নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাওছার আহমদ

আমি সাধারন একজন , মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছা করে প্রিয় মানুষ্টির হাত ধরে সমুদ্রের তীর ঘেসে হাটি অনন্তকাল।কখনো আবার ইচ্ছে করে অবিরাম বৃস্টিতে ভিজি রাত দিনভর। আসলে আমি কে? নিজেই বুঝিনা! এম সি কলেজ সিলেট থেকে লেখাপড়া করে এখান প্রবাসে আছি। ভাল লাগে ব্লগারদের লেখা গুলো।তাই আমার প্রিয় মুহুর্ত ও অনুভুতি সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।

কাওছার আহমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে নারীদের অপরাধ-প্রবনতার কারণ ও প্রতিকার

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:১৩

ইউরোপের শিল্প বিপ্লব সমাজ সংস্থায় পূর্ণমাত্রায় পরিবর্তন এনেছিল। কিন্তু বিপ্লব সমাজকে মতের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে শুরু করেছিল। শিল্প বিপ্লবোত্তর কালে নারী যখন সম্পূর্ণ মুক্ত অবস্থায় শ্রম করতে শুরু করেছিল তখন তার মনে বিরাট বিপ্লব ও আমূল পরিবর্তন সূচিত হলো। স্বোপার্জিত অর্থ সম্পদের সে হলো মালিক।



সমাজ সমষ্টির সাথে তার কার্যক্রমের সম্পর্ক স্থাপিত হলো। নারীরা এখন আর কোনো ক্ষেত্রেই নিজদিগকে অস্তিত্বহীন মনে করে না। তাদের ব্যক্তি স্বাতর্ন্ত্য পুরোপুরিভাবে বিকশিত ও অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। সমাজ জীবনের সর্বস্তরে নারীদের বিচরণ তাদের অপরাধ জগতের সাথে সম্পৃক্ত করতে বাধ্য করছে। অনেক সময় তাকে সমাজের বিরুদ্ধে কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হতে হয়। অপরাধ হচ্ছে সমাজের বিরুদ্ধে মন্দ কাজ যা রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য। এমন শাস্তিযোগ্য অপরাধে পুরুষের পাশাপাশি বাংলার নারীরাও বেশ জড়িয়ে পড়ছে।



যেহেতু বাংলাদেশের নারী সমাজ তখন পুরোপুরিভাবে পুরুষদের প্রতিদ্বন্দ¡ী হয়ে দাঁড়াতে পারেনি যে কারণে বাংলাদেশে পুরুষদের চেয়ে মহিলারা কম অপরাধ করে থাকে। পুরুষ ও মহিলার অপরাধের তুলনা ৯৭:৩। গত শতাব্দীর শেষে ২০০০ সালে দেশের বিভিন্ন জেলখানায় মহিলা কয়েদির সংখ্যা ছিল ১৮৯৯ জন। ৩শ’ কয়েদীর মধ্যে ছিল সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন ও নিরাপত্তা প্রহরায় আটক এই তিন ধরনের কয়েদী।



লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সাম্প্রতিককালে মহিলারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এমন কি মাদকদ্রব্য যেমন হেরোইন, ফেনসিডিল, মারিজুয়ানা ইত্যাদি পাচারে লিপ্ত হয়ে পড়েছে কিছু কিছু নারী। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন অনৈতিক ব্যবসা, হাইজ্যাক, স্মাগলিং, জাল টাকার ব্যবসা, নিষিদ্ধ অস্ত্র বহন ইত্যাদি অপরাধজনক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর এই অল্প সময়ে মহিলাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া সংক্রান্ত ৩৪০টি রিপোর্ট ১২টি জাতীয় এবং ১৯৮টি আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ৪৭৭ জন মহিলা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়েছে যাদের ৪০৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ সমস্ত ঘটনা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে ১০৮টি। ২০০৫ সালের বিভিন্ন কোর্ট মহিলা অপরাধ সংক্রান্ত ১৩টি রায় দিয়েছে। ৩শ’ দণ্ডাদেশে রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের জেল ও জরিমানা।



এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকার পঞ্চাশের অধিক মাদক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নারীরা। মাদক ব্যবসা জগতে প্রচণ্ড ক্ষমতা নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে মাদক সম্রাজ্ঞীরা। তাদের সহায়তায় রয়েছে পুরুষ সহযোগী। পারুল বেগম (৩০) এক অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে। যার মধ্যে রয়েছে ৫০ জন সক্রিয় সদস্য। ২০০৫ সালের ফেব্র“য়ারিতে ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত লিপি বেগমকে এক কিলো হেরোইন এবং নগদ ২ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করে। এগুলো সে আয় করেছিল অবৈধ ড্রাগ ব্যবসার মাধ্যমে। সে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যুরো কর্মকর্তাদের ১ কোটি টাকা দুই কিস্তিতে ঘুষ হিসেবে দেয়ার ওয়াদা করেছিল বলে জানা যায়। ঢাকায় যেসব নারী মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে। তাদের কেউ কেউ অতি দ্রুত বিত্তশালিনী হয়েছে। এদের অনেকে স্বেচ্ছায় এ অবৈধ ব্যবসাকে বেছে নিয়েছে আবার কেউ কেউ এ ব্যবসায় জড়িত তাদের স্বামীদের কারণে এ পথে পা দিয়েছে।



সম্প্রতি জানা গেছে চরম সন্ত্রাসী ও বিভ্রান্ত ধর্মোন্মাদ দলের সাথে জড়িয়ে পড়েছে নারীরা। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে তারা রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ধ্বংসাÍক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উপযুক্ত ও সুইসাইড স্কোয়াড গড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গোটা বাংলাদেশে পাঁচ হাজারের অধিক নারী চরমপন্থীরা তাদের পুরুষ সহযোগীদের সহায়তা প্রদানে সক্রিয়। এসব নারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বোমা হামলায়ও পারদর্শিনী।



নারীদের এমনভাবে অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে তাদের সে পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার নৈতিক দায়িত্ব সমাজপতি, বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানী-গুণীদের। এক সময় নারী সমাজ তাদের অস্তিত্ব, ব্যক্তিস্বাতর্ন্ত্য ও স্বাধীনতা বলতে কোনো কিছুর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। নিছক অধীন অনুসারী ব্যক্তিজীবন ছিল তাদের। তাদের অনৈতিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও চিন্তাগতভাবে তারা একটা ভিন্ন ধরনের জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। তারা তাদের নিজস্ব ব্যাপারাদি নিয়ে ও নিজস্বভাবে চিন্তা করার অধিকার বা সুযোগ পায়নি। তাদের জন্য যা কিছু ভাবনা-চিন্তার ব্যাপার ছিল, তা করতো তাদের পিতামাতা, বড় ভাই-বোন বা তাদের স্বামীরা। তারা সমাজ নিয়েও মাথা ঘামাতো না। যে কারণে সমাজে নারী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।



নারীদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে কেউ কেউ দারিদ্র্য, যৌতুক আদায়, অপরাধী স্বামীকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য টাকা সংগ্রহ করার কোনো কোনো সময় মাদকাসক্ত স্বামীর টাকার চাহিদা মেটানোকে দায়ী করেন। প্রকৃতপক্ষে এসব প্রকৃত কারণ নয়, পার্শ্ব কারণ। মূল কারণ শিল্প বিপ্লব, ও পশ্চিমা ধাঁচের সভ্যতা সংস্কৃতির চর্চা। পশ্চিমা শিল্পবিপ্লব পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নব্য যুবক যুবতীদের গ্রাম এলাকা থেকে শহর অঞ্চলে এনে জড়ো করে ফেলেছে। এখানে নৈতিক শৃ´খলা ছিল সম্পর্ণ শিথিল। যে কারণে মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে হাজির হলো আর তারা একমুঠো খাবারের বিনিময়ে নৈতিক চরিত্রহীনতার কাজে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়লো।



পশ্চিমা ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থায় নারীদের সাধ্যের মধ্যে দীক্ষিতকরণ নারীদের পাপাচার ও নির্লজ্জতা ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। মার্কস, ফ্রয়েড ও দরফায়েস প্রমুখ দার্শনিক নারীদের আহ্বান জানাল যৌন উচ্ছৃ´খলতার পথে যেতে।



তাদের বোঝানো হলো, তারা এই কাজ করলেই থাকতে পারবে পুরুষদের পাশাপাশি সমান অধিকার নিয়ে। আমাদের দেশে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে নারীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছে। যে কারণে তাদের সনাতনী জীবনাচারে পরিবর্তন এসেছে। পশ্চিমা ধরনের গণতন্ত্র চালু হওয়ার কারণে নারী স্বাধীনতায় ধীর ও মন্থর গতিতে হলেও জোয়ার বইতে শুরু করেছে। প্রচুর সংখ্যক নারী এখন ঘরের বাইরে। যেমন গার্মেন্টস শিল্প, এনজিও ও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। গ্রামের নারীরা বিভিন্ন ুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে আÍনির্ভরশীল হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব বিষয় সামনে রেখে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব যে, অনিয়ন্ত্রিত নারী স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার যে ধারণা সমাজে চালু হয়েছে তাকে পুঁজি করে সমাজের অসাধু পুরুষরা নারীদের অধিক ক্ষেত্রে অপরাধ জগতে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।



সঠিক উপাত্তের আভাস থাকার পরেও বলা চলে যে, আমাদের দেশে অপরাধে জড়িত নারী সংখ্যা পুরুষ অপরাধীদের চাইতে অনেক বড়। এর কারণ হয়তো লিঙ্গ ও যৌনস্তর ভেদ ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি ছেলেদের চেয়ে বেশি সতর্ক নজর রাখা হয়, ফলে তারা নারী সুলভ চরিত্রে বড় হয়ে ওঠে। সামাজিক এই মূল্যবোধ নারীদের উগ্র সাংস্কৃতিক অঙ্গন, পাপ ও অপরাধ জগতের প্রবেশ পথে বাতাবরণ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে নারী অপরাধ কম হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি স্থিতি সমাজ বোধ। পুরুষ ও নারীর আচরণ বিশ্লেষণে গঠনের সৃষ্টিগত দিকটিকে উপেক্ষা করা চলে না। নারী পুরুষের দৈহিক কাঠামোগত পার্থক্যকে তাদের আচরণগত পার্থক্যের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা প্রবলভাবে ধর্মীয় ও পিতৃতান্ত্রিক। পিতৃতান্ত্রিকতা ধর্মীয় বোধ থেকে উৎসাহ পেয়ে থাকে। যদিও সমাজে ধর্মীয় চেতনা থেকে পিতৃতান্ত্রিকতা অধিকতর বিস্তৃত ও গভীর।



প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে লক্ষ্য করা গেছে যে, পশ্চিমা জগত জ্ঞান-বিজ্ঞানে কত উন্নতি করে চলছে কিন্তু এর সাথে সাথে নির্লজ্জতা, উলঙ্গপনা ইত্যাদির মাঝে এতটা সীমা অতিক্রম করে চলছে যে, পৃথিবীর ইতিহাসে এর কোনো উদাহরণ মেলে না। আমেরিকায় যেভাবে নারী অপরাধ বেড়ে চলেছে আমাদের দেশে নারী অপরাধ বৃদ্ধির হার সে তুলনায় অনেক কম। এই অপরাধকে আরো কমিয়ে আনতে হলে নারী-পুরুষের জীবনাচার ও কর্মাঙ্গনের স্বাতর্ন্ত্যকে মেনে নিতে হবে। দায়িত্ব ও কর্তব্যের এই সুনির্দিষ্ট পরিধিকে সামনে রেখেই নারী-পুরুষের মধ্যে স্বাতর্ন্ত্যরে একটা সীমা রেখা টেনেছে ইসলাম। এই স্বাতর্ন্ত্যরে সীমা রেখার মধ্যেই তাদের বাস্তব কর্মক্ষেত্র গঠনের মধ্যেই রয়েছে নারী-অপরাধ মুক্তির মূল শক্তি



ukbdnews শেয়ার করা হয়েছে।

লিখেছেন..

উম্মে আইরিন ::

লিনক..http://ukbdnews.com/crime-zone/47710-2011-12-12-11-45-36.html

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.