নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...
(ছয়)
আমি সপ্তম শ্রেণীতে উঠলাম। স্কুলে যাচ্ছি আসতেছি কিন্তু মন প্রচন্ড খারাপ থাকতো। শফিক নেই। স্কুলের দ্বিতীয় সাময়ীক পরীক্ষা শেষ এরকম একটা সময় চলছে । একদিন রাতে আমরা রাতের খেতে বসেছি এমন সময় বাবা মাকে বলছে-
-রহম আলী খবর পাঠাইছে বন্দরে কামাই রোজগার নকি অনেক।
-তুমি কি ভাবতিছো? রহম আলির কথা মতো মোংলা পোর্টে যাবা?
- না ভেবে উপায় কি? গ্রামে আয় রোজগার খুবই কম।
- তুমি একা যাবা?
- নাহ; সবাইরে নিয়ে যাবো।
-আমরা থাকবো কোথায়?
- ঘর ভাড়া পাওয়া যায় শুনিছি, ঘর ভাড়া নেবো।
আমি এসব শেনার পর খুশিতে আর ভাত খেতে পারিনি। শফিকের সাথে আবার দেখা হবে।
আমাদের নিয়ে বাবা এক মাসের মধ্যে বন্দরে চলে এলেন। আমার আর স্কুলের ফাইনাল পরিক্ষা আর দেয়া হলো না।
আমরা একটা টিনের ঘরে ভাড়ায় থাকতাম। বাশের চাটাইয়ের বেড়া আর কাচা মাটির মেঝে। রহম আলি খালু বন্দরের তালিকাভুক্ত শ্রমিক। বাবাকেও চাকরি যোগাড় করে দিলেন। এজন্য পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়েছে কোন এক শ্রমিক নেতাকে।
নতুন যায়গা, সবকিছুই অন্যরকম ঠেকতো। প্রথম দিকে মানুষের ভাষা বুজতাম অল্প। কারন চিটাগং, নোয়াখালী, বরিশাল, সিলেটি সহ বহু জেলার লোক থাকতো। সিলেটি লোক ওখানেও ঐসময়ে লন্ডনের হালেই থাকতো। কারন তৎকালীন সময়ে মোংলায় একটা আন্তর্জাতিক মানের আবাসিক হোটেল ছিলো (হোটেল আল-প্রিন্স এন্ড বার) সেটা একজন সিলেটি ভদ্রলোকের ছিলো। আমরা প্রায়ই হোটেলের করিডোরে সাদা সাদা ফরেনার দেখতাম।
আমরা যে বাসায় ভাড়া থকতাম তার পাশের ঘরে একটা নোয়াখালীর পরিবার থাকতো আর অন্য পাশে একটা চিটাগাংয়ের পরিবার থাকতো। ওনাদের অঞ্চলিক কথা অনেকটাই শিখে ফেলেছিলাম বছর খানেকের মধ্যেই।
শফিকের স্কুল আলাদা আমার স্কুল আলাদা। শফিক পোর্ট স্কুলে আর আমি পাদ্রী স্কুলে। দুই স্কুলের দুরত্ব বেশি না। প্রায় প্রতিদিন শফিকের সাথে বিকেলে দেখা হতো। আমরা থানার মাঠে ফুটবল খেলতে আসতাম।
আমরা মুলত শ্রমিক এলাকায় যেটা পৌরসভার এলাকা ওখানেই থাকতাম। শহরের শেষ মাথায় একটা নেভী ক্যাম্প ছিলো আর পাশেই বন্দরের অফিসারের জন্য আবাসিক এলাকা ছিলো। শহরের উত্তর এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদী ছিলো। উত্তর পাশের নদী পার হয়ে বন্দরের জেটি আর পশ্চিমের পশুর নদী সাগরে গিয়ে মিলেছে। বিরাট বিরাট দৈত্যাকার জাহাজ পশুরের বুকে বয়ার সাথে ভেড়ানো থাকতো। সকালে বিকালে নদীর পারে বসে অবাক হয়ে দেখতাম জাহাজগুলো।
প্রায়ই দেখতাম শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে বিরাট বিরাট মিছিল মারামারি। অঞ্চলিকতার প্রভাব নিয়ে রক্তক্ষয়ী ফ্যাসাদ লেগেই থাকতো।
সন্ধ্যার পর বাজারে এলে দেখতাম মদ খেয়ে মাতলামি করে অকথ্য গালাগাল করছে দুই এক জন। মোড়ে মোড়ে অসংখ্য পান-বিড়ি-চায়ের দোকান। দুইটা সিনেমা হল তার সামনে সবসময় মানুষ গিজগিজ করতো।
পশুর নদীর পশ্চিম তীরে ছিলো যৌনপল্লী "বানিয়াশান্তা"। প্রথম দিকে বানিয়াশান্তার নাম শুনতাম আশপাশের মহিলাদের ঝগড়া থেকে। ঝগড়ায় একে অন্যকে বলতো তুই বানিশান্তার খানকি। বুজতামনা খানকি কাকে বলে অথবা মনে প্রশ্ন জাগতো খানকিরা কি বানিশান্তায় থাকে?
(চলবে.......)
২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:২৮
মোগল সম্রাট বলেছেন:
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে পোস্টে মন্তব্য করার জন্য।
আমি নব্বইয়ের দশকের পর মোংলায় আর থাকিনি। তবে আমার বন্ধু শফিকেরা ছিলো আরো বহু বছর আমরা চলে আসার পরও।
স্মৃতিচারন মুলক শৈশবের গল্পগুলো মনে করে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করছি।
শুভকামনা নিরন্তর।
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো। চলুক। লেখাতে কোনো ভান নেই।
২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৫৭
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ রানু ভাই। অনুপ্রাণিত হইলাম।
ভালোবাসা নিরন্তর।
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৪৩
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
বাংলাদেশের সীপোর্ট দুইটি শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি কর্ম কর্তাদের কারণে দিন দিন অনিয়ম যেমন ছিলো আজও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। এই চেইন চলতে থাকবে।
আপনার গল্প বেশ ভালো হয়েছে। +++
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:০৯
মোগল সম্রাট বলেছেন:
মোংলা পোর্টের শ্রমিক সংঘ অনেক আগে ভেঙে গিয়েছে। এক সময় ঘন ঘন শ্রমিক আন্দোলন আর বন্দর কতৃপক্ষের লাগামহীন দুর্নীতির কারনে পোর্টটি প্রায় ধ্বংশ হতে বসেছিলো। এখনকার খবর জানিনা।
ঠাকুর ভাই, আপনে আমার মতো মুরুক্ষ মাইনসের কাবজাব মার্কা পোষ্ট প্লাস মারলে আমার শরম লাগে।
ভালোবাসা অবিরাম ।
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ২:৪৭
তাহমিদ রহমান বলেছেন: আত্মজীবনী পড়তে সবসময়-ই ভালো লাগে। শুরুটা ভালো লেগেছে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:১১
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে। সময় করে পড়ার জন্য ।
শুভকামনা থাকলো।
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:২৪
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক দিন পরে আবার শফিক সিরিজ লিখলেন । এবারের লেখায় শফিকের বর্ণনা কম আপনার নিজের বর্ণনা বেশি । কাহিনী এগিয়ে চলুক ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:১৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হোটেল আল প্রিন্সে থেকেছি। নেভির ক্যাম্পেও গিয়েছি। বানিয়াশান্তার নাম শুনেছি।
এক সময় মংলাতে মাঝে মাঝে যেতাম। ঐ অঞ্চলের বাশতলাতে আমাদের অনেক জমি ছিল এক সময়। সুন্দরবনের ঠিক পাশে। ভ্যানে করে যেতে প্রায় ১ ঘণ্টা লাগে।
আমার এক খালুর পরিবার থাকতো খুলনা। উনি মংলাতে চাকরীর কারণে থাকতেন। মংলাতে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন গোপনে। সেটা নিয়ে অনেক সমস্যা হয় পরে।
আপনার বন্ধুর সাথে আপনার বন্ধুত্বের কি হল এটা জানার আগ্রহ রইল।