![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দি ডেইলী ষ্টারে জেনারেল শফিউল্লাহর সাক্ষাতকারের বঙ্গানুবাদ :
সেনাবাহিনীর আর্টিলারী এবং আর্মার্ড ডিভিশন তখন নিয়ম মাফিক রাত্রিকালীন প্রশিক্ষনে ছিলো। প্রশিক্ষণ হতো মাসে দুইবার বৃহস্পতি ও শুক্রবারে। ঘটনাক্রমে ১৫ই আগষ্ট ছিলো এই দুটো দিনেরই একটি।
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ইন্টেলিজেন্স উইং গুলো ফোর্সের উন্নয়নের সাথে সাথেই পরিণতি লাভ করে। শফিউল্লাহ বলেন, ‘সেই সময়কার একটা বড় সমস্যা ছিলো সেনাবাহিনীর কোন সুসংগঠিত ইন্টেলিজেন্স উইং ছিলোনা’। আর্মি দিয়ে গঠিত ডিএফআই (দি ডিরেক্টরেট অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) এর সরাসরি তিনবাহিনীর প্রধানদের কাছে রিপোর্ট করার নিয়ম ছিলো। কিন্তু ১৯৭৪ সালে হঠ্যাৎ করে এই নিয়ম পরিবর্তন করে ডিএফআই কে সরাসরি প্রেসিডেন্ট এর সচিবালয়ের অধীনে রিপোর্ট করতে বলা হয়। এতে আর্মি প্রধানের সাথে ডিএফআই এর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান এর ব্যাপারে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়। শফিউল্লাহ তখন সেনাবাহিনীকে সুসংগঠিত করার একটি পরিপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন যাতে সেনা বাহিনীর পাঁচটি ডিভিশন এবং ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট এর কথা বলা হয় এবং এই অর্গানোগ্রাম এখনো সেনাবাহিনীতে বিদ্যমান। তবে সেই সময় প্রস্তাবটি তখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আটকে ছিলো এবং প্রস্তাবটি পাস হতে অনেক সময় নিচ্ছিলো।
শফিউল্লাহর ভাষায়, ঠিক সেই সময় দূর্ঘটনাক্রমে একটি আশ্চর্যজনক তথ্যের প্রকাশ ঘটে। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের আগে কোন এক সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে একজন এনসিও (নন কমিশনড অফিসার) সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহের লিফলেট সহ ধরা পড়ে। লিফলেটগুলিতে রক্ষীবাহিনী সম্পর্কিত বিষেদাগার করা হয়েছে এবং আরো বলা হয়েছে যে, সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে এই প্যারামিলিটারী তৈরী করা হয়েছে এবং এর ফলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত বহু সংখ্যক সেনা কর্মচারী চাকুরী হারাবেন।
‘তখন আমি তখনকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রোফেসর নুরুল ইসলামকে লিফলেটটি সম্পকে অবগত করার জন্য লিফলেট সহ তার কাছে যাই এবং তারপর আমরা প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করি।প্রেসিডেন্টকে আমরা অনুরোধ করি, সেনাবাহিনীর ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট গঠনের প্রস্তাবটা তিনি যেনো যত দ্রুত সম্ভব পাস করেন এবং যত দ্রুত এটা করা যাবে তত দ্রুতই এর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যাবে’। আর প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগপর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডিএফআই কে আর্মি হেডকোয়ার্টারের অধীনে দেয়ার জন্যও প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন। কিছুক্ষণ নীরবতার পর শেখ মুজিব শফিউল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রউফ কি তোমাদের ইন্টেলিজেন্স অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কে অবহিত করেননা?’ রউফ তখন ছিলেন ডিএফআই এর ডিরেক্টর জেনারেল। শফিউল্লাহ তখন বঙ্গবন্ধুকে এনসিও এর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত লিফলেটটি দেখান এবং বলেন যে তিনি নিশ্চিত নন যে বঙ্গবন্ধুকে রউফ এই লিফলেটটির সম্পর্কে অবগত করেছেন কি না।
শফিউল্লাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কোন উত্তর করেননি এবং তার নীরবতাকে আমি ধরে নেই যে তিনি এব্যাপারে অবগত আছেন। আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে এখানে ইন্টেলিজেন্স শাখার সাথে যোগাযোগের মধ্যে একটি ফাঁক রয়ে গেছে। লিফলেটের ব্যাপারটি এমন একটি ব্যাপার যা প্রেসিডেন্ট জানেন কিন্তু আমি জানতামনা-অথচ আমারই বিষয়টি আগে জানা উচিত ছিলো।’
শফিউল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে বলেন যে নতুন ইন্টেলিজেন্স এর পরিকল্পনাটা এখনও পাস হয়নি। তিনি আরও বলেন যে, সম্পূর্ণ অর্গানোগ্রামটা যদি পাস করতে সময় লাগে, প্রেসিডেন্ট অন্তন পক্ষে মিলিটারী ইন্টেলিজেন্স সেট আপের প্রস্তাবটা পাস করতে পারেন।
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটটা প্রায় বাস্তবায়ন হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু সেটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে ‘৭৫ এর সেপ্টেম্বর এর কোন এক সময়ে।
’৭৫ এর আগষ্টের ১৫ তারিখে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা ছিলো। উনি যেখানে তিনি সার্টিফিকেট বিতরণ করবেন, সেখানে ১৪ তারিখ বিকেলে কয়েকটি বোমের বিস্ফোরণ ঘটে। যেহেতু পুলিশের কোন বোমা বিশেষজ্ঞ ছিলোনা তাই তৎকালীন আইজিপি নুরুল ইসলাম শফিউল্লাহকে ফোন করে আর্মির সহায়তা চান।
শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমি অনেকগুলি দল পাঠাই পুরো এলাকাটিতে বোমা আছে কি না তা ভালো করে অনুসন্ধান করার জন্য।’ সেই একই দিনে একটি ভারতীয় হেলিকপ্টার ফেনীতে শকুনের সাথে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয় এবং কপ্টারটিতে অবস্থানরত সব ক’জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হন।হেলিকপ্টারটি চট্রগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় সদ্য মাথা চাড়া দেয়া শান্তিবাহিনীর কার্যক্রমের উপর নজর রাখার জন্য বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছিলো এবং সেনারা তখন ভারতের স্বাধীনতা দিবসে যোগদানের জন্য দেশে যাচ্ছিলেন। ‘আমি মৃতদেহগুলো ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।’
একটি লম্বা এবং ক্লান্তিকর দিন শেষে শফিউল্লাহ যখন বিছানায় যান তখন রাত প্রায় দেড়টা। প্রায় ফজরের নামাজের সময় তার ভৃত্য তাকে জাগিয়ে তোলে এবং তিনি দেখতে পান যে তখনকার মিলিটারী ইন্টেলিজেন্স এর ডিরেক্টর কর্ণেল সালাউদ্দিন তার কক্ষের দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছেন। তিনি শফিউল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি আর্মার্ড এবং আর্টিলারী ডিভিশনকে শহরের দিকে পাঠিয়েছো’? শফিউল্লাহ টের পান তার মেরদন্ড বেয়ে একটি ঠান্ডা হিমস্রোত বেয়ে যাচ্ছে।
তিনি উত্তর দেন ‘না তো। কেনো?’
সালাউদ্দিন উত্তর দেন, ‘আর্মার্ড ডিভিশন এবং আর্টিলারী ডিভিশন রেডিও ষ্টেশন, গণভবন এবং বঙ্গবন্ধুর ধনামন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ীর দিকে এগুচ্ছে।’
শফিউল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, "ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার এব্যাপারটি জানে’? সে সময ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল।
শাফায়াত জামিল বলেন,‘আমি জানিনা।আমি আপনার কাছেই প্রথম এসেছি।’
‘যাও শাফায়াত জামিলকে বলো এক, দুই এবং চার নম্বর ব্যাটালিয়নকে পাঠিয়ে আর্টিলারী এবং আর্মার্ড বাহিনীর অগ্রসর হওয়া বন্ধ করতে।’ এ নির্দেশ এর সাথে শফিউল্লাহ এও বলেন যে তিনি নিজেও দ্রুত শাফায়াত জামিলকে ফোন করতে যাচ্ছেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আর্মিতে চীফ অফ ষ্টাফ সমগ্র আর্মিকে পরিচালিত করে আর ট্রুপগুলো পরিচালিত হয় ব্রিগেড কমান্ডারদের নির্দেশে।
শফিউল্লাহ তখন লাল টেলিফোনটি তুলেন শেখ মুজিবকে সতর্ক করার জন্য। কিন্তু ফোন লাইনটি ব্যস্ত ছিলো। তখন তিনি শাফায়াত জামিলকে ফোন করেন এবং এ লাইনটিও ব্যস্ত পান।এরপর তিনি কর্ণেল জামিলউদ্দিন আহমেদকে ফোন করেন। কর্ণেল জামিল তখন সদ্য প্রেসিডেন্টের মিলিটারী সেক্রেটারী পদ থেকে ডিএফআইতে বদলী হয়েছেন। ফোনে শফিউল্লাহকে জামিল বলেন যে, বঙ্গবন্ধু তাকে ফোন করেছিলেন এবং তাকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যেতে বলেছেন কারন সেখানে কিছু লোক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে।শফিউল্লাহ জামিলকে বলেন বঙ্গবন্ধুকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করার জন্য। জামিল পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যাওয়ার পথে সোবাহানবাগ মসজিদের সামনে বিদ্রোহী আর্মি অফিসারদের হাতে নিহত হন।
শফিউল্লাহ যখন কর্ণেল শাফায়াত জামিলকে ফোনে পান তখন প্রায় ভোর সাড়ে পাঁচটা। ‘তুমি কি জানো, আর্টিলারী এবং আর্মার্ড সেনারা কেনো শহরের দিকে যাচ্ছে?’ তিনি শাফায়াতকে জিজ্ঞেস করেন।
‘না’।
‘আমি তাকে বলি যে, সালাউদ্দিন আমাকে এ ব্যাপারে জানিয়েছে, এবং তাকে আমি তৎক্ষনাত তার অধীনস্থ এক, দুই ও চার নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টকে পাঠিয়ে অগ্রসররত সেনাদের থামানোর ও ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেই।’
শফিউল্লাহ এয়ার ফোর্স এবং নৌবাহিনীর প্রধানদের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং তারাও তাকে অবহিত করেন যে এ ব্যাপারে তারা কিছু জানেননা। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলেন এবং তারাও এব্যাপারে তাদের অজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি যখন জিয়াকে সেনাদের শহরের দিকে অগ্রসরতার কথা জানান, জিয়া প্রতিউত্তরে বলেছিলেন, ‘তাই না কি?’ এর থেকেই তিনি ধরে নেন জিয়া ব্যাপারটি সম্পর্কে কিছু জানতেননা। এরপর তিনি খালেদ মোশাররফ এবং জিয়া উভয়কেই যতদ্রুত সম্ভব তার বাসভবনে আসতে বলেন।
তারা দু’জনেই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হন। খালেদ তার নিজস্ব গাড়ি চালিয়ে আসেন, পরনে ছিলো স্লিপিং গাউন। জিয়া এসেছিলেন তার অফিসের গাড়ি করে, শেভ করা এবং সেই সাত সকালেও ইউনিফর্ম পরিহিত।
খালেদ এবং জিয়া তার বাড়ী পেৌঁছানোর আগে তিনি আরেকবার প্রেসিডেন্ট এর বাড়ীতে ফোন করেন এবং এবার তিনি বঙ্গবন্ধুকে ফোনে পান।
শফিউল্লাহ বলেন, ‘যখন ডিএমআই (সম্ভবত ডিএফআই হবে, মূল অংশে ডিএমআই আছে) আমাকে সেনাদের শহরের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্পর্কে অবহিত করে সেটা ছিলো সোয়া পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এবং শাফায়াত জামিলের সঙ্গে আমি কথা বলি সাড়ে পাঁচটা থেকে পাঁচটা পঁয়ত্রিশ এর মধ্যে। আমি যখন বঙ্গবন্ধুকে প্রথমবার ফোন করি তার বিশ থেকে পচিঁশ মিনিট পর আমি তাকে ফোনে পাই। সময়টা আমার ঠিক মনে নেই তবে তা অবশ্যই সকাল ছয়টার আগে।’
‘তোমার বাহিনী আমার বাসায় আক্রমণ করেছে।তারা হয়তো কামালকে [বঙ্গবন্ধুর ছেলে] হত্যা করতে পারে। এক্ষুনি তোমার বাহিনী পাঠাও’। বঙ্গবন্ধু রাগত কন্ঠে বলেন শফিউল্লাহকে।
শফিউল্লাহ বলেন, ‘স্যার আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আপনি কি কোন ভাবে বাড়ী থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন?’
‘ও পাশ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আমি হ্যালো বলতে থাকি এবং এক মিনিট পরেই আমি গুলির শব্দ পাই এবং তার কয়েক মিনিট পরেই ফোন লাইনটি ডেড হয়ে যায়।’
এরপর খালেদ মোশাররফ এবং জিয়াকে সহ শফিউল্লাহ তার অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হন। এর মধ্যে দশ থেকে পনেরো মিনিট হয়ে গিয়েছে শফিউল্লাহ কথা বলেছেন কর্ণেল শাফায়াত জামিলের সাথে কিন্তু তখন পর্যন্ত সেনাদের অগ্রসরতা থামেনি।
শফিউল্লাহ ছেচল্লিশ নম্বর ব্রিগেডকে পরিচালিত করার জন্য খালেদ মোশাররফকে নির্দেশ দেন এবং তাকে রিপোর্ট করতে বলেন।
নাসিম, জিয়া এবং খালেদ মোশাররফ সহ শফিউল্লাহ তার অফিসে বসে ছিলেন এবং তাদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে একটি ট্যাংক তাদের অফিসের কাছে অবস্থান নিয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই দু’তিনটি গাড়ি তার অফিস চত্বরে আসে এবং মেজর শরীফুল হক ডালিম পনেরো-ষোল জন সৈন্য সহ তার অফিসে প্রবেশ করে। ডালিম তার কিছুদিন আগে চাকুরীচ্যুত হন।
‘চীফ কোথায়?’ শফিউল্লাহর কক্ষে প্রবেশ করতে করতে ডালিম জিজ্ঞাসা করেন।
ডালিম এবং তার সৈন্যদের অস্ত্র শফিউল্লাহর দিকে তাক্ করা ছিলো।
শফিউল্লাহ ডালিমকে বলেন, ‘অস্ত্র দেখে এবং ব্যবহার করে আমি অভ্যস্ত। যদি তোমরা অস্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এসে থাকো তবে ব্যবহার করো। আর যদি কথা বলতে চাও তবে অস্ত্র বাহিরে রেখে এসো।’
ডালিম অস্ত্র নীচু করে বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট আপনাকে এক্ষণি রেডিও ষ্টেশনে যেতে বলেছেন।’
উত্তেজনাকর কিছু মুহুর্ত পার হওয়ার পর শফিউল্লাহ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট? আমি যতদূর জানি প্রেসিডেন্ট মারা গিয়েছেন।’ যখন শফিউল্লাহ তার অফিসে পৌছান, তার এডিসি ক্যাপ্টেন কবির তাকে জানান যে প্রেসিডেন্ট মারা গিয়েছেন।
ডালিম গর্জে উঠে বলেন, ‘আপনার জানা উচিত যে খন্দকার মোশতাক এখন প্রেসিডেন্ট।’
শফিউল্লাহ বলেন ‘খন্দকার মোশতাক আপনার প্রেসিডেন্ট হতে পারে, আমার নয়’।
ডালিম বললেন, ‘আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেননা যা আমি এখানে করতে আসিনি।‘
শফিউল্লাহ উত্তর দেন, ‘তোমার যা ইচ্ছা তুমি করতে পারো, আমি তোমার সাথে কোথাও যাচ্ছিনা।‘
শফিউল্লাহ এরপর তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান এবং ডালিম্ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভেতর দিয়ে সোজা ছেচল্লিশ নম্বর ব্রিগেডে যান। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি দেখতে পান ব্রিগেডের সকল সৈন্য এবং তাদের সকল অফিসারেরা চক্রান্তকারীদের সাথে যোগ দিয়েছে। সেখানে তিনি মেজর খন্দকার আব্দুর রশীদ এবং ৪৬ নম্বর ব্রিগেডের তৎকালীন মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এর দেখা পান। তারা তাকে বারংবার রেডিও ষ্টেশনে যাবার তাগিদ দিচ্ছিলো। শফিউল্লাহ তাদের বলেন যে তিনি একা রেডিও ষ্টেশনে যাবেননা।
পুরো সময়টা ধরে শফিউল্লাহ ভাবছিলেন। এটা তার কাছে পরিষ্কার ছিলো যে, সেনাবহিনীর বড় অংশটিই বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিয়েছে। যেহেতু কেউ তার নির্দেশ মানছিলোনা সেহেতু সে সময় কিছু করার চেষ্টা করতে যাওয়াটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো। শফিউল্লাহ স্বগোক্তি করেন, ‘আমাকে আগে আমার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে’।
পরে বিদ্রোহীরা নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল এমএইচ খান এবং বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার সহ তিন প্রধানদের নিয়ে রেডিও ষ্টেশনে যায়। সেখানে শফিউল্লাহ দেখতে পান খন্দকার মোশ্তাক একটি কক্ষে বসে আছেন সাথে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর।
শফিউল্লাহকে দেখার সাথে সাথে মুশতাক আন্দোলিত কন্ঠে বলেন, ‘শফিউল্লাহ, অভিনন্দন!তোমার সেনারা খুব ভালো কাজ করেছে। এখন বাকীটা সেরে ফেলো।’
‘সেটা কি?’ শফিউল্লাহ প্রশ্ন করেন।
‘সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো’, মুশতাক উত্তর দেন।
‘সে ক্ষেত্রে এটা আমার উপর ছেড়ে দিন’।শফিউল্লাহ দ্রুত উত্তর দেন এবং কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
তখন তাহেরউদ্দিন ঠাকুর মুশতাককে বলেন, ‘ওনাকে যেতে দেবেননা। ওনার সঙ্গে আমাদের এখনও কিছু কাজ বাকী আছে’।
শফিউল্লাহ যখন বেরিয়ে আসছিলেন তখন তিনি দেখতে পান ডালিম এবং রশীদ সৈন্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে এবং তারা তিন বাহিনীর প্রধানদের আর একটি কক্ষে নিয়ে আসে।
এর কিছুক্ষণ পর তাহেরউদ্দিন ঠাকুর কক্ষটিতে প্রবেশ করে এবং শফিউল্লাহকে খন্দকার মুশতাক এর সমর্থনে একটি লিখিত বক্তব্য জোরে পাঠ করতে বলে। কথামতো শফিউল্লাহ তাই করেন এবং বক্তব্যটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড শেষ হয়ে গেলে মুশতাক ঘোষণা করেন, ‘আমি তিন বাহিনীর প্রধানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখতে চাই’।
এরপর বঙ্গভবনের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে খুব দ্রুত।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে শফিউল্লাহ ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যেতে চান কিন্তু মোশতাক তাতে বাধা দেন এবং বলেন যে, শিগগীরই নতুন ক্যাবিনেট গঠন করা হবে।
১৫ই আগষ্টে নতুন ক্যাবিনেট গঠন হবার পর যখন শফিউল্লাহ বাড়ী যাবার কথা ভাবছিলেন তখন তাহের উদ্দিন ঠাকুর তাকে যেতে নিষেধ করেন এবং বলেন যে রাতে একটি কনফারেন্স আছে।
১৮ই আগষ্ট পর্যন্ত শফিউল্লাহকে বঙ্গভবনে অবস্থান করতে হয়। সেই সময়ে সেখানে অনেকগুলি সভা হয় যার আলোচনার মূল বিষয় বস্তু ছিলো মার্শাল ল’ জারি করা হবে কি না সে বিষয়ে।
সভায় শফিউল্লাহ বলেন যে, আলাদা করে মার্শাল ল’ জারি করার কিছু নেই কারন তা আগেই রেডিওতে জারি করা হয়েছে। মার্শাল ল’ কে জারি করেছে, মুশতাকের এরকম একটি প্রশ্নের জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, ‘ডালিম করেছে’। তখন মুশতাক তাকে বলেন, ‘ডালিমতো তোমারই লোক [ফোর্স]। শফিউল্লাহ উত্তর দেন, ‘ডালিম যদি আমারই লোক হতো তবে মার্শাল ল’ ঘোষনার সময় সে আমার নাম বলতো, কিন্তু সে বলেছে আপনার নাম’। তখন শফিউল্লাহ বিষয়টির আইনগত দিকগুলির দিকে নজর দেয়ার অনুরোধ করেন।
মোশতাক তখন বলেন, ‘সব কাজ শেষ। এখন শুধু মার্শাল ল’ জারির গেজেটটা প্রকাশ করা বাকী’।
১৫ থেকে ১৮ই আগষ্টের সেই সময়টার সভার কোন একসময়ে মুশতাক সভায় বলেছিলেন যে, তিনি মার্শাল ল’ জারির ঘোষণা পত্রটি ড্রাফট করবেন এবং সবাইকে তা দেখাবেন। পরদিন, তিন বাহিনীর প্রধানেরা যখন একসঙ্গে বসে ছিলেন, মুশতাক পকেট থেকে একটি কাগজ বের করেন এবং শফিউল্লাহর হাতে দিতে দিতে বলেন, ‘এটিই সেই ঘোষণা পত্র’।
শফিউল্লাহ তাকে বলেন যে তারা এটি ভালো করে দেখবেন যে এতে কোন ভুলভ্রান্তি আছে কি না।
মুশতাক তাকে বলেন ‘জেনারেল শফিউল্লাহ, আমি আজ তিন মাস ধরে এর উপর কাজ করছি’।
শফিউল্লাহ তখন বলেন, ‘সেক্ষেত্রেতো এটা অবশ্যই নিখুঁত হবে’।
১৫ই আগষ্ট শফিউল্লাহ মুশতাককে জিজ্ঞেস করেন বঙ্গবন্ধুকে কোথায় কবর দেয়া হবে সে বিষয়ে, মুশতাক তিক্ততার সাথে তাকে উত্তর দেন ‘যেখানে খুশী সেখানে কবর দাও কিন্তু ঢাকায় নয়’।
১৮ই আগষ্ট শফিউল্লাহ ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসেন এবং তার পরদিন তিনি একটি সভার আয়োজন করেন কীভাবে সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সে ব্যাপারে।
সে সময় জিয়া তাকে বারবার করে বলেন যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের আক্রমন করতে পারে। শফিউল্লাহ বলেন, ‘জিয়া চাইছিলো আমি যাতে সৈন্যদের ক্যান্টনমেন্টে না এনে তাদেরকে বর্ডারের দিকে নিয়োজিত করি’। সে অনুযায়ী শফিউল্লাহ সভায় আর সবার সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দিক থেকে আক্রমনের সম্ভাবনাটার কথা সবার সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সকল সৈন্যদের বঙ্গভবন থেকে ব্যারাকে ফিরে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন। সভায় বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী আব্দুর রশীদ এবং ফারুক রহমানও উপস্থিত ছিলো। সভার এক পর্যায়ে শাফায়াত জামিল উঠে দাঁড়ান এবং রশীদ এবং ফারুক রহমানদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এদের জন্যই আজ এ অবস্থা।এরাই সব পরিস্থিতির জন্য দায়ী।এদের মার্শাল কোর্টে বিচার হওয়া উচিত’।
সভা শেষে দুই খুনী বঙ্গভবনে ফিরে যায় যেখানে তাদের অন্যান্য বিদ্রোহীরা অবস্থান করছিলো।
আগষ্টের ২২ তারিকে শফিউল্লাহ সকল সৈন্যদের বঙ্গভবন থেকে ফেরত পাঠানোর জন্য মুশতাককে বলেন। কিন্তু মুশতাক তাকে বলেন যে সৈ্ন্যদের মধ্যে এখনও ভীতি কাজ করছে, তাদেরকে আর একটু সময় দেয়া দরকার।
আগষ্টের ২৪ তারিখে শফিউল্লাহ রেডিওর বুলেটিনের ঘোষণায় শুনতে পান যে জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে প্রেসিডেন্টের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঘোষণাটির একটু পরেই মুশতাক শফিউল্লাহকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার পছন্দ হয়েছে’?
জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ এটা ভালোই হয়েছে’।
মুশতাক বলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে সাড়ে পাঁচটার সময় দেখা করতে চাই’।
বিকেলে বঙ্গভবনে পোঁছানোর পর একজন আর্মি অফিসার তাকে প্রথমে ওসমানীর সাথে দেখা করতে বলে।
শফিউল্লাহ দেখেই ওসমানী সেনাবহিনীতে ও যুদ্ধক্ষেত্রে তার কর্মকান্ডের জন্য তাকে প্রশংসিত করেন এবং বলেন ‘এখন আমাদের আপনাকে বিদেশে প্রয়োজন’।
শফিউল্লাহ বুঝতে পারেন যে এটি তার সাথে একটি বিদায়ী সম্ভাষণ। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুশতাকের কাছে। মুশতাও তাকে একইরকম প্রশংসাবাণী শোনায় এবং বলে যে দেশ সেবার জন্য তার এখন বিদেশে যাওয়া উচিৎ।
শফিউল্লাহ উত্তর দেন ‘আমি দেশের বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত নই’।
মুশতাক রাগত: কন্ঠে বলেন, ‘তুমি কি জানোনা শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের কি দশা হয়েছে’?
শফিউল্লাহ উত্তর দেন, ‘আমি যুদ্ধের সময় আমার পরিবারকে আল্লাহর জিম্মায় রেখে গিয়েছি’ এবং তারপর তিনি বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হন।
কিন্তু বাসায় পৌঁছানোর আগেই শফিউল্লাহ জানতে পারেন যে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া তাকে তার বাড়ীর বাহিরে যাবার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
আগষ্টের ২৪ তারিখে তিনি একটি চিঠি পান যাতে বলা আছে যে তাকে সেনাবাহিনীর প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
---------------------------------------------------------
দি ডেইলী ষ্টার এর সাথে এই সাক্ষাতকারটিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এর আগে ও পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ঘটতে থাকা ঘটনাবলী নিয়ে বলেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অবঃ)কে এম শফিউল্লাহ, বীর উত্তম।সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ইনাম আহমেদ এবং জুলফিকার আলী মানিক। ব্লগারদের আলোচনার সুবিধার্তে সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন ব্লগার স্তবদ্ধতা।
[নোট: নভেম্বরের তিন তারিখে জেল হত্যার পর শফিউল্লাহ তার মত পরিবর্তন করেন এবং মালয়শিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদান করেন।]
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:২৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
১) শফিউল্লাহর সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো- তিনি বিমানবাহিনীকে আগে তলব না করে কর্ণেল শাফায়াত জামিলের আওতাধীন বাহিনীকে আগে চার্জ করতে বলেছেন। অথচ, বিমানবাহিনীর হ্যালিকপ্টারে করে সেনারা আগে ধানমন্ডিতে পৌছাতে পারতো।
২) খন্দকার মুশতাক ৩ মাস ধরে মার্শাল ল-এর গ্যাজেট তৈরি করেছেন! অথচ, আর্মি ইন্টেলিজেন্স এইটা জানে না!!!
১৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২১
আজব লিংকন বলেছেন: বাকশাল ছিল এই মহান নেতার প্রধান ভুল। যা বর্তমান তার মেয়ে সফল ভাবে কায়েম করেছেন।
কত দিন পারে আর বাঙ্গালি মানে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:১৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: শফিউল্লাহ নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে সাক্ষাৎকারে!
১৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:০১
আজব লিংকন বলেছেন: মেজর ডালিমের লেখা বই "যা দেখেছি, যা বুঝেছি, যা করেছি" থেকে নিচের লেখাটা পুরোপুরি দেয়া হল, যা থেকে সে সময়ের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যা অনেকটাই বিশ্বাসযগ্য মনে হয় আমরা দৃষ্টিতে :-
মুজিব সরকার এবং সেনা বাহিনীর সম্পর্ক, সেনা বাহিনীর প্রতি শেখ মুজিবর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি এবং রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা সাপ্তাহিক জনমত'-কে ২৮শে আগষ্ট দেয়া এবং ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত মেজর জেনারেল (অবঃ) কে এম শফিউল্লাহর সাক্ষাৎকার থেকে:
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক নাকি ততটা ভালাে ছিল না। কথাটা কি সত্য বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যক্তিগতভাবে আমার উপর আস্থা ছিল। কিন্তু পুরাে সামরিক বাহিনীর উপর তাদের আস্থা ছিল কিনা তাতে সন্দেহ আছে।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনাকে কেন চীফ অফ স্টাফ নিযুক্ত করা হল?
উত্তর: এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ওসমানী সাহেবের কোন সিদ্ধান্ত নয়।
প্রশ্ন: রক্ষীবাহিনী গঠন করার আগে আওয়ামী লীগ সরকার এ ব্যাপারে কি আপনার সঙ্গে কোন আলাপ-আলােচনা করেছিল?
উত্তর: না। তবে গঠন করার পর আমাকে বলা হয়েছিল রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনীর সহযােগী শক্তি হিসাবে। তবে লােকমুখে আমি শুনেছি যে, রক্ষীবাহিনী গঠন করা হচ্ছে আর্মড ফোর্সের জায়গা পূরণের জন্য।
প্রশ্ন: সামরিক বাহিনীর সাথে রক্ষীবাহিনীর সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর: সম্পর্ক ভালাে ছিল না। তার কতগুলাে কারণ ছিল। তখন গুজব ছড়িয়েছিল যে, রক্ষীবাহিনীকে আর্মির জায়গায় বসানাে হবে। নতুন বাহিনী হিসাবে রক্ষীবাহিনীকে তখন সবকিছুই নতুন জিনিষপত্র দিয়ে সাজানাে হচ্ছিল। এদিকে আর্মি দেখছে তাদের সেই পুরাতন অবস্থা। এগুলাে দেখে আর্মড ফোর্সের অনেকের মনে আঘাত লাগে। যার ফলে সম্পর্কটা খারাপ রূপ নেয়। তবে এ ব্যাপারে সরকার একটা ভুল করেছিলেন, তা হল রক্ষীবাহিনীকে 'power of arrest and search দেওয়া। এতে সামরিক বাহিনীর অনেকেই ক্ষুব্ধ এবং চিন্তিত হন । শুধু তাই নয়; রক্ষীবাহিনী এই সময় সেনা বাহিনীর অনেক অফিসারকে লাঞ্ছনা পর্যন্ত করে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল রক্ষীবাহিনীর ক্ষমতা সেনা বাহিনীর চেয়েও বেশি।
প্রশ্ন: শেখ মুজিবর রহমান সামরিক বাহিনীর উন্নতির পক্ষে ছিলেন না, এ কথা কি সত্য?
উত্তর: হ্যা। আমি বলবাে একথা সত্য।
প্রশ্ন: গাজী গােলাম মােস্তফার সাথে লেডিস ক্লাবে মেজর ডালিমের অপ্রীতিকর ঘটনার পর সেনা বাহিনীর চীফ অফ স্টাফ হিসাবে কি কোন কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন?
উত্তর: যখন গােলমালের খবর আমি জানতে পারি তখন ডালিমের পক্ষ হয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাই এর একটা বিচারের জন্য। বঙ্গবন্ধু আমার উপর রেগে গেলেন। তখন আমি বললাম, 'বঙ্গবন্ধু আমি যদি আমার অফিসারদের জন্য না বলি তাহলে কে বলবে? গাজী গােলাম মােস্তফার এই ঘটনা আপনি তদন্ত করে দেখুন। আপনি যদি এ ব্যাপারে সাহায্য চান তাহলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। যেহেতু ওরা গাজীর বিরুদ্ধে এবং আমিও তাদের পক্ষে, তাই গাজীর বিরুদ্ধেই বলেছি। তাই তিনি খুব খুশী হননি। তিনি শুধু বললেন, শফিউল্লাহ, আপনি জানেন কি যে আপনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলছেন? (ইংরেজি ভাষায়) আমি বললাম, আমি জানি স্যার। আমি আমার জন্য কথা বলছি না; আমি কথা বলছি আপনার জন্য স্যার ; মানুষ আপনাকে সত্য বলেনি। ঐ সময় জিয়া ও শাফায়াত জামিলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রশ্ন: তারপর কি হল?
উত্তর: তারপর আমরা ওখান থেকে কোন বিচার না পেয়ে মনঃক্ষুন্ন হয়ে চলে আসি। পরে দেখা গেল সরকার মেজর ডালিমকে সেনা বাহিনী থেকে বরখাস্ত করলেন।
৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: শফিউল্লাহ নিজেকে বাঁচিয়ে কথা বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৫৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি নিজেই আজব!