নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৯০\'র সাবেক ছাত্র নেতা মুখলেছউদ্দিন শাহীন নামে পরিচিত, বর্তমানে ব্যবসায়ী

আহমেদ_শাহীন

দার্শনিকেররা এযাবৎ জগৎটাকে শুধু ব্যখ্যা করেছেন , আসল কাজ হলো পরিবর্তন করা - কার্ল মার্কসের এ উক্তিটি আমার খুব প্রিয় ।

আহমেদ_শাহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

৯০\'র আন্দোলনের কিছু টুকরো স্মৃতি - ২

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৫

স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অনেক বিশাল , আমি শুধু আমার নিজের ভুমিকার স্মৃতি গুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করছি । ২৪ মার্চ ১৯৮২ তে এরশাদ দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় সামরিক ক্যু দেতার মাধ্যমে দেশের শাসনভার গ্রহন করে । তখন বিএনপি ছিল ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল । দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার । আওয়ামীলীগ তাৎক্ষনিকভাবে এরশাদের সামরিক শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিল যদিও পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব পূর্ণ অংশীদার ছিল । এরশাদ দেশের সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করে দেশে সামরিক শাসন জারি করে । সমস্থ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে ।

এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম প্রতিবাদ করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ । ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিলে সামরিক জান্তা ট্রাক উঠিয়ে দিলে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালি সাহা নিহত হন । অনেকেই মারাত্মক আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান । ১৯৮৪’র মধ্য ফেব্রুয়ারিতেও ছাত্রদের মিছিলে সামরিক জান্তা গরম পানি ছিটায় , রাবার বুলেট দিয়ে আক্রমন করে , ছাত্রী-ছাত্র নিবাস গুলোতে হামলা চালায় । প্রতিবাদে ছাত্র অঙ্গনে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠে “ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” । এর সাথে সদ্য ক্ষমতা হারানো বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয় । দাবী ছিল সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে সেনাবিহিনিকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে । কিন্তু অবাধ নিরেপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোন বক্তব্য তখনও আসেনি ।

ছাত্র আন্দোলনের এই ঐক্য জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব পড়ে । বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় ঐক্য জোট এবং আওয়ামীলীগ , ন্যাপ , সিপিবি , জাসদ , বাসদ এর সমন্বয়ে ১৫ দলীয় ঐক্য জোট গড়ে উঠে ।

শুরু হয় স্বৈরাচার এরশাদ উৎক্ষাতের আন্দোলন ।

আমি তখন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং ৮৫’র পরে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহবায়ক হিসাবে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে জরিত । এরশাদ চাপের মুখে ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগ দিয়েছে । ঘরোয়া রাজনীতি মানে শুধু মাত্র পার্টি অফিসে আলোচনা , মিটিং করা যাবে । কিন্তু রাস্তায় নামা যাবে না । ঘরোয়া রাজনীতির প্রথম সুযোগেই হরতাল আহবান করা হোল । সারা দেশের মানুষের ব্যাপক অংশ গ্রহনে একের পর এক হরতাল পালিত হতে লাগলো । তখন থেকেই শুরু হোল হাসিনা-খালেদার রাজনীতির উত্থান ।

আমি জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বয়সে সর্ব কনিষ্ঠ । মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি । আওয়ামীলীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জেলা সাভাপতি মোয়াজ্জেম ভাই , জাসদ ছাত্রলীগের জেলা সাভাপতি সাদেক ভাই , ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক মিল্লাত ভাই ও এনামুল ভাইরা তখন অনার্স-মাস্টার্স পরছে অথবা পাশ করে ফেলেছে ।

ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসাবে আনন্দ মোহন কলেজে প্রায় প্রতিদিনই মিটিং মিছিল হতো । একবার মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এলে আশ্চর্য জনক ভাবে মিছিলটি বড় হতে থাকে , একপর্যায়ে মিছিলটি বিক্ষোভ মিছিলে পরিনত হয় এবং মিছিলটি এত বড় হয় যে পুলিশ ভয়ে শুধু মিছিলের পিছনে পিছনে হেঁটেছে কিন্তু বাধা দিতে সাহস পায়নি । কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিছিল করার অপরাধে মোয়াজ্জেম ভাই ও সাদেক ভাইয়ের নামে হুলিয়া বের হয় । তখন বিষয়টা এরকম ছিল যে ময়মনসিংহের ছাত্র আন্দোলনের যে কোন ঘটন-অঘঠনের সমস্ত দায় দায়িত্বই এই দুজনের উপর পড়তো । স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সংঘটিত করার ক্ষেত্রে ময়মনসিংহের ছাত্র নেতা মোয়াজ্জেম ভাই ও সাদেক ভাইয়ের ভূমিকা ও অবদান আমি নিজে খুব কাছ থেকে দেখেছি । এছারাও ছিল বিএনপি’র রানা ভাই, ছাত্রদলের নজরুল ভাই , যুবদলের মাসুদ ভাই ( বর্তমানে উনাদের কোন অস্থিত্ব বিএনপির রাজনীতিতে দেখি না ) । তখন বাকশাল নামে আওয়ামী ধারার আর একটি রাজনৈতিক দল ছিল । এর ছাত্র সংগঠনের নাম ছিল জাতীয় ছাত্র লীগ । ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন ফরিদ ভাই , আমার খুব পছন্দের নেতা । আন্দোলনের নীতি নিরধারনে উনার ভাল ভূমিকা ছিল । তবে মাঠের শক্তি দলের মারদাঙ্গা কর্মী বাহিনী । এই জায়গায় ভাল ভূমিকা ছিল ছত্রদল ও জাসদের । মিছিলের শক্তি ছিল ছাত্র ইউনিয়ন ।

এরশাদ ময়মনসিংহের জামাতা ছিলেন অর্থাৎ রওশন এরশাদের বাড়ী ছিল ময়মনসিংহে । সেই সুবাদে ময়মনসিংহের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির প্রভাব বাড়তে থাকে ।

ঘরোয়া রাজনীতি থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি সফল স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল হয় । নির্বাচনের দাবী জোরাল হয় , আন্দোলন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে । আবার ঘরোয়া রাজনীতি বন্ধ করে রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী হয় । একবার ঘরোয়া রাজনীতি আবার রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা এই প্রক্রিয়া চলে ২/৩ বৎসর পর্যন্ত ।

১৯৮৫ সালে রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তিত পরিবেশ দেখা যেতে শুরু করে । এরশাদ সংলাপের আয়োজন করে । রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে অংশ গ্রহন শুরু করে । ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী দল গুলো থেকে অনেকেই এরশাদের সাথে যোগ দিতে শুরু করেছে । এর মধ্যে কাজী জাফর আহমেদ, মিজান চৌধরী , জিয়াউদ্দিন বাবলু ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে মন্ত্রী হন এবং ১৯৮৫ সালের পরে সিরাজুল হোসেন খান, আনোয়ার জাহিদ এরশাদের মন্ত্রী সভায় যোগ দেন । এই দুজন বাম রাজনীতিতে খুব প্রভাবশালী ছিলেন বলে উনাদের মন্ত্রী হওয়াটা বাম রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পরে । এরকম অনেক বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ইতিমধ্যে মন্ত্রী হয়েছেন এবং যারা কিছুদিন আগে রাজপথে এরশাদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়েছে তারাই এরশাদের প্রতিনিধি হয়ে সংলাপের টেবিলে বসেছে । ৭ দলীয় ঐক্যজোট ও ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের লিয়াজো কমিটিও করা হয়েছে । সেই লিয়াজো কমিটিতে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের কৌশল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে । দুই নেত্রী ১৫০+১৫০ = ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কৌশল নিচ্ছে এমন চিন্তা ভাবনা পত্র পত্রিকায় দেখতে পাই । কিন্তু ৫টি আসনের বেশী এক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না এমন একটি ফরমান জারীর মাধ্যমে এরশাদ এই কৌশল বানচাল করে দেয় । নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয় । নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন বাড়তে থাকে । ২/১ দিন থেমে থেমে লাগাতার হরতাল পালিত হতে থাকে। অবস্থা এমনই বেগতিক হয় যে জনগন এরশাদের পদত্যগ ঘোষণা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০০

আমি আবুলের বাপ বলেছেন: আওয়ামীলীগ তাৎক্ষনিকভাবে এরশাদের সামরিক শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিল যদিও পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব পূর্ণ অংশীদার ছিল।আর বর্তমানে আওয়ামীলীগ শাসনকে বিরোধিতা করেও এরশাদ আওয়ামীলীগের পূর্ণ অংশীদার। এটুকুই পরিবর্তন।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪

আহমেদ_শাহীন বলেছেন: আমি শুধু নিজ চোখে দেখা তৎকালীন ঘটনার বর্ণনা করছি । বর্তমান নিয়ে কোন মন্তব্য করছি না ।

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব ভালো লাগছে সিরিজটা। চলুক,

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

আহমেদ_শাহীন বলেছেন: ধন্যবাদ, উৎসাহ পেলাম ।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

প্রবালরক বলেছেন: "আওয়ামীলীগ তাৎক্ষনিকভাবে এরশাদের সামরিক শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিল যদিও পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব পূর্ণ অংশীদার ছিল।"
আওয়ামী লীগ সে সময় আন্দোলনের পরিবর্তে আন্দোলন আন্দোলন খেলা চালিয়েছিল। নির্বাচনে হাসিনাকে বিজয়ী করে এনে প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে - এরশাদের এ টোপ গিলে হাসিনা। একারনে বিকালে চট্রগ্রামের লাল-দীঘির ময়দানে 'যে নির্বাচনে যাবে সে হবে জাতীয় বেঈমান' ঘোষনা করে ঢাকা এসে সে রাতেই এরশাদের দেয়া নির্বাচনে অংশগ্রহনের সম্মতি জানায় শেখ হাসিনা। যখন দেখলেন এরশাদ তার কথা রাখেনি অর্থাত্ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানায় নি তারপরে গিয়ে শেখ হাসিনা আন্দোলনে একটু সিরিয়াস হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.