![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুনের দায়ে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া বিদেশে পলাতক ছয় খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনা এখনও অনিশ্চিত। এই ছয় সাবেক সেনা কর্মকর্তার মধ্যে চারজন কোন দেশে অবস্থান করছে তা এখনও নিশ্চিতই হতে পারেনি সরকার। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে তারা দু’জন খুনির সন্ধান জানতে পেরেছেন। এদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএইচবি নূর চৌধুরী কানাডায় ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে রয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে এদের দেশে ফিরিয়ে আনতে গেলে এখনও এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় ল’ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কানাডায় পলাতক আসামি নূর চৌধুরীর পাসপোর্ট জব্দ করেছে ওই দেশের সরকার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি লড়াই চলছে। তবে কানাডায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় নূর চৌধুরীকে হস্তান্তরে দেশটি আগ্রহী নয়।
এ বিষয়ে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের আইনি লড়াই চলছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ করে খুনিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বিগত মহাজোট সরকার। এই উদ্যোগেরই ধারাবাহিকতায় এই দু’জনকে দেশে আনার বিষয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিকে নিজ দেশে ফেরত না পাঠানোর যে নীতিতে কানাডা বিশ্বাসী, সেই অবস্থান পরিবর্তন করবে বলে মনে করছেন তারা।
এছাড়া ফাঁসির দণ্ড পাওয়া বাকি চারজনকে ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্সকে শক্তিশালী করা হয়েছে। এরা হল অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন। তবে তারা কোন দেশে রয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারছে না টাস্কফোর্স।
এদের অবস্থান জানতে বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও ইন্টারপোলের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। তবে আসামিরা নিজেদের আড়াল করতে বারবার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান ও কানাডায় গিয়েছিল বলে ২০০৯ সালে দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। জানা গেছে, কানাডা থেকে কয়েক দিন পরই সে হংকং হয়ে আবার পাকিস্তানে ফিরে গেছে। সে ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। বাকিরা বারবার নিজেদের অবস্থান পাল্টাচ্ছে। আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ২০০১ সাল পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে ছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। সাম্প্র্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি উঠলেও ইতিবাচক কোনো খবর জানা নেই সংশ্লিষ্টদের।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে ২০০৯ সালে তত্কালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদকে প্রধান করে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। টাস্কফোর্স গত ছয় বছরে দুইজনের অবস্থান নিশ্চিত হলেও আইনি জটিলতায় তাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়নি বলে জানান আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেও তারা জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করেন। এরপর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বও শেখ মুজিব হত্যা মামলার রায়ে বিচারপতি কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসির রায় দেন। আসামিরা আপিল করলে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ১২ জনের ফাঁসির রায় বহাল রেখে আসামিদের রিভিউ খারিজ করে দেন। এরপর ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তী সময় বিদেশে পলাতক সাত আসামির মধ্যে আজিজ পাশা জিম্বাবুয়ে মারা যায ২০০২ সালে। বাকি ছয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তত্পরতা শুরু করে সরকার। কিন্তু আইনি জটিলতা ও আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোর অসহযোগিতার কারণে ছয় বছরেও পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ছয় খুনিকে শিগগির ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। খুনিদের ফিরিয়ে আনতে যে প্রক্রিয়ায় কাজ চলছে তাতে আরও কয়েক বছর লাগবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। খুনিদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পলাতক খুনিদের সম্পত্তি ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পলাতকরা যাতে অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পলাতক খুনিদের কী পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে নিবন্ধন পরিদফতরের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে সে তথ্য ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। খুনিরা সম্পত্তি তাদের নিকট কোনো আত্মীয়ের নামে দিয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া খুব শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানান তারা।
দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফেরত আনার উদ্যোগের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সরকার দ্রুত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত রেখেছে। যদি পালিয়ে থাকা দেশ সম্মত হয় তাহলে আইন-কানুন যাই থাকুক না কেন, খুনিদের দেশে ফেরাতে সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার উদ্যোগে ভালো অগ্রগতি রয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না। কারণ কথা বলার জন্যই এর আগে মোসলেহ উদ্দিনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
©somewhere in net ltd.