নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৯০\'র সাবেক ছাত্র নেতা মুখলেছউদ্দিন শাহীন নামে পরিচিত, বর্তমানে ব্যবসায়ী

আহমেদ_শাহীন

দার্শনিকেররা এযাবৎ জগৎটাকে শুধু ব্যখ্যা করেছেন , আসল কাজ হলো পরিবর্তন করা - কার্ল মার্কসের এ উক্তিটি আমার খুব প্রিয় ।

আহমেদ_শাহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতির পেচাল

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪

আপাততঃ মনে হচ্ছে বিএনপি সংলাপের রাস্তায় হাঁটছে । যতটুকু সম্মানজনক ভাবে সংলাপের দিকে আগানো যায় সেই পথে হাঁটছে । ইদের পর বিএনপির দেয়া হরতালের কারনে আওয়ামীলীগ চাপে পরেনি আলীগের অন্ধ সমর্থকগণ যদি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে ভুল হবে । আলীগ চাপে পরেছে কিন্তু সেই চাপ থেকে রক্ষা পেতে তারা জনগণের কাছে যায়নি বা কোন রাজনৈতিক উদ্যেগ নেয়নি । বরং আন্তর্জাতিক ( উপমহাদেশ ) শক্তির আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদের পরামর্শে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শক্তির মুরুব্বীরা বিএনপিকে নিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছে । বিএনপির হরতাল ও আওয়ামীলীগের সংলাপ বিমুখ আচরন দুই শক্তির পরস্পর বিরোধী অবস্থান থেকে এটাই ধারনা করা যায় যে জাতীয় স্বার্থ এখানে মুখ্য নয় বরং অর্থনীতির উপর চাপ দিয়ে ক্ষমতার রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া ।

বিএনপির এই চাপ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো যদি ক্ষমতার রাজনীতির সাথে সাধারন জনগণের স্বার্থের কোন সম্পর্ক থাকতো । শুধুমাত্র নির্দলীয় নিরেপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী ক্ষমতার রাজনীতিকে কনফার্ম করে কিন্তু সাধারন মানুষের গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকারকে কনফার্ম করে না । সাধারন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে না আসলে আন্দোলনে জনগণের যেই অংশ দুই দলের বাইরে তাদের অবস্থান বিএনপির পক্ষে এটা বলা খুব মুশকিল । আবার আওয়ামীলীগ একতরফা নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন কয়েক বছরের জন্য ক্ষমতাকে কনফার্ম করবে কিন্তু জনগণ একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রবেশ করবে । সেই শাসনামল কেমন হবে তা সাধারন মানুষ ইতিমধ্যেই টের পেয়েছে । সংসদের দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে আওয়ামীলীগ যে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল আগামীতে যদি একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রনয়ন হয় তবে তা আরও কতখানি ভয়ানক হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । যুদ্ধাপরাধীর বিচার যদি জাতীয় দাবীতে পরিনত করতে পারতো তবে তাতে জনগণের রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন থাকতো কিন্তু আলীগ এই বিচারকে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত করে সার্বিক গনদাবীতে পরিনত করতে ব্যর্থ হয়েছে । একতরফা নির্বাচন যে একদলীয় শাসনব্যবস্থা এবং তার রূপ সম্পর্কে ভিত হয়েই বিএনপির নির্দলীয় নিরেপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীকে জনগণ সমর্থন করছে । সেই কারনে বিভিন্ন জরীপ বিএপির পক্ষে যাচ্ছে ।

এখন যদি একতরফা নির্বাচন হয় তবে দেশের শাসনব্যবস্থা কি হবে তা আমরা সকলেই অনুমান করতে পারছি কিন্তু যদি বিএনপি সহ নির্বাচন হয় এবং বিজয়ী দল আগামীতে কি ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবে তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয় । জনগণ ইতিমধ্যেই ৪টি নির্বাচিত সরকার দেখেছে । এখন জনগণ চায় তার অঙ্গীকার ও তা বাস্তবায়ন । এমনকি বিএনপি- আলীগ এর জনগণও । এমনকি বিএনপি- আলীগ এর কর্মীরাও । কারন লুটপাটের রাজনীতি এখন এমনভাবে কেন্দ্রীভূত যে সাধারন কর্মীরাও লুটের ভাগ পায় না , লুটপাটের রাজনীতির সমর্থক শুধু দুই দলের গোটাকয়েক কেন্দ্রিয় লুটপাটকারী । দুই নেত্রীকে এখন হিসেব করতে হবে যে উনারা শুধু কেন্দ্রিয় লুটপাটকারীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন না সাধারন জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করবেন । এর উপর নির্ভর করে দুই নেত্রীর আগামী রাজনীতি ।

ফলে এটা বলা যায় যে রাজনীতি এমন একটা জায়গায় এসে ঠেকেছে যে এখান থেকেই নতুন করে শুরু করতে হবে বা নতুন প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হতে হবে । এই কাজ বর্তমান রাজনীতিবিদদেরকেই করতে হবে । তা না হলে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ধর্না দিতে হবে । ইতিমধ্যাই এই ধর্না দেয়াকে সাধারন জনগণ বাকা চোখে দেখা শুরু করেছে । এমনকি নিম্ন আয়ের জনগণও । রাজনীতিবিদদের যে অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে ধর্না দিচ্ছে তাদের জন সমর্থন শূন্যের কোঠায় । ফলে ধর্না দেয়ার রাজনীতি ও জনগণের রাজনীতি এখন মুখোমুখি । এর একটা বিজয়ী হবে । ইতিহাস বলে জনগণই সব সময় বিজয়ী হয় ।



সমাজে সকল শ্রেণীরই রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকে , সেই সকল রাজনৈতিক প্রতিনিধি ভিন্ন শ্রেণীর সাথে নিজেদের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করে । রাষ্ট্র সেই সকল রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাজ সম্পাদন করে। রাজনৈতিক দল যেহেতু শ্রেণী প্রতিনিধি তারা নিজ নিজ শ্রেণী স্বার্থে রাষ্ট্রকে পরিচালিত করার চেষ্টা করে । শ্রেণী সমুহের এই সংগ্রামকেই রাজনীতি হিসেবে দেখা হয় ।

প্রতিটি সমাজে মুলত ৪টি শ্রেণী বিদ্যমান । স্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও শিল্পপতি বা বুর্জোয়া । বুর্জোয়া শব্দটি কোন গালি নয় বরং কলকারখানার মালিক শ্রেণীর রাজনৈতিক নাম । স্রমিক এবং বুর্জোয়া মুলতঃ এই দুই শ্রেণীই পরস্পরের মুখোমুখী হয় । কারন এই দুই শ্রেণী কলকারখানা বা উৎপাদন যন্ত্রের সাথে সরাসরি সম্পর্ক । একজনের সম্পর্ক মালিকানার ( বুর্জোয়া ) আর একজনের সম্পর্ক স্রম বিক্রয় করে কারখানা চালু রাখা যা উৎপাদিকা শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয় । মধ্যবিত্ত শ্রেণী মুলত ক্ষুদ্র ব্যবসা, চাকুরি পেশার সাথে জড়িত , কৃষক জমির সাথে সম্পর্কিত বিধায় তার চাহিদা স্রমিক ও মধ্যবিত্তদের থেকে আলাদা । সমাজে কম্যুনিস্ট ভাবাদর্শের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে থাকে । আর আওয়ামীলীগ বা বিএনপি মুলত বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে এমনটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন মনে করেন । মধ্যবিত্ত ও কৃষকদের রাজনৈতিক কোন প্রতিনিধি নেই বিধায় অনেকেই তা পুরন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আলীগ ও বিএনপিও বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি নয় , তাহলে কাদের প্রতিনিধি ?

১৯৯০ সালের পর থেকে শুরু হয় পার্লামেন্টারি পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা যেখানে জনগণ ভোটাধিকারের সুযোগ পেয়েছে । সেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করাটাই একটি বড় অর্জন যা ১৯৯০ সালের পূর্বে তা ছিল না । কিন্তু সেই ভোটাধিকার প্রয়োগের পাশাপাশি শুরু হয় ভোট ক্রয়ের রাজনীতি মনোনয়ন বিক্রয়ের রাজনীতি । ভোট ক্রয় ও মনোনয়ন ক্রয় মানে বিনিয়োগ । রাজনীতিতে বিনিয়োগ । তারপর ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট যা বিনিয়োগকে মুনাফায় পরিনত করে । ১৯৯৬ সালে সেই বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পায় এবং রাজনীতিতে বিনিয়োগ একটি ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় । পরবর্তী ২০০১ ও ২০০৮ সালে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা একটি প্রচলিত ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় । কিন্তু সেই সাথে শুরু হয় বিরাজনিতিকরন প্রক্রিয়া । রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা । কিন্তু মনোনয়ন বানিজ্য এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে রাজনৈতিক নেতা হওয়া মানে মনোনয়ন বানিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া । যেখানেই মুনাফা সেখানেই ব্যবসা । ব্যবসা ব্যবসায়ীদের কাজ । রাজনীতিবিদদের না । ফলে দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক পদ বা ক্ষমতা চলে যায় অরাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব বা ব্যবসায়ীদের হাতে । আস্তে আস্তে দল গুলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য হতে থাকে এবং সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও লুটেরাদের দখলে চলে যায় । সুবিধাভোগী ও লুটেরা শ্রেণী তৈরি হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে ( আলীগ ও বিএনপি ) নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করতে থাকে । লুটেরা শ্রেণী যেই দলেই থাকুক তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট এক । তারা শুধু মাত্র দলের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক শক্তিকে লুটপাটের কাজে লাগায় । সেই প্রক্রিয়ায় দুই দলের নেত্রী আস্তে আস্তে দলের অভ্যন্তরে লুটেরা শ্রেণীর পরিমণ্ডলে আবদ্ধ হয়ে যায় । দলের পোড় খাওয়া নেতা কর্মীরা দলের বাইরে চলে যায় । দলের অভ্যন্তরে কালেক্টিভ নেতৃত্বের বিকাশের পরিবর্তে একক নেতৃত্ব তৈরি হয় । দুই নেত্রীর একক নেতৃত্ব । সেই একক নেতৃত্ব লুটপাটকে আরও সহজ করে তুলে । যে কারনে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের পাশাপাশি শেয়ার মার্কেট থেকে এবার জনগণেরও পকেটও খালি করে ফেলা হয়েছে । সেই একক নেতৃত্বের সুযোগ নিয়ে দুই নেত্রীকে পরস্পর বিরোধী শত্রুতে পরিনত করা হয়েছে ।

সেই লুটেরা শ্রেণী এখন শুধুমাত্র লুটপাটের স্বার্থে ক্ষমতায় আসা ও ক্ষমতায় থাকার দন্দে লিপ্ত হয়েছে ।

লুটপাটের স্বার্থে পরিচালিত এই দুই রাজনৈতিক দল এখন আর সমাজের কোন স্রেনিকে প্রতিনিধিত্ব করে না । তারা এখন উৎপাদনমুখী এই সমাজের বোঝা । লুটপাটের টাকা খুব সামান্যই এই দেশে ব্যবহার করা হয় । লুটপাটের টাকার পুরোটা ব্যবহার করলে এদের কিঞ্চিৎ চাহিদা থাকতো । এখন যতটুকু কালো টাকা অর্থনীতিতে ব্যবহার হয় ততটুকু জনসমর্থন খুঁজে পাওয়া যায় । রাষ্ট্র দুর্বল থাকার কারনে ১০ বছর আগে কালো টাকা অর্থনীতিতে বেশী বিনিয়োগ ছিল বিধায় জনসমর্থনও বেশী ছিল । এখন রাষ্ট্র কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বিধায় অর্থনীতিতে কালো টাকার ব্যবহার অনেক কমেছে এবং সেই সাথে জনসমর্থন ও সম্পৃক্ততা কমেছে ।

বিরাজনিতিকরনের এই প্রক্রিয়ায় এই দুই দল ভিতর থেকে ক্ষয়ে গিয়েছে যা মেরামত করতে আবার রাজনীতির ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের আস্রয় নিতে হবে । এই মেরামত যত তাড়াতাড়ি হবে ততই রক্ষা পাবে যত দেরি হবে তত ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকবে । সমাজে উৎপাদনমুখী শ্রেণী সমুহ তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে নিজের স্বার্থে রক্ষা করে । শ্রেণী প্রতিনিধিত্বহীন রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলকে কোন শ্রেণী শেষ আস্রয় প্রশ্রয় দেয় না । এখন আমরা শ্রেণী প্রতিনিধিত্বহীন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি যার ফলস্বরূপ এই বর্তমান প্রক্রিয়া বিলিন হওয়া শুধু সময়ের ব্যপার ।

মোট কথা আলীগ ও বিএনপি যদি দ্রুত নিজ নিজ দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পুনঃস্থাপন ও জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে তবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.