : বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন- এমন খবর গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানের বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারুফ কামাল খান ফোনের বিষয়টি জানানোর পর বাংলাদেশের একাধিক সাংবাদিক বিজেপির মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর সত্যতা জানতে চান। সে সময় তাঁরা জানান, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। তবে ফোন করার বিষয়টি নাকচও করেননি তাঁরা।
গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানান, খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে অমিত শাহর কার্যালয়ে দুই দফা ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অমিত শাহ নয়, তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খালেদার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। ফোন নয়াদিল্লি থেকে আসেনি, বরং ঢাকা থেকে গেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফও গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অমিত শাহ বিএনপি চেয়ারপারসনকে কোনো টেলিফোন করেননি। হানিফ বলেন, ‘আমি নিজেও ভারতীয় হাইকমিশনে কথা বলেছিলাম। তারা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করেছে, অমিত শাহ বাংলাদেশে কারো কাছে কোনো টেলিফোন করেননি। বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস থেকে দুবার টেলিফোন করা হয়েছিল। ওনার টেলিফোন লাইন নষ্ট থাকার কারণে কোনো কথা হয়নি। অথচ এ ধরনের মিথ্যা একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হলো। এটা লজ্জার।’
এদিকে খালেদা জিয়া ও অমিত শাহর ফোনালাপ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন মারুফ কামাল খান সোহেল। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। তাতে বলা হয়, ‘দুই নেতার কুশলবিনিময় সম্পর্কে কতিপয় সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।’
মারুফ কামাল বলেন, ‘আমরা দৃঢ়তায় সঙ্গে সবাইকে আবারও জানাতে চাই, সংবাদমাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক। বিজেপিপ্রধান সরাসরি টেলিফোন আলাপে খালেদা জিয়ার কুশলাদি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। শ্রীযুক্ত অমিত শাহ কিংবা তাঁর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে এর সত্যতা নিরূপণ না করে অজ্ঞাতনামা কূটনৈতিক বা অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা খুবই অনভিপ্রেত।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্যাডে পাঠানো বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রতিবেশী দুই দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের প্রধানের মধ্যে টেলিফোন আলাপ একটি প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক ঘটনা এবং এ নিয়ে ভিত্তিহীন দাবির কোনো অবকাশ যেমন নেই, তেমনি এ সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টাও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিজেপি সভাপতির কথা হয়েছে, এটাই নির্ভেজাল সত্য।’ তিনি বলেন, ‘অমিত শাহর সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা হয়নি বলে যে কয়েকটি গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করছে, ক্ষমতাসীন মহল সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়ে এ নানামুখী মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবাসীকে এই মিথ্যাচার থেকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অমিত শাহর সামাজিক গণমাধ্যম টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, অমিত শাহ গত বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদ ও গতকাল শুক্রবার অন্ধ্র প্রদেশে ব্যস্ত সময় কাটান। ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রও অনানুষ্ঠানিকভাবে কালের কণ্ঠকে জানায়, অমিত শাহ দুই দিন ধরে দিল্লির বাইরে অবস্থান করছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় একাত্তর টেলিভিশন, বাংলানিউজসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অমিত শাহ ফোন করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নলিন এস কোহলি গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে একাত্তর টেলিভিশন ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে অমিত শাহর ফোন করার খবর সঠিক নয় বলে জানানো হয়। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ভারতীয় পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই ফোনের খবর নাকচ করে। দলটির প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রতিবেশী দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। এটি অনভিপ্রেত।
এদিক দায়িত্বশীল একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলানিউজ জানায়, ফোনালাপের বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ফোনের খবরটি মিথ্যা। বিজেপি সভাপতি খালেদা জিয়াকে ফোন করেননি, কথাও বলেননি।
বাংলানিউজ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে অমিত শাহর ফোনের খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার এ বিষয়ে অমিত শাহকে ফোন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। অমিত শাহ সুষমা স্বরাজকে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে তাঁর দপ্তরে দুই দফা ফোন গেছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
বাংলানিউজ জানায়, হাইকমিশন নিশ্চিত করেছে যে, অমিত শাহ কোনো ফোন করেননি এবং কথাও বলেননি।
প্রশ্নের মুখে দেশের ভাবমূর্তি : ভুয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘এ ধরনের ভুয়া বিবৃতি যেই তৈরি করুক না কেন তাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। জাতি হিসেবে আমাদের প্রতি তাঁদের আর বিশ্বাস, শ্রদ্ধা থাকবে না। তাঁরা মনে করবে, আমরা মিথ্যা বলি, জালিয়াতি করি।’
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের দুই পক্ষই অতিরঞ্জিত করছে। দেশে আমরা নিজেরা মারামারি করি। অন্তত বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, যে পত্রিকাটি ওই বিবৃতি ছেপেছে তারাই বলতে পারবে কোথা থেকে এটি পেয়েছে, কে দিয়েছে। সেটি কী মানের পত্রিকা, হলুদ সাংবাদিকতা করে কি না, তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য কী সেটিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। তারাই হয়তো এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে পারবে। তিনি আরো বলেন, বিদেশের সব পত্রিকার খবরই যে ঠিক তা নয়। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে অবশ্যই তা যাচাই করা উচিত।
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৪
নিলু বলেছেন: অপপ্রচারে তারা পারদর্শী , মজার ব্যাপার তা হোলও বি এন পি জোট ভারতকে পছন্দ করে না বলে যানা যায় , অথচ ভারত এর নেতা তাদের খোঁজ খবর নিয়েছে , এতে তাদের জোটের জামাতের কি গা জলে নি ? আবার দেখবেন সব কথা ভারতকে নিয়ে কিন্তু বার্মা নিয়ে তারা কোনও কথা বলে না , কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানরা অত্যাচারিত হচ্ছে দিনে দিনে , তারা চায় যে কোনও উপায়ে ক্ষমতা ।
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩১
যোগী বলেছেন:
বুঝলাম না খালেদা জিয়ারে ফোনটা দিল কে? আমি কিন্তু দেই নাই।
৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৭
নতুন বলেছেন: এরা জনগনকে কতটা বোকা ভাবে তা এই রকমের কাজে বোঝা যায়....
সময় পাল্টেছে... এখন সব তথ্যই সহজে পাওয়া যায়...
আর বিদেশি নেতার এতো গুরত্ব আমাদের নেতাদের কাছে??? আমিতো এই লোকের নাম এবারই শুনলাম...
৫| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৯
এই আমি সেই আমি বলেছেন: ফোনটা দিয়েছিল হান্নান শাহ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৩২
খেলাঘর বলেছেন:
তারেক জানে না?
তারেক হলো বাংগালী জাতির ভেতর সবচেয়ে বড় ডাকাত