নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"সেকি অন্য তত্ত্ব মানে, মানুষতত্ত্ব যার সত্য হয় মনে\"

আজব লিংকন

শব্দ দাও অথবা মৃত্যু

আজব লিংকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্বীন জাতি ও ইবলিস | সৃষ্টি কথা - ১

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ২:৫৯


"বিষয় বিষে চঞ্চলা মন দিবা রজনী। মনকে বুঝাইলে বুঝ মানেনা ধর্মকাহিনী।" অনেকের কাছে ধর্মকাহিনী, অনেকের কাছে গল্প আবার অনেকের কাছে কল্পকাহিনী। বিশ্বাসীদের কাছে সত্য। অবিশ্বাসীদের কাছে গল্প। গল্প নাকি সত্য? বুঝতে হলে জানতে হবে। জানতে হলে পড়তে বা শুনতে হবে। এত সময় বা ধৈর্য আল্লাহ বোধহয় আমাকে দেননি। হাতে অফুরন্ত সময় থাকলে আমার মাঝে ধৈর্য থাকে না। আবার যখন ধৈর্য থাকে তখন দেখা যায় সময় থাকে না। দু'দিন আগে আদম সৃষ্টির রহস্য জানতে গিয়ে চলে আসে আজাজিল তথা ইবলিসের কথা। আমি আগে কখনো আজাজিল সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করিনি। মুসলিম হবার সুবাদে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে ধর্মের অনেক বিষয় সম্পর্কে এমনিতেই আমার জানা হয়েছে। কিন্তু কখনো গভীর ভাবে জানান চেষ্টা আমি করিনি। আল্লাহর হুকুমে আদমকে সিজদাহ্ না করে ফেরেশতাদের সরদার আজাজিল ইবলিস হয়ে যায়। এটা জানা ছিল তবে ইবলিসের বিষয় আর তেমন কোন কিছু আমার জানা ছিল না। নেটে সার্চ দিয়ে ইবলিস সম্পর্কে কিছু বিষয় জানলাম। এই লেখাতে গভীর কোন কিছুই নেই। টুকটাক জানার খাতিরে একটু লেখা। তথ্যসূত্র :- ইন্টারনেট হতে পপুলার কিছু আর্টিকেল থেকে নেয়া হয়েছে। ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

লাওহে মাহফুজ:-
লাওহে মাহফুজ অর্থ 'সংরক্ষিত পাথর' বা 'সংরক্ষিত ফলক'। লাওহে মাহফুজ একটি বিশেষ স্থান যেখানে আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের জীবন বৃত্তান্ত, ঘটনাবলী এবং পরিণতি লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। মারওয়ারিদ দ্বারা লাওহে মাহফুজের প্রস্তর তৈরী করার পরে আল্লাহ তা লাল ইয়াকুত মর্মর দ্বারা লেপটিয়ে আর আরশের নিচে রেখে দিলেন। লাওহে মাহফুজের প্রস্থ সাতশত বছরের পথ, দৈর্ঘ্য তদপেক্ষা অনেক বেশী। লাওহে মাহফুজ সৃষ্টির পর আল্লাহ কলমকে আদেশ করলেন, 'হে কলম। তুমি আমার অসীম কুদরত, অপূর্ব সৃষ্টি নৈপুণ্য, জ্ঞান, সামর্থ্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যা কিছু আছে। সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লাওহে মাহফুজে লিখে রাখ।' আল্লাহর আদেশে কলম লেখা শুরু করল, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।' 'আমি সৃষ্টি, আল্লাহ স্রষ্টা। আমি ছাড়া আর কেউ মাবুদ বা উপাস্য নেই। যারা আমার ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণ করবে। আমার দেয়া বিপদে যারা ধৈর্য ধারণ করবে। আমার দেয়া নেয়ামতের উপরে শোকর আদায় করবে। আমি তাদেরকে অবশ্যই নেক বান্দাদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করব। আর যারা আমার নেয়ামতের শোকর আদায় করবে না। আমার দেয়া বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে না। সে যেন আমার জমিনের উপর ও আসমানের নীচ হতে অন্যত্র চলে যায়।'

আল্লাহ কলমকে আবার আদেশ করলেন, হে কলম। তুমি আদম হতে শুরু করে একলাখ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বরের সকল ঘটনা লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ কর। আল্লাহ নির্দেশ অনুযায়ী কলম আদম, তার সন্তান হতে শুরু করে সমস্ত নবীর উম্মতের ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান লেখা শুরু করলো। কলম লিখলো, 'যারা যথাযথভাবে আল্লাহর আদেশ পালন করবে ও তাঁর নিষিদ্ধ কাজগুলো হতে বিরত থাকবে। তারা বেহেশতের অধিকারী হবে আর যারা আদেশ অমান্য করবে, ভ্রান্ত পথে চলবে তারা সবাই দোজখবাসী হবে।'

শেষ নবীর উম্মত সম্বন্ধে আল্লাহর নির্দেশে কলম লিখলো, 'উম্মাতু মুহাম্মাদিন অ রাব্বুন গাফুর।' অর্থাৎ 'শেষ নবীর উম্মতগণ গুনাহর কাজ করলেও আল্লাহ তাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করবেন।'

নূরের তৈরি ফেরেশতা :-
আল্লাহ যখন ফেরেশতা সৃষ্টির কথা চিন্তা করলেন তখন রাসূল (সা.)-এর নূর হতে বিশেষ এক নূর সৃষ্টি করার পর সে নূর দিয়ে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেন। ফেরেশতাদের সৃষ্টি করে আল্লাহ নির্দেশ দেন, তোমরা এখন থেকে আমার ইবাদাতে মশগুল হও। আল্লাহ আদেশে ফেরেশতাগণ তার ইবাদতে মশগুল হলেন। ফেরেশতাদের আল্লাহ বিভিন্ন রূপে সৃষ্টি করেন। সেসব রূপে ফেরেশতারা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত এবং নির্দেশ পালনে মশগুল থাকবেন। জ্বীন বা ইনসানের মত ফেরেশতাদের মধ্যে নারী পুরুষ নেই। বিবাহ, ক্ষুধা আহার কিংবা মৃত্যু নেই।

ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি :-
আল্লাহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আসমান জমিন পাতাললোক সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করেন। শোনা যায় ছয় দিনে তিনি আসমান জমিন সমগ্র জাহান সৃষ্টি করেন। সর্বপ্রথম তিনি রবিবার দিন আরশে মোআল্লা ও তার নিকটবর্তী বস্তুসমূহ সৃষ্টি করলেন। সোমবার দিন সপ্ত আকাশ, মঙ্গলবারে সাত স্তর জমিন, বুধবারে অন্ধকারময় শূন্যমণ্ডল, বৃহস্পতিবারে আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী বস্তুসমূহ এবং শুক্রবারে চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ প্রভৃতি সৃষ্টি করেন। ছয়দিনে সারা পৃথিবী এবং অন্যান্য বস্তুসমূহ সৃষ্টি করে সপ্তম দিন তথা শনিবারে আল্লাহ এ কাজ হতে অবসর গ্রহণ করেন।

জ্বীন জাতির সৃষ্টি, উত্থান ও পতন :-
পৃথিবীতে মানব জাতি প্রেরণের পূর্বে আল্লাহ তার ইবাদতের উদ্দেশ্যে জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেন। ফেরেশতা কিংবা মানুষের মত জ্বীন জাতি মাটি কিংবা নূরের তৈরি নয়। জ্বীন আগুনের তৈরি। পবিত্র কুরআনে জ্বীন জাতির নিয়ে বাহাত্তর নাম্বার সূরা আল-জ্বীন নাজিল হয়েছে। এবং বত্রিশ জায়গায় জ্বীন জাতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, 'ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়া’বুদূন' অর্থাৎ "আমি জ্বীন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" কিছু জিনিস বাদ দিয়ে মানুষ এবং জ্বীন জাতির মধ্যে সাদৃশ্য প্রায় একই। মানুষের মত নারী-পুরুষ, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, আহার, ঘুম, ক্লান্তি, রোগ ব্যাধি, রাগ, হিংসা ইত্যাদি জ্বীন জাতির মাঝে বিদ্যমান। মহানবী (সা.) এর রূপ ব্যতীত জ্বীন জাতি যে কোন রূপ আঁকার আকৃতি ধারণ করতে পারে।

মানব জাতির মত জ্বীন জাতির আদি পিতা রয়েছে। জ্বীন জাতির আদি পিতার নাম ক্ষুমা। জান্না তার উপাধি। তার আর একটি নাম মারজ। এই জ্বীন আবুল জ্বীন এবং তারাননুস নামেও মানব সমাজ পরিচিত।

আল্লাহর ইবাদতের জন্য জ্বীন জাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হলেও স্বাধীন ইচ্ছার করনে তারা আল্লাহর আদেশ পালন থেকে বিমুখ হয়ে পরে। পৃথিবীতে তারা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে অন্যায় অবিচার খুন-খারাবি ঝগড়া বিবাদ শুরু করে। আল্লাহর নির্দেশে তাদের উপর তাদের স্বজাতি থেকে একজন বাদশাহ তথা নবী পয়গম্বর প্রেরণ করা হয়। সে নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে তার আদেশ-নিষেধ জানিয়ে, তাদেরকে সৎপথ অবলম্বন এবং অসৎপথ বর্জনের প্রেরণা দান করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যার ফলে কিছু কাল ভালোভাবে পার হলেও তাদের মাঝে আবারও পূর্বে স্বভাব চলে আসে। বেশিরভাগ জ্বীন পাপাচারে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তারা আল্লাহর প্রেরিত নবী পয়গাম্বরদের হত্যা করা শুরু করে। এভাবে আবুল জ্বীন হতে প্রায় ছত্রিশ হাজার বছর সময়ের মধ্যে জ্বীনজাতি বহুসংখ্যক পয়গাম্বরদের হত্যা করে।

একপর্যায়ে আল্লাহ নির্দেশে ফেরেশতাদের একদল পৃথিবীতে নেমে এসে কিছু সংখ্যক ঈমানদার জ্বীন ব্যতীত কোটি কোটি জ্বীনদের হত্যা করে। বেঁচে যাওয়া ঈমানদার জ্বীনদের বংশবৃদ্ধি হতে হতে একসময় পৃথিবীতে আবারও একই ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়। সকল জ্বীন পাপাচারের লিপ্ত হয়। আবারো আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতাদের একদল পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে সকল ঈমানদার জ্বীনেরা পাপী জ্বীনদের ভয়ে বন-জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বতের গুহায় বসে আল্লাহর ইবাদত করত, তারা ব্যাতিত সকল জ্বীনদের আবারো হত্যা করা হয়।

এভাবে একই প্রক্রিয়া বহুবার পূণ্য বৃত্তি হয়। জ্বীন জাতির মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ধার্মিক এবং ঈমানদার ছিলো চালপালিশ। সে সব সময় ধর্মে কর্মে ইবাদতে আল্লাহ বন্দেগীতে মাসকুল থাকতো। আল্লাহর নির্দেশে তাকে বাদশাহ প্রদান করা হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পাপী জ্বীনদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সেও ঈমান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)-কে পাঠিয়ে চালপালিশকে সতর্ক করে বলেন, 'তুমি তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে কোন পথে চলছে?' জিবরাঈল (আ.)-এর সতর্কীকরণে চালপালিশের মনে পরিবর্তন ঘটে। সে নিজেকে সঠিক পথে প্রত্যাবর্তন করে আবার নিজ জাতির জন্য কল্যাণকর কার্যসমূহের প্রতি মনোনিবেশ করে। জ্বীনদের হেদায়েত ও নসিহত প্রদান শুরু করে। একটা সময় পর পাপী জ্বীনদের প্ররোচনায় অচিরেই চালপালিশের মনে আবারো পরিবর্তন ঘটে। সে নিজেকে অন্যায়ের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়।

চালপালিশের পয়গাম্বরীর এক হাজার বছর পূর্ণ হয়। তার পাপ থামাতে আল্লাহর নির্দেশে আসমান হতে একদল ফেরেশতা নেমে আসে। কিছু সংখ্যক ঈমানদার জ্বীন ব্যাতিত চালপালিশ সহ সকল জ্বীনদের আবারো হত্যা করা হয়। একই ভাবে আবারো বেঁচে যাওয়া কিছু ঈমানদার জ্বীনদের বংশবৃদ্ধি হয়। এবার আল্লাহ নির্দেশে "বিলীকা" নামক এক জ্বীন বাদশাহীতে আসে। বিলীকা যখন নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছিল তখন তার বয়স হয়েছিল প্রায় পঁচিশ হাজার বছর। পরবর্তীতে তিনি জ্বীন জাতির উপরে ছত্রিশ বছর পর্যন্ত তার অর্পিত দায়িত্ব পালন ও রক্ষা করেন। একটা সময় তার ভিতরেও পরিবর্তন সৃষ্টি হয়। সেও পথ ভ্রষ্ট হয়ে পাপী হয়ে উঠে। আবারও একি প্রক্রিয়ায় আল্লাহর নির্দেশে ফেরেস্তাগণ দুনিয়ায় নেমে আসে। শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। কিছু সংখ্যক ঈমানদার জ্বীন ব্যাতিত আবারো সকল পাপী জ্বীনদের হত্যা করা হয়। বেঁচে যাওয়া ঈমানদার জ্বীনদের আবারো বংশবৃদ্ধি হয়। কয়েক বছর পর আল্লাহ "হামুস" নামক এক মহান জ্বীনকে বাদশাহ ও পয়গাম্বরী প্রদান করেন। হামুসকে পয়গাম্বরী দান করার পর আল্লাহ তাকে তার পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের পরিণতির কথা জানিয়ে হুঁশিয়ার করে বলেন, "আমার আদেশ অনুসারে তুমি তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ যথাযথভাবে পালন করে চলিও। তা না হলে তোমার অবস্থা পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের চেয়েও আরও অনেক ভয়ানক হবে।" হামুস আল্লাহর নিকট নিজ কর্তব্য পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে, "হে আল্লাহ। আমি সারা জীবন মনে-প্রাণে আপনার আদেশ পালন করব। কোন রকম ব্যতিক্রম করব না।"

হামুসের বাদশাহী কালে জ্বীন জাতি ঈমানের পথে চলে। তবে এক পর্যায়ে তারা আবারো আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কেউ হামুসের আদেশ মানে না। সবাই পাপী অত্যাচারী জালিম বেঈমানে পরিনত হয়। তারা হামুসকে ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখায়। প্রথমে হামুস তাদের সাথে যোগ না দিলেও এক পর্যায়ে সে আর নিজের ঈমান ধরে রাখতে পারে না। জ্বীনদের আদি-পিতা তারাননুসের জন্মের পর একলক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বছর অতিক্রম করে সে সময় জ্বীন জাতির মাঝে চলছে পাপাচার আর অবিচারের চুড়ান্ত পর্যায়। তখন আল্লাহর নির্দেশে আবারো আসমান থেকে ফেরেশতাদের একটা দল নেমে আসে। কিন্তু জ্বীন জাতি এবার ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চেষ্টা করে। শুরু হয় যুদ্ধ কিন্তু আল্লাহর পাঠানো ফেরেশতা বাহিনীদের কাছে জ্বীনজাতি কোন রকম প্রতিরোধ করতে পারেনা। কিছু সংখ্যক জ্বীন পালিয়ে বাঁচতে পারলেও সকল জ্বীন ফেরেশতাদের হাতে নিহত হয়।

সব জ্বীনদের হত্যার পর ফেরেশতাদের নজর পরে সুদর্শন এক বালক জ্বীনের উপর। সুদর্শন সেই বালক জ্বীনকে দেখে ফেরেশতাদের মনে প্রচুর মায়া হয়। তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ। এই বালক জ্বীনটির প্রতি আমাদের মনে অত্যন্ত দয়া ও মমতা জন্ম নিয়েছে। আপনি অনুমতি দিলে আমরা তাকে আসমানে নিয়ে পরম আদর যত্নে লালন পালন করতে চাই। আল্লাহ ফেরেশতাদের দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ বলেন, আচ্ছা তোমরা তাকে আসমানে নিয়ে এসে লালন পালন কর। ফেরেশতারা সেই সুদর্শন জ্বীন বালকটির নাম রাখে "আজাজিল"। ফেরেশতাদের সঙ্গে আজাজিল যখন প্রথম আসমানে আসে তখন তার বয়স এক হাজার বছর। ফেরেশতাদের মনে জ্বীনজাতির বালকটির জন্য যে দয়া ও মমতা জন্ম নিয়েছিল তার পিছনে রয়েছিল আল্লাহর রচিত পরম রহস্য। পরবর্তীতে আজাজিল ইবলিসে পরিনত হয়।

আজাজিল তথা ইবলিস :-
ইবলিসের পিতার নাম ছিল খবিশ। জ্বীন জাতির পঞ্চম পয়গম্বর ও বাদশাহ হামুস ছিল খবিশের পিতা। খবিশ দেখতে অত্যন্ত ভয়ংকর সিংহের মত হিংস্র ছিল। শক্তি আচার আচরণেও সে ছিল সিংহের মত নিষ্ঠুর। তাকে পাপিষ্ঠ জ্বীনদের মাথার মুকুট বলে ডাকা হতো। ইবলিসের মাতার নাম ছিল নিলবিস। নিলবিস ছিল হামুসের কন্যা। নিলবিসের স্বভাব চরিত্র ছিল নেকড়ে বাঘের মত হিংস্র। খবিস ও নিলবিস ছিল এক মায়ের পেটের আপন ভাই বোন।

ইবলিস ছিল অত্যন্ত মেধাবী ও তুখোড় স্মৃতিশক্তির অধিকারী। যে কোনো পড়া একবার পড়ে অথবা শ্রবণ করে সে মনে রাখতে পারত। দ্বিতীয়বার তাকে পড়তে বা শুনতে হত না। শোনা যায় এক বর্ণনায় আছে, জাহান্নামের আগুনের মধ্যে খবিস এবং নিলবিসের মিলনে ইবলিসের জন্ম হয়। তাই পিতামাতা এবং জাহান্নাম এই ত্রিস্বভাব ও প্রকৃতির সম্পূর্ণ প্রভাব ইবলিসের চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। সারবুক নামের সর্বশাস্ত্রে অভিজ্ঞ ও সকল বিদ্যায় পারদর্শী একজন শিক্ষক খবিশের বন্ধু ছিলেন। তার কাছে ইবলিসের তালিম শুরু হয়৷ ইবলিসের মেধা ও বুদ্ধির প্রশংসা করে সারবুক খবিজকে বলে, 'আমি ছাব্বিশ হাজার বছর যাবত শিক্ষকতায় যুক্ত আছি। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ের মাঝে তোমার ছেলে ইবলিসের মত এত তীক্ষ্ণ মেধাশালী, তুখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ও বুদ্ধিমান ছাত্র আমার হাতে এখন পর্যন্ত আর দ্বিতীয়টি পড়েনি।' ইবলিস স্বভাবগত ভাবে অত্যন্ত রাগী, জেদি এবং মিথ্যাবাদী প্রকৃতির ছিল। অন্য জ্বীন সন্তানদের সাথে তার ঝগড়া বিবাদ মারামারি লেগেই থাকতো। তার অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। শক্তিশালী ক্ষমতাবান পিতা খবিশের জন্য কেউ তাকে কিছু বলতে পারতো না।

আল্লাহর অনুমতিতে ফেরেশতারা ইবলিশকে প্রথম আসমানে নিয়ে এসে আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীর নিয়ম কানুন সম্পর্কে শিক্ষাদান করা শুরু করে। নিজের প্রখর মেধা ও স্মৃতিশক্তির ফলে অতি দ্রুত ইবলিস সব শিক্ষা রপ্ত করে ফেলল। একাধারে এক হাজার বছর ইবলিস প্রথম আসমানে আল্লাহর ইবাদত করে কাটিয়ে দেয়। ইবলিসের এমন ইবাদতের একাগ্রতা ও নিষ্ঠার ধারা দেখে ফেরেশতারা অবাক হয়ে বলে, আমরা ফেরেশতা জাতি শুধু আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি হয়েছি। ইবাদত ছাড়া আমাদের অন্য কোন কাজ নেই। কিন্তু কি আশ্চর্য। আমরা ইবলিসের ইবাদতের তুলনায় নিজেদেরকে মোটেই ইবাদতকারী বলতে পারি না। আমরা আমাদের ফেরেশতাদের মধ্যে কাউকে কখনো এমন নিবিড় ভাবে ইবাদত করতে দেখিনি। এখন মনে হচ্ছে ইবলিসের নিকট হতে আমাদের অনেক কিছু শেখা এবং বুঝার রয়েছে। ইবলিসের প্রশংসায় প্রথম আসমানে ফেরেশতারা তার নাম দিলেন 'খাশে'।

প্রথম আসমানে এক হাজার বছর ইবাদতের পর আল্লাহর অনুমতি নিয়ে ফেরেশতারা ইবলিসকে দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে আসে। দ্বিতীয় আসমানে এসে ইবলিসের ইবাদতে আরও বেশী একাগ্রতা দেখা যায়। দ্বিতীয় আসমানে ফেরেশতারা তার নাম দিলেন 'আবেদ'। এভাবে যত ধাপ এগিয়ে যেতে থাকলো ততই ইবলিসের ইবাদতের পরিমাণ পূর্বের সব ইবাদতকে ছাড়িয়ে যেতে থাকলো। তৃতীয় আসমানে ফেরেশতারা তার ইবাদাতের এক নতুন দৃশ্য দেখে তার নাম দিলেন 'ওলী'। চতুর্থ আসমানে ফেরেশতারা তার নাম দিলেন 'ছালেহ'। এভাবে যথাক্রমে পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম আসমানে উন্নীত হয়ে প্রত্যেক আসমানে ইবলিস এক হাজার বছর করে ইবাদাত করল। তার ইবাদতের মাত্রা দেখে ফেরেশতারা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেল।

ফেরেশতাদের নিকট হতে সকল বিষয়ে ইবলিস এত বেশী জ্ঞান অর্জন করল যে, তার ওস্তাদ ফেরেশতাদের তুলনায় তার জ্ঞান অনেক বেশি বেড়ে গেল। তার ইবাদাতের পরিমাণ এত বেশি বৃদ্ধি পেল যে তা সকল ফেরেশতাদের ইবাদাতকেও ছাড়িয়ে গেল। সাত আসমানের এমন কোন জায়গা বাকী রইলো না যেখানে ইবলিস সিজদাহ করেনি। ইবলিসের জ্ঞান এবং ইবাদতের পরিমাণ দেখে ফেরেশতারা বুঝতে পারলো, 'যে ইবলিসকে তারা এত দিন শিক্ষা দিয়েছে তার কাছেই এখন তাদের অনেক কিছু শেখার আছে'। ফেরেশতারা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে লাগলো, 'হে আল্লাহ। আপনি আপনার প্রিয় ইবলিসকে যদি আরশে মুআল্লার কাছে উঠিয়ে নেন তবে আমরা তার নিকট হতে মূল্যবান উপদেশ নসিহত শুনে আরো অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবো। সে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করেছে। আমাদের তুলনায় সে অনেকগুণ আপনার ইবাদত করেছে।' আল্লাহ ফেরেশতাদের দোয়া কবুল করে ইবলিসকে আরশে মুআল্লার কাছে নিয়ে গেলেন। আরশে মুআল্লার নিকটে ইয়াকুত নির্মিত একটি উচ্চতর মিম্বর রয়েছে। সেই মিম্বরে ইবলিস আল্লাহর ইবাদত করা শুরু করলো। আরশে মুআল্লায় ইবাদতের অবসরে ইবলিস ফেরেশতাদের নসিহত করা শুরু করলো। তার নসিহত বাণী শুনে ফেরেশতারা মুগ্ধ হয়ে তার প্রশংসা করতে শুরু করলো৷ এভাবে ইবলিস ফেরেশতাদের ওস্তাদ তথা মুআল্লিমুল মালাইকাহ বা ফেরেশতাদের শিক্ষক নামে পরিচিত হয়ে গেল।

ফেরেশতাদের হাত থেকে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গলে আত্মগোপন করে প্রাণে বেঁচে যাওয়া জ্বীনদের সংখ্যা এতদিন আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহর আদেশ নিষেধ অমান্য করে আবারো তারা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে দুনিয়াকে অশান্ত করে তুলেছে। আল্লাহ পক্ষ থেকে তাদের হেদায়েতের জন্য আর কোন পয়গাম্বর বাদশাহ প্রেরণ করা হয়নি। যার ফলে পাপী জ্বীনদের হাতে থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু ঈমানদার জ্বীন আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করতে লাগল। জ্বীন জাতি এত বেশি পাপাচারী হয়ে উঠছিল যে আল্লাহ ইবলিসকে আদেশ করলেন, "হে ইবলিস। তোমার ইবাদাত বন্দেগী ও আমার প্রতি তোমার একান্ত আনুগত্যের কারণে আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার তোমার প্রতি আমার আদেশ হলো তুমি পৃথিবীতে গিয়ে তোমার স্বজাতী জ্বীনদেরকে সৎপথ প্রদর্শন কর এবং পাপ কাজ হতে তাদের বিরত কর।" আল্লাহর আদেশ শুনে ইবলিস আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলো, "হে আল্লাহ। আপনি আমাকে এমন ক্ষমতা দিন যাতে আমি সারাদিন পৃথিবীতে জ্বীনদের হেদায়াত নসিহত করে, সন্ধ্যায় এখানে আবার ফিরে এসে, সারারাত আপনার ইবাদাত বন্দেগী ও ফেরেশতাদের নসিহত করতে পারি।" আল্লাহ ইবলিসের দোয়া কবুল করলেন।

ইবলিস দুনিয়ায় এসে সকল জ্বীনদের হেদায়েত নসিহত করার কাজে নিয়োজিত হলো। সামান্য সংখ্যক জ্বীন ব্যতীত প্রায় সকলেই ইবলিসের বিরুদ্ধাচরণ করল। ইবলিসের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলো, "হে আল্লাহ। আপনি আমাকে এমন ক্ষমতা প্রদান করুন যাতে আমি এই অবাধ্য জ্বীনদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারি। কারণ এরা কোন ভাবেই সৎপথ অবলম্বন করবে না। তাই এদেরকে জীবিত রেখে আর কোন লাভ নেই।" আল্লাহ ইবলিসের দোয়া কবুল করে একদল ফেরেশতা দুনিয়াতে পাঠালেন। সেই ফেরেশতারা, ইবলিস এবং তার অনুগত কিছু জ্বীন মিলে বাকী সকল জ্বীনদের হত্যা করা শুরু করলো। এসব দেখে কিছু সংখ্যক জ্বীন প্রাণ বাঁচতে সৎপথ অবলম্বন করে ইবাদাত বন্দেগীতে মনোনিবেশ করলো।

ইবলিস জ্বীন জাতির বাদশাহ ও পয়গম্বর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলো। তার মান মর্যাদা ও আধিপত্য আরও অনেকগুণ বেড়ে গেল। সাত আসমান ও আট বেহেশতের সব ফেরেশতাদের সে মহামান্য ওস্তাদ বনে গেল। এখন আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য ইবলিসের নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। কখনো দুনিয়াতে বসে দু’রাকাত নামায আদায় করতে সে পাঁচশত বছর কাটিয়ে দিত। কখনো বা আসমানে গিয়ে দু’টি সিজদাহ আদায় করে এক হাজার বছর অতিবাহিত করে ফেলত। আবার কখনো আরশে মুআল্লার নিকট গিয়ে গভীর একাগ্রতার সাথে ইবাদতে মগ্ন হয়ে হাজার হাজার বছর কাটিয়ে দিত। আল্লাহর দরবারে তার সিজদাহর সংখ্যা যে কত ছিল তা হিসাব করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে ইবলিসের মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। সে আল্লাহর নিকট দোয়া করলো, 'হে আল্লাহ। আপনার আসীম দয়ায় আমি সামান্য স্তর হতে অতি উচ্চস্তরে সম্মানের সাথে অধিষ্ঠিত হয়েছি। আপনি আমাকে দুনিয়ার বাদশাহী দান করেছেন। আপনার অসীম দয়া করুণায় আমি আপনার নৈকট্য লাভ করেছি। এখন আমার মনের একান্ত আশা আমি আপনার পবিত্র লাওহে মাহফুজ দর্শন করে আমার জীবন ধন্য ও সার্থক করি। হে মাবুদ। আমার এই একটি মাত্র মনের আশা ব্যতীত আর কোন আশা নেই। আপনি দয়া করে আমার এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন।' আল্লাহ ইবলিসের দোয়া কবুল করলেন৷ তিনি ফেরেশতা মিকাঈলকে আদেশ করলেন, 'হে মিকাঈল। তুমি ইবলিসকে আমার পবিত্র লাওহে মাহফুজ একবারে নিকট থেকে দেখিয়ে আন।' আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী মিকাঈল (আ.) ইবলিসকে লাওহে মাহফুজের নিকট নিয়ে গেলেন। লাওহে মাহফুজে গিয়ে হঠাৎ এক জায়গায় তার দৃষ্টি পড়ল। যেখানে লেখা, "আল্লাহর এক বান্দা ছয়লক্ষ বছর পর্যন্ত তার ইবাদত করবে। কিন্তু অবশেষে আল্লাহর একটি আদেশ অমান্য করে সে বেহেশত হতে বিতাড়িত হয়ে যাবে। ঐ বান্দা আসমান ও জমিনে ‘মালাউন’ বা অভিশপ্ত নামে পরিচিত হবে।" লেখাটি পড়ামাত্র সে কেঁদে ফেলল এবং সেখানেই সিজদায় পতিত হলো। দীর্ঘ ছয় হাজার বছর পর সে সিজদাহ হতে মাথা তুলে দেখলো তার সিজদাহর জায়গায় লিখিত আছে, "লাআনাতুল্লাহি আলা ইবলিস" অর্থাৎ ইবলিসের উপরে আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।

ইবলিস আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করল, হে মাবুদ। ইবলিস কে? আমি তাকে দেখতে চাই। আমি তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিব। আল্লাহ বললেন, অচিরেই তুমি তাকে দেখতে পাবে। এরপর সে জায়গায় দাঁড়িয়ে ইবলিস এক হাজার বছর পাঠ করল, 'লাআনাতুল্লাহি আলা ইবলিস' অর্থাৎ ইবলিসের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। উল্লেখ্য যে, ইবলিস তখনও ইবলিস নামে পরিচিত হয়নি এবং একথা তারও জানা ছিল না যে, কোন এক সময় তার নামই ইবলিস হবে। সুতরাং সে নিজেই এক হাজার বছর ধরে ইবলিস তথা নিজেকেই অভিশাপ দিয়েছিল। আল্লাহ ইবলিসকে জিজ্ঞাসা করেন, "ওহে৷ বলত আমার যে বান্দা আমার অশেষ অনুগ্রহ লাভ করেও আমার আদেশ অমান্য করবে, তার কিরূপ শাস্তি হওয়া উচিত?" ইবলিস জবাব দিল, "ঐরূপ ব্যক্তির উপর আপনার কঠিন শাস্তি ও অভিশাপ বর্ষিত হওয়া উচিত।" আল্লাহ বললেন, "ওহে। তোমার এই মন্তব্যটা এক টুকরা ফলকে লিখে তোমার কাছে রেখে দাও। পরে তা কাজে লাগতে পারে।" ইবলিস সাথে সাথে তা এক টুকরা ফলকে লিখে নিজের সাথে রেখে দিল।

কিছুদিন পরের ঘটনা। হঠাৎ ইবলিসের মনে একটা কুমন্ত্রনা জেগে উঠল। সে মনে মনে ভাবল, "এখন ফেরেশতা ও জ্বীনের রাজ্যে এমন কোন ফেরেশতা বা জ্বীন নেই, যে আমার কোন আদেশ অমান্য বা সামান্যতম অবহেলা করবে। আসমান ও জমিনে জ্বীন এবং ফেরেশতাদের মাঝে আমার প্রভাব এখন অতুলনীয়। আমার ক্ষমতার সাথে মোকাবেলা করার মত এখন আর কেউ নেই।" যদি কোন কারণবশত আল্লাহ নিজের দায়িত্ব হতে অবসর গ্রহণ করেন অথবা স্বেচ্ছায় সৃষ্টিজগত পরিচালনার সকল দায়িত্ব হতে অবসর গ্রহণ করে ঘোষণা করেন, তোমরা তোমাদের মধ্য হতে যোগ্যতম একজন নির্বাচিত করে সৃষ্টজগত পরিচালনা কর। তা হলে নিশ্চয়ই একমাত্র আমিই হব এ পদের সুযোগ্য উত্তরাধীকারী। নিজের অহংকারে ডুবে ইবলিস আরো ভাবতে শুরু করল, আমি এখন কোন দিক দিয়েই আল্লাহ চেয়ে কম ক্ষমতাবান নই। এতকাল আমি তার প্রতিটি কথায় তাঁর প্রতি আনুগত স্বীকার করে এসেছি। এখন আমি কোনদিক দিয়ে তাঁর মুখাপেক্ষী নই। এখন আমার যা ইচ্ছা হয় আমি তাই করতে পারি। তাতে বাধা দেবার মত শক্তি কারও নেই। আমি ইচ্ছা করলে আল্লাহ বিরুদ্ধাচরণও করতে পারি। সকল ফেরেশতা ও জ্বীনদের উপর এখন আমার যে রূপ প্রভাব, তাতে আল্লাহ সাথে আমার কোন ব্যাপারে সংঘর্ষ বাধলে অবশ্যই তারা আমার পক্ষ নেবে। এখন যদি আমি আল্লাহর অধীনতা অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করি, তবে হয়ত তা আমার জন্য কিছুটা অন্যায় হতে পারে। কিন্তু আমার সে উদ্দেশ্য অবশ্যই সফল হবে।

কিছুদিন পর ফেরেশতারা লাওহে মাহফুজে লেখা দেখতে পেল, "অচিরেই আমার জনৈক এক বান্দার উপরে চিরদিনের জন্য আমার লানত বর্ষিত হবে।" এই লেখা পড়ে ফেরেশতারা ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল। সকলের মনে আশঙ্কা দেখা দিল, না জানি তাদের মধ্যে কার উপরে এই দুর্ভাগ্য নেমে আসে। ফেরেশতারা এই দুশ্চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে তাদের ওস্তাদ ইবলিসের কাছে উপস্থিত হলো। তাঁরা ইবলিসকে বললো, আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন যাতে আমরা ঐ বিপদ হতে রক্ষা পেতে পারি। ফেরেশতাদের কথা শুনে ইবলিস অবজ্ঞার সাথে হেসে বলল, ঐ লেখা দেখেই তোমরা চিন্তিত হয়েছ। আমি তো প্রায় হাজার বছর আগেই ঐ লেখা লাওহে মাহফুজে দেখেছি। কিন্তু আমি তো তাতে মোটেও উদ্বিগ্ন নই। কেননা আমি নিশ্চিত জানি তা আমার কিংবা তোমাদের মধ্যে কারও সম্বন্ধে লেখা হয়নি। বরং তা দুনিয়ার জ্বীনদের মধ্যে কারও সম্পর্কে লেখা হয়েছে।

ইবলিসের কথায় ফেরেশতারা সান্ত্বনা পেল না। তারা বলল, ওস্তাদ আপনি যাই বলুন না কেন, আমাদের কিন্তু ভয় দূর হচ্ছে না। কেননা আমরাও তো আল্লাহরই বান্দা। কোন বান্দার উপর এই বিপদে পড়বে তা তো কিন্তু স্পষ্ট করে লেখা নেই। আমাদের মধ্যে কারও সম্পর্কেও লেখা হতে পারে। কাজেই আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন। যেন আমরা সকলে আল্লাহর সেই কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পাই। ইবলিস ফেরেশতাদের মিনতিতে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া করল, "হে মাবুদ। আপনি ফেরেশতাদের কারও উপর ঐ কঠিন বিপদ দিয়েন না।" আল্লাহ ইবলিসের দোয়া কবুল করলেন। ফেরেশতারা আল্লাহর সেই নির্ধারিত গজব থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু ইবলিস সমগ্র ফেরেশতাদের জন্য দোয়া করলেও অহংকারে বশীভূত হয়ে নিজের জন্য দোয়া করতে ভুলে গেল। তারপর একদিন ইবলিস আরশে মুআল্লার একখানা তখতির উপরে উজ্জ্বল নূরের হরফে একটি লেখা দেখতে পেল, "আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম" অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনার কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এই বাক্যটি পাঠ করে ইবলিস অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হে মাবুদ। কে সেই পাপিষ্ঠ শয়তান যার নিকট হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনার নিকট দোয়া করার কথা লিখে রাখা হয়েছে? আল্লাহ জবাব দিলেন, নিশ্চয়ই অতি শীঘ্রই তুমি তাকে চিনতে পারবে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


অসাধারণ রূপকথা।
শুনতে দারুণ লাগে।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২৪

আজব লিংকন বলেছেন: রূপকথা হলে রূপকথা। সত্য হলে সত্য।
হ্যাঁ আমারও শুনতে ভালো লাগে।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩১

আহরণ বলেছেন: ঠাকুরমার ঝুলি ফেল.......... হা হা হস @ ভাইয়া

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২৫

আজব লিংকন বলেছেন: ঠাকুরমা ঝুড়ি হিন্দু ভার্সন এবং কাল্পনিক।
ধার্মিক মুসলমানদের নিকট ইহা সত্য এবং বাস্তবিক।
হাসতে মানা নাই ব্রো... প্রাণ খুলে হাসো। হা হা হা....

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:



- জ্বীন ও ইবলিস সম্পর্কে জানার মাত্র দুইটি পথ আছে। এক- কোরআন, আর দুই- হাদিস। এই দুই এর বাইরে যা আছে তার সব মন গড়া কাহিনী।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২৬

আজব লিংকন বলেছেন: তা তো অবশ্যই ভাইজান। ইহা ডিনাই করনের কোন সুযোগ নাই।
তবে এই গল্প কিন্তু কাল্পনিক নয়।।

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:১০

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ছোটবেলা থেকে হুজুর দের কাছ থেকে শুনে আসছি, ভেবেছিলাম নতুন কিছু পাবো । আশা করি পরের পর্বে নতুন কিছু পাবো

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২৭

আজব লিংকন বলেছেন: ছোটবেলা থেকে শুনে আসা হাদিস এবং কুরআনের আলোকে আলোচনা সমূহ কি যুগের সাথে বদলে যায়? আমি তো আর নিজের মত মনগড়া করে এইসব বিষয়ে কাল্পনিক গল্প বলতে পারি না...
আপনি যা শুনেছেন... একটু দেরিতে আমিও তাই শুনলাম... আদিকাল থেকেই চলে আসছে... নতুন কিছু পাওনের কোন সুযোগ নাই ভাইজান।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.