![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দার্শনিকেররা এযাবৎ জগৎটাকে শুধু ব্যখ্যা করেছেন , আসল কাজ হলো পরিবর্তন করা - কার্ল মার্কসের এ উক্তিটি আমার খুব প্রিয় ।
মেয়ে বায়না ধরেছে , ক্লাসের সবাই শাহবাগে গিয়েছে তার এখনও যাওয়া হয়নি । সংগত আবদার , রক্ষা না করে উপায় নাই । তাহলে মেয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে তুমি কি রাজাকারের বিচার চাও না ? নিজেকেও মনে মনে জিজ্ঞেস করলাম , কেন চাইবো না । না চাওয়ার কি কারন থাকতে পারে ? রাজনীতির হিসেব নিকেশ বাদ দিলেও খুন – ধর্ষণ – লুট ইত্যাদি কর্ম কাণ্ডের বিচার হওয়া উচিৎ , তাও আবার নিজ দেশের জনগনের উপর অত্যাচার পাকিস্তানীদের স্বার্থে । এই অন্যায়ের সাথে আপোষ করা আর একটি অন্যায় ।
শাহবাগ গেলাম , রাত্রে । দিনে পেটের ধান্দায় সময় পাই না । বেশ উৎসব উৎসব আমেজ । উৎসবে আনন্দেও আন্দোলন করা যায় জীবনের প্রথম দেখলাম । ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার হটিয়েছি , সেই আন্দোলনে লাঠি , গুলি , টিয়ার গ্যাস , পুলিশের – মিলিটিরির পিটুনি খেতে হয়েছে । পুলিশের লাঠি – টিয়ার গ্যাস এর ভয় নাই এমন আন্দোলনে মেয়েকে নিয়ে কেন যাব না , অবশ্যই যাব । গেলাম , দেখলাম , ছবি তুললাম । বেশ একটা পিকনিক পিকনিক ভাব । অনেক ছোট ছোট গ্রুপ । কিন্তু দাবী একই । রাজাকারের বিচার । সরকার বিচার তো কেরেছে কিন্তু সেখানে আপোষের ঘন্ধ থাকায় তার প্রতিবাদ সরূপ এই প্রজন্মের তরুণরা ফেসবুকের মাধ্যমে নাকি সংগঠিত হয়ে এখানে প্রতিবাদ করছে । ফেসবুকের মাধ্যমে বা ব্লগের মাধ্যমেও যে প্রতিবাদ করার জন্য সংঘটিত হওয়া যায় এটাও নতুন । যারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন । সকালে অফিসে আসার সময় শাহবাগের প্রতিবাদ সমাবেশ এর উপস্থিতি অনেক কম দেখলাম । অফিস ছুটির পর বিকেলের দিকে হয়তো বাড়বে । এক বন্ধু ফোন করে বলল অনেকদিন দেখা নেই , শাহবাগে চলে আয় , অনেককে আসতে বলেছি । হয়তো যাবো । এরকম আরও অনেকেই যাবে ।
১৯৯২ সালে কর্নেল নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠন করেছিলাম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি । সেই কমিটির কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব ছিল সেলিম ওমরাও খান । আমি তখন বিপ্লবী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি হিসেবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কেন্দ্রিয় সদস্য ছিলাম । আন্দোলনের গতি আরও তিব্র করার জন্য মধুর ক্যান্টিনে বসে একদিন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে আরও বড় করার সদ্ধান্ত নেই । শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বাসায় একদিন রাতে আমরা সকল ছাত্র নেতারা গিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক হওয়ার অনুরোধ জানাই । উনি তখন ক্যান্সার ব্যাধিতে ভুগছিলেন । প্রথমে রাজি ছিলেন না । উনাকে রাজি করানোর জন্য আমাদের অনেকবার উনার বাসায় যেতে হয়েছল । প্রায়ই রাত্রে উনার বাসায় যেতাম । উদ্দেশ্য রাতের খাবার ওখানে খাওয়া , যদিও উনি না খাইয়ে কখনও ছারতেন না । শেষে উনি রাজি হলেন , নতুন করে ঘটন করা হোল “৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্নয় কমিটি” । আমি সহ কেন্দ্রিয় সভাপতি – সাধারন সম্পাদক পদের অনেক ছাত্র নেতারাই সেই কমিটির কেন্দ্রিয় সদস্য ছিলাম । এই নির্মূল কমিটি গঠনের পিছনে তৎকালীন ছত্রনেতা নাজমুল হক প্রধান , নুর আহমেদ বকুল , সৈয়দ জাহাঙ্গীর , সফি আহমেদ , আসিম কুমার উকিল সহ আরও অনেকের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল। সেই কমিটিতে অনেককেই কেন্দ্রিয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল । এর মধ্যে হাসান ইমাম অন্যতম , শাহরিয়ার কবির তখন আমাদের সাথে কেন্দ্রিয় কমিটিতে কোন পদে ছিলেন আমার মনে পরছে না । নতুন সদস্য সচিব হয়েছিলেন আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান তবে জাতীয় নেতা আওয়ামীলীগের আব্দুর রাজ্জাক ভাই নিজে উপস্থিত থেকে অর্থনৈতিক ভাবে এবং সাংগঠনিক ভাবে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন । ঠিক এরই পাশাপাশি ছাত্র অঙ্গনে আমরা গঠন করেছিলাম “ সাম্প্রতায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজ “ , ছাত্রলীগ সহ প্রগতিশীল সকল ছাত্র সংগঠনই তখন “সাম্প্রতায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজ” এর সদস্য ছিল । “সাম্প্রতায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজ” এর নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে একটি জাতীয় কনভেনশন করা হয়েছিল “৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্নয় কমিটির” আন্দোলনকে আরও তিব্রতর করার লক্ষ্যে । সেই কনভেন্সনের দুই পর্বের একটিতে বর্তমান বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু সভাপতিত্ব ও আমি পরিচালনা করেছিলাম । সেই সময়কার ছাত্র নেতা মাইনুদ্দিন হাসান চৌধরী , রুহুল কুদ্দুস বাবু , রাগিব আহসান মুন্না , রাজেকুজ্জামান রতন , রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। সারা দেশ থেকে সকল ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরা সেই কনভেন্সনে উপস্থিত ছিলেন । “সাম্প্রতায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজ” এর বিশাল সাংগঠনিক শক্তির উপর দাড়িয়ে “৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্নয় কমিটি” নেতৃত্বে গণআদালত করে গোলাম আজমকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল । শাহবাগে গিয়ে এই সমস্ত স্মৃতি মনের ভিতর বার বার ফিরে আসছিল । গন আদালতের আগের রাত্রের কঠোর পরিস্রমের কথা এখনও মানে আছে ।
আন্দোলনের যারা সংগঠক তাদের সেই আন্দোলনকে ধরে রাখার জন্য অনেক ত্যাগ পরিশ্রম করতে হয় । এই আন্দোলনের যারা সংগঠক তাদের দিন রাত কষ্ট করতে হচ্ছে যাতে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে না যায় । তাদের প্রতি সুভেচ্ছা ও অভনন্দন রইল ।
©somewhere in net ltd.