নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

[email protected]

আনিস আলমগীর

আনিস আলমগীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাগদাদ পতনের পর দুই বাংলাদেশী সাংবাদিকের উপস্থিতি: ইরাক রণাঙ্গণ- বই এর পাতা থেকে

০১ লা জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৪



বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল, ২০০৩

বাগদাদ পতনের পর দুই বাংলাদেশী সাংবাদিকের উপস্থিতি



সকালে আজ কোথাও গেলাম না। হোটেল রুমে বসে বসে লিখছিলাম। লেখা শেষ হতে হতে দুপুর। এমন সময় ফোন পেলাম। এ ধরনের ফোন এখন শুধু ইন্টারকম থেকে আশা করতে পারি, যেহেতু লোকাল বা ইন্টারন্যাশনাল কোনো লাইনই সচল নেই।। জনকণ্ঠের সাংবাদিক ফজলুল বারীর ফোন। তার সঙ্গে মানবজমিনের মালিক-সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীও এসেছেন। গতকালই দেখা করে বারী জানিয়েছিল তারা দু’জন ১৫ এপ্রিল রাতে বাগদাদ এসেছেন। লবিতে আমাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন মতি ভাই। সেই একই কথা, মতি ভাইও বারীর মতো বললেন বাংলাদেশে এখন আমার জনপ্রিয়তা এবং আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা। কনগ্রাচুলেশনস জানালেন। তিনি বললেন, আমি আসতে আসতে পথে বারীকে বলছিলাম, আমরা তিনজন ইরাক যুদ্ধ কভার করছি। এক সময় আমরা একটি পত্রিকায় ছিলাম (বাংলাবাজার পত্রিকা)। বাগদাদ পতনের সাত দিন পর এসে তার যুদ্ধ কভারের কথা শুনে মনে মনে হাসলাম। তবে একসঙ্গে কাজ করার দাবিতে সায় দিলাম। কথা তো সত্য। যদিও মতি ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে আমার শুধু অসুবিধাই হয়নি, চাকরি থেকে ইস-ফা দিয়ে আসতে পর্যন- বাধ্য করেছিলেন তিনি।

মতি ভাই টয়লেট খুঁজছিলেন। লবি দিয়ে গিয়ে বেসমেন্টে যেতে হয়। জটিল পথ। আমি ওনাকে পথ দেখিয়ে এসে বারীর সঙ্গে লবির সোফায় বসলাম। আমরা একসময় এক পত্রিকায় ছিলাম তাই না বারী? বারীর বুঝতে দেরি হয়নি আমার টিপ্পনি। কারণ আমার চেয়ে সে বেশি ভূক্তভোগী। সেও জানে একসঙ্গে কাজ করার পরিণতি। আচ্ছা বারী, মতি ভাই যে আমাকে জড়িয়ে ধরে এ রকম করলো এর মধ্যে কতোটা আন-রিকতা আছে- বারীকে প্রশ্ন করলাম আমি। আমার নিজের উপলব্ধি হচ্ছে এটা কৃত্রিম। বারীকে তা না বলে তার কাছ থেকে নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম। সে বললো- ‘অবশ্যই কৃত্রিম’। আমরা দু’জনই হেসে উঠলাম, উপলব্ধির রেজাল্ট এক হওয়ায়।

বারী এবং আমি ফিরে গেলাম সে পুরনো দিনে। বারীর একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল। প্রিয় প্রজন্ম। মিনার মাহমুদের বিচিন-া ছেড়ে বারী সেটা নিয়েই পড়ে ছিল। আমি দৈনিক দেশ ছেড়ে আজকের কাগজের সঙ্গে যাত্রাতেই সঙ্গী হলাম। মতি ভাই ইত্তেফাক ছেড়ে আজকের কাগজে যোগ দেন এর প্রায় বছরখানেক পর। তিনি যোগ দেওয়ার পর আমি এক মাসের জন্য ভারত চলে যাই, ফিরে এসে দেখি তিনি নতুন একটি পত্রিকা তৈরির চিন-া করছেন। আজকের কাগজ ছেড়ে দিলেন। আমাকে তার চাই। বারীকেও তার চাই। তার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা আমার। অদ্ভুত সব রিপোর্টিং আইডিয়া এবং ছোট ছোট বাক্যে বানানো তার গল্পের ভক্ত আমি। এরশাদ আমলে তার একটা ভাঙা গাড়ি আরো ভাঙা অবস'ায় টাঙ্গাইলে পাওয়া গেলো। তিনি পত্রিকায় পত্রিকায় সে গাড়ির ছবিসহ নিজের বানানো নিউজ পাঠিয়ে ছাপার অনুরোধ করেন। তার দাবি, এরশাদের লোকজন তার গাড়ি হাইজ্যাক করে এ অবস'া করেছে। তাকে যারা ভালো করে চেনেন তারা সামনে কিছুই বলেন না। তবে পেছনে হাসেন আর বলেন যে কাজটি নাকি তার নিজেরই করা। এ ঘটনার পর তাকে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ এজেন্সি ডেকে নিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি কেন এসব নাটক করছেন? মতি ভাই অবশ্য এর নাম দিয়েছেন এরশাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য ‘ডিজিএফআই-এর ইন্টারোগেশন’। আমি লোকজনের কথায় বিশ্বাস না করে মতি ভাইয়ের কথাই বিশ্বাস করি। কারণ আমার চোখে তিনি তখন অনুকরণীয় সাংবাদিক। পূর্বাভাস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আমিনুর রশীদ যখন মতি ভাইয়ের পাঠানো ছবি আর প্রেস রিলিজকে আবর্জনার বক্সে ফেলে দিচ্ছিলেন, আমি তখন অনুরোধ করি সেসব ছাপানোর জন্য। সে অবশ্য তা কোনমতেই ছাপায়নি।

সেই পছন্দের লোকটি যখন নিজের মালিকানায় একটি পত্রিকা করতে যাচ্ছেন, তাকে সহায়তা করার জন্য তার চেয়ে আমার এক মাস বেশি সময় লেগেছিল প্রিয় আজকের কাগজ ছাড়তে। আমি না হয় প্রিয় একটি পত্রিকা ছাড়লাম। বারীকে ছাড়তে হলো অনেক কিছু। তার পত্রিকা, কম্পিউটার এবং অনেক স্বপ্ন নিয়ে সেও যোগ দিলো ‘দেশী ভাইয়ের’ বাংলাবাজার পত্রিকায়। অল্পদিনেই অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম আমরা সবাই। এক রিপোর্টারের বিরুদ্ধে অপরকে লাগিয়ে, মহিলা কলিগদের সঙ্গে পুরুষ কলিগদের সম্পর্ক নিয়ে আজেবাজে কথা বলে গ্রিন রোডের এক বাড়িতে বানানো অফিসটিকে তিনি দোজখখানায় রূপান-রিত করলেন।

যাকে এতোদিন জানতাম সৎ, নিরপেক্ষ, সাহসী এক সাংবাদিক হিসেবে, সাপ্তাহিক খবরের কাগজের নামকরা এক লেখক হিসেবে- তিনি যে কোনদিন তার পত্রিকা দিয়ে কার পক্ষে দালালি করবেন তা জানা আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়লো। জানা থাকলে অবশ্য সতর্ক হওয়া যেত। আসলে আমাদের কারোরই জানা ছিল না তার পলিসিটা কী! তবে তার বহুরূপী চরিত্র একটুখানি ধরা পড়লো যখন আমরা যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছি তাদের নিয়ে তিনি মিটিং করে জানালেন, শেখ মুজিবের নামের আগে বঙ্গবন্ধু, জিয়ার নামের আগে শহীদ জিয়া যদি আপনারা লিখতে চান, তবে গোলাম আযমের নামের আগেও অধ্যাপক লিখতে হবে। জামায়াতের প্রচার সম্পাদক কাদের মোল্লার কাছে পাঠকের চিঠি এবং কাদের মোল্লার উত্তর- প্রথম পাতার আপার ফোল্ডে ছাপা হলো। কোনো দৈনিক পত্রিকার ইতিহাসে একটি দলের প্রচার সম্পাদককে নিয়ে এমনটা ঘটেনি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবস। তার আগের দিন তারই সম্মতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার নিলাম আমি, আরো দুটি পত্রিকার সঙ্গে। রাতে দেখলাম তা যাচ্ছে না। বরং আমার নেওয়া সাক্ষাৎকারটি থেকে কিছু তথ্য নিয়ে একটি বিকৃত সংবাদ ছাপছেন তিনি। ১৫ আগস্ট প্রথম পাতায় ছাপা হলো কর্নেল রশিদ, কর্নেল ফারুকের সাক্ষাৎকার। প্রতিনিয়ত তটস' থেকে, নব্য পত্রিকা মালিকটির দ্বারা প্রতিদিন অপমানে জর্জরিত না হয়ে, সামনে মাস্টার্স পরীক্ষাটি যাতে মানসিক শানি- নিয়ে দিতে পারি, সে চিন-ায় গুডবাই জানাতে হলো তাকে মাস দু’য়েকের মাথায়।

হিসাব করে দেখলাম যে ক’দিন চাকরি করলাম, আগাগোড়াই দুর্ব্যবহার করেছেন তিনি। আজকের কাগজ ছেড়ে আসার পর তিনি অনেককে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। আমি এসেছিলাম আজকের কাগজকে এক মাসের নোটিশ দিয়ে, কারণ চাকরি-খাওয়া আর চাকরি ছাড়া- উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের মালিক-সাংবাদিকদের নোটিশ প্রদানের প্রথাটি মেনে চলা উচিত। তিনি চাকরি ছাড়ার পরদিন আমি কেন ছেড়ে দিয়ে এলাম না, এই কারণেও হয়তো আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, সে সময় দেখলাম তিনি আজকের কাগজের যোগ্য-অযোগ্য যেই যাচ্ছে তাকেই চাকরি দিচ্ছেন নিজের পত্রিকায়। আমি আপত্তি করলাম কিছু কিছু। কাজ হয়নি। কিন' যখন দেখলাম এক মাসের মাথায় ওদের প্রায় সবাইকে চাকরিচ্যুত করে রাস-ায় নামিয়ে দিয়েছেন তিনি, তখন বুঝতে বাকি নেই তার এই ত্রাতার ভূমিকায় নামার উদ্দেশ্য ‘ইমাম হোসেনের জন্য ভালোবাসা নয়, ইয়াজিদের প্রতি ঘৃণা।’ আজকের কাগজকে সাময়িক অসুবিধায় ফেলাই ছিল তার লক্ষ্য। দু’মাস কাজ করেই তার বক্তৃতা এবং কাজের মধ্যে যে বৈপরীত্য আমি দেখেছি, সংবাদপত্র শিল্পে তো নয়, আমার ব্যক্তি জীবনেও এমন দ্বিতীয়জনের দেখা এখনো পাইনি। আমার চোখে তিনি যেন দ্বিতীয় ড. জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড। তার পত্রিকায় চাকরি করতে পারিনি বলে কী কোনো সুপ্ত রাগ থেকে আমার এটা মনে হয়, প্রথম প্রথম এটা ভাবতাম। কিন' না, একান- আলাপে দেখেছি, যারাই পত্রিকার মালিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে চাকরি করেছেন, তাদের সবাই আমার সঙ্গে একমত। কিন' কেরিয়ারের চিন-া করে কে আর মুখ খুলে তার বিরুদ্ধে! তিনি যে একটি পত্রিকার মালিক! সমাজেও তার রয়েছে ভালো মানুষের মুখোশ। আমার মন বলে, এ তোমার কল্যাণ হয়েছে। দু’মাসেই তুমি মতি-মোহ মুক্ত হয়েছ।

বারীর ভাগ্যে আরো কয়েক মাস চাকরি জুটেছিল বটে তবে বের হতে হলো তাকে আরো অপমান নিয়ে। বারীর সাপ্তাহিক পত্রিকাটির প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কয়েক সপ্তাহ পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার কম্পিউটারগুলো দখলে নেওয়া হয়। বাংলাবাজার পত্রিকায় হামলা, %

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.