![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বছরের বড় এক আপুকে সিরিয়াসভাবে (অভিনয় করে) বললাম, আপু আমাকে বিয়ে করবে? এই আপু আমাকে অসম্ভব স্নেহ আর আদর করে, iশেয়ার করে তার জীবনের দুঃখ বেদনা আর হাসি কান্নার সবকিছু। মাঝে মাঝে তার প্রেমিক বানিয়ে বহু গল্প করতো আর হাসতো। বলতো কবি, তুই আমার সমান বা বড় হলে ছেড়ে দিতাম না। সে সুযোগটা নিলাম এবার। আমার অভিনয় বুঝতে না পেয়ে তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। সে আকাশে শরতের সাদা মেঘের পেঁজা তুলোর মত কোন কোমলতা নেই। বরং পুরো আকাশ যেন গ্রীষ্মের খরতাপে কাঠ-কয়লার মতো পুড়ে ঘনকালো মেঘের গর্জনে প্রকম্পিত হচ্ছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। আপুর ঠোটদুটো তিরতির করে কাঁপছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের চিকচিক অস্থিরতা। আবার বললাম কি হলো তোমার? আমার প্রশ্নের হ্যাঁ বা না একটা কিছু বল। আচ্ছা এখনই বলতে হবে না। সময় নাও সপ্তাহখানেক, পরে বলিও। বল কি খাবে এখন, চা না পাকুরা?
আপু কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বকতে শুরু করলেন। তোর কি আছে? হ্যাঁ বল, তোর কি আছে? আমায় কি খাওয়াবি বিয়ে করে। চাকরি আছে, চাল-চুলো আছে, বউ কি জিনিস তুই জানিস ভালো করে? বিয়ে করবি! শখ কতো চান্দুর! আমার মাথা আওলা করে দিয়ে বলছিস চা না পাকুরা। আদর করি বলে মাথায় ওঠে গেছিস। কখনো আর আমার সামনে আসবি না বলে দিলাম। আমার বর লাগবে সরকারী চাকুরিজীবী, বুঝলি। আগে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট হো। তারপর সাহস দেখাস।
বজ্রপাতর পর বৃষ্টি হয়, তারপর আকাশ হয় ঝকঝকে। এই মেয়ের আকাশে ভীষণ বজ্রপাত হলো বৃষ্টি হলোনা। রাগে তাই গড়গড় করতে করতে চলে গেল। ভাবছি। ভুল করলাম নাতো। আমাকে এতো এতো স্নেহ করে, ছোট ভাইটির মতো আদর করা এমন আপুকে হারালাম নাতো।
রাত দুটো পার হচ্ছে। আপুর ফোন। রিসিভ করতেই বলছে যে তুই কি আমাকে ঘুমাতে দিবিনা নাকি। সত্যি করে বলতো ফাজলামি করেছিস আমার সাথে? আমি বললাম, ফাজলামি না, আমি সত্যি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। ভাবলাম রাগ করবে। তা হলোনা। রাত বড় আবেগি করে মানুষকে। আঁধারের মায়ায় ফেলে শিরায় শিরায় মুগ্ধতা, সোহাগ আর ভালোবাসার রস বিলিয়ে দেয়। আপুর কন্ঠে কোমলতা, স্বরে আবেগি আভাষ। নিশ্চয় কেমিস্ট্রি শুরু করা যাবে এবার।
আমার তত্ত্বকথা বলতে শুরু করলাম। তুমি যে বলেছিলে আমি কি খাওয়াব কোথায় রাখবো। তা কি জানতে চাও? তবে শুনো। সৈকতে আছড়ে পড়া মাঝ সাগরের হাওয়া, পূর্ণিমা রাতের ফকফকা জোছনা, বুনো হরিনের পায়ের অস্থিরতা আর ইত্যকার অদ্ভূদ খাবার খাবে আমার কাছে। থাকবে পাহাড়ে জঙ্গলে শহরের ফুটপাতে। পারবে না? আসল কথা হলো তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাইব কোন ভাবনায়! বরং তুমি যে এখনো বিয়ে করছ না তার মূল কারন জানো? না জানোনা। তোমার মাঝে অহংকার আছে সরকারী চাকুরির। তোমার জামাই পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট হবে তুমি তা দেশে দেশে প্রচার করবে সাজুগুজো করে, তাই নয় কি? কেন তুমিও তো মাস্টার্স করেছ। নিজের চিন্তা তো এত করোনা। তুমি নিজেকে করোনা কেন নারীর অহংকার। তোমার পিছে পিছে যে ভাইটি ঘোরে ঘোরে তার ভালোবাসার সর্বস্ব দিয়েছে তুমি তার দিকে একটি বারও তো মুখ ফিরে তাকাওনি। কেন? সে ছেলে বেকার বলে। তার সরকারী চাকরি হওয়ার নিশ্চয়তা নাই বলে? চাকরিই কি সব?
তুমি কি জানো, এ শহরের অর্ধেকের বেশি কোটিপতি স্বামী-স্ত্রী বিছানা আর ফ্লোরে আলাদা আলাদা ঘুমায়। কতজন পরকীয়ার লিপ্ত এবং দম্পত্তির কথার মাঝে হাজার বছরের দেয়াল। সুখ কিসে? টাকায় নাকি প্রেমে। বস্তুগত ভাবনায় মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। সুখ হয়তো পায় কিন্তু শান্তির সাদা পায়রা থাকেনা। উড়াল দিয়ে ওই কাওরান বাজারের রেল লাইনের দুপাশের বস্তিতে বাস করে। সেখানে গিয়ে দেখ টিভি নাটকে কেউ জোকস বললে তারা হেসে গড়াগড়ি দেয়। কয়টা সরকারিজীবী ওভাবে হাসতে পারে? আমায় বিয়ে করলে আমি সুখ দেবনা কিন্তু প্রেম দিয়ে তোমার আত্মায় সুগন্ধী ছড়াতে পারবো নিশ্চিত। কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। তোমার উচিত সে ভাইটির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া। ছেলেতো চেহারায় কথায় সুন্দর। শিক্ষিত মার্জিত ভদ্র। চাকরি একটা হবেই।
তার দুদিন পর আপু আমাকে ডেকে বলল সে ছেলের জোছনা খাওয়ানোর ক্ষমতা কতটুকু তা তুই এ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নে। সময় দুই মাস। ইচ্ছা করেই তিন মাস পর পজিটিভ রিপোর্ট দিলাম। বাড়িতে মুরুব্বিদের দ্বারা বিয়ে ঠিক হয়েছে, আগামী শুক্রবার বিয়ে। আমাকে যেতেই হবে। আমি ঠিক করেছি যাবনা। সেদিন সকাল থেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ রাখব। শ্বশুর বাড়ি যাবার আনন্দে হোক অথবা বাপের বাড়ি ছাড়ার বেদনায় হোক বাঙালী মেয়েরা কেঁদে আকুল হবে এটাই স্বাভাবিক। এই মেয়েটাও কেঁদে পার্লারের মেক-আপ ভাসিয়ে দেবে নিশ্চিত জানি। আমি চাই তার সে অথই কান্নার জলের মাঝে আমার অনুপস্থিতির জন্যও কিছুটা ব্যথা বাড়ুক। ক্ষণিকের অভাব মানুষের মাঝে ভালোবাসা বাড়ায়। আমার জন্যও বাড়বে, তার সুখের মাঝে আমি নেই অথচ দুঃখের সময় ছিলাম এই ব্যাপার প্রতিটি হৃদয়বান জীবকেই আন্দোলিত করে তোলে মনের ভেতরে।
তুমি সুখি হও, মহা সুখি। যে জোছনা আর সাগরের হাওয়া খাওয়ার জন্য আমার কথায় এই ছেলেটার হাত ধরতে যাচ্ছো, জীবনের হিসেব নিকেশে তা পরিপূর্ণ ভাবে
আদায় করে পাও এই কামনা রইলো আপু।
©somewhere in net ltd.