![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিএনপি নামে পাকিস্তানেও একটি দল আছে। পুরো নাম বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টি। এই দলের নেতা ও বেলুচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আখতার জান মেঙ্গল ২০১২ সালে মুসলিম লিগের নেতা নওয়াজ শরিফের (তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, বিরোধী দলের নেতা) সঙ্গে দেখা করে বেলুচিস্তানের জন্য ছয় দফা দাবিনামা পেশ করেছিলেন। এই ছয় দফায় বেলুচিস্তানে সামরিক অভিযানের অবসান, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা ও গুম করার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার এবং বালুচদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মেঙ্গল বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পর কারাগারে। পাকিস্তানের নেতাদের জন্য গদি ও জেলখানার দূরত্ব খুবই সামান্য। খুব কম নেতাই আছেন, যাঁরা ক্ষমতা হারানোর পর জেলে যাননি। মেঙ্গল জেলখানা থেকে বেরিয়ে লন্ডনে চলে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার বালুচদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেন। ইতিমধ্যে বেলুচিস্তানে আরেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। প্রতিদিনই সেনাবাহিনীর হাতে লোক মরছে। মানুষ গুম হচ্ছে। পারভেজ মোশাররফের শাসনের শেষ দিকে ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় প্রবীণ বালুচ নেতা আকবর খান বুঘতিকে। এ ঘটনা বালুচদের খেপিয়ে তোলে।
দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসনে থাকার পর ফিরে আখতার জান মেঙ্গল সুপ্রিম কোর্টের এক শুনানিতেও ছয় দফা দাবি তুলে বলেন, এটাই বেলুচিস্তানে শান্তি আনার একমাত্র পথ। নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলোচনাকালে মেঙ্গল আরও বলেছিলেন, এই ছয় দফা কোনোভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার সঙ্গে ভিন্ন ভাবা ঠিক হবে না। ছয় দফা বাস্তবায়ন না হলে বেলুচিস্তানের জনগণের পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না।
এভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিব এখনো পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন। পাকিস্তানে পাঠান বা পাখতুনরা প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। পাখতুন নেতা খান আবদুল গাফফার খান কখনোই পাকিস্তান মেনে নিতে পারেননি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষের গণভোট তিনি বর্জন করেছিলেন। তারপরও মুসলিম লিগ ৫১ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। গাফফার খানের ছেলে ওয়ালি খান ছিলেন বাম ধারার নেতা। ভুট্টোর সঙ্গে একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছেন। জেল খেটেছেন। বিরোধের একপর্যায়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের দুজনের জন্য একটি কবর খোঁড়া হয়েছে, কে আগে ঢুকবে, সেটাই প্রশ্ন।’
কট্টর পাকিস্তানবাদীদের প্রতি ওয়ালি খানের বিখ্যাত উক্তি: আমি ৬ হাজার বছর ধরে পাখতুন, ১৩০০ বছর ধরে মুসলমান ও ২৫ বছর ধরে পাকিস্তানি।
১৯৯০ সালে নির্বাচনের পর তিনি বলেছিলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রথমে সিন্ধ, পশতুন, বালুচ ও পাঞ্জাবি ভাবেন। তাঁরা কেউ নিজেদের পাকিস্তানি ভাবেন না। বৃহত্তর প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ওপরই পাকিস্তানের অস্তিত্ব নির্ভর করছে। কিন্তু ক্ষুদ্রতর স্বায়ত্তশাসনও তাঁরা ভোগ করতে পারছেন না। যদিও পিপিপি সরকারের আমলে সীমান্ত প্রদেশের নাম পাল্টিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া করা হয়েছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যেসব পাকিস্তানি নেতা আওয়ামী লীগের ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন ওয়ালি খান। ১৯৭৩ সালের সংবিধানে তিনি পাখতুন ও বালুচদের অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দাবি করলে ভুট্টো ১০ বছরের মধ্যে তা পূরণ করার আশ্বাস দেন। ওয়ালি খান, বালুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গল ও গাউস বক্স বেজেঞ্জো তাঁর কথায় আশ্বস্ত হয়ে সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে ন্যাপের সরকার গঠন করলেও কয়েক মাসের ব্যবধানে ভুট্টো তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করেন। এই হলো পাকিস্তানি ফেডারেল শাসনের নমুনা।
১৯৬৯ সালে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া ক্ষমতায় এসে এক ইউনিট ভেঙে দেন। এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু তিন জাতির প্রাথমিক বিজয়। চূড়ান্ত বিজয় হয়তো এখনো অনেক দূরে
দুই.
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। সিন্ধুর প্রবীণ জাতীয়তাবাদী নেতা জি এম সৈয়দ ঢাকায় এসে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেন। দুই নেতার সঙ্গে কথা হয় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। আলোচনার একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে জি এম সৈয়দ বললেন, ভুট্টো সামরিক শাসকদের সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করছেন। ওদের আসল উদ্দেশ্য হলো, আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা। সৈয়দের প্রত্যাশা, ‘যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তাহলে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব; যাতে নির্যাতিত সিন্ধ, বালুচ ও পাঠানদের অধিকার রক্ষা হবে। একটি বহুজাতিক ইউনিয়নের মধ্যে তারা বসবাস করতে পারবে।’
সত্তরের নির্বাচনের আগে জি এম সৈয়দ বালুচ ও পাঠান নেতাদের সহায়তা চাইলেন এবং বেশির ভাগ একমত হলেন যে এই মুহূর্তে তাঁদের উচিত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা। আওয়ামী লীগের ছয় দফার ভিত্তিতে পাকিস্তান পুনর্গঠিত হলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা পাবে এবং পাঞ্জাবিদের কর্তৃত্ব কমবে।
১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলের নেতাদের এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। রক্ষণশীল দলগুলোর নেতারা ছয় দফা নিয়ে আলোচনায় আপত্তি জানালেও সিন্ধুর জাতীয়তাবাদী নেতা জি এম সৈয়দ ও আবদুল মজিদ সিন্ধিসহ অনেকেই সমর্থন করেছিলেন। এ ব্যাপারে সৈয়দের ভাষ্য: শেখ মুজিবের ছয় দফা প্রস্তাব যেমন পূর্ব বাংলায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল, তেমনি সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের মানুষও স্বাগত জানিয়েছিল। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিটের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হয়। ১০ আগস্ট ১৯৬৬ সিন্ধু মুত্তাহিদা মাহাজ-এর উদ্যোগে শেখ মুজিবকে করাচির মেট্রোপলিটন হোটেলে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে জি এম সৈয়দ বলেন, ‘আমরা আপনার ছয় দফাকে সমর্থন করি। কেননা, এতে প্রতিটি প্রদেশের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের কথা আছে। এর পাশাপাশি এক ইউনিট–বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন চাই।’
জি এম সৈয়দের মতে, ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর পাঞ্জাবি সামরিক ও বেসামরিক আমলা চক্র ভুট্টোকে নকল হিরো বানিয়ে মাঠে নামায়। ৯ মার্চ ১৯৬৯-এ মুত্তাহিদা মাহাজ সভা ডেকে শেখ মুজিবের ছয় দফার অনুসরণে আরেকটি দাবিনামা পেশ করে, যাতে এক ইউনিট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত করা, সিন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল; যা আওয়ামী লীগের ছয় দফার কাছাকাছি।
১৯৬৯ সালে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া ক্ষমতায় এসে এক ইউনিট ভেঙে দেন। এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু তিন জাতির প্রাথমিক বিজয়। চূড়ান্ত বিজয় হয়তো এখনো অনেক দূরে। (শেষ) বিএনপি নামে পাকিস্তানেও একটি দল আছে। পুরো নাম বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টি। এই দলের নেতা ও বেলুচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আখতার জান মেঙ্গল ২০১২ সালে মুসলিম লিগের নেতা নওয়াজ শরিফের (তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, বিরোধী দলের নেতা) সঙ্গে দেখা করে বেলুচিস্তানের জন্য ছয় দফা দাবিনামা পেশ করেছিলেন। এই ছয় দফায় বেলুচিস্তানে সামরিক অভিযানের অবসান, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা ও গুম করার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার এবং বালুচদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মেঙ্গল বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পর কারাগারে। পাকিস্তানের নেতাদের জন্য গদি ও জেলখানার দূরত্ব খুবই সামান্য। খুব কম নেতাই আছেন, যাঁরা ক্ষমতা হারানোর পর জেলে যাননি। মেঙ্গল জেলখানা থেকে বেরিয়ে লন্ডনে চলে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার বালুচদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেন। ইতিমধ্যে বেলুচিস্তানে আরেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। প্রতিদিনই সেনাবাহিনীর হাতে লোক মরছে। মানুষ গুম হচ্ছে। পারভেজ মোশাররফের শাসনের শেষ দিকে ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় প্রবীণ বালুচ নেতা আকবর খান বুঘতিকে। এ ঘটনা বালুচদের খেপিয়ে তোলে।
দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসনে থাকার পর ফিরে আখতার জান মেঙ্গল সুপ্রিম কোর্টের এক শুনানিতেও ছয় দফা দাবি তুলে বলেন, এটাই বেলুচিস্তানে শান্তি আনার একমাত্র পথ। নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলোচনাকালে মেঙ্গল আরও বলেছিলেন, এই ছয় দফা কোনোভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার সঙ্গে ভিন্ন ভাবা ঠিক হবে না। ছয় দফা বাস্তবায়ন না হলে বেলুচিস্তানের জনগণের পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না।
এভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিব এখনো পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন। পাকিস্তানে পাঠান বা পাখতুনরা প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। পাখতুন নেতা খান আবদুল গাফফার খান কখনোই পাকিস্তান মেনে নিতে পারেননি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষের গণভোট তিনি বর্জন করেছিলেন। তারপরও মুসলিম লিগ ৫১ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। গাফফার খানের ছেলে ওয়ালি খান ছিলেন বাম ধারার নেতা। ভুট্টোর সঙ্গে একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছেন। জেল খেটেছেন। বিরোধের একপর্যায়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের দুজনের জন্য একটি কবর খোঁড়া হয়েছে, কে আগে ঢুকবে, সেটাই প্রশ্ন।’
কট্টর পাকিস্তানবাদীদের প্রতি ওয়ালি খানের বিখ্যাত উক্তি: আমি ৬ হাজার বছর ধরে পাখতুন, ১৩০০ বছর ধরে মুসলমান ও ২৫ বছর ধরে পাকিস্তানি।
১৯৯০ সালে নির্বাচনের পর তিনি বলেছিলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রথমে সিন্ধ, পশতুন, বালুচ ও পাঞ্জাবি ভাবেন। তাঁরা কেউ নিজেদের পাকিস্তানি ভাবেন না। বৃহত্তর প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ওপরই পাকিস্তানের অস্তিত্ব নির্ভর করছে। কিন্তু ক্ষুদ্রতর স্বায়ত্তশাসনও তাঁরা ভোগ করতে পারছেন না। যদিও পিপিপি সরকারের আমলে সীমান্ত প্রদেশের নাম পাল্টিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া করা হয়েছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যেসব পাকিস্তানি নেতা আওয়ামী লীগের ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন ওয়ালি খান। ১৯৭৩ সালের সংবিধানে তিনি পাখতুন ও বালুচদের অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দাবি করলে ভুট্টো ১০ বছরের মধ্যে তা পূরণ করার আশ্বাস দেন। ওয়ালি খান, বালুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গল ও গাউস বক্স বেজেঞ্জো তাঁর কথায় আশ্বস্ত হয়ে সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে ন্যাপের সরকার গঠন করলেও কয়েক মাসের ব্যবধানে ভুট্টো তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করেন। এই হলো পাকিস্তানি ফেডারেল শাসনের নমুনা।
১৯৬৯ সালে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া ক্ষমতায় এসে এক ইউনিট ভেঙে দেন। এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু তিন জাতির প্রাথমিক বিজয়। চূড়ান্ত বিজয় হয়তো এখনো অনেক দূরে
দুই.
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। সিন্ধুর প্রবীণ জাতীয়তাবাদী নেতা জি এম সৈয়দ ঢাকায় এসে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেন। দুই নেতার সঙ্গে কথা হয় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। আলোচনার একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে জি এম সৈয়দ বললেন, ভুট্টো সামরিক শাসকদের সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করছেন। ওদের আসল উদ্দেশ্য হলো, আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা। সৈয়দের প্রত্যাশা, ‘যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তাহলে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব; যাতে নির্যাতিত সিন্ধ, বালুচ ও পাঠানদের অধিকার রক্ষা হবে। একটি বহুজাতিক ইউনিয়নের মধ্যে তারা বসবাস করতে পারবে।’
সত্তরের নির্বাচনের আগে জি এম সৈয়দ বালুচ ও পাঠান নেতাদের সহায়তা চাইলেন এবং বেশির ভাগ একমত হলেন যে এই মুহূর্তে তাঁদের উচিত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা। আওয়ামী লীগের ছয় দফার ভিত্তিতে পাকিস্তান পুনর্গঠিত হলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা পাবে এবং পাঞ্জাবিদের কর্তৃত্ব কমবে।
১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলের নেতাদের এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। রক্ষণশীল দলগুলোর নেতারা ছয় দফা নিয়ে আলোচনায় আপত্তি জানালেও সিন্ধুর জাতীয়তাবাদী নেতা জি এম সৈয়দ ও আবদুল মজিদ সিন্ধিসহ অনেকেই সমর্থন করেছিলেন। এ ব্যাপারে সৈয়দের ভাষ্য: শেখ মুজিবের ছয় দফা প্রস্তাব যেমন পূর্ব বাংলায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল, তেমনি সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের মানুষও স্বাগত জানিয়েছিল। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিটের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হয়। ১০ আগস্ট ১৯৬৬ সিন্ধু মুত্তাহিদা মাহাজ-এর উদ্যোগে শেখ মুজিবকে করাচির মেট্রোপলিটন হোটেলে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে জি এম সৈয়দ বলেন, ‘আমরা আপনার ছয় দফাকে সমর্থন করি। কেননা, এতে প্রতিটি প্রদেশের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের কথা আছে। এর পাশাপাশি এক ইউনিট–বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন চাই।’
জি এম সৈয়দের মতে, ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর পাঞ্জাবি সামরিক ও বেসামরিক আমলা চক্র ভুট্টোকে নকল হিরো বানিয়ে মাঠে নামায়। ৯ মার্চ ১৯৬৯-এ মুত্তাহিদা মাহাজ সভা ডেকে শেখ মুজিবের ছয় দফার অনুসরণে আরেকটি দাবিনামা পেশ করে, যাতে এক ইউনিট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত করা, সিন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল; যা আওয়ামী লীগের ছয় দফার কাছাকাছি।
১৯৬৯ সালে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া ক্ষমতায় এসে এক ইউনিট ভেঙে দেন। এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু তিন জাতির প্রাথমিক বিজয়। চূড়ান্ত বিজয় হয়তো এখনো অনেক দূরে। (শেষ)
http://www.prothom-alo.com/opinion/article/598924
©somewhere in net ltd.