নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।
গত ৫ আগস্ট জেদ্দায় ইউক্রেনের সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরব ৪০টি দেশের একটা শান্তি সম্মেলন আয়োজন করে। এই সম্মেলনে আমেরিকা, চীন, ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নাই। রাশিয়াকে ছাড়াই চীন এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়াতে ইউরোপীয় কিছুটা স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলেছে।
এই সম্মেলন শেষ চীন আগের মতোই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তার নিরপেক্ষতার কথা ঘোষণা করেছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে সম্মেলনে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নাই অথচ রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেই রকম একটা সম্মেলনে, চীনের উপস্থিতির কারণ হচ্ছে, চীন বিশ্ববাসীকে একটা বার্তা দিতে চায় যে সে অন্তত প্রকাশ্যে এই যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে দাঁড়াবে না। এটি ইউক্রেনের পক্ষে একটি ক্ষুদ্র বিজয় হতে পারে, কিন্তু জিরো-সম গেমের কূটনৈতিক বিশ্বে, রাশিয়ার একটা বড় পরাজয়ের ইঙ্গিত।
চীনের এই কৌশল থেকে এটা কখনই আশা করা যায় না যে চীন সম্পূর্ণরূপে পশ্চিমা অবস্থানে চলে যাবে, তবে এই সম্মেলনে চীনের উপস্থিতি এবং সমর্থন রাশিয়ার জন্য একটি বড় হতাশার কারণ হবে।
চীনারা অর্থনৈতিক কারণে পশ্চিমের সাথে গভীর ভাবে জড়িত এবং একই কারণে ইউক্রেনীয়দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে এবং রাশিয়ার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
তবে চীন প্রকাশ্যে যাই করুক বা বলুক না কেন, রাশিয়ার সাথে অব্যাহত অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্কের কারণে পশ্চিমা মিত্ররা বিভিন্ন দেশের সাথে চীনের সম্পৃক্ততাকে সবসময় সতর্কতার সাথে দেখে।
জেদ্দায় আলোচনায় অংশ নিলেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় তাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই আলোচনার একদিন পরই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে ফোন করেন এবং চীনের নিরপেক্ষতা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এখানে পাঠকদের জানতে হবে চীনের ব্যবহৃত "নিরপেক্ষ" শব্দটার আসল অর্থ কি। চীন যখন রাশিয়াকে বলবে "চীন নিরপেক্ষ" তখন অর্থ হবে "চীন রাশিয়ার পক্ষে আছে" আর যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলবে, "চীন নিরপেক্ষ" তখন অর্থ হবে "চীন এই যুদ্ধে কোন পক্ষকেই সমর্থন করে না"
জেদ্দা সম্মেলনের পর রাশিয়া এবং চীনের সামরিক বাহিনী আমেরিকার আলাস্কার উপকূলে নৌ টহল সহ যৌথ মহড়া অব্যাহত রেখেছে। শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে পুতিন অক্টোবরে চীন সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় কূটনৈতিকরা মনে করে চীনের এই "নিরপেক্ষতার" কৌশল হচ্ছে যুদ্ধ থামার ব্যাপারে চীনের কোন উৎসাহ নাই। চীনের আশা, যুদ্ধ চলতে থাকলে চীনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকা যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, রাশিয়া বিশ্বমঞ্চে আরো দুর্বল খেলোয়াড় হবে এবং সে এই সুযোগে ইউরোপের সাথে একচেটিয়া ব্যবসা করবে। চীনের এই সব পরিকল্পনার একটাই নেতিবাচক দিক, তাহলো চীন সম্পর্কে অন্যদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা। অর্থাৎ চীন সম্পর্কে অন্য রাষ্ট্রগুলির ইতিবাচক ধারণা ছাড়া চীনের এই আশা পূর্ণ হবে না।
চীনের দাবার চালটা এই রকম যে, চীন চায় ইউরোপের মাটিকে আমেরিকা এবং চীনের রণক্ষেত্র হিসাবে। এই ক্ষেত্রে চীনের লক্ষ্য হল যত বেশি সংখ্যক ইউরোপীয় দেশের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলা। কিন্তু পাল্টা চালের কারণে গত ৪০ বছর ধরে চীন তিলেতিলে অনেক ইউরোপীয় দেশের সাথে যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিল তা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।
রাশিয়ার সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা না করাতে অনেক ইউরোপীয় দেশকে, বিশেষ করে রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে, নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার এই বিবেচনা থেকেই চীনের সাথে ইউরোপের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। এখানেই পূর্বে উল্লেখিত চীনের চালটি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।
চীনের কৌশল হচ্ছে ইউরোপের সাথে তার সম্পর্কের অবস্থান সবসময় অস্পষ্ট করে রাখা। যাতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি আমেরিকার সাথে যুক্ত হয়ে একত্রে সরাসরি চীনের বিপক্ষে অবস্থান না নেয়। অর্থনৈতিক কারণে ইউরোপের পক্ষে এখনই চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কঠিন। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে চীনের ইচ্ছার বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ ইউরোপকে আরো বেশি আমেরিকার দিকে ঠেলে দিয়েছে। জেদ্দা শীর্ষ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চীন ইউক্রেনের সাথে পুনরায় যুক্ত হয়ে ইউরোপকে আশ্বস্ত করতে চাচ্ছে।
চীনের যে মূল পরিকল্পনা ছিল, অর্থাৎ ইউরোপের মাটিতে আমেরিকার সাথে মোকাবেলা, এটা যখন ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ব্যর্থ হয়ে গেছে, তখন চীন চেষ্টা করছে ক্ষতি মেরামতের। তাই জেদ্দা সম্মেলনের মত সম্মেলনগুলোতে উপস্থিত হয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অশ্বত্ব করার চেষ্টা করছে যে তারা আসলে শান্তির পক্ষে।
চীনের প্রতি অবিশ্বাস সত্ত্বেও ইউরোপের সাথে বাণিজ্য চীনের অনুকূলে। অর্থাৎ ইউরোপ চীনে যে পরিমাণ রফতানি করে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি আমদানি করে। এই যুদ্ধের মধ্যেও ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালে চীন থেকে ইউরোপে পণ্য আমদানি আরো বেড়েছে।
আগে ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলি চীনকে তাদের ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতো, নিরাপত্তা হুমকি মনে করতো না। কিন্তু এই যুদ্ধের ফলে তারা চীনকে একটি আধিপত্যবাদী শক্তি হিসাবে দেখছে। চীন তার সম্পর্কে ইউরোপিয়ানদের মনোভাব বুঝতে পেরেছে তাই ইউরোপিয়ানদের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার জন্য জেদ্দা সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছে।
ইউরোপের কাছে চীনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ইউরোপ অনেকগুলি ল্যান্স দিয়ে চীনকে দেখছে। তার মধ্যে মাত্র একটা হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। আরো আছে মানবাধিকারের প্রতি চীনের দৃষ্টিভঙ্গি, তাইওয়ানের প্রতি হুমকিমূলক অবস্থান, এবং চীনের সরকার সমর্থিত কর্পোরেট গুপ্তচরবৃত্তি।
দুইটি বিপরীত বাস্তবতা ইউরোপের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক দিকে চীনের সাথে ইউরোপের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রয়োজন। আবার চীনের সাথে ব্যবসা করতে গেলে চীনের আচরণের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। দুইটি বিপরীত বাস্তবতাকে সমন্বয় করার জন্য ইউরোপ একটা কৌশল গ্রহণ করেছে। একদিকে তারা চীনের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে, আরেক দিকে আমেরিকার সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক আরো জোরদার করবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইউরোপিয়ানদের চোখ খুলে গেছে। তারা একসময় রাশিয়াকে চীনের মত অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতো; নিরাপত্তা হুমকি মনে করতো না। তারা জ্বালানির জন্য সম্পূর্ণ ভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল ছিল। রাশিয়া ইউরোপের উপর এই সুযোগ গ্রহণ করেছে। তাই ইউরোপ এখন কোন ব্যাপারেই একক ভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল হতে চায় না। চীনের উপর নির্ভরশীল হলে চীন এই সুযোগ আরো নির্মম ভাবে ব্যবহার করবে।
শেষ কথা:
এখন বাস্তবতার আলোকে, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির লক্ষ্য হল, নিরাপত্তার স্বার্থে আমেরিকার সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা এবং চীনের উপর খুব বেশি নির্ভর না করে বৈশ্বিক ইস্যুতে চীনের সাথে কাজ করা।
১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫১
মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন: যতবার আমি চীন সম্পর্কে কোন পোস্ট দিয়েছি তখনই আপনি এই মন্তব্য করেছেন।
এটার পিছনে প্রথম কারণ হতে পারে আপনি হয়তো মনে করছেন বারবার এই কথাটা বললে একসময় মানুষ বিশ্বাস করবে।
দ্বিতীয় কারণ হতে পারে এটা আপনার দৃঢ় বিশ্বাস।
তৃতীয় কারণ হতে পারে এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা আছে।
প্রথম দুই টার ক্ষেত্রে আমার কোন বক্তব্য নাই।
তবে তৃতীয় টার ক্ষেত্রে আপনি যদি মনে করেন সত্যি সত্যি আপনার এই বক্তব্যের পিছনে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ আছে তাহলে আপনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলে আমরাও জানতে পারতাম।
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: শেষ কথাটা বড় ভুল কথা। নিজেদের নিরাপত্বার স্বার্থে সবার আম্রিকাকে এড়িয়ে চলা উচিৎ। এবং সেটাই শ্রেয় হবে।
১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫৪
মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তবে শেষের কথাটি আমার কোন কথা নয়।
এটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কথা।
তারা মনে করে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমেরিকা সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে হবে, তবে তারা চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাবে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: আমেরিকাকে পেছনে ফেলে চীন আগামী ৫/৭ বছর পর বিশ্ব মোড়ল হবে।