নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

মোগল সম্রাট

মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...

মোগল সম্রাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাত্যহিকী-৪

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩







মেয়েকে নিয়ে ফরিদ হাসপাতালে। ডেঙ্গু জ্বরে প্ল্যাটিলেট কমে গিয়ে ত্রিশ হাজারে নেমেছে। ডাক্তার বলেছে এখনই প্লাটিলেট দিতে। এক ব্যাগ প্লাটিলেট বানাতে চার পাঁচ ব্যাগ রক্ত লাগে। ফরিদ আমাকে ফোন করে জানালো;

-ভাই তিন ব্যাগ জোগাড় হয়েছে, আর এক ব্যাগ লাগে। আপনার তো এবি পজেটিভ। দেন না এক ব্যাগ রক্ত।

আমি রক্ত দিতে ভয় পাই। জীবনেও রক্ত দেইনি কাউকে। নিজের বাপকেও না। কি করি, তবুও ফরিদকে বললাম তুই অপেক্ষা কর, আমি আসতেছি। আমি আমার এক কলিগকে ফোন দিয়ে রাজি করিয়ে সাথে নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর হাসপাতলে গেলাম। গিয়ে দেখি রক্ত জোগাড় হয়ে গেছে লাগবেনা। এটা গত দিন দশেক আগের ঘটনা।

ফরিদ আমার গ্রামের ছেলে। আমার দুই বছরের জুনিয়র ছিল। সেই ২০০১ সালে ঢাকায় এনে একজন উকিলের চেম্বারে কেরানীর চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এখনো ফরিদ সেই চাকরি করে। অনেকবার পরামর্শ দিয়েছি এলএলবি পাস করে উকিল হয়ে যা। কিন্তু পারেনি। ফরিদ আর আমি ঢাকায় একই মহল্লায় থাকি। গলির এ মাথায় আর ও মাথায়।প্রতিদিন এশার নামাজের সময় ফরিদের সাথে আমার দেখা হয়। মসজিদ থেকে বের হয়ে রং চা খাই। কোনদিন আমি বিল দেই কোনদিন ফরিদ।

ফরিদের দুইটা মেয়ে। বড়টা আগের ঘরের। আগের স্ত্রী বড় মেয়েটা হবার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গিয়েছিলো। তারপর ফরিদ তার খালাতো বোন মেহেরুনকে বিয়ে করে। সেই ঘরে ছোট মেয়েটা।

বড় মেয়েটার খুব ইচ্ছে ছিল মেডিকেলে পড়ার। গত দুবছর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোথাও চান্স পায়নি। আর বেসরকারিতে যে মেয়েকে পড়াবে তেমন সামর্থ্য আর পয়শা কোনটাই ফরিদের নেই। মেয়েটা এখন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে পড়ছে। আর ছোট মেয়েটা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছে।

বাড়তি আয়ের জন্য ফরিদ বাংলা বাজারের প্রকাশকদের কাছ থেকে বইয়ের পান্ডুলিপি এনে রাত জেগে কম্পিউটারে টাইপের কাজ করে। কত রকমের গাইড বই, উপন্যাস, বিদেশি বই। এই টাইপের কাজে আবার চোখের উপর বিরাট চাপ পরে। দুই মাস আগেও চশমার পাওয়ার বদলাতে হয়েছে।

ফরিদের বাবা নেই। গ্রামে শুধু মা আছে। কোন ভাই বোনও নেই। ফরিদের বাবা মরার পর তার মা'কে নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছিলো। কিন্তু মেহেরুন এর সাথে বনিবনা হয়না। সংসারে অশান্তি হয়। তাই তার মা নিজে থেকেই গ্রামে চলে গেছে। মাসে একবার একদিন গ্রামে গিয়ে মা'কে বাজার আর ওষুধপত্র কিনে হাতে কিছু নগদ টাকা দিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসে।

রাজশাহী থেকে বড় মেয়ে ফোন করেছিল সেমিস্টার ফি,খাবার খরচ, হাত খরচ সহ পাঁচ হাজার টাকা পাঠানো লাগবে। শুনেছি মেয়টা নাকি একটা টিউশনিও করে। কিন্তু রাজশাহীতে নাকি টিউশনিতে পয়শা নাই। তিনচার দিন আগে এশার নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে চা খেতে খেতে ফরিদ আমার কাছে তিন হাজার টাকা ধার চেয়েছিলো। এদিকে মাসের শেষ। আমার কাছেও তেমন টাকা নেই। পরে আমি আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করে মেয়েটাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।

ইদানিং দুই মেয়ের পড়ার খরচ, সংসারের খরচ, গ্রামের মায়ের খরচ, মেটাতে আর পারছে না ফরিদ। তার উপরে বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম তাতে এই বাজারে টিকে থাকাই মুশকিল। মেহেরুন কে কোথাও একটা চাকরি দিতে পারলে সংসারে কিছুটা সাপোর্ট তো হতো। কিন্তু মেহেরুন তো মাত্র এসএসসি পাস। তাও কতো আগের। এই পড়ালেখায় আজকাল কোন চাকরীও সে পাবে না।

অনেক ভেবে চিন্তে মেহেরুন একটা বিউটি পার্লারে নিজেই চাকরির ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ফরিদের মা জানার পর বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি। বউকে দিকে চাকরি করাবে তাও আবার বিউটি পার্লারে। মাসের শেষে ফরিদ গ্রামে যাবার পর তার বৌকে নিয়ে গ্রামের লোকের টিটকারী ও শুনতে হয়েছে।

এবার গ্রাম থেকে ঢাকা ফেরার সময় এক মহা ঝামেলায় পড়ল ফরিদ। বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলছে। দিনে কোন দূরপাল্লার বাস চলে না। শুধুমাত্র রাতে বাস ছাড়ে। রাতের বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গোয়ালন্দ ফেরিঘাট এর আগে পুলিশের চেকিং চলে। বাস থামিয়ে যাত্রীদের এবং তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ । সেই চেকিংয়ে ফরিদকে সন্দেহজনক ভাবে গ্রেফতার করে রাজবাড়ী থানায় আটকে রাখা হয়েছে। সাথে সাথে ফরিদ উকিল সাহেবকে জানিয়েছে। জানিয়েছে আমাকেও। কিন্তু অতো রাতে উকিল সাহেব এদিক ওদিক মোবাইল করেও কিছু করতে পারল না। পরের দিন উপর থেকে তদবির করিয়ে প্রায় সন্ধ্যার দিকে ফরিদকে ছাড়িয়েছে উকিল সাহেব।
ঢাকায় ফিরে গা-গোসল দিয়ে ভাত খেয়ে বিছানায় যেতে যেতে রাত সাড়ে এগারোটা।

উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়ায় শীত বেড়েছে। লেপ ছাড়া ঘুমানো যাবে না রাতে। গতবার শীতের শেষে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে কার্নিশের উপরে লেপ দুটো তুলে রেখেছিল আমার বৌ। বস্তা দুটো নামিয়ে লেপ বের করতে গিয়ে দেখি ইঁদুরে একটা পাশ কেটে ফেলেছে। অনেকখানি তুলো বের হয়ে আছে।

কি আর করার, বৌ আমার পুরানো লুঙ্গির ছেরা টুকরো দিয়ে লেপের ছেঁড়া যায়গাটা সেলাই করে সাদা কভরের মধ্যে লাল সালু কাপড়ের লেপটা পুরে দিলো।

আমি লেপের নিচে শুয়ে ভাবছি ফরিদকে কেন পুলিশ সন্দেহ করে ধরলো? ওর মতো নিরীহ গোবেচারার টাইপের চেহারার মানুষও যদি আজকাল পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে। আমার তো মাথায় তেরোটা সেলাইয়ের দাগ আছে.............!!!!

ঢাকা,
০৮ পৌষ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
ছবিঃ অন্তর্জাল।


প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২
প্রত্যহিকী-৩

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব ঘটনা নাকি?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:১৫

মোগল সম্রাট বলেছেন:


হুমমমম! আপনার কি মনে হয়? এরকম বাস্তবতা আশপাশে প্রতিদিন আমরা দেখছি না?

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪০

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:১৪

মোগল সম্রাট বলেছেন:


ধন্যবাদ।

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫৪

কামাল১৮ বলেছেন: হাজার ঘটনার একটি। পড়ে ভালো লাগলো।এমন গল্প আরো চাই।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:১৩

মোগল সম্রাট বলেছেন:

ধন্যবাদ।

ভালো লাগলো জেনে আনন্দিত হলাম।

৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৩৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ৪ টা পর্বই পড়লাম পরপর। লেখা ভালো হয়েছে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩১

মোগল সম্রাট বলেছেন:

ধন্যবাদ।

শুভকামানা জানবেন।

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৮

বিজন রয় বলেছেন: খারাপ না।
চারিদিকে দেখছি তো!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯

মোগল সম্রাট বলেছেন:

ধন্যবাদ।

চারিদিকের হাজারো ঘটনার একটা খন্ড চিত্র আপনাদের সামনে পেশ করলাম আরকি।

শুভকামনা জানবেন।

৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৪

প্রামানিক বলেছেন: ইঁদুরে লেপ কেটেছে ছেড়া লুঙ্গি দিয়ে তালি দেয়ার ঘটনায় মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। মাকেও ইদুরে কাটা কতো কাঁথা বালিশ তালি দিতে দেখেছি।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬

মোগল সম্রাট বলেছেন:


কি করবো প্রামাণিক ভাই, সংসারে প্রতিদিন কতোশতো জোড়া তালি দিয়া চলা লাগে। 8-|

আমার মাকেও সেইম কাজ করতে দেখেছি। এখন চোখে ভালো দেখতে পায়না। তারপরও নিজের পুরনো হয়ে যাওয়া পরনের কাপড় দিয়ে নাতিদের জন্য পাতলা কাঁথা সেলাই করে নিয়ে আসে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার সময় মাঝে মাঝে। নাতিদের বলে এই কাপড় দুইখান তোর বাবা কিনে দিয়েছিলো। সেটা তোদের আবার দিয়ে গেলাম।

আপনি আমার লেখা পড়েছেন জেনে আনন্দিত হলাম।

শুভকামনা জানবেন।

৭| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭

মোগল সম্রাট বলেছেন:


এই জন্যই রা-নু ভাই আপনাকে এতো ভাল্লাগে।


কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয়।

৮| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ২:১২

শার্দূল ২২ বলেছেন: যতবার আপনার পোষ্টে আসি আমাকে ততবারই একটা কথাই বলতে হয়- আপনার গল্পে গল্পে সমাজ থেকে অতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয় গুলো নরম হাতে তুলে আনেন এটায় আমি মুগ্ধ।

আজকে আপনার পোষ্টের আপনার শেষের কথা নিয়ে কিছু বলবো- বিষয়টা হলো পুলিশ নিয়ে, কারণ আমি একজন পুলিশ পরিবারের সন্তান হিসেবে একটু আত্মপক্ষ সমর্থণ করবো।

আমি জানি আমাদের দেশে পুলিশের অবস্থান কতটা নিচে। সেটা আমি যেমন বিশ্বাস করি তেমনি আমার আব্বুও করেন, তাই পুলিশের উচ্চ পদস্থ অফিসার হবার সকল যোগ্যতা এবং সুযোগ থাকা স্বত্তেও আমাকে সেই পেশায় যেতে দেয়নি। কিন্তু সমাজ জানেনা একটা পুলিশের আত্মকথা। কারণ পুলিশ কখনো মিডিয়া বা প্রচার মাধ্যেমে এসে নিজেদের দুঃখ শেয়ার করতে পারেনা। বাই ল অথবা বাই হেল্পলেস।

আমি উন্নত দেশের বাসিন্দা এখন, এখানে একটা পুলিশের জীবন যাত্রার মান আর বাংলাদেশের পুলিশের জীবন যা্ত্রা সম্পুর্ন বিপরীত ।এখানে ৯১১ এ কল দিলে একসাথে ১০ জন পুলিশ ১০ টা গাড়ি, সাথে ১০ রিভলবার এবং সুসজ্জিত পোষাকে হাজির হয়। যাদের দেখলেই অপরাধি আঘাতের আগেই ভয়ে সব স্বীকার করে ফেলে। আমাদের দেশে খুব বেশি দিন হয়নি পুলিশ কাঁধ থেকে ৭ কেজি ওজনের রাইফেল নামিয়েছে। ঐ রাইফেল এত ভারি ছিলো যে সেটাকে সামলাতেও দুইজন পুলিশ লাগত। অপরাধির পিছে দৌড়াবে নাকি রাইফেল সামলাবে নাকি নিজের প্যান্ট, কনষ্টবলদের যেসব পোষাক দেয়া হয় দেখবেন বেশিভাগ পোষাক তাদের মাপের না। প্রায় পুলিসে বেল্ট পড়লে তাদের প্যান্ট কুচকে যায়, কেউ কেউ ভিতরে দড়ি দিয়ে প্যান্ট আটকায় কোমড়ে। কোন কন্সটবল তার পরিবার নিয়ে শহরে থাকতে পারেনা। তাদের এত স্বল্প আয় যে গ্রামে রেখেও পরিবার চালানো হিমশিম খেতে হয়। একবার গিয়ে দেখে আসেন মিরপুর পুলিশ ফাড়িতে তারা হরতালে সারাদিন পিকটারের পিছনে দৌড়ের উপর থেকে রাতে কোথায় ঘুমায় , কি খায়, আমি দেখেছি একজন কে বালিশ বানিয়ে ৬ জন তার উপর ঘুমাতে।

অপরাধি ধরতে গেলে কত রকম সীমাব্ধতা যে থাকে তা এখানে ব্যখ্যা করা সম্ভব নয় । ধরার পরেও যে তার সঠিক বিচার হবে তার ও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আদালতের আঙ্গিনায় কত শত উকিল বসে আছে হ্যা কে না করা আর না কে হ্যা করার। বুক ফুলিয়ে পুলিশ যেই অপরাধিকে আজকে ধরে আদালতে দিলো সেই অপরাধি আদালত থেকে পর দিন ছাড়া পেয়ে আবার সেই পুলিশের সামনে বুক ফুলিয়ে হাটছে, শুধু হাটছেইনা পুলিশকে শুনিয়ে শুনিয়ে উড়ো উড়ো কটাক্ষ করে যায়। অপরাধি হিসেবে যাকেই ধরবেন নেতা নেত্রীরা ফোন করে ছেড়ে দিতে বলবে, ওদের কথা না শুনলে হয়তো ওএসডি নাহয় স্থায়ী চাকুরিচুত্য, পুলিশ প্রশিক্ষণ দিয়েছে অপরাধ ধরার সেত আর কিছু জানেনা, চাকুরি গেলে বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে পথে বসতে হবে।

নরসিংদির এক নামকরা খুনি যার কারণে সেই এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ্য, তাকে ধরতে গিয়ে থানার ওসি আত্মরক্ষায় গুলি চালায় সেই খুনি গুলি খেয়ে মারা যায়। যার কেইসে আব্বুকে হাজিরা দিতে হয়েছে ৮ বছর। মৌচাকে একনামে সবাই চেনে সাহাবউদ্দিন ডাকাত তাকে ধরে আদালতে পাঠায় আদালত পরদিন ছেড়ে দেয়, সে দলবল নিয়ে এসে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় কোন এক রাজনোৈতিক দলের আশ্রয়।

ঢাকা শহরে ট্রাফিক পুলিশকে জনগণ ডাকে মামু বলে। আরেকটা নাম দিসে ঠোলা।রেড সিগন্যাল তো মানেইনা বরং পুলিশ সামনে এসে দাড়ালে তার গায়ের উপর উঠিয়ে দেয়। সে যখন রোদে কালো হয়ে বাসায় ফিরে তখন পরিবারের কালো মুখ গুলোকে আরেকবার দেখতে হয় চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হয়ে । এমন অনেক ঈদ আমরা একা কাটিয়েছি যেখানে আব্বু পুলিশ ফোর্স নিয়ে মানুষের নিরাপত্তা দিচ্ছে ।

একটা মুরগি ব্যবসায়ী মুরগিকে পাথর খাইয়ে ওজন করে বিক্রির মত দুর্নীতিগ্রস্থ্য সেখানে সবার নজর পুলিশের দিকে,যার চার পাশে শুদু দেয়াল আর দেয়াল। গ্রামের সহজ সরল কৃষক তার পালিত কবুতরকে বাজারে বিক্রি করার সময় পানি আর পাথর খাইয়ে দ্বিগুন ওজন করে দ্বিগুন টাকায় বিক্রি করে তার কথা কারো মুখে আসেনা । চট্রগ্রামের খাতুন গঞ্জের সেই নামাজি দাড়িওয়ালা টুপিওয়ালা, কপালে সেজদার দাগের মানুষ রমজানে মুল্য বাড়িয়ে ব্যবসা করা মানুষ গুলোর খবর কয়জন জানে ?

সমাজে আমার আব্বুকে ইউনিফর্ম ছাড়া কতটা অসহায় লাগে সেটা আমরা দেখেছি । নানা সীমাব্ধতার পুলিশ আজ আর পুলিশ হয়ে থাকতে পারেনা, সেই অপবাদ আমরা বয়ে বেড়িয়েছি ।

এই দেশে অপরাধি ধরতে নানা প্রযুক্তির ব্যবহার, কিন্তু আমাদের দেশে পুলিশের মেধা আর অপরাধির মুখের দিকে তাকিয়ে অপরাধি শনাক্ত করতে হয়। এতে ভুল হবার সম্ভাবণা থাকে অনেক বেশি। তার উপর সমাজে অপরাধ করেনা এমন মানুষ খুব কম, যাকে ধরে তাকেই অপরাধি মনে হয় ।

কিভাবে পুলিশের মেধা কাজে লাগায় তার একটা গল্প বলি- নরসিংদির মেঘনা নদির ওপাড় থেকে এক ট্রলার গরু আনার সময় তা ডুবে সব গুলো গরু মারা যায়। কসাইরা সেসব গরু এনে জবাই করে মাংস ফ্রিজাপ করে রেখে ১৫ দিন পর বাজারে বিক্রি করা শুরু করে । ওসি মাংস কিনে এনেছে সেদিন আব্বুও এনেছে। ওসি আব্বুকে বললো স্যার আপনার মাংস গুলো তাজা কিন্তু আমার গুলো কেমন যেন ফ্যকাশে লাগছে, আব্বুর মাথায় ঢুকে গেলে ১৫ দিনের আগের ঘটনা, ওসিকে বললো সব গুলো কসাইকে ধরে নিয়ে আসেন । ১১ জনকে আনলো- আব্বু আর আমি বসে আছে থানার মাঠে। ঐ ১১ জন যখন গাড়ি থেকে নামছে আব্বু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদের যখন লাইন ধরে দাঁড় করালো তখন দুর থেকেই আব্বু বললো ওসি আন্কেল কে যে এখান থেকে এই ৩ জন কে রাখেন বাকিদের ছেড়ে দেন, আব্বু একটা প্রশ্ন করেনি কাউকে , শুধু তাকিয়েছিলো। এরপর ৩ জনকে বললো - আমি যে ৮ জন ছেড়ে দিয়ে শুধু তোদের রেখেছি এটাকি আমি ভুল করলাম নাকি ঠিক করলাম। এক কথায় জবাব দিবি না হয় কঠিন শাস্তি পাবি। তখন তারা বললো - না স্যার আপনি ভুল করেননি, আমাদের ভুল হয়ে গেছে।

আমি ছোট কালে যখন আব্বুর পকেট থেকে টাকা চুরি করতাম ,আব্বু শুধু আমার নাম ধরে ডাক দিতো ,আর আমি শুধু জ্বি বলতাম, এতেই আব্বু বলতো যা খরচ হয়নি সেই বাকি টাকা আমাকে দিয়ে যা। আমেরিকায় এমন মেধাবী পুলিশ নাই, ওদের সমানে চুরি করলেও ওরা ভিডিও দেখে আরেকবার প্রমাণ করে। এই দেশে আপনি ভালোবেসে কোনো মেয়ের গালে চুমু খেয়ে দৌড়. দিলে পুলিশ দাড়াতে বললে না দাড়ালে পিছন থেকে গুলি করে দেবে, রেড সিগন্যাল না মেনে গাড়ি টান দিলে দাড়াতে বললে না দাড়ালে গুলি করে দিবে । কিছুদিন আগে শুনেছেন নিশ্চই, এক বাংলাদেশি ছেলে খালি গায়ে হাতে আম খাওয়া একটা ছোট ছুরি ছিলো , দাড়াতে বলেছে দায়নি বলে পিছন থেকে গুলি করে ফেলে দিয়েছে।
আরেক আফ্রকিনা লোক কে গলায় হাটু দিয়ে চেপে ধরে ৮ মিনিটের মধ্যে দিনের বেলায় সবার সামনে মেরে ফেলেছে। এমন আইন যদি আমাদের দেশে থাকতো মানুষ সোজা হয়ে যেত এক মাসের মধ্যে। মাদক ব্যবসায়ীদের মেরেছে বলে রেব কে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে এই দেশ।

অনেক কথা বললাম। কথা গুলো আপনাকে বলিনি। মনে হয়েছে এই সুযোগে আব্বুর একটু ঋণ শোধ করি । হাহাহাহা

ভালো থাকবেন

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:১৫

মোগল সম্রাট বলেছেন:



বরাবরের মতো ধন্যবাদ এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন। আমার লেখাগুলো আপনার ভলো লাগে জেনে আনন্দিত বোধ করি।

আপনার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর যে স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো রয়েছে তা আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডার নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে।
আমি প্রতিদিন বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার সময় চার পাঁচটা ট্রাফিক সিগনাল পাড় হই। এর মধ্যে তিনটা সিগনাল খুবই ক্রাউড থাকে সকালে হাইকোর্টের মোড়, পল্টন মোড় এবং দৈনিক বাংলার মোড়। প্রতিটাই চতুর্মুখী রাস্তা আর চতুর্দিক থেকে গাড়ির বিশাল চাপ থাকে। আমি প্রতেকটা সিগনালে ওয়েট করার সময় ট্রাফিক পুলিশদের খুব খেয়াল করার চেষ্টা করি। কিভাবে তারা সামলায়। ঢাকায় এখন সিগনাল বাতির ব্যবহার কোথাও নাই। ট্রাফিকের হাতই সব।আগে বাঁশি ছিলো এখন বাঁশিও নাই। স্রেফ হাত দিয়ে থামাতে হয়। বিশেষ করে এপ্রিল মস মে মাসের তীব্র তাপদহে দেখেছি এরা ডিউটি করছে, আবার প্রবল বৃষ্টিতে দেখেছি ডিউটি করতে কিংবা শৈত্য প্রবাহের দিনগুলোতেও। আমি বাইক থামিয়ে অনেক দিন অনেকের সাথে কথ বলার চেষ্টা করেছি। অনেকে কথ বলেছে অনেকে কথা বলতে চায়নি। কোনদিন কোন সাধারন মানুষকে সহানুভূতি দেখাতে দেখিনি।

এবার একটা কাহিনি বলি। বছর খানেক আগের কথা। তখন আমি বাইক কিনি নাই। আমাকে পাবনার সুজা নগরের এক রিক্সাওয়ালা প্রতিদিন অফিসে নিয়ে যেতো। সলিমুল্লাহ হলের এই মাথায় মানে পলাশী মোড় পাড় হবার সময় একজন ট্রাফিক পুলিশ দেখতাম। বয়স্ক। হয়তো কিছু দিন পর রিটায়ার্ড হয়ে যাবে এমন। যাই হোক ট্রাফিক পুলিশ দেখলে রিকশা ওয়ালা আমাকে বলতো ভাই ওমুকে আমার রিকশা উল্টায়া দিছে, ওমুক ট্রাফিক আমার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি একদিন বললাম সিরাজ মিয়া তুমি একটা কাজ করবা। ঐ যে ট্রাফিক পুলিশটাকে দেখছো তাকে কোন একদিন ঠিক দুপরে এক বোতল ঠান্ডা পানি দিবা। দিয়া বলবা স্যার এই গরমে ঠান্ডা পানিটা আপনার জন্য এনেছি। বিশ্বাস করেন শার্দূল, আমি এটা বলার পর বহুদিন কেটেছে আমি ভুলেও গেছি। প্রায় মাস দুইয়েক পর সিরাজ মিয়া আমাকে বললো ভাই ঐ ট্রাফিক পুলিশটাকে আর পাইনি খুজে। তবে আপনার কথা মতো নিউমার্কেটের সামনে নীলক্ষেত মোড়ের এক ট্রাফিককে আমি এক বোতল পানি দিয়েছিলাম। আমি জিগ্যেস করলাম তারপর? তারপর সে যা বললো তা লিখে বলা যাবে না। তার কথা হলো সে পানির বোতলটা দেয়ার পর নাকি তাকে বুকে জরিয়ে ধরেছে। তাতেই সে সিরাজ মিয়া যে আনন্দ পেয়েছে সেটা নাকি তার জীবনে অন্য রকম।

তো যাইহোক, ঘটনাটা আপনার মন্তব্যে পড়ার পর কেন জানি মনে হলো উল্লেখ করি। আমার এ ই বিষয়ে একটা লেখা আছে, টাইপ করার সময়ের জন্য পোস্ট করতে পারছি না। হয়তো কোন একদিন পোস্ট দিবো।

আপনার আব্বুর জন্যও শুভকামনা। ভালো থাকবেন।


৯| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৪০

শার্দূল ২২ বলেছেন: ধন্যবাদ আমার আবেগ টুকু বোঝার জন্য সম্রাট। আমি পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতা নিয়ে শুরুতেই বলেছি, আমার এবং খোদ আমার আব্বুর অবস্থান টুকুও কি সেটাও বলেছি, আমি স্বীকার করি এই প্রশাসন বেশিরভাগ করাপ্টেড, কিন্তু এর মধ্যেও অনেক নিবেদিত প্রাণ আছে। যাদের অবদান বেশিভাগ মানুষই জানেনা। মানুষ যখন স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যর্থ হয় তখন তার নীতি হারিয়ে যায়। আর সম্রাট পুরুষ মানুষ অনেক বেশি আবেগী, সন্তান বা প্রিয়তমার চাহিদা পুরনে তারা হিংস্র হয়ে যায়। পুলিশ একটা দেশের মেরুদন্ড , আনফরচুনেটলি কোন সরকার এই বিভাগের প্রতি নজর দেয়না, দিলে এরা আর কোন সরকারের কথা উঠবে বসবেনা, সরকার এই বিভাগকে দুর্বল করে রাখে তাদের কাজে লাগানোর জন্য। ধরুন আজ যদি পুলিশ আর্মির মত শক্তিশালী হয় তাহলে নেতাদের কথা শুনবেনা। ঠিক মানুষ গরীব থাকলে বেকার থাকলে যেমন মিছিলে আনতে পারে, তেমনি পুলিশকে যত দুর্বল আর করাপ্টেড বানানো যাবে পুলিশ ততই জিম্মি হয়ে থাকবে। এই হলো আমাদের দেশের সরকার আর পুলিশের ইতিহাস।

ভালো থাকবেন

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৪

মোগল সম্রাট বলেছেন:



আমার অবজারভেশন হচ্ছে। পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অতি ব্যবহারের কারনে আজকের এই চিত্র। আপনি ঠিক বলেছেন। যখন যে সরকার এসেছে সে তার স্বার্থে। আমার কিছু বন্ধু আছে তারা ওসির দায়িত্ব পালন করছে বিভিন্ন থানায়। একজন ওসি যদি তার থনায় কঠোরভাবে কোন কিছু করতে চায় দেখা যায় তার বদলীর সুপারীশ হয়ে যায়। স্থানীয় এমপিদের কাছেও তারা অনেক সময়ই কিছু করার থাকে না...! অবশ্যই অনেক ভালো মানুষ পুলিশে আছে।

শুভকামনা।



১০| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৯

মিরোরডডল বলেছেন:





সম্রাটের লেখা এই জীবনের গল্পগুলো মন ছুঁয়ে যায়।


২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৪

মোগল সম্রাট বলেছেন:



আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন।


শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.