![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের একমাত্র প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর কাকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিকেরা। যদিও এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, তবে উত্তরে মাহী বি চৌধুরীকে যাতে জোট সমর্থন না দেয়, সেটিই চাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তাদের বক্তব্য রাখছেন নেতারা।
বিএনপি ও জোট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, উত্তরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং চট্টগ্রামে এম মনজুর আলমকে দলীয় সমর্থনের বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু উত্তরে ‘নিজের ভুলের’ কারণে মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের পর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে বিএনপি। যদিও এই ভুলকে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত বলছেন। শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পেতে তার আপিল বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এখন প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কে বিএনপির সমর্থন পাচ্ছে, তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা হচ্ছে। তবে মিন্টুর জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে বিএনপি।
সূত্র জানিয়েছে, মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের পর মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দুজনকে বিবেচনায় রেখেছে বিএনপি জোট। এদের একজন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী, অন্যজন আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন ২০ দল নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ-কালের মধ্যেই ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী কে হচ্ছেন, তার ঘোষণা আসতে পারে।
যেমনটি বলছিলেন খালেদা জিয়ার পরামর্শক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি আদর্শ ঢাকা চাই। ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসকে বিএনপি সমর্থন দেওয়া চূড়ান্ত করেছে। উত্তরের বিষয়টি অর্থাৎ আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতার বাতিলের বিষয়টি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত জানার পর এ বিষয়ে বিএনপি কাকে সমর্থন দেবে তা ঠিক করবে।’
মিন্টুকে না পেলে দল কাকে সমর্থন দেবে তা দু-এক দিনের মধ্যে জানা যাবে বলে জানান ড. এমাজউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের জন্য আমাদের এবারের স্লোগান হচ্ছে- আমরা আদর্শ ঢাকা গড়তে চাই। একটি পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ঢাকা দেখতে চাই। এটা এখন সকলের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ঢাকার মানুষ এই নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
জোট সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিলের পর বিকল্প কাকে সমর্থন দেওয়া হবে তা নিয়ে ২০ দলে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। শরিকদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি বিকল্প ধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, মাহী বি চৌধুরী ২০ দলের কেউ নন। এ ছাড়া চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ও তার বাবা বি চৌধুরী ২০ দলের সঙ্গে নেই। বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরীকে ‘সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন জোটের অনেক শীর্ষ নেতা। বরং মিন্টু প্রার্থী হতে না পারলে তার ছেলে তাবিথ আউয়ালকে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান তারা। তাদের মতে, আবদুল আউয়াল মিন্টুর পরামর্শেই তার ছেলে মনোনয়ন কিনেছেন। তাই মিন্টু প্রার্থী হতে না পারলে তাবিথই তার বিকল্প হতে পারেন।
জানতে চাইলে ২০ দলের শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগবিরোধী চলমান আন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বে যখন বৃহত্তর জোট গঠন হলো, তখন ওনারা এলেন না। বললেন বিএনপি জোটে যুদ্ধাপরাধী দল (জামায়াত) আছে। তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসবেন না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে উঠতে পারলেন না, ওনাদের নাকি চরিত্র স্খলন ঘটবে। আর এখন মেয়র হওয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন লাগে?’
তিনি বলেন, ‘এটা অনৈতিকতা ও সুবিধাবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এই সকল সুবিধাবাদি রাজনীতিকেরাই রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট করেছে। আন্দোলনে নেই, কিন্তু ফসল খাবার সময় সামনে এসে দাঁড়ায়।’
জোটের আরেক শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মাহী বি চৌধুরী ২০ দলের কেউ না। ২০ দলের বাইরের কাউকে প্রার্থী হিসেবে এলডিপি সমর্থন করবে না, করতে পারে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০ দলের পক্ষ থেকে কাকে সমর্থন দেওয়া হবে, আর কাকে দেওয়া হবে না, তা জোটনেত্রীই (খালেদা জিয়া) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে শরিকদের মনের কথাগুলো তিনি ভেবে দেখবেন বলে আশা করি।’
ডেমোক্রেটিক লীগ- ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে মাহী বি চৌধুরীকে মেয়র পদে সমর্থন না জানানোর বিষয়ে মত দিয়েছেন।
সাইফুদ্দিন মনি বলেন, ‘মাহী বি চৌধুরী ২০ দলের কেউ নন। ২০০১ সালে যখন জাতীয়াতাবাদী শক্তি ক্ষমতায় গিয়েছিল, বি চৌধুরী সাহেব প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তখন তিনি জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তখন থেকেই তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিংক। বর্তমানে ২০ দলের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে, এর সঙ্গেও তাদের দল বিকল্প ধারার সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাকে মোবাইলে মেসেজ করে বিষয়টি জানিয়েছি। আর বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানকে মোবাইল ফোনে বলেছি।’
জোট সূত্র জানান, আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা হয়েছে জোটের মধ্যে। বিশেষ করে, কেন তিনি তার প্রার্থিতা ফরমে ঢাকা উত্তরের ভোটার নন, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে সমর্থনকারীর স্বাক্ষর নিলেন- এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হতে চেয়েছিলেন। তাই বিভক্ত ঢাকার মেয়র না হয়ে ছেলেকে সুযোগ করে দিতেই জেনেশুনে ভুলটি করেছেন। এদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের পর মাহী বি চৌধুরী ও তাবিথ আউয়ালের বিকল্প পাচ্ছে না ২০ দলীয় জোট। তাই কাকে সমর্থন দিলে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, এ নিয়ে খালেদা জিয়াসহ জোটের শীর্ষমহল দুই প্রার্থীর নানান দিক বিবেচনায় আনছেন।
জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ রাইজিংবিডিকে বলেন, উত্তরে জোট কাকে সমর্থন দেবে তা এখানো নিশ্চিত নয়। কারণ এখনো আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী হতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত হয়নি। তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটনেত্রী খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
http://www.risingbd.com/detailsnews.php?nssl=101372
©somewhere in net ltd.