নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোকা-আব্বাস দ্বন্দ্ব, নির্বাচনে তুমুল যুদ্ধ

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:২১


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। কারণ বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির পাশাপাশি আসন্ন সিটি নির্বাচনে দলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মির্জা আব্বাসের। আব্বাস নিজে ঢাকা দক্ষিণ এবং তাঁরই সমর্থক আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল ঢাকা উত্তরের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন। এতে প্রচ- ক্ষুব্ধ হয়েছেন খোকা এবং তাঁর সমর্থকরা। তাঁরা এই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দেবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে মাহী বি. চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি খোকার সমর্থক অনেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নির্বাচন না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা যায়, খোকা সমর্থকরা দক্ষিণে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক সদস্যসচিব আবদুস সালামকে। আর মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় উত্তরে তাঁদের সমর্থন ছিল মাহী বি. চৌধুরীর দিকে। শেষ পর্যন্ত দুটির কোনোটিই হয়নি। আব্বাস সমর্থকদেরই জয় হয়েছে। এতে নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ক্ষুব্ধ খোকা সমর্থকরা। খোকা সমর্থিত নেতা বলে পরিচিত সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে মুন্সী বজলুল বাছিত আনজু, আহসান উল্লাহ হাসান, আবদুল লতিফ, নবীউল্লাহ নবী, আজিজুল্লাহ আজিজ, এম এ সামাদ, মোবারক হোসেন, কাজী আবুল বাশার, শামীম পারভেজসহ বেশ কয়েকজন এবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা মহানগরীর নেতৃত্বে ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। পাশাপাশি প্রায় ৯ বছর তিনি ঢাকা সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সব মিলিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে মুক্তিযোদ্ধা খোকার ব্যাপক অনুসারী ও সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে বলে মনে করা হয়। আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১৮ জুলাই খোকাকে সরিয়ে তাঁর বদলে মহানগর কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মির্জা আব্বাসকে। আবদুল আউয়াল মিন্টুকে করা হয় ওই কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থানকারী সাদেক হোসেন খোকা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দল যা ভালো মনে করেছে, তাই করেছে। এ নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।’ খোকা সমর্থক বলে পরিচিত মহানগরীর আরেক প্রভাবশালী নেতা আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথমে আমাকে দল থেকে মনোনয়নপত্র কিনতে বলা হলেও পরে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নির্দেশে তা প্রত্যাহার করি। তিনি যা ভালো মনে করেছেন, তাই করেছেন। এতে দলের ভালো হলেই ভালো।’
এদিকে খোকা সমর্থক বলে পরিচিত মহানগরীর একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তাঁরা এই নির্বাচনে নেই। কারণ জানতে চাইলে ওই নেতারা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে মির্জা আব্বাসের একক রাজনীতি চলছে। কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও কোনো লাভ নেই।’ অনেকে এমনও বলেন, তাঁরা ভোটকেন্দ্রেও যাবেন না।
এদিকে মির্জা আব্বাস ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। গতকাল পর্যন্ত তাঁরা আত্মগোপনেই ছিলেন। তবে মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে বিএনপির মহানগরী কিংবা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মেরুকরণের বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। এ ছাড়া আমি একজন নবীন ও বলতে পারেন ‘ইনোসেন্ট’ প্রার্থী। ফলে অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণ রাজনীতির স্বীকার আমি হতে চাই না। আমি সবার দোয়া প্রার্থী।’ জানা যায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে তেমন কারো আগ্রহ ছিল না। ওই অবস্থায় সাদেক হোসেন খোকার নির্দেশে মনোনয়নপত্র কেনেন সালাম। কিন্তু ‘সালাম মেয়র হওয়ার অর্থ খোকার জয়’ এমনটা মনে করেই মনোনয়ন কেনেন তাঁর চিরবৈরী মির্জা আব্বাস। এদিকে আব্বাসের ঘোরতর সমর্থক আবদুল আউয়াল মিন্টু মনোনয়নপত্র কেনেন ঢাকা উত্তর থেকে। কিন্তু আইনগত ছোট একটি ভুলের কারণে মিন্টুর মনোয়নপত্র নির্বাচন কমিশন বাতিল ঘোষণা করলে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কে নির্বাচন করবে- এ প্রশ্ন উঠতে থাকে। আর ওই রকম অবস্থায়ই আলোচনা ও গুঞ্জনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরীর নাম। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মাহী বর্তমানে বিএনপির কোনো পদে নেই। তিনি বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব। তবে ওই সময় মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের নাম তেমন আলোচনায় আসেনি। তাঁরও বিএনপির কোনো প্রাথমিক সদস্য পদ নেই। বিএনপির সমর্থন পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাবিথ বা তাঁর পরিবারের কেউ ঘোষণাও করেননি যে তাবিথ নির্বাচন করতে আগ্রহী।
সূত্র মতে, মনোনয়নপত্র বৈধ করার জন্য মিন্টু পরিবারের সদস্যরা ২ এপ্রিল থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন। আর ওই সময়ই মাহীর পক্ষে অবস্থান নেয় আব্বাসবিরোধী তথা খোকার সমর্থকরা।
একটি সূত্রের মতে, লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমর্থনও ছিল মাহীর দিকে। সব মিলিয়ে গত বুধবারের আগ পর্যন্ত গ্রুপিং-লবিংয়ে মাহী এগিয়েও থাকেন। কিন্তু এ রকম এক পরিস্থিতির মধ্যেই প্রচ- তৎপর হয়ে ওঠে আব্বাস সমর্থকরা। তারা খালেদা জিয়ার কাছে জোর লবিং চালায়। তাদের ধারণা, মাহী মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকায় খোকার নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। অথচ তাদের লক্ষ্য, পুরো ঢাকায় কর্তৃত্ব ধরে রাখা।
এদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতও মাহীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকায় জোটে যোগ দিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন মাহী তথা বিকল্প ধারা। পাশাপাশি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপিসহ কয়েকটি দলও মাহীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
অন্য একটি সূত্র মতে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তাঁর ছেলে মাহী বি চৌধুরী উভয়েই এক ধরণের ‘ইগো’র কারণে স্বেচ্ছায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাননি। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে অর্থাৎ খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকাকালে দলের অত্যন্ত দুর্দিনে বি চৌধুরী সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছেন। এতে সব কিছু মিলিয়ে তাদের ধারণা হয়েছিল, মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে হয়তো খালেদা জিয়া নিজেই তাদের ডেকে সমর্থনের কথা জানাবেন। কিন্তু একদিকে খোকা চিকিৎসার জন্য রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে, অন্যদিকে দলের মধ্যে তাঁর সমর্থক বলে পরিচিত অন্য নেতাদেরও কেউ কেউ কারাগারে। অন্যরাও খালেদা জিয়া না ডাকলে কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান না।
সবচেয়ে বড় কথা, পরিস্থিতি এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, স্বেচ্ছায় পরামর্শ দেওয়ার আগ্রহ বিএনপির অধিকাংশ নেতাই হারিয়ে ফেলেছেন। আর এই সুযোগে তৎপর হয়েছেন বিএনপির নোয়াখালী অঞ্চলের নেতারা। কারণ মিন্টুর বাড়ি বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায়। খালেদা জিয়া নিজেও বৃহত্তর নোয়াখালীর। এ ছাড়া ঢাকা সিটি নির্বাচনে নোয়াখালী অঞ্চলের ভোটারদের প্রভাব সব সময়ই আলোচিত একটি বিষয়। ফলে শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থন পাননি মাহী। তাঁর বদলে সমর্থন পান তাবিথ আউয়াল।
মাহী বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তির সন্তান হিসেবে আমি বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু না পাওয়ায় আমি মোটেই হতাশ নই। কারণ এখনো সময় আছে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগেও নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে।’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

অন্য এক আমি বলেছেন: ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.