নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যরচনাঃ গচ্চা

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪

উত্তরবঙ্গের কোন এক জেলার অধিবাসীদের কৃপণতার কথা সবাই জানে। তাদের এই কার্পণ্য নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প খোদ উত্তরবঙ্গেই চালু আছে। এই জেলার লোকজন নাকি পোস্ট অফিস ও রেল স্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে খাম-পোস্টকার্ড ও ট্রেনের টিকিটের দাম নিয়ে দরাদরি করে। আমি নিজে অবশ্য এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হলেও একটু ভিন্ন রকম ঘটনা ঘটতে দেখেছি। এই জেলার বাসিন্দা আমার এক অফিস কলিগকে দেখেছি ফার্মেসীতে গিয়ে সামান্য বেশি দামের কারণে ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশনের বাইরে অন্য ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে। বেশি দামের ওষুধটি ছিল একটি নাম করা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির। ক্যাপসুল প্রতি মাত্র পঞ্চাশ পয়সা বেশি দিতে হবে বলে তিনি এক অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ কিনে দাঁত বের করে হেসে বললেন, ‘শুনলেন তো, দোকানদার কী বললো? একই ওষুধ। শুধু শুধু বেশি দাম দিতে যাবো কেন বলুন?’
আমি বললাম, ‘হক সাহেব, এটা বোধহয় ঠিক হলো না। ওষুধের মান কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। দামে এত সামান্য পার্থক্যের জন্য আজে বাজে কোম্পানির ওষুধ না খাওয়াই ভালো। ডাক্তার তো ভালো কোম্পানির ওষুধই লিখে দিয়েছেন।’
‘আরে রাখেন আপনার ডাক্তার!’ আব্দুল হক তুড়ি মেরে ডাক্তারকে উড়িয়ে দিয়ে তার স্ত্রীর জন্য অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ কিনে নিয়ে গেলেন।

কিন্তু এক সপ্তাহ ওষুধ খেয়েও তার স্ত্রীর ব্যথা ভালো হলো না। ডাক্তারকে দ্বিতীয় দফা দেখাতে গেলে আবার ফি দিতে হবে এবং ঝাড়ি খেতে হবে বলে হক সাহেব তার কাছে না গিয়ে প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ কিনে নিয়ে বাসায় গেলেন। তার আগে বাজে ওষুধ দেওয়ার জন্য ফার্মেসীর সেই কর্মচারীর সাথে তার ঝগড়াঝাঁটি ও হাতাহাতি হলো। এতে তার চশমার একটা কাঁচ ভেঙ্গে গেল। তবে ভালো খবর হলো এই যে, নতুন ওষুধ খেয়ে তার স্ত্রীর ব্যথা কমে যেতে লাগলো।
আব্দুল হক অফিসে বসে মনে মনে একটা হিসাব কষে আমাকে বললেন, ‘হেনা সাহেব, আপনার কথা না শুনে আমার আটানব্বই টাকা গচ্চা গেল। সেদিন আপনি আমাকে আর একটু ভয় দেখালেন না কেন? তাহলেই তো ওই ওষুধটা আর নিতাম না। ওফ্! আটানব্বই টাকা! ভাবতে পারেন?’
আমি বললাম, ‘ভেবে আর কী হবে? হিসাবের গরমিল হলো এখন ভাবনার বিষয়। আপনার গচ্চা যাওয়া টাকার হিসাবে একটু গরমিল আছে। আরও কিছু টাকা বোধহয় যোগ হবে।’
‘কী রকম, কী রকম?’ আব্দুল হক নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার কাছে এসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তার মানসাঙ্কের হিসাবটা বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, ‘সাত টাকা করে একটা ক্যাপসুলের দাম। প্রতিদিন দু’টা করে খেলে চৌদ্দ টাকা হয়। আমি এক সপ্তাহের ওষুধ নিয়েছিলাম। তাহলে চৌদ্দ ইনটু সাত মোট আটানব্বই টাকা হচ্ছে না?’
আমি বললাম, ‘সেটা তো ঠিক আছে। কিন্তু ফার্মেসী দোকানের কর্মচারীর সাথে ঘুষোঘুষি করে যে চশমার একটা কাঁচ ভেঙ্গে এলেন, ওটার দাম ধরবেন না? চশমা ছাড়া তো আপনি একটা লেখাও পড়তে পারেন না। অফিসে কাজ করবেন কীভাবে?’
‘তাই তো! ওহ্ সর্বনাশ! আপনি তো ঠিক কথাই বলেছেন।’ আব্দুল হক উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, ‘আচ্ছা, চশমার একটা কাঁচের দাম কত হবে আপনার আইডিয়া আছে?’
‘না ভাই। আইডিয়া নাই। চশমার দোকানে গেলেই জানতে পারবেন। তবে সেখানে গিয়ে পয়সা বাঁচানোর জন্য যদি আবার কম পাওয়ারের কাঁচ নেন তো পরে খরচা আরও বেড়ে যাবে বলে দিচ্ছি।’
‘আরে না! কী যে বলেন না! চশমার কাঁচে যে পাওয়ার লাগবে সেটাই তো নিতে হবে। কম পাওয়ার নিলে ও কাঁচ কী কাজে লাগবে? মাঝখান থেকে চোখটা আরও খারাপ হবে।’
‘এই তো বেশ বুঝতে পারছেন। তাহলে এবার দোকানে গিয়ে চশমার কাঁচ লাগান আর কাঁচের দাম ওষুধের দামের সাথে যোগ করে দেখুন মোট কত টাকা গচ্চা গেল। চশমার জন্য এ ক’দিনে আপনার কিন্তু অনেক ফাইল পেন্ডিং পড়ে গেছে।’
আব্দুল হক বিরক্তির সাথে হাত নেড়ে বললেন, ‘আপনি তো বলেই খালাস। আরে ভাই, আমার দুই চোখে দুই রকম পাওয়ার। ডান চোখের পাওয়ার যে কত ছিল সেটা তো এখন আমার মনে নেই। আট দশ বছর আগে নেওয়া চশমা। এতদিন কী আর মনে থাকে?’
‘চশমার প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে দোকানে যাবেন।’
‘অতদিন আগের প্রেসক্রিপশন যদি বাসায় খুঁজে না পাই? আট দশ বছরে তিনবার বদলী হয়েছি। ওই প্রেসক্রিপশন কী আর আছে? মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
‘তাহলে চোখের ডাক্তারকে দেখিয়ে নতুন প্রেসক্রিপশন নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে চোখের ডাক্তারের ফিও গচ্চা যাওয়া টাকার সাথে যোগ করতে হবে। তিনি তো আর বিনে পয়সায় প্রেসক্রিপশন দেবেন না। এ্যামাউন্টটা তাহলে আর একটু বাড়বে।’
আব্দুল হক দু’হাতে মাথার চুল খামচে ধরে হতাশ গলায় বললেন, ‘নাহ্, আপনি একের পর এক আমার খরচ শুধু বাড়িয়েই যাচ্ছেন। এত টাকা আমি পাবো কোথায়?’
‘ওই ফালতু ওষুধ কোম্পানির নামে একটা ক্ষতিপূরণের মামলা ঠুকে দেন। দেখবেন আপনার সব টাকা পেয়ে গেছেন।’
‘আমার এই বিপদের দিনে আপনি ঠাট্টা করছেন?’

কথাবার্তা সেন্টিমেন্টাল পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে আমি আর কিছু বললাম না। আব্দুল হক আমার ওপর বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন। বাসায় গিয়ে তিনি সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় লাঙ্গল চষা করে খুঁজেও প্রেসক্রিপশন পেলেন না। অগত্যা কী আর করা! ডাক্তারের ফি এড়ানোর জন্য লায়নস চক্ষু হাসপাতালের আউটডোরে কুড়ি টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তিনি চোখ দেখালেন। সেখানে তার বাঁ চোখের পাওয়ারও বদলে দেওয়া হলো। কিন্তু তিনি চশমার দোকানে গিয়ে বিস্তর দরদাম করে শুধু ভেঙ্গে যাওয়া চশমার ডান চোখের কাঁচ লাগিয়ে নিয়ে চলে এলেন।

এরপর একদিন অফিসে বসে কাজ করতে করতে আব্দুল হক ফিস ফিস করে আমাকে বললেন, ‘আচ্ছা, মামলা করলে কী সত্যিই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে?’
আমি বললাম, ‘ভেজাল বা নকল ওষুধের জন্য তো ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা যায় বলে শুনেছি। এখন ক্ষতিপূরণ কী পাবেন না পাবেন সেটা একজন উকিলের সাথে পরামর্শ করে দেখতে হবে।’
‘তাহলে তো আবার উকিলকে ফি দিতে হবে। তাই না?’
‘শুধু ফি বলছেন কেন? মামলার অন্যান্য খরচ আছে না? স্ট্যাম্পের খরচ, মুহুরীর খরচ, ওকালতনামা...............।’
হক সাহেব দু’হাতে মাথার চুল খামচে ধরে ডুকরে উঠলেন। আমার দুই হাত তার নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘আর বলবেন না প্লিজ!’
************************************************************************************************************
রি-পোস্ট।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম। পড়ে মজাই পেলাম। এক কথায় দারুণ রম্য।

১ম হইছি চা দেন।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।
কামাল ভাই এখনো চা নিয়া আসে নাই? লুকটা কী আবার বনে জঙ্গলে ফটু তুলতে গেল?

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫

কথাকাহন বলেছেন: কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘আর বলবেন না প্লিজ!’
আপনার রম্য লেখা বন্ধ করবেন না প্লিজ।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ কথাকাহন। বেঁচে থাকলে নিশ্চয় বন্ধ হবে না ভাই।

শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪০

দিগন্ত জর্জ বলেছেন: হাহাহাহাহাহা... দারূন বিনোদন। মজা পেলাম।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ দিগন্ত জর্জ। শুভেচ্ছা রইল।

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:১৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চরম বিনোদন B-)

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আরন্যক রাখাল।
শুভেচ্ছা রইল।

৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩২

বিজন রয় বলেছেন: জটিল ও চরম।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ বিজন রয়।
ভালো থাকবেন।

৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমি উত্তরবঙ্গের মানুষ। কিন্তু তেমন কোন জেলার নাম শুনি নাই। কোন জেলা? আবার পাবনা না তো! X(

লেখা ভালো হৈছে।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। জেলাটির নাম উল্লেখ করে বিতর্কে জড়াতে চাই না ভাই। তবে এটুকু বলতে পারি, পাবনা নয়।
ধন্যবাদ হাসান মাহবুব ভাই। শুভেচ্ছা রইল।

৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০

গোধুলী রঙ বলেছেন: আমার মনে হয়, কিছু মানুষ আসলেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে এমন কিপটা হয়ে যান, পরে আর সেই স্বভাব থেকে বেরোতে পারেন না।

লেখা দারুন হৈছে।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হতে পারে। তবে আব্দুল হক সাহেব যে জেলার মানুষ, সেই জেলার অধিকাংশ মানুষের মধ্যে কার্পণ্যবোধ প্রবল। এর ঐতিহাসিক, জেনেটিক ও সামাজিক কারণও থাকতে পারে।
ধন্যবাদ গোধুলী রঙ। শুভেচ্ছা রইল।

৮| ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৬

সোহানী বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো..........

০৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ সোহানী।
শুভেচ্ছা রইল।

৯| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: হা হা হা ! উনার কপাল খারাপ আর কী । রম্য রসে বাস্তবিক গল্প ভাল লাগে, বাড়তি কিছু যোগ করলে মজাটা নষ্ট হয়ে যায় । আপনারটা যেমন তেমনি রম্য ভাল লাগে ।

০৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ কথাকথিকেথিকথন।
শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.