নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...
(দুই)
আমার আর শফিকের বিভাজন শুরু হলো ক্লাশ ফাইভে উঠে। ওর বাবা ওকে স্কুল থেকে নিয়ে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করালেন। আর আমি রয়ে গেলাম সরকারি প্রাইমারি ইসকুলে। শফিককে ছাড়া আমার ইসকুলে যেতে ভালো লাগতো না, সময়মতো মাঠে-ঘাটে, বনে-বাধারে আর আগের মতো ছুটতে পারতাম না।
সপ্তায় ছয় দিন মাদ্রাসার বোডিংয়ে থাকতো ও। শুধু শুক্রবার বাড়ি আসতো শফিক। আমি বাড়ির সদর দরজায় বসে অপেক্ষা করতাম ও কখন আসবে। ওকে নিয়ে ওই পাড়ায় যাবো, কতো নতুন নতুন ঘুঘু শালিকের বাসার সন্ধান করে রেখেছি। আমার সাথে পাড়ায় ঘুড়ে বেড়ালে শফিকের পিঠের ছাল তুলে নেবে হুমকি দিয়ে রহম আলী খালু টাউনে চলে যেতেন আর ফিরতেন সন্ধ্যায়। এই ফাঁকে আমরা শুরু করতাম আমাদের অভিযান এপাড়ায় ওপাড়ায়।
এমন করে কয়েক মাস যাবার পর শফিকের ভিতর থেকে আগের সেই দুরন্তপনা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। বাড়িতে এলে এখন মন মরা দিয়ে বসে থাকে আর ওর মাকে বলতো -মা, আমি আর মাদ্রাসায় পড়বো না। আমার মাদ্রাসায় পড়তি ইচ্ছে করেনা। তুমি আব্বাকে বইলে আমাকে ইসকুলে নিয়ে আসো।
হঠাৎ একদিন সকালে রিজিয়া খালার কান্নার গলা শুনে ভাবছিলাম খালু আবার গায়ে হাত তুলেছে হয়তো। কিন্তু না কান্নার শব্দটা আস্তে আস্তে আমাদের ঘরের দিকেই আসছে। হ্যা। রিজিয়া খালা। আমার মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না বিজরিত গলায় বলছে-
-বুবুগো আমার শফিরে মাদ্রাসায় খুইজে পাচ্ছি নে। কাউক কিছু না বইলে ছোয়ালডা আমার কনে চইলে গেলো। তোমরা আমার শফিরে আইনে দ্যাও.........!
বহু খোঁজা খুজির পর নাটকীয় ভাবে শফিককে ছয় দিন পর পাওয়া গেলো চাঁদপুরের ইষ্টিমার ঘাটে। পন্টুনের উপর।
আমাদের পাড়ার একদম শেষ মাথায় হরিচরন কাকুদের বাড়ি। বহুপুরোনো একখান জমিদারি পাকা ঘর আর বড় শান বাধানো পুকুর ছিলো হরি কাকুদের। পুকুরের পাড়ে মোটা মোটা তেতুল গাছ ছিলো। বাবার কাছে শুনেছি একাত্তরে যুদ্ধের সময় ওনার ভাইবোন সব ভারতে চলে গেছেন আর তারা ফিরে আসেনি। তখন উনি একাই ওবাড়িতে বিনু কাকিকে নিয়ে থাকতো। ওনাদের ১টা নাকি বড় ছেলে ছিলো। সে যুদ্ধে গিয়ে আর ফেরেনি। ওনার শশুড়বাড়ী ছিলো চাঁদপুরে। উনি বিনু কাকীকে নিয়ে ইস্টিমারে চাদপুর থেকে খুলনা ফেরার সময় হঠাৎ দেখে শফিককে পন্টুনের উপর বসে বসে কাঁদছে। বিনু কাকীই দেখে প্রথম চিনেছিলো। তারপর তারাই নিয়ে আসছিলো।
বাড়ি ফেরার পর শফিকে রহম আলী খালু মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাবার জন্য যে মারটা দিয়েছিলো তার জন্য পুরো এক সপ্তাহ বিছানায় থাকতে হয়েছিলো শফিকের।
নভেম্বর মাসের দিকের ঘটনা একদিন রাতে এশার অযানের সময় শফিক আমাদের বাসায় হাঁপাতে হাঁপাতে আসলো। এসে আমাকে ডাক দিলো। আমি উঠানে নামলাম। আমার কানে কানে বললো...
-দোস্ত মা আমার মামুক দিয়ে আব্বারে সুপারিশ কইরে আমারে মাদ্রাসাততে ছুটায়ে ইসকুলি ভর্তি করতি রাজি হইছে। এইবার আমরা আবার একসাথে হাইস্কুলি যাবো................!
(চলবে..........)
১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:১৩
মোগল সম্রাট বলেছেন: এখনো এরকম বাবা অনেক আছে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য । আপনাদের মন্তব্য আমাকে অনুপ্রানিত করে।
শুভকামনা নিরন্তর
২| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৩২
ইসিয়াক বলেছেন: বাবার নিষ্ঠুরতায় একজন নিস্পাপ শিশুর শৈশব কৈশোর বিষাক্ত হয়ে ওঠে। পৃথিবীটাকে মনে হয় নরক।.....
পরের পর্বে অপেক্ষায়।
১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:১৫
মোগল সম্রাট বলেছেন: বাবার নিষ্ঠুরতায় একজন নিস্পাপ শিশুর শৈশব কৈশোর বিষাক্ত হয়ে ওঠে। পৃথিবীটাকে মনে হয় নরক।.....
যথার্থ বলেছেন।
আপনাদের মন্তব্য আমাকে অনুপ্রানিত করে।
শুভকামনা নিরন্তর
৩| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে থাকুন। পড়তে থাক্কি।
১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:১৬
মোগল সম্রাট বলেছেন: শুভকামনা নিরন্তর।
৪| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৩৬
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: আহা কি মধুর ছিল ছেলেবেলা।
১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:১৭
মোগল সম্রাট বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং
৫| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আগের পর্বের মতো এটিও ভালো লেগেছে
তবে শফিকের জন্য মায়া হচ্ছে!
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
৬| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৮:০৭
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: সুন্দর শিরোনাম সুন্দর পোস্ট।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০১
মোগল সম্রাট বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:০১
কামাল৮০ বলেছেন: বাবার আর দোষ কি।ধর্ম তাকে যে শিক্ষা দিয়েছে সে তাই করেছে।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০১
মোগল সম্রাট বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
শুভকামনা সুন্দর মন্তব্য করার জন্য
৮| ১৬ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:০১
জগতারন বলেছেন:
আমি এখানে এসেছিলাম এবং আজকের পর্বটি ও পড়েছি।
আমার মন্তব্য আমি ১ম পর্বেই করেছি।
আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম আপনার এই পর্বের লিখা কি ভাবে গড়াবে।
লিখা চলুক, সাথেই আছি।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:০২
মোগল সম্রাট বলেছেন: আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রানিত করে।
শুভকামনা নিরন্তর
৯| ১৬ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:০১
জগতারন বলেছেন:
আমি এখানে এসেছিলাম এবং আজকের পর্বটি ও পড়েছি।
আমার মন্তব্য আমি ১ম পর্বেই করেছি।
আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম আপনার এই পর্বের লিখা কি ভাবে গড়াবে।
লিখা চলুক, সাথেই আছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: গত পর্বটাও পড়েছিলাম । পড়ে কেবল আপনার বন্ধু শফিকের জন্য মায়া জন্মেছিলো । কী ভয়ংকর ভাবে তার শৈশব কেটেছে ! আমাদের দেশের অনেক বাবাদের মনে এই ধারণা খুব ভাল ভাবে বসে আছে যে নিজের সন্তানকে তারা যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে পেটাতে পারে !