নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুলশান অফিসেই সর্বনাশ

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০৫

গুলশান অফিসের একটি চক্রের কারণেই বিএনপির আজ এমন দৈন্যদশা। একসময়ের ক্ষমতাসীন দলটি আজ ধুঁকছে। এ কারণে এ কার্যালয় থেকেই বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পক্ষে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কার্যালয়বেষ্টিত গুটিকয় প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক আমলাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বিএনপিতে আজ দুর্দিন বলে মনে করছেন তারা। পরপর দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতা ও পদে পদে ভুলের খেসারতের জন্য গুলশান কার্যালয়কেন্দ্রিক ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই দায়ী করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পবিত্র ওমরা পালনের জন্য নির্ধারিত সফর বাতিল করার পেছনে গুলশান অফিসকেন্দ্রিক কর্মকর্তাদেরই দায়ী করা হচ্ছে। এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেখা-সাক্ষাৎ করতে না দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের আমন্ত্রণ গ্রহণ না করা, তিন মাসের টানা ফলশূল্য অবরোধের ডাক, অনড় খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বাসায় ফেরাসহ সব কিছুরই নিয়ন্ত্রক গুলশান কার্যালয়ের ওই সিন্ডিকেট। এ কারণে গুলশান অফিসকেই 'সর্বনাশ' হিসেবে দেখছেন নেতা-কর্মীরা। তাই গুলশান অফিসের মাধ্যমেই বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান চান তারা। দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানীর গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে কার্যালয়টি ভাড়া নেওয়া হয়। এর পর থেকে সেখানেই নিয়মিত অফিস করছেন বেগম জিয়া। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের আশপাশে যারা সর্বক্ষণ অবস্থান করেন, তারা বিএনপির আদর্শের কেউ নন। তারা কোনো দিন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল কিংবা জিয়ার আদর্শের নন। ওই কার্যালয়ে যেসব সাবেক আমলা থাকছেন, তারা প্রশাসনে সবচেয়ে 'অযোগ্য' ও 'অথর্ব' হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তারাই আজ বিএনপি চেয়ারপারসনকে জিম্মি করে রেখেছেন। অথচ বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠনের সব পকেট কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এ চক্রই ভূমিকা পালন করে। সেখানে সঙ্গত কারণেই বাদ পড়ে যান পোড় খাওয়া ত্যাগী নেতারা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, 'আমার দৃষ্টিতে গুলশান কার্যালয় কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস নয়। এটা কোনো করপোরেট অফিসও নয়। এটা একটা ক্লাব। এ ক্লাবের সদস্য হচ্ছেন গুটিকয় থার্ডক্লাস আমলা ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের ইচ্ছার বাইরে সেখানে কিছুই হয় না। গুম, খুন, হামলা-মামলাসহ নেতা-কর্মীদের ওপর স্টিমরোলারের নিচে চাপা পড়ার কোনো দুর্দশার কথাও বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছানো হয় না। আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলায় হাজার হাজার পরিবার যে আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তা থেকে বাঁচানোর আকুতিও খালেদা জিয়ার কানে পৌঁছানো হয় না। পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীদের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ দেয় না ওই সিন্ডিকেট।' সূত্রমতে, আন্দোলন করতে গিয়ে লাখ লাখ নেতা-কর্মী আজ ঘরবাড়িছাড়া। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেক নেতা-কর্মী। জেল খাটছেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। ভিটেবাড়িছাড়া হয়েছেন অনেকেই। সর্বস্বহারা হয়ে পথে পথে ঘুরছেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। ফলশূন্য আন্দোলনের ব্যর্থতার গ্লানিও নেই গুলশানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তাদের চালচলনে মনেই হয় না এটা একটি রাজনৈতিক দলের অফিস। তাদের পোশাক-আশাক, চালচলন ও নেতা-কর্মীদের প্রতি রূঢ় আচরণে মনে হয় এটা সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কোনো কার্যালয়। জানা যায়, নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ওই কার্যালয়ের প্রভাবশালীদের সখ্য রয়েছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। জিয়া পরিবারের নাম ভাঙিয়ে ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। যার অনেক কিছুই জানেন না খোদ বিএনপি চেয়ারপারসনও। গুলশান কার্যালয়ে প্রথম যোগ দিয়ে যারা একটি শার্ট ও একটি প্যান্ট ব্যবহার করে নিয়মিত অফিস করতেন, তারা এখন কোটিপতি বনে গেছেন। বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য কী নেই তাদের। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও রয়েছে তাদের সখ্য। সেই সুযোগে সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধাসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যও করে যাচ্ছেন তারা। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগও রয়েছে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। মাঠের নেতা-কর্মীদের অভিযোগমতে, গুলশান কার্যালয়ের সিন্ডিকেটই মূলত সর্বনাশ ডেকে এনেছে বিএনপির। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত আর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে ডুবতে বসেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। এরাই হলেন বিএনপি ও জিয়া পরিবার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী ও মূল খলনায়ক। বিএনপিকে বিপদে ফেলার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপই নেন তারা। সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপিকে জিম্মি করে রাখে এ সিন্ডিকেট। জিয়া পরিবার ও দলের নাম বেচে ডজন ডজন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপনসহ শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন তারা। খালেদা জিয়ার আশপাশে থাকার সুবাদে ভুটানেও ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন গুলশান কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা। ওই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বও দেন তিনি। ওই কর্মকর্তা আবার সরকারি দল সমর্থিত একটি শ্রমিক সংগঠনেরও প্রভাবশালী নেতা। জানা যায়, গুলশান অফিসে মুখচেনা লোকদেরই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ করে দেন প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বিনিময়ে তারা নেন নানা সুযোগ-সুবিধাও। অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে এসেও সিনিয়র নেতাদেরও পাশের রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। আবার ওই নেতারা যখন খালেদা জিয়ার রুমে প্রবেশ করেন, তখন দরজার পাশ থেকে বার বার উঁকিঝুঁকিও মারেন কেউ কেউ। এ জন্য অনেক সময় মনের কথাও খুলে বলতে সাহস পান না নেতারা। কারণ, ওই তথ্য মুহূর্তেই চলে যাবে সরকার কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। এ জন্য অনেক নেতা খালেদা জিয়া না ডাকলে গুলশান কার্যালয়েও যেতে চান না। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গুলশান কার্যালয়ের ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদৌলতে খালেদা জিয়ার প্রতিটি কর্মসূচি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তসহ প্রতিটি তথ্য-উপাত্তই আগাম জেনে যাচ্ছে সরকারের উচ্চ মহল। গত ৩ জানুয়ারি রাতে গুলশান কার্যালয় থেকে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের অসুস্থ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে বেগম খালেদা জিয়ার দেখতে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর দফতর আগের দিনই জেনে যায়। অথচ ওই কর্মসূচির সময়টির কথা একমাত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের দু-এক জন কর্মকর্তা ছাড়া কেউই জানতেন না। নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন, ওই তথ্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গেল কীভাবে? গুলশান অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থার প্রথম দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারতের ক্ষমতাসীন পার্টি বিজেপির চেয়ারম্যান অমিত শাহ টেলিফোন করে তাকে সান্ত্বনা জানান এবং তার খোঁজখবর নেন। সেটিও প্রথমে বাইরের কেউ জানত না। কিন্তু খালেদা জিয়াকে না জানিয়ে সেই ফোনালাপের কথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রিফিং করে জানিয়ে দেওয়া হলো কার সিদ্ধান্তে?

চলতি বছর ৩ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর কোনোরকমের প্রস্তুতি ছাড়াই ৫ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধসহ পরবর্তীতে টানা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো কার পরামর্শে? কারণ, স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সিনিয়র কোনো নেতাই টানা অবরোধ কর্মসূচির বিষয়টি জানতেন না। তা ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে টানা তিন দিনের হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল। নেতা-কর্মীদের মতে, বিগত ২৪ জানুয়ারি আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সেদিন রাতে গুলশান কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কার পরামর্শে প্রবেশ করতে দেওয়া হলো না? প্রধানমন্ত্রী গুলশান কার্যালয়ের সামনে আসার মাত্র চার মিনিট আগে কার নির্দেশে ভিতর থেকে প্রধান গেটে তালা দেওয়া হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। সন্তানহারা অবচেতন মা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এহেন আচরণের জন্য চেয়ারপারসনের এক কর্মকর্তাকেই দায়ী করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। 'বিএনপি কি হাসিনার আদর্শে চলে?'- দলীয় চেয়ারপারসনের এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য গতকাল আক্ষেপ করে বলেন, বিএনপি হাসিনার আদর্শে না চললেও সরকারের নির্দেশেই চলে। আর গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হলেন সেই নির্দেশ পালনকারী। খালেদা জিয়া এসব কিছু জানার পরও তাদের বাদ দিতে পারছেন না। এদের দূর না করা পর্যন্ত বিএনপি আর কখনই সাফল্যের আলো দেখবে না। তিনি আরও বলেন, গত সাত বছরে বিরোধী দল হিসেবে আন্দোলনের অনেক ইস্যু থাকার পরও একটি ইস্যুকেও কাজে লাগাতে পারেনি শুধু গুলশান অফিসের এই কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও এরাই ঝামেলা তৈরি করে রেখেছেন। 'ওয়ান-ইলেভেন' থেকে শুরু করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, তারেক-কোকোর ওপর অমানুষিক নির্যাতন, খালেদা জিয়াকে মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, হেফাজত কানেকশন থেকে শুরু করে সর্বশেষ সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে খালেদা জিয়ার ওমরা পালন ও সৌদি সফরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি- সব কিছুর জন্যই গুলশান কার্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যদেরই দায়ী করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সৌদি আরব যাত্রা বাতিল করেন বেগম জিয়া। জেনে শুনেও ১০ রমজানের পর সৌদি যাত্রার প্রক্রিয়া শুরু করেন গুলশানের ওই অদক্ষ কর্মকর্তা-আমলারা। সম্প্রতি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আলাপচারিতায় বলেন, 'জাদুমন্ত্রই হোক, জিন-পরীর আসরই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক- বেগম জিয়াকে আজ গুলশান কার্যালয়ে জিম্মি করে ফেলেছে একটি চক্র। খালেদা জিয়া কোথায় কীভাবে যাবেন, কী খাবেন-না খাবেন, কে তার সঙ্গে দেখা করবেন-না করবেন, তা থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া বক্তব্য দেওয়ার সময় তার পেছনে কোন কোন নেতা দাঁড়িয়ে থেকে ফোকাস হবেন- সব কিছুই নির্ধারণ করেন চেয়ারপারসনের ওই চক্রের সদস্যরা। বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, 'গুলশান কার্যালয়ের মাত্র পাঁচজন ব্যক্তির জন্য আজ বিএনপির এ দুর্দশা। এ কথা খালেদা জিয়া নিজেও জানেন এবং বোঝেন। তার পরও তিনি জিম্মি হয়ে আছেন।'


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.