![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যায়ের সঙ্গে কোনদিন আপস করেননি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই তিনি বাঙালির স্বাধিকার ও ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানেও তার সমর্থক কম ছিলো না। দুই পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অনেকেই তার বক্তব্য সমর্থন করতেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের মধ্যে বাঙালিদের দাবিয়ে রাখার একটি প্রবণতা থাকায় অনেকেই মুখ খুলে কথা বলতে সাহসী হতেন না। আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের পশ্চিম অংশে যেতেন সেখানেও জনতার ঢল নামতো। ভোট ও ভাতের অধিকারের সাথে এই অঞ্চলের মানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে তিনি তাদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন।
বঙ্গবন্ধু কখনোই বাঙালির রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করেননি। এদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের দুই অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে জয়লাভ করে। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সরকার পরিচালনার কথা। বঙ্গবন্ধু হবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সে সময় আওয়ামী লীগ যাতে সরকার গঠন করতে না পারে সেজন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘ওধার তোম- এধার হাম’ তত্ত্ব হাজির করেন। অপরদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান লাহোরে গোল টেবিল বেঠক (রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স) আহবান করেন। ততদিনে বাঙালি জাতি নতুন চেতনায় উজ্জীবিত। তাদের আকাঙ্ক্ষায় স্থান পেয়েছে নতুন রাষ্ট্র-নতুন এক জাতি গঠনের গণআন্দোলন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ওই বৈঠক নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমি বাঙালির রক্তের সাথে বেঈমানী করতে পারবো না। আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে।’ ...‘২৫ তারিখে এসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি, ওই শহীদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে আরটিসিতে (গোল টেবিল বৈঠক) মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, এদেশের মানুষের অধিকার চাই।’ বক্তৃতায় সে সময় দেশজুড়ে নিরীহ গণমানুষের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু তীব্র অসন্তুষ্টি ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন গণমানুষের জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া পর্যন্ত তার জীবনের প্রায় অর্ধেকই কারাগারে কেটেছে। পরিবার পরিজন থেকে দূরে নির্জন কারাগারে জীবনের উত্তাল দিনগুলো তিনি অতিবাহিত করেন। এদেশে যখনই কোন আন্দোলন হয়েছে, সাধারণ মানুষ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে, বঙ্গবন্ধু মানুষের হয়ে কথা বলেছেন- তার অনিবার্য পরিণতি হিসাবে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। মামলা হয়েছে একের পর এক। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে এর একটি খণ্ডচিত্র উঠে এসেছে।
আজকের আওয়ামী লীগকে এ পর্যায়ে আসতে গিয়ে ত্যাগের পাহাড় ডিঙাতে হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, জেল-জুলুম হুলিয়া আর রক্তসাগর পেরিয়েই দলটি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস আর বঙ্গবন্ধু পরিবারের ইতিহাস তাই এখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অবিভাজ্য সত্তায় পরিণত হয়েছে। যা হাজার বছরেও মুছে ফেলা সম্ভব হবে না। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির সে গর্বকেই মুছে ফেলতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা।
©somewhere in net ltd.