![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহলে বসবাসকারী নাগরিকদের আদমশুমারি বা মাথা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। একে কেন্দ্র করে ছিটমহলবাসী উত্সবে মাতোয়ারা। এমন উত্সব ৪৭ বছরে কখনো দেখেনি কেউ। এখন তাদের পরিচয় হবে, তারা দেশ পাবে, পাবে যত নাগরিক অধিকার। আনন্দে আত্মহারা ছিটমহলবাসী।
গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় দেশের ৭৫টি গণনাকারী দল এ কাজ শুরু করেছে। চলবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত। আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাতের পর বিনিময় শুরু হবে।
১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির সুবাদে বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় লোকসভায় অনুমোদনের পর উভয় দেশের ছিটমহল বিনিময়ের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১৬ জুন কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয় ছিটমহল বিনিময়ের বিভিন্ন কৌশল। এ আলোকে প্রথমেই যে কাজটি হওয়ার কথা সেটি হচ্ছে ছিটমহলে কত মানুষ আছে তা হিসাব করা।
২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপকে ভিত্তি ধরে ছিটমহল বিনিময়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এখন বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল পাবে বাংলাদেশ। এখানে জমি আছে ১৭ হাজার ১৬০ একর এবং মানুষ আছে ৩৭ হাজার ১৮৬ জন। এগুলো বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরে রয়েছে।
পক্ষান্তরে ভারত পাবে ৫১টি ছিটমহল, যেখানে জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর আর মানুষ আছে ১৪ হাজার ৯০ জন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত মাথা গণনা ধরে বিদ্যমান হিসাব দেয়া হচ্ছে। তবে হাল জরিপে এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রাপ্য ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নে এবারের বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছিটমহল ও ছিটমহলবাসীর তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ভারতীয় ২৫টি দল এবং বাংলাদেশে ৫০টি দল কাজ করছে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তা পর্যায়ের যৌথ দল বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না। ছিটমহলগুলোতে নির্ধারিত ‘জয়েন্ট ফিল্ড ক্যাম্প’ এ বসেই তারা এই কাজ সমাধা করছেন। গণনাকারী দল ছিটমহলে জনসংখ্যা গণনার পাশাপাশি তারা কোন্ দেশে থাকতে চান তা জেনে নিচ্ছেন। কেউ দেশ ত্যাগ করতে চাইলে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ছবি তোলা হচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় ৩৬টি ছিটমহলে কাজ করছে ১৮টি দল। দলে রয়েছেন একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও একজন ভারতীয় কর্মকর্তা। এখানে কাজ করছেন ৫০ জনের একটি দল। এর মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় ও ২৫ জন বাংলাদেশি। প্রতিটি উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে জেলা পর্যায়ের কন্ট্রোল রুম। এখান থেকে জেলার সকল ছিটমহলের কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। গতকাল পুটিমারী ছিটমহলের মাঠ ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
গতকাল পুটিমারী ছিটমহল ঘুরে দেখা গেছে, উত্সবের আমেজ বিরাজ করছে। এই ছিটমহলে ৭৮টি পরিবার রয়েছে। জনসংখ্যা ১৭৭ জন। এখানে কাজ করছে একটি দল। দলে ভারতীয় প্রতিনিধি রয়েছেন রুদ্র নারায়ন দে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ী জেলার মত্স্য সমপ্রসারণ আধিকারিক। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধি রয়েছেন বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজমুল হক।
প্রথম দিনে ৩০টি পরিবারের জনসংখ্যার তথ্য যাচাই-বাছাই করার কথা থাকলেও অনেক বেশি কাজ হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই ছিটমহল থেকে কোন নাগরিক ভারতে যাওয়ার জন্য আবেদন ফরম পূরণ করেননি।
পঞ্চগড় জেলার ৩ উপজেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে ৩৬টি। তবে একাধিক ছোট ছোট ছিটমহলকে একীভূত করে সরকারিভাবে ১২টি ছিটমহল হিসাব করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা মুনতাজেরি দিনা বলেন, ২০১১ সালে উভয় দেশের মধ্যে পরিচালিত হেডকাউন্টিং এর তথ্যের সাথে নতুন তথ্য সংযোজন করা হবে। এর মধ্যে যারা নতুন জন্ম নিয়েছে, কেউ বিয়ে করলে অথবা মারা গেলে সেসব তথ্য সংযোজন করা হবে।
গারাতি ছিটমহলের হেডকাউন্টিং পরিচালনাকারী ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সুপারভাইজার শ্যামল কুমার দে বলেন, ‘আমরা ২০১১ সালের হেডকাউন্টিং এর তালিকাটি আপডেট করছি। বিশেষ করে বাংলাদেশি বিভিন্ন ছিটমহলের যারা ভারতে গিয়ে বসবাস করতে চান তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।’
ফুলবাড়ী সংবাদদাতা আব্দুল বারী আকন্দ জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলে যৌথ জরিপ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক খাঁন মোহাম্মদ নুরুল আমিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার তবারক উল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসির উদ্দিন মাহমুদ, ছিটমহল বিনিময় সমন্বয়কারী বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক , সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
উদ্বোধনের পর ছিটমহলের ৭টি কেন্দ্রে যৌথ গণনাকারী ২০ সদস্যের প্রত্যেক ইউনিটকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করে এলাকা বণ্টন করা হয়।
যৌথ গণনাকারী দলটি ছিটমহলের ২০১১ সালের হেডকাউন্টিং এ যাদের নাম জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের নাম ও স্বাক্ষর গ্রহণ করছে। তাছাড়াও ২০১১ সালের পর যারা ছিটমহলে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের নাম জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা এ ছিটমহল ত্যাগ করে ভারতের অংশে বসবাস করতে চায় তাদের ছবি ও আবেদনপত্র সংগ্রহ করা হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১৯
নিজাম বলেছেন: শুভ হোক।