নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।
উত্তেজনা এবং বিনোদন:
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং বেসবল উভয় খেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে টানটান উত্তেজনার মাধ্যমে দর্শকদেরকে বিনোদন দেয়া। তাই বেসবলে হোম রান এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছক্কা দর্শকদের জন্য সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। বেসবল ভক্তরা যেমন বেসবল খেলোয়াড়দের হোম রান মারতে দেখতে ভিড় জমায়, তেমনই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ভক্তরা ছক্কা মারতে দেখলে ভীষণ উত্তেজিত হয়। এই দুইটি খেলায় উত্তেজনার বিস্ফোরক ধরণের কারণে দর্শকদের শরীরে দ্রুত অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণ হয় ফলে দেহমনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। তার মনের মধ্যে শত্রুকে আঘাত করার যে সুপ্ত বাসনা তা একটা বড় হিটের মাধ্যমে কিছুটা প্রশমন করে নেয়।
স্টার পাওয়ার এবং দর্শনীয় পারফরম্যান্স:
উভয় খেলাতেই যে খেলোয়াড় বড় হিটগুলি (ছক্কা বা হোম রান) করতে পারবে সেই সুপারস্টার মর্যাদায় পৌঁছে যায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্রিস গেইল এবং বেসবলে বেবে রুথের মতো খেলোয়াড়রা যথাক্রমে ছক্কা মারার এবং হোম রান করার ক্ষমতার কারণে আইকন হয়ে উঠেছে। যদি কোন খেলোয়াড় এমন হিট করতে পারে যে বলটি মাঠের বাইরে চলে যায় তাহলে তো আর কথাই নাই, সে সুপার স্টার। এই বড় হিটের কারণে দর্শকরা খেলোয়াড়টির দক্ষতার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং একই সাথে খেলাটির জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়।
সংক্ষিপ্ত ফর্ম এবং তাৎক্ষণিক তৃপ্তি:
সংক্ষিপ্ত ফর্মের কারণে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং বেসবল বর্তমান ব্যস্ত সময়ের দর্শকদের স্বল্প সময়ে মনোবাসনা পূরণ করে তাৎক্ষণিক তৃপ্তি দিচ্ছে। সংক্ষিপ্ত ফরমেটের কারণে খেলার সময় সীমিত হয়ে যাওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে ক্রিকেটে বেশি বেশি ছক্কা মারতে বা বেসবলে হোম রান করতে হয়। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের কারণে খেলার পুরা সময় জুড়ে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ বজায় থাকে ফলে দর্শকরা রিলাক্স করার সময় পায়না অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনার মধ্যেই থাকতে হয়। এটা বড় হিটের পর আরেকটা বড় হিট এতে উপর্যুপরি মনের শত্রুদের ঘায়েল করার মজা অনুভব করে।
বিপণন এবং বাণিজ্যিক সাফল্য:
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং বেসবল বিপণন কৌশল হিসাবে ছক্কা এবং হোম রানের দৃশ্যগুলি প্রচার করা হয়। হাইলাইট রিল, প্রচারমূলক উপকরণ এবং বিজ্ঞাপনগুলি নৈমিত্তিক দর্শকদের আকর্ষণ করার জন্য এই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তগুলিকেই প্রদর্শন করে। এই বিপণন পদ্ধতিটি টিকিট বিক্রয়, টেলিভিশন রেটিং এবং সামগ্রিক বাণিজ্যিক সাফল্যকে বাড়িয়ে তোলে, যা এই দুইটি খেলার জনপ্রিয়তায় ছক্কা এবং হোম রানের প্রধান ভূমিকা নির্দেশ করে।
দক্ষতা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়:
যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছক্কা এবং বেসবলে হোম রান নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। তবে এটা মনে করার কোন কারণ নাই যে ছক্কা মারতে বা হোম রান করতে কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না অথবা গায়ের শক্তি দিয়ে মারলেই ছক্কা বা হোম রান হয়ে যায়। উভয় খেলাই প্রচুর দক্ষতা এবং কৌশলের প্রয়োজন হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছক্কা মারার পাশাপাশি দক্ষ বোলার, ফিল্ডার এবং কৌশল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা ডট বল বা উইকেট ফেলে দেয়া ছক্কা মারার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তেজনাকর। একইভাবে বেসবলে পিচিং, ফিল্ডিং এবং বেস দৌড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তেজনাকর। বেসবলে বান্ট এবং ফাঁকি দেয়ার কৌশলগুলি খেলার ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খেলার কৌশলগত পরিকল্পনা:
দর্শকরা মজা পাচ্ছে এই ধারণা থেকে শুধুমাত্র বিগ-হিটিংয়ের উপর জোর দিলে উভয় খেলার কৌশলগত পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়কের কৌশল, বোলারের বৈচিত্র্য এবং ফিল্ড প্লেসমেন্ট অপরিহার্য উপাদান যা ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে। বেসবলে পিচিং পরিবর্তন, ডিফেন্স এবং ব্যাটিং অর্ডার সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খেলাগুলোকে নিছক ছক্কা মারা বা হোম রানে সীমিত করলে এই দুইটি খেলার মধ্যে যে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলের প্রয়োগ আছে সেই ধারণাকে অতি সরল মনে হবে।
বৈচিত্র্যময় দর্শক:
সব দর্শক যে শুধুমাত্র বড় হিট দেখার জন্য আসে তা ঠিক না। অনেক দর্শক আছে যারা খেলার সূক্ষ্ম দিকগুলি দেখে আনন্দ পায়। যেমন ক্রিকেটে, একজন ব্যাটসম্যান যদি একটি ইয়র্কার বলকে সুন্দর ভাবে মোকাবেলা করতে পারে বা বেসবলে একটি ডাবল খেলতে পারে তাহলে অনেক দর্শকের মন জুড়িয়ে যায়। এই দুই খেলাতেই খেলার সূক্ষ্ম দিকগুলি উপলব্ধি এবং রস আস্বাদন করার ক্ষমতা এই খেলাগুলির গভীরতা এবং আবেদনকে বাড়িয়ে তোলে। এরফলে বৈচিত্র্যময় দর্শক খেলা দেখতে আসে। কেউ আসে ছক্কা বা হোম রান দেখতে কেউ আসে ভাল বেটিং-বোলিং এবং ফিল্ডিং দেখতে।
প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল যোগ হচ্ছে:
উভয় খেলাই শুধু বিগ-হিট নির্ভর না হয়ে উত্তেজনার নতুন নতুন কৌশল যোগ করছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে "ডেথ ওভার" কৌশলের মতো উদ্ভাবন এবং বেসবলে উন্নত বিশ্লেষণের ব্যবহার গেমগুলিতে নতুন মাত্রা চালু করেছে। এইসব নতুন নতুন নিয়ম বা কৌশল যোগ করার ফলে উভয় খেলাই ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে।
সারসংক্ষেপ:
যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছক্কা মারার দৃশ্য এবং বেসবলে হোম রান নিঃসন্দেহে অনেক দর্শককে এই খেলাগুলি দেখতে আকৃষ্ট করে কিন্তু এতে অনেক সময় এই খেলাগুলির নান্দনিক সৌন্দর্য যেমন বোলিং, বেটিং, ফিল্ডিং এবং খেলার বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল এই গুলিকে উপেক্ষা করা হয়। উভয় খেলাতেই অনেক বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল, দক্ষ পারফরম্যান্স ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। তাই শুধু বড় হিট না করে খেলার নান্দনিক সৌন্দর্য বজায় রাখা উচিত। তাহলে আমার মত দর্শক ক্রিকেট সৌন্দর্য দেখতে আবার উৎসাহিত হয়ে উঠবে।
©somewhere in net ltd.