নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।
বাংলাদেশে প্রচলিত কোটা প্রথা শুরু থেকে অকার্যকর, বাতিল বা ভয়েড আয়্যেব ইনিটিও। বাংলাদেশ সংবিধানের প্রেক্ষাপটে কোটা সংক্রন্ত আইন, বিধিমালা, এবং সব সার্ক্যুলার শুরু থেকেই এমন ভাবে অবৈধ এবং বাতিল বলে বিবেচিত হবে যেন কোটা সংক্রান্ত আইন কখনও বিদ্যমান ছিল না বা কোনো আইনি প্রভাব ছিল না। অর্থাৎ কোটা সংক্রান্ত বিষয়টি একটি শূন্য বা ফাঁফা বিষয় বা এর কোন অস্তিত্বই নাই বলে ধরতে হবে।
কোটা প্রথা সহজাত ভাবেই অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। এর অনেকগুলি মৌলিক ত্রুটি আছে। কোটা প্রথা সংক্রান্ত সকল আইন এবং সব নিয়োগের ত্রুটি বা অবৈধতা এতটাই মৌলিক যে কোটা প্রথার ধারণাই আসলে অকার্যকর। অবৈধ ক্ষমতার প্রভাবে, বা অবৈধ ভাবে অথবা জালিয়াতির মাধ্যমে এই প্রথা চালু এবং বহাল রাখা হয়েছে।
তাই কোটা প্রথা সংক্রান্ত কোন আইন কানুন এবং এই সব আইনকানুনের দ্বারা নিয়োগ সমূহের কোন আইনগত বৈধতা নেই। যেহেতু এটি শুরু থেকেই অকার্যকর, বাতিল এবং অবৈধ তাই পরবর্তী কোনো আইন বা আদালতের রায় বা চুক্তির দ্বারা এটি অনুমোদন বা বৈধ করা যাবে না।
বাতিলযোগ্য আর বাতিল এক বিষয় নয়। কোটা সংক্রান্ত আইনকানুনগুলি বাতিলযোগ্য নয় বরং সরাসরি বাতিল। বাতিলযোগ্য আইনকে আরেকটি আইন দ্বারা বা আদালতের রায়ে বাতিল করা যায় বা বৈধতা দেয়া যায়। কিন্তু শুরু থেকেই বাতিল আইনকে বাতিল করার জন্য কোন আইন বা আদালতের রায়ের প্রয়োজন হয় না। কোটা সংক্রান্ত আইনকানুনগুলি সরাসরি বাতিল বলে আইন দ্বারা বা আদালতের রায় দ্বারা বাতিল করার কোন প্রয়োজন নাই।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অনুচ্ছেদের ২৬ ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে যে: [দ্রষ্টব্যঃ অনুচ্ছেদ নয় ধারা]
(২) রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
সংবিধানের ভাষাটা লক্ষ্যণীয়, 'বাতিল হইয়া যাইবে" অর্থাৎ বাতিল করার কোন প্রয়োজন নাই নিজে নিজেই বাতিল হয়ে যাবে। বিচার, নির্বাহী বা আইন বিভাগের কিছু করার প্রয়োজন নাই। সংবিধান নিজ ক্ষমতা বলে এই ধরণের আইনকে বাতিল করে দিয়েছে।
কোটা প্রথা সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ২৯ ধারা অর্থাৎ তৃতীয় ভাগের বিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই ২৬ ধারার বিধান মতে এই সংক্রন্ত সকল আইন কানুন বিধি-বিধান বাতিল হয়ে যাবে। এই ব্যাপারে আদালতের রায়ের কোন প্রয়োজন নাই। যে আইনের অস্ত্বিত্ব শুরু থেকেই নাই সেই কথিত আইন অনুসারে সব নিয়োগ অবৈধ এবং অকার্যকর।
সংবিধান যা অনুমোদন করে না সেই ধরণের কাজ, আইন ইত্যাদি শুরু থেকেই অবৈধ এবং বেআইনি। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগের কোন আইনগত ক্ষমতা নাই যে সংবিধানের পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করবে। আর যদি ক্ষমতা বহির্ভুত ভাবে সংবিধানের পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করেও তা শুরুর সময় থেকেই অকার্যকর এবং বাতিল।
রাজনৈতিক উদ্দেশ সাধনের জন্য প্রতারণামূলক তথ্য বা প্রতারণার উপর ভিত্তি করে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। জন সমর্থন বা সম্মতির ভিত্তিতেও যদি সংবিধান পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করা হয় সেটাও সংবিধান অনুসারে অকার্যকর এবং বাতিল।
কোন কোন সুবিধাভুগী যুক্তি দিচ্ছেন যে জনগণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ না। এই কথা সঠিক। কিন্তু জনগণ যদি কোটা প্রথা চায় তাহলে আগে সংবিধান সংশোধন করে এই সংক্রান্ত বিধি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। তারপর সংশোধিত সংবিধানের আলোকে কোটা প্রথা প্রচলন করা যেতে পারে।
কোন আইন যদি ভয়েড আয়্যেব ইনিটিও (Void ab initio) হয় তাহলে এই আইনের অধীনে প্রাপ্ত সুবিধা ফেরত দিতে হবে। এই নীতির আলোকে কোটা সংক্রন্ত আইনের অধীনে যারাই যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন তা ফেরত দিতে হবে। কোটা প্রথার অধীনে নিয়োগ, প্রাপ্ত বেতন ভাতা, সুযোগসুবিধা ইত্যাদি সব অবৈধ। অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সব কৃতকর্মও অবৈধ।
কোন আইন যদি ভয়েড আয়্যেব ইনিটিও (Void ab initio) হয় তাহলে যেহেতু এটি শুরু থেকেই অকার্যকর তাই পরবর্তী কোন আইন বা অনুমোদন বা পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত দ্বারা বাতিল আইনটিকে বৈধ করা যাবে না।
আইনের শাসন এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
©somewhere in net ltd.