নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

১০০ % ভন্ড

Akram

একজন ভন্ড

Akram › বিস্তারিত পোস্টঃ

নদী দূষণ

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮

নদীদূষণ কমাতে এ বছরের ৬ জানুয়ারি ঢোল পিটিয়ে বর্জ্যবিরোধী অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ১৭ দিনের অভিযানে বুড়িগঙ্গায় সবচেয়ে দূষিত বাদামতলী থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকার তলদেশ এবং ওপরের অংশ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছিল। এরপর এক বছর কেটে গেছে, আর কোনো দৃশ্যমান অভিযান নেই।



বিআইডব্লিউটিএর হিসাবে, কলকারখানার বর্জ্য, পলিথিন ও মানববর্জ্য জমা হয়ে বুড়িগঙ্গার তলদেশে ১০ থেকে ১২ ফুট স্তর পড়েছে। এতে নদীর নাব্যতা হ্রাসের পাশাপাশি এর পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থাতেই নদীর বর্জ্য অপসারণ শুরু করা হয়েছিল। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের বিভিন্ন স্থানের বর্জ্য অপসারণ, সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল থেকে এ অর্থ জোগানের ব্যবস্থা হয়। এ থেকে খরচ করা হয়েছিল প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা।



বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. মাহাবুবুল আলম অবশ্য দাবি করেছেন, নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে নদীর বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু চারদিক থেকে নানাভাবে যেসব তরল বর্জ্য আসে, তাতে নদী পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না।



এদিকে নদী খনন করার জন্য ড্রেজিং মেশিন কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবদুল মতিন বলেন, তিনটি শক্তিশালী ড্রেজার আনা হবে। প্রায় এক বছর আগে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী এপ্রিলের আগে সেগুলো আসার সম্ভাবনা নেই।



প্রধান প্রকৌশলী দাবি করেন, বর্ষার জন্য দীর্ঘ সময় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোয় খননকাজ হয়নি, তবে মাঝেমধ্যে হয়েছে। তুরাগের দিকে কিছু কিছু এখনো হচ্ছে।



পরিবেশ অধিদপ্তরের সমীক্ষার বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত অংশে প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৪ দশমিক ৫০ মিলিগ্রামের কথা থাকলেও রয়েছে এক মিলিগ্রাম। এটা জীববৈচিত্র্য ধারণ ও বসবাসের অনুপযোগী। বুড়িগঙ্গায় বর্তমানে মাছসহ জলজ প্রাণী অনেক কমে গেছে।



গত বছর বাদামতলীর পাশে যে জায়গা থেকে আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছিল, সেখানে এখন আরও বেশি আবর্জনা জমে আছে। এ ছাড়া সোয়ারীঘাট, কামালবাগ, শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর, আমলীপাড়া, চাঁদনীঘাট, মালিটোলা, তাঁতীবাজার, লালকুঠি, মিলব্যারাক, সদরঘাট প্রভৃতি এলাকার নর্দমা দিয়ে নদীতে সরাসরি বর্জ্য পড়ে।



সদরঘাট এবং এর আশপাশের এলাকার দুই প্রান্তে অনেক দূর পর্যন্ত এখন নদীর পানি কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (বাবুবাজার) এলাকায় নদীদূষণের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে নর্দমা হয়ে নদীতে যাচ্ছে ঘন ও তরল বর্জ্য। সেই পানিতেই ধোয়া হচ্ছে স্থানীয় একটি হাসপাতালের বিছানার চাদরসহ অন্যান্য কাপড়; গোসল করছে আশপাশের লোকজন।



নৌযানে চলাচলের সময় বুড়িগঙ্গার পানির উৎকট গন্ধে নাকে-মুখে রুমালচাপা না দিয়ে চলার উপায় থাকছে না যাত্রীদের। অবশ্য এতে অভ্যস্ত নৌকার একজন মাঝি আবদুল কুদ্দুস জানালেন, বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য সময় বুড়িগঙ্গার রূপ কয়েক বছর ধরে এ রকমই।

ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) এবং নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা এই দূষণের জন্য দায়ী, এমন অভিযোগ আছে।



পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কাল

চার বছর সময় লাগবে রাজধানীর পয়োবর্জ্যের বেশির ভাগই যায় বুড়িগঙ্গাসহ চারপাশের নদীতে। মাত্র ৩০ শতাংশ পয়োবর্জ্য পাগলা পর্যন্ত যাওয়ার নালাপথ রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। ঢাকা ওয়াসা বাকি ৭০ ভাগ বর্জ্য যাওয়ার পথ তৈরি করার জন্য অনেক আগে থেকে মহাপরিকল্পনার কথা বললেও নগরবাসী এর বাস্তবায়ন চোখে দেখেনি। মাস দুয়েক আগে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা একটি প্রকল্প চুক্তিতে সই করেছে। চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ওয়াসাকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। এই টাকায় ১০০ কিলোমিটার নতুন পয়োনালা (সুয়ারেজ লাইন) নির্মাণ এবং ১৬০ কিলোমিটার পুরোনো নালা সংস্কারের কাজ হবে। তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেছেন, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ এ সময় নদীদূষণ চলতেই থাকবে।



ওয়াসার দায় নেই

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘নদীদূষণ বন্ধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় ওয়াসা দাবি করেছে, বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার বর্জ্য যায় না। যা যায়, তা ঢাকাবাসীর অবৈধ সংযোগের কারণে। এ বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, বুড়িগঙ্গা বা অন্য নদীদূষণের জন্য ওয়াসা সরাসরি দায়ী নয়। ওয়াসার ৩০ ভাগ পয়োনালার মাধ্যমে প্রায় ৩০ ভাগ বর্জ্য পাগলা শোধনাগারে যায়। বাকি ৭০ ভাগ এলাকার বাড়িগুলোর নিয়ম অনুযায়ী সেপটিক ট্যাংক করার কথা, এ জন্য ওয়াসা তাদের কাছ থেকে পয়োবিলও নেয় না। কিন্তু রাতের বেলায় বিভিন্ন বাড়ির শৌচাগার থেকে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয় ওয়াসার বৃষ্টির পানি যাওয়ার ড্রেনেজ (স্টর্ম সুয়ার) লাইনের সঙ্গে। ড্রেনের লাইনের মাধ্যমে সেসব বর্জ্য বুড়িগঙ্গাকে দূষিত করছে।



ডিসিসির অবস্থান

ডিসিসির আবর্জনাবাহী গাড়ি অনেক সময় সরাসরি নদীতে বর্জ্য ফেলে। আবার নদীপাড়ে গড়ে ওঠা ডিসিসির ট্রেড লাইসেন্সধারী কিছু কোম্পানি সরাসরি নদী দূষণ করছে, এমন অভিযোগ করে এটা বন্ধে গত বছর ডিসিসিকে চিঠি দিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়নি।



ডিসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বিপন কুমার সাহা বলেন, ডিসিসির যেসব গাড়ি থেকে নদীতে ময়লা ফেলা হয়, সেগুলোর কয়েকজন চালককে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। নদীপাড়ে ডিসিসির বেশ কয়েকটি কনটেইনার রাখা হয়েছে, যেগুলো থেকে নদীতে আবর্জনা যায়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নদীপাড়ে বেশি হারে কনটেইনার বসানোর তাগিদ থাকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেক বাসিন্দা কনটেইনারে ময়লা না রেখে বাইরে ফেলে। সেগুলো যায় নদীতে। এটা বন্ধে জনসাধারণকে নদীর দিকে অর্থাৎ পূর্ব দিকে ময়লা না ফেলে পশ্চিম দিকে ফেলতে অনুরোধ করা হয়েছে।



নদীর তলদেশের পলিথিন-বর্জ্য সেভাবেই আছে

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, বুড়িগঙ্গার তলদেশে দীর্ঘদিনের জমে থাকা পলিথিন-বর্জ্য পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। গত বছরের নভেম্বরে এ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এই বর্জ্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকায় স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র (গ্রেভ এক্সক্যাভেটর) কেনা হয়েছিল। কিন্তু ওই যন্ত্রে শক্ত পলিথিন-বর্জ্য ভাঙা যায়নি।



বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য, পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও পরিবেশবাদী এ এম এম শফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে নদীর আবর্জনা অপসারণের সময় আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। পরে অভিযানের ধারাবাহিকতা না থাকার বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার নদীগুলোর সংযোগ ঘটানোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জেনেছি। এটা করলে পানির প্রবাহ বাড়বে।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.