আমিই রাজীব, বাবু, অভিজিত: খুন করবে আমায়?

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১১

প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ স্যার, ব্লগার রাজিব হায়দার, বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের পর আজ সোমবার সকালে ঢাকার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন প্রগতিশীল ব্লগার, অনলাইন এক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু। যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তবে বাংলাদেশে এটা এখন আর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। পরিকল্পিতভাবে খুন করা হচ্ছে একের পর এক ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সরব এক্টিভিস্টদের







দেশের আর কতো সূর্যসন্তানদের রক্ত ঝরাতে পারলে বন্ধ হবে রক্তখেকো নরপিশাচদের পৈশাচিক উল্লাস? আর কতো বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করতে পারলে থামবে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীর নির্লজ্জ আস্ফালন? জানি না। তাই মাঝে মাঝে মন চায়, চলে যাই এ দেশ থেকে, যেখানে যুক্তিতর্কের কোনো স্থান নেই। যুক্তির বিপরীতে চাপাতি'র ভাষা যেখানে মূর্খ, জানোয়ারদের শেষ আশ্রয়স্থল। পরে আবার বিবেক সমর্থন করে না এ সিদ্ধান্তকে। বিবেক বলে, এ জানোয়ারদের ভয়ে তুই যাবি কেনো এ দেশ ছেড়ে? এতে তো বিজয় ওই মৌলবাদীদের হবে। কেননা, ওরাতো চায় এ দেশ থেকে রাজীব, অভিজিৎ আর ওয়াশিকুর'দের উৎখাত করতে। এরা না থাকলেইতো সোনার বাংলা'কে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো মৌলবাদের আখড়া বানানো যাবে। তাই এখানে থেকেই যুদ্ধ করতে হবে। আর কোটি কোটি ওয়াশিকুররা এ যুদ্ধ চালাচ্ছে বলেই ওরা এখনো সরাসরি আক্রমন করতে পারে না। কাপুরুষের মতো আক্রমন করে।







অভিজিৎ রায়কে নরপিশাচরা কোপানোর পর হত্যাকারীদের ধরতে বা বন্যা আহমেদকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আশেপাশের লোকজন কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছিলো। কিন্তু আজ তেমনটা হয়নি। 'তৃতীয় লিঙ্গ'র মানুষরা আজ প্রথম লিঙ্গের চেয়েও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। খুন করে পালানোর সময় কাপুরুষ, খুনিদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন, পুলিশের হাতে দিয়েছেন। স্যালুট আর অভিনন্দন জানাই তাদের। সেই সঙ্গে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান, পুরস্কার দেয়ার জোর দাবী জানাই এ প্রগতিশীল সরকারের কাছে। এতে ভবিষ্যতে খুনিদেরকে ধরার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরী হবে। পার পাবে না খুনিরা।







খুনের অস্ত্রসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়া খুনিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা ব্লগ, ইন্টারনেট বোঝেন না। তাদের একজন শিক্ষক বলেছেন, ওয়াশিকুর ইসলামবিরোধী, নাস্তিক। তাই তাকে হত্যা করা 'ঈমানি দায়িত্ব'। আর তারা সেই 'দায়িত্ব' পালন করেছেন।







আমার দেশি 'সাংবাদিক'রা পত্রিকায় সিরিজ মিথ্যাচার করার পর ব্লগার রাজীব হায়দারকে খুন করেছিলো তাদের দোসর মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারপর থেকে এখনো থামেনি মুক্তচিন্তার চর্চাকারী ব্লগারদেরকে 'নিধন'র কিলিং মিশন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনীকে বুদ্ধিজীবি আর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, ধর্ষণ, আর লুটপাটে উৎসাহ দিতো সংগ্রাম 'পত্রিকা'। আর ২০১৩ সাল থেকে তার চেয়েও ভয়াবহ মিথ্যাচার করে মুক্তচিন্তার ব্লগার, লেখকদের হত্যা করার উৎসাহ দিয়েছে আমার দেশ। তখনো ব্লগারদের খুন, ফাঁসির দাবীতে সোচ্চার থাকা মধ্যযুগীয় মনমানসিকতার মৌলবাদীরা একপর্যায়ে বলেছিলো, আমরা এতো কিছু বুঝি না। পত্রিকায় এসেছে ব্লগাররা নাস্তিক, তাই নাস্তিকদের ফাঁসি দিতেই হবে। ব্লগ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মূর্খরা বলেছিলো, ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানো হয়! ব্লগ, ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারনাবিহীন এ মানুষগুলোর ভেতরের পশুত্বকে জাগিয়ে দিয়েছিলো আমার দেশ'র গুটিকয়েক 'সাংবাদিক' নামধারী মৌলবাদী।



গোয়েন্দা তথ্যমতে, শাহবাগে গড়ে ওঠা তারুণ্যের গণজাগরণ মঞ্চ, ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, মুক্তচিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, আর গুজব ছড়িয়ে তাদেরকে হত্যা করার জন্য ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লা (পড়ুন, বালের কেল্লা) খোলেছিলো হেফাজত, জামায়াত, শিবির। এ পেজের নিয়ন্ত্রনে আইএসআই, জামায়াত, শিবির, হেফাজতের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্টে ছিলো আমার দেশ। এজন্য আমার দেশ'কে ৪০ কোটি টাকা দিয়েছিলো আইএসআই। যা পরবর্তীতে তথ্য, প্রমাণসহ বরেণ্য সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের সম্পাদিত সাপ্তাহিক একটি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিলো।









মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের পর কিছুদিনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে বালের কেল্লা খ্যাত গুজব মাধ্যম। বন্ধ হয়ে যায় আমার দেশ। কিন্তু সেই গুজব, আর মিথ্যাচারের শিকার এখনো হয়ে যাচ্ছে অভিজিৎ, ওয়াশিকুর'রা। মাহমুদুর গং'দের প্রিয় সেই তেঁতুল শফীর 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'র (পড়ুন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) মৌলবাদী ছেলেরা আজ হত্যা করলো মুক্তচিন্তার এক ভবিষ্যত কর্ণধারকে। দেশের অন্যতম এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রক্তাক্ত করেছে ওই হায়েনারা। জানি, উত্তরসূরীরা খুন করলেও তেঁতুল শফি কিংবা মাহমুদ গং'দের কিছু হবে না! তাই কলম, বা কীবোর্ড চালাতে হবে আক্রান্ত, বা আক্রমনের সম্ভাব্য হুমকিতে থাকা এ ব্লগারদেরই।



বরাবরের মতো আবারো ওই হায়েনাদেরকে বলতে চাই, খুনের মাধ্যমে ব্যক্তি অভিজিৎ, ওয়াশিকুরদের খুন করা যায়, কিন্তু তাদের লেখা, চিন্তা-চেতনাকে খুন করা যায় না। আর যদি তোদের 'চিন্তা' এতোই অকাট্য হয়, তবে কেনো তা প্রমাণ না করে চাপাতি চেতনা প্রয়োগ করিস? তোদের অকাট্য দলিল থাকলে তা পেশ কর। এ দেহে একবিন্দু পরিমান রক্ত থাকা পর্যন্ত, ক্ষুদ্র মেধার দ্বারা লড়াই চালিয়ে যাবো অক্ষরের ডান পাশে অক্ষর বসিয়ে নিজের মুক্তচিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য। মৌলবাদের রক্তচক্ষু, কিংবা হত্যার হুমকি থাকা সত্বেও। মারবি আমাকে? রাজীব, অভিজিত কিংবা ওয়াশকের মতো? আমি প্রস্তুত আছি। আর প্রস্তুত আছি এ জন্য, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একদিন মরণ হবেই। তবে তোদের 'চেতনা'র বিনাশ করে তবেই মরবো।







তবে এখন থেকে মৌলবাদ বিরোধী প্রগতিশশীল, মুক্তমনাদের সম্মিলিত আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই। কেননা, তা না হলে কিলিং মিশনের পরবর্তী টার্গেট হতে পারেন আপনিও। বিদ্রোহী এ মেধাবী বীরদের হত্যায় যদি গণআন্দোলন না হয় তবে এর পরের ধাপের টার্গেট হবেন আপনারা। কেননা, তখন প্রতিবাদ করার মতো লোক থাকবে না।



দুঃখিত, ওয়াশিকুর রহমান। তোমাকে আমরা নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা আবারো ব্যর্থ হয়েছি। তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার যোগ্য নই আমরা। সেই যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছি। কেননা, এখনো মাহমুদুর রহমান গং'রা, তাদের প্রেতাত্নারা খুন করে যাচ্ছে তোমাদের। তবে, তুমিতো মহান। ক্ষমা করে দিও আমাদেরকে। আর ওপর থেকে আশীর্বাদ করো যেনো আমিও হতে পারি একজন ওয়াশিকুর রহমান।



আহসান কামরুল

৩০-০৩-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ,

ঢাকা।

৭ টি +১/-০