নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ চুয়াত্তরের শীত

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:০৭

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের মহল্লায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দু’দল ছেলের মধ্যে মারামারি হয়। আমি তখন কলেজের ছাত্র। আমি নিজে ঐ সংঘর্ষে জড়িত না থাকলেও মহল্লার আট দশজন ছেলের সাথে আমাকেও আসামী করে মামলা দেওয়া হয়। মামলার বাদী ছিলেন একজন ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা, যার ছেলে মারামারিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায় এবং সারা রাত নির্যাতন করে পরদিন কোর্টে চালান করে দেয়। আমার বাবা একজন এ্যাডভোকেট হওয়া সত্ত্বেও বাদীপক্ষের অনৈতিক দাপটের কারণে ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানোর হুকুম দেন।

প্রায় ছয় মাস রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার পর আব্বার অক্লান্ত চেষ্টায় আমার জামিন হয়। কিন্তু কিছুদিন পর জামিন বাতিল করে কোর্ট থেকে আমার নামে আবার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়। আমার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে আব্বা আমাকে রাজশাহীতে রাখার ঝুঁকি নিলেন না। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য তিনি আমাকে চট্টগ্রামে আমার এক মামার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে আমি তিন মাস আত্মগোপনে থাকি। সেটা ছিল ১৯৭৪ সালের শীতকাল।

মামা ছিলেন বয়সে তরুণ এবং একটি তেল কোম্পানির (সম্ভবতঃ শেল অয়েল) কর্মকর্তা। তিনি তখনো অবিবাহিত। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় একটি তিন তলা ফ্ল্যাট বাড়ির দোতলা ভাড়া নিয়ে তিনি থাকতেন। আবদুল নামে নোয়াখালীর এক দরিদ্র অথচ বিশ্বস্ত ছেলে (আমার সমবয়সী) মামার রান্নাবান্না করতো এবং বাসার সার্বিক দেখাশুনা করতো। মামা সকালে অফিসে চলে যেতেন, ফিরতেন রাত দশটা এগারোটার দিকে। মাঝে মাঝে তাকে দু’একদিনের জন্য ঢাকায়ও যেতে হতো। ফলে আবদুলকে বাসায় প্রায়ই নিঃসঙ্গ থাকতে হতো। আমি যাওয়ার পর কথা বলার একজন মানুষ পেয়ে আবদুল খুব খুশি। সে রান্নাবান্না ও ঝাড় পোঁছ করার ফাঁকে ফাঁকে আমার সাথে গল্প করতো। প্রথম প্রথম তার আঞ্চলিক ভাষা বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হলেও পরের দিকে ঠিক হয়ে যায়।

সময়টা ছিল দুর্ভিক্ষের। চারদিকে অরাজক অবস্থা। সারা দেশে মানুষের খাবার অভাব। দেড় দুই টাকা সের চাল হঠাৎ করে দশ টাকায় উঠে যায়। গম বাজার থেকে উধাও। অন্যান্য খাদ্যপন্যের দাম আকাশচুম্বী। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুই মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) থেকে এক ধরণের অসিদ্ধ মোটা চাল আসতো, যা ছিল খাওয়ার অনুপযোগী। তবু সেই চাল পাওয়ার জন্য গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। আবদুল চকবাজারে বাজার করতে যেত। ফেরার পথে কোন কোন দিন রাস্তার পাশে হতদরিদ্র নিরন্ন মানুষের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে সে কেঁদে ফেলতো। বাসায় এসে মাথা চেপে ধরে বসে থাকতো সে। সেদিন সারাদিন কাজকর্মে তার মন বসতো না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতো না। আমি ভয়ে বাসা থেকে বেরতাম না। না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া মানুষের লাশ দেখা আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর ছিল আর ছিল পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়। আমি সারাদিন বাসার ভেতর স্বেচ্ছাবন্দী হয়ে থাকতাম।

বাসায় প্রতিদিন দলে দলে ভিক্ষুক আসতো। ক্ষুধার্ত ছিন্নবস্ত্র নারী, পুরুষ, শিশু। তাদের কংকালসার দেহ ও কোটরাগত চোখ দেখে আমার বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে উঠতো। প্রচণ্ড শীতেও তাদের গায়ে ছেঁড়া ফাটা যৎসামান্য কাপড়। শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে তারা অসহায়ের মতো হাত বাড়িয়ে দিত। বাড়ির তিন তলায় কেউ থাকতো না। এক তলায় বাড়ির মালিক নিজে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করতেন। তিনি দু’চার আনা পয়সা কাউকে কাউকে দিলেও কখনো চাল দিতেন না। ভিক্ষুকরা পয়সার বদলে এক মুঠো চালের জন্য হাহাকার করতো। আমি আসার আগে আবদুল কী করতো, জানিনা। কিন্তু আমি আসার পর মনিবের ভাগ্নে বলে আমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সে তাকিয়ে থাকতো। আমি সবাইকে এক মুঠো করে চাল দিতে বললে সে খুব খুশি হতো।

এই ভিক্ষুকদের মধ্যে এক বৃদ্ধ ও তার দশ বারো বছর বয়সী ছেলের প্রতি আবদুল খুব সদয় ছিল। অন্য ভিক্ষুকদের সাথে খিচির মিচির করলেও এই বৃদ্ধকে সে কিছু বলতো না। তাকে এক মুঠোর জায়গায় দু’মুঠো চাল দিতেও সে দ্বিধা করতো না। ইনিয়ে বিনিয়ে আমার কাছ থেকে কিছু পয়সা নিয়ে সে বৃদ্ধের হাতে তুলে দিত। এই বৃদ্ধের প্রতি তার আলাদা মমত্ববোধের কারণ আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না।

একদিনের ঘটনা। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। পুরো চট্টগ্রাম শহর জবুথুবু। রাস্তায় লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। আমি কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, বৃদ্ধ তার ছেলেটিকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসার দিকে আসছে। দু’জনেই ঠক ঠক করে কাঁপছে। আবদুল আমার আগেই ওদের দেখতে পেয়েছে। সে খুব দ্রুত নিচে নেমে বাড়ির গেট খুলে ওদেরকে দোতলায় নিয়ে এলো। আবদুলের এই কাজে আমি খুব বিরক্ত হলাম। ফকির মিসকিনকে একেবারে বাড়ির ভেতর নিয়ে আসাটা বাড়ির মালিকেরও পছন্দ নয়। তিনি আবদুলকে বকাঝকাও করলেন। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, বৃদ্ধ তার ছেলেকে নিয়ে দরজার সামনে দোতলার ল্যান্ডিং-এর ওপর বসে আছে আর আবদুল নিচু স্বরে তাদের কী যেন বলছে। আমাকে দেখে ওরা চুপ হয়ে গেল। ছেলেটি দু’হাত বুকের মধ্যে নিয়ে জড়সড় হয়ে ওর বাপের কোল ঘেঁষে বসে আছে আর দু’জনেই আতংকিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ঠাণ্ডায় থর থর করে কাঁপছে ওরা। আমি আবদুলকে বললাম, ‘ওদের কিছু চাল আর আট আনা পয়সা দিয়ে বিদায় করে দাও।’

বৃদ্ধ হঠাৎ আমার পা জড়িয়ে ধরলো। তারপর আঞ্চলিক ভাষায় কাকুতি মিনতি করে যা বললো, তা’ এরকমঃ আজ তারা চাল বা পয়সা চায় না। আজ তার ছেলেটিকে যেন আমি একটা গরম কাপড় দেই। এই শীতে ছেলেটি যে আর বাঁচে না! একদিন অনাহারে থাকলেও বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু এই কনকনে শীতে ছেলেটি যে তার আজই মরে যাবে!

অবিশ্বাস্য অসহায় দৃষ্টিতে ওরা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভয়ে ও ঠাণ্ডায় থর থর করে কাঁপছে দু’জনেই। আমি বাসার ভেতরে এসে আমার বেডরুমে দাঁড়িয়ে ভাবছি, কী করা যায়! আমার একটা ফুলহাতা সোয়েটার ও একটা উলেন জ্যাকেট ছিল। বিছানার দুটো চাদরের (বেডশিট) একটা আলনায় ঝোলানো ছিল। সেই চাদর ও জ্যাকেটটা নিয়ে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। জ্যাকেটটা ছেলেটির গায়ে পরিয়ে দিয়ে বিছানার চাদরটা বৃদ্ধের গায়ে জড়িয়ে দিলাম। তারপর আবদুলকে বললাম, ‘দাঁড়িয়ে আছো কেন? ওদের চাল আর পয়সা দিয়ে বিদায় করো।’

ওরা যাতে আবার আমার পা ধরতে না পারে, সেজন্য কোনরকম সুযোগ না দিয়ে আমি দ্রুত বাসার ভেতর ঢুকে পড়লাম। কিন্তু পা ধরার বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেলাম না। ভিক্ষুকদের বিদায় করে এসে আবদুল আমার দুই পা জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললো। আমি ওকে ধমক দিলে পা ছেড়ে দিয়ে সে মেঝের ওপর বসে ফোঁপাতে লাগলো। ফোঁপাতে ফোঁপাতে সে জানালো, বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি তার বাবা এবং ছেলেটি তার ছোটভাই। নদী ভাঙ্গনে ভিটা মাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে ওরা এখন চট্টগ্রাম শহরে এসে ভিক্ষা করে।
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে )
***************************************************************************************************************
(এই গল্পটি মাসিক মৌচাকে ঢিল পত্রিকার সেপ্টেম্বর/২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত। ব্লগার বন্ধুরা যারা পড়েননি, তাদের জন্য ব্লগে প্রকাশ করলাম।)
রি-পোস্ট

মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২১

এম এস আরেফীন ভুঁইয়া বলেছেন: ভাল লেগেছে ভাই ,,,

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই এম এস আরেফীন ভূঁইয়া।

ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২৪

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: মোচড় মারে দিলে।।।

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আব্দুল্লাহ আল আসিফ।

ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৩২

কালনী নদী বলেছেন: মৌচাকে ঢিল যখন যায়যায় দিন ছিল তখন প্রায় সময়ই মাসিক পত্রিকাটি পড়া হত। সে সময় থেকেই সেখানকার লেখা অনেক ভালো লাগে, আজকে আপনার গল্প পড়ে পুরানো সেই আমেজটা পেলাম। ধন্যবাদ জানবেন, ভাই।

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কালনী নদী। মৌচাকে ঢিল পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেছে। একই ধরনের আর একটি পত্রিকা 'অফলাইন' প্রকাশিত হচ্ছে এবং আমি প্রথম সংখ্যা থেকেই অফলাইন পত্রিকায় লিখছি।

ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩৫

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: মর্মান্তিক কাহিনী শোনালেন। সত্য ঘটনা তাই খারাপ লাগল। :(

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ ভাই, সেই সময়ের কাহিনী সত্যিই খুব কষ্টের ছিল।

ধন্যবাদ জনৈক অচম ভুত। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:১২

প্রামানিক বলেছেন: গল্পটি আগেও পড়া ছিল আবার পড়লাম। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কাহিনী।

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।

সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৬| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০৮

নিনজা টার্টল বলেছেন: কি দিন ই না গেছে!!

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, দিনগুলো সত্যিই খুব কষ্টের ছিল।

ধন্যবাদ নিনজা টার্টল। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৭| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯

আহলান বলেছেন: হুম ... আজ এটা গল্প !! .. .. :(

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আজ এটা গল্প !! ..

ধন্যবাদ ভাই আহলান। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

৮| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া


:(

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ বোন শায়মা।

ভালো থেকো বোন। শুভেচ্ছা রইল।

৯| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আপনার এ লিখা পাঠে অবর্ণনীয় দু:খ দুর্দশার কাহিনী দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । লিখাটি পাঠে মনের অজান্তেই ভেসে আসে পুরানো দিনের কিছু স্মৃতি সেই সাথে চুয়াত্তরের কিছু করচা যার কিছুটা নিম্মে দেয়া হল :
৭১ এ যুদ্ধ বিধ্যস্ত বাংলাদেশ । ৭১ এর মুক্তি যুদ্ধে ৬০ লক্ষ ঘরবাড়ী হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত , কোটি খানেক লোক গৃহ ছাড়া, বহু রাস্তা, পুল সেতু ব্রীজ হয়েছিল বিধ্যস্ত, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, বিবিধ কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুর্ণবাসন ছিল চ্যালেঞ্জের মুখামুখি। বহুমুখি সামাজিক অনৈক্য( মুক্তিযুদ্ধ চেতনাধারী আর দিকে অমুক্তিযুদ্ধা মতাবলম্বী, একদিকে অগনিত সুবিধা বঞ্চিত আর দিকে মুষ্ঠিমেয় নব্য শোশণকারী শ্রেণীর হাতে কুক্ষিগত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক , উৎপাদন ও বিতরণের সকল চাবিকাঠি) ও অনাচার দেশের পুর্ণবাসন প্রক্রিয়াকে করে বিঘ্নিত, যদিও অপরিমিত হলেও আন্তর্জাতিক সহযোগীতা ও সাহায্য ছিল উল্লেখযোগ্য। বিবিধ কারণ বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্বীকৃত চাটার দলের কারণে কাহ্মিত সুফল আসেনি। এর সাথে যুক্ত হয় স্বাধীনতা পরবর্তীতে ভারতীয় কালো টাকার অনুপ্রবেশ, ফলে মুল্যস্ফিতি ঘটতে থাকে দুর্বার গতিতে, মানুষের জীবন হয় দুর্বিসহ ।
একদিকে বিঘ্নিত ছিল দেশের উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা আরদিকে সার্বিক মনিটারী দৈনতা যথা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে চলে যাওয়া ।
এরকম এক পরিস্থিতিতে চুয়াত্তরে অতিবৃস্টি ও দেশের অর্ধেকেরও বেশী এলাকা প্লাবিত হয় । দেশে দেখা দেয় দুর্বিক্ষ ও মহামারী কারণ শুধু বন্যাই ছিলনা এর সাথে যুক্ত ছিল ভুরাজনীতি ।

সে সময়কার কিছু তথ্য ছিল নিম্মরূপ :
From April to July 1974, Bangladesh was hit by heavy rainfall and a series of devastating floods along the Brahmaputra river causing devastation to crops. Price inflation, which started before the flooding, had already sky-rocketed rice prices, and the flooding had destroyed the only source of income for the rural non-landowners. Food hoarding became rampant amongst the wealthy and the rural and urban poor died from famine.
Matters were worsened by the new government's inability to fight the famine by importing from abroad, notably from US, who placed a food embargo at a critical time.
An estimated 1.5 million people died in one of the worst famine in world history.

'Black' money from neighbouring India causes inflation


Bangladesh government's limited foreign exchange reserve and US embargo on food aid increases famine tragedy

China and Russia made large scale purchases in the world market. The only foreign source that could provide enough food aid was the United States.
US blocks 220,000 tons of food aid
The United States has been Bangladesh’s largest source of food aid, providing over £1.4 billion of food from 1972 through 1994, about 41% of the total. Of the £1.4 billion, 71% was program food aid - food sold on the open market rather than distributed directly to beneficiaries.
However, the US government - the main ally of West Pakistan during muktijuddho - cut off 220,000 tonnes food aid under Public Law 480 (PL-480) during the crucial months of September-October in 1974.
In August 1973, the Bangladesh Finance Minister, Tajuddin Ahmed, made a request for food aid in a meeting with the US Secretary of State, Henry Alfred Kissinger, in Washington. Food import requirements estimated at 2.2 million tons were to be met by commercial imports and food aid from various sources. The United States was requested to provide about 300,000 tons of food aid which were later scaled down to 220,000 tons after consultations with the USAID (United States Agency for International Development) officials.

ইত্যকার বিবিধ কারণে দেখা দেয় চুয়াত্বরে বিভিশিকাময় দুর্বিক্ষ । বেসরকারী হিসাবে সে দুর্বিক্ষে মারা যায় প্রায় ১.৫ মিলিয়ন এবং সরকারী হিসাবে ২৭০০০( উইকিপিডিায় পাওয়া তথ্যমতে) । সে সময়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা বিশেষ করে ময়মনসিংহের জামালপুর এলাকায় দেখা দেয় মহামারীর মত দুর্বিক্ষ । ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে স্বচক্ষে দেখেছি মৃতের মিছিল । দেখেছি মৃত দেহগুলিকে কিভাবে টেনে হিচরে তুলা হচ্ছে ট্রাকে সৎকারের উদ্দেশ্যে । দেখেছি কংকালসার মানবদেহ ।

চুয়াত্তরের করচা মনের পর্দায় ভেসে আসে ।

ধন্যবাদ সে সাথে নিরন্তন শুভকামনা রইল
ভাল থাকার জন্য ।

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ডঃ এম এ আলী, আপনার তথ্যবহুল মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ আমার মতো আপনিও স্বচক্ষে দেখেছেন বলে আমার লেখা সত্য ঘটনা ভিত্তিক এই গল্পের অন্তর্নিহিত দুঃখ কষ্টকে অনুভব করতে পেরেছেন। বর্তমান জেনারেশনের অনেকেই সেই সময়ের দুর্দশার ঘটনা জানে না, এমন কী অনেকে বিশ্বাস করতেও চায় না।
যাই হোক, মনোযোগ সহকারে পাঠ এবং সংশ্লিষ্ট বহু তথ্য সহযোগে মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১০| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কী নির্মম!!

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আরন্যক রাখাল।

ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫০

আহমেদ জী এস বলেছেন: আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ,




বাস্তবের টুইষ্ট তবে প্রচন্ড মর্মান্তিক ।

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আহমেদ জী এস।

ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১২| ১০ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২২

হাসান মাহবুব বলেছিলেন: মানবিক বোধের দ্বার উন্মুক্ত করুক আপনার লেখনী। শুভেচ্ছা।

এখনও তাই বললাম।

ভালো থাকুন।

১০ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পুনরায় পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই হাসান মাহবুব।

ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:১১

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: বাস্তবতা কতো নির্মম হতে পারে তা দেখিয়ে গেলো আপনার এই গল্পটি। তবে বিস্বাস করুন, আমি কেন জানি গল্পের মাঝে এসেই গল্পের শেষটা আন্দাজ করেছিলাম। পুরোপুরি মিলে গেছে।

১০ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, গল্পের শেষটা আন্দাজ করা যায়। আসলে সত্য ঘটনা ভিত্তিক গল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তন বা পরিমার্জনের সুযোগ কম থাকে। তাই অনেক সময়ই গল্পের গতিপথ অনুমান করা যায়। ইন্টেলেকচুয়াল পাঠক একটু সচেতন থাকলেই সেটা বুঝতে পারেন। আপনার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

ধন্যবাদ ভাই সাইফুল্লাহ শামীম। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: চোখে পানি এসে গেলো ভাই, আমি সব সময়ই বলে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়াদের মতো অসহায় আর কেউ নাই, ফসলের মাঠ, বাড়ি-ঘর সব আছে, কিন্তু নদী ভাঙ্গনে মুহুর্তেই লোকগুলো মিসকিন হয়ে যায় যা সত্যিই ভাবা যায় না।

১০ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ঠিকই বলেছেন কামাল ভাই। নদী ভাঙ্গনে সম্পদশালী মানুষও রাতারাতি পরিবার পরিজনসহ ভিক্ষুকে পরিনত হয়।


মন্তব্যে মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটায় খুশি হলাম। ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল।

১৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:২৪

ডি মুন বলেছেন: আহ !
মন খারাপ করা লেখা।

+++

১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ মন খারাপ হবারই কথা।

ধন্যবাদ ভাই ডি মুন। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১৬| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩২

সুমন কর বলেছেন: মনে হচ্ছে, আগে পড়েছিলাম। যা হোক, হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ ভাই এটি রি-পোস্ট। আপনার স্মরণশক্তির প্রশংসা করতে হয়।

ধন্যবাদ ভাই সুমন কর। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১৭| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭

জুন বলেছেন: ৭৪ এর একখন্ড মর্মান্তিক চিত্র একেছেন আবু হেনা ভাই।
+

১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৪০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ বোন জুন।

ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

১৮| ১৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০

জেন রসি বলেছেন: সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা। এই ভয়ংকর নিষ্ঠুরতার মধ্যেই আমাদের বসবাস।

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার সাথে একমত। এই বৈষম্যের কারণে পৃথিবীতে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

ধন্যবাদ ভাই জেন রসি। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.