নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৯০\'র সাবেক ছাত্র নেতা মুখলেছউদ্দিন শাহীন নামে পরিচিত, বর্তমানে ব্যবসায়ী

আহমেদ_শাহীন

দার্শনিকেররা এযাবৎ জগৎটাকে শুধু ব্যখ্যা করেছেন , আসল কাজ হলো পরিবর্তন করা - কার্ল মার্কসের এ উক্তিটি আমার খুব প্রিয় ।

আহমেদ_শাহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাজায় ইস্রায়েলি হামলার কারন

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এর অন্যতম নেতা ইয়াসির আরাফাত ছিলেন পিএলও ( Palestine Liberation Organization ) কতৃক সর্ব মহলের স্বীকৃত নেতা । পিএলও মুলত ১৯৬৪ সালে ১০টি ছোট বড় রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে গঠিত একটি ফ্রন্ট । এই ফ্রন্ট এর লক্ষ্য স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা । বর্তমান স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই ১০০ দেশ কতৃক স্বীকৃতি লাভ করেছিল এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মর্যাদা লাভ করেছিল । সেই সাথে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের অভজারভার হিসেবে সদস্য পদ পেয়েছিল । ইয়াসির আরাফাত ছিলেন একমাত্র নেতা যিনি রাষ্ট্র ছাড়া রাষ্ট্রপতির মর্যাদা নিয়ে বিদেশ সফর করতেন । আর এতসব সম্ভব হয়েছিল আরব রাষ্ট্রগুলির ফিলিস্তিন প্রস্নে একজোট হওয়া ।

নিম্নের সংগঠনগুলো নিয়ে পিএলও গঠিত হয়েছিল

১। ফাত্তাহ - সব চেয়ে বড় সেক্যুলার বাম পন্থী ন্যাশনালিস্ট ( ইয়াসির আরাফাত এই সগঠনের নেতা ছিলেন )

২। পপুলার ফ্রন্ট অব দি লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন - দ্বিতীয় বৃহত্তম সসস্র কম্যুনিস্ট সংগঠন

৩। ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ দা লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন - তৃতীয় বৃহত্তম সসস্র কমিউনিস্ট সংগঠন

৪। প্যালেস্টাইন পিপলস পার্টি - নিরস্র সাবেক রুশপন্থী কম্যুনিস্ট

৫। প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট - মুলত বর্তমান আবু আব্বাসের একটি বামপন্থী গ্রুপ

৬। আরব লিবারেশন ফ্রন্ট - ইরাকের সাবেক বাথ পার্টির সাথে সম্পর্কিত একটি গ্রুপ

৭। আসসিয়াকা - সিরিয়া সমর্থিত একটি গ্রুপ

৮। প্যালেস্টাইন ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন - একটি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক নিরস্র গ্রুপ

৯। প্যালেস্টাইন পপুলার স্ত্রাগল ফ্রন্ট - একটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শের গ্রুপ

১০। প্যালেস্টাইন আরব ফ্রন্ট - ফাত্তাহ সমর্থিত ও ইরাকের সাবেক বাথ পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় একটি ছোট গ্রুপ



উপরোক্ত রাজনৈতিক সংগঠন গুলোর সমন্বয়ে গঠিত পিএলও ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে ইসরাইলের সাথে ব্যপক গেরিলা যুদ্ধ । এই সময় ইসরাইলের বিমান ছিনতাই থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের গেরিলা আক্রমনের মাধ্যমে ইসরাইল - ফিলিস্তিন যুদ্ধ গোটা আরব বিশ্বকে ব্যাস্ত রাখে ।

১৯৮৭ সালে মার্কিনের সহায়তায় ইসরাইলের হাতে পিএলও ব্যপক সৈন্য নিহত ও বন্দি হলে প্রথম যুদ্ধ বিরতি শুরু হয় যা ইতিহাসে ১ম ইন্তিফাদা নামে পরিচিত । এরপর আর পিএলও খুব একটা মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি । তখনই আবির্ভাব হয় গাজা উপত্যকা থেকে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত ছুন্নি ইসলাম পন্থী কাসেম ব্রিগেড যা পরবর্তীতে হামাস নামে পরিচিত হয় । এদের লক্ষ্য মুলত স্বাধীন প্যালেস্টাইন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । পিএলও একটু বামপন্থী ঘেঁষা বিধায় মুসলিম ধর্মাবলী সকল প্যালেস্টাইন মুক্তিকামী মানুষ হামাসকে সমর্থন দেয়া শুরু করে এবং গাজা অঞ্চলে ব্যপক সমর্থন ও আধিপত্য বিস্তার করে । হামাসের রাজনৈতিক প্রধান খালেদ মাসাল ( কাসেম ) ঘোষণা করে যে ১৯৬৭ সালের সীমারেখা অনুযায়ী প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের আলোচনা হতে পারে । কিন্তু ইসরাইল হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে সাথে সাথে আমেরিকা , ব্রিটেন, ইউরোপ, কানাডা জাপান হামসকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে , মিসর ও জর্ডান ও এর সাথে সুর মিলায় । মুলত আরব বিশ্ব বিভক্ত হতে থাকে এই হামাসের উত্থানের পর থেকে । হামাসের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে অ্যামেরিকার উদ্যেগে ইস্রায়েল প্যালেস্টাইন ঐতিহাসিক শান্তি আলোচনা শুরু হয় ১৯৯১ সালে স্পেনের মাদ্রিদে । মুলত ভঙ্গুর রাশিয়া এই শান্তি আলোচনায় বেশ অগ্রসর ভূমিকা রেখেছিল । ১ম শান্তি আলোচনায় প্যালেস্টাইন - জর্ডান যৌথভাবে ইস্রায়েল এর সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল পরেবার ১৯৯২ সালে রাশিয়ায় লেবানন ও সিরিয়াকে বাদ দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সকলেই আলোচনায় অংশ নেয় । ১৯৯৩ সালের নরওয়ের অসলোতে জাতিসঙ্ঘের ২৪২ ও ৩৩৮ ধারায় সসস্র আন্দোলন ত্যাগ করতে পিএলও অঙ্গীকারবদ্ধ হয় । এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ সালে স্বাধীন ফিলিস্তিন অঞ্চল গঠিত হয় । মুলত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা নিয়ে গঠিত হয় এই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র । স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলেও মুলত গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রনে থেকে যায় এবং ফাত্তাহ এর নেতৃত্বে পিএলও অবস্থান নেয় পশ্চিম তীরে । ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু হলে ২০০৬ সালে স্বাধীন ফিলিস্তিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করে । ফাত্তাহ এর সাথে হামাসের দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয় এবং ২০০৭ সালে হামাস অফিশিয়ালি গাজার উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে । ২০১১ সালে ফাত্তাহ হামাস দুই পার্টি একটি রিকন্সিলেসন চুক্তিতে সই করে এবং জুন ২০১৪ সালে একটি যৌথ সরকার প্রতিষ্ঠা করে । সরকারে হামাসের যোগ দেয়ার পরই ইসরায়েল আবার গাজার উপর হামলা শুরু করে যা এখনও অব্যহত আছে ।

মুলত এই হোল গাযায় ইস্রায়েলি হামলার কারন ।

মার্কিন - ব্রিটিশ - ইসরাইল পররাষ্ট্রনীতিতে হামাস একটি ইসলামী জঙ্গি সংগঠন এবং নিষিদ্ধ , পশ্চিমা বিশ্ব তড়িঘড়ি করে পিএলও র মাধ্যমে ইসরাইলের একটি মীমাংসায় পৌঁছে মুলত হামাসের উত্থান ও রাতারাতি জন সমর্থনের কারনে । এটা মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা সংগঠন । অনেকটা জামাতে ইসলামীর মত । পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা গাঁজায় হামলার নিন্দা জানায় কিন্তু হামাসকে সমর্থন করে না । আমি শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং যে কারনে মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরে ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই সেই আলোকে বলার চেষ্টা করেছি । জনাব মাহবুব তার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করেছেন যা অবস্যই গুরুত্বপূর্ণ । রাজনীতি যেহেতু অর্থনীতির স্বার্থে পরিচালিত হয় কাজেই ইসরাইলের গাজা নীতি আর মার্কিনের প্যালেস্টাইন নীতির মধ্যে পার্থক্য আছে । গাঁজায় হামলার ব্যপারে খোদ পিলও বা ফত্তাহ গ্রুপের কোন বক্তব্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে তন্ন তন্ন করে খুজে পাইনি । আরববিশ্ব তার নিরবতা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে হামাস নিয়ে পশ্চিমাদের সাথে দ্বন্দ্বে তারা যেতে রাজী নয় । ফলে গাঁজা আক্রমনের ভিতর দিয়ে পশ্চিমা পররাষ্ট্রনীতি ফিলিস্তিন জনগণকে বুঝাতে চায় যে হামাসকে বাদ দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে হবে । এটা স্পষ্ট একটি রাজনৈতিক চাপ এবং দুঃখজনক হলেও সত্য এই রাজনৈতিক চাপ এর ফলে সাধারন মানুষ মরছে । অচিরেই তাদের স্বীকৃত রাজনৈতিক শক্তি ফাত্তাহকে দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের আয়োজনে যাওয়ার সম্ভাববনা আছে এবং ততক্ষন পর্যন্ত গাঁজায় হামলা থেমে থেমে অব্যহত থাকবে বলেই আমার ধারনা । আর এটা না করতে পারলে পশ্চিমাদের তেল - গ্যাস এর স্বার্থ এর সাথে সম্পর্কিত মার্কিন প্যালেস্টাইন নীতি ব্যর্থ হবে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

জনাব মাহাবুব বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষণ। তথ্যবহুল পোষ্ট।

আপনার পোষ্ট পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। :D :D :D

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

আহমেদ_শাহীন বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব মাহাবুব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.