নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...
একঃ
মোবাইল সাইলেন্ট করে গত রাত সাড়ে দশটায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেও আর মোবাইল দেখিনি। অফিসে এসে মোবাইল খুলে দেখি কহিনুর সাতবার কল করেছে গত রাতে। সাথে সাথে কল ব্যাক করলামঃ
-হ্যালো, কাকু
-হ্যাঁ কহিনুর, তুই কল করছিলি দেখলাম গতকাল, কি ব্যাপার বলতো?
- কাকু, আমিতো আজ তিন মাস যাবৎ গ্রামে।
- বলিস কি? আমিতো জানি তুই সাভারে থাকিস।
- হয় কাকু থাকতাম। অক্টোবর মাসে চইলা আসছি গ্রামে। এখন মিন্টু মামাদের বাড়িত আছি।
- কেন? কোন সমস্যা?
কহিনুর একসময় আমার মায়ের দেখাশোনা করতো। মায়ের আর্থ্রাইটিস আছে। চলা ফেরায় সমস্যা। কহিনুর বাসার সব কাজকর্ম করে দিয়ে যেতো। তিন চার বছর আগে তার মামা সাভারে এনে একটা গার্মেন্টেসে সুইং অপরেটরের চাকরি দিসিলো।
কহিনুরের মা নেই, বাবা আছে তাও পঙ্গু। কোন কাজকর্ম করতে পারেনা। কহিনুর বর্তমানে স্বামী পরিত্যাক্তা। ছয় বছরের একটা মেয়েও আছে। অক্টোবরে তার ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামে ফিরে গেছে। কিন্তু থাকবে কোথায়। আমাকে কল করে বলেছে আমাদের পুকুরের উত্তর পাড়ে একটা ঝুপড়ি ঘর তুলে থাকতে চায়। মায়ের দেখা শোনাও করবে। আমি ছোট ভাইকে ঘটনাটা জানাইছি। ছোট ভাই বলছে উত্তর পাশের জায়গাতো আমার। পূব পাশে তোমার জায়গা সেখানে ঘর তুলে থাকতে বলো।
দুইঃ
ঘড়িতে দুপুর আড়াইটা বাজে। বাসা থেকে আনা লাঞ্চ বক্সটা খুলে টেবিলে বসেছি। মোবাইলে একটা কল বেজেঁ উঠলো। অপরিচিত নম্বরঃ
- হ্যালো, ভাইয়া আমি আপনার অফিসের নিচে দাড়িয়ে আছি।
- কে আপনি?
- আমি তমাল, রসুলপুরের কাজল মাষ্টারের ছেলে
- ও আচ্ছা, তিন তলায় এসে সোফায় বসো, আমি লাঞ্চ শেষ করে আসছি।
তমাল আমার এলাকার ছেলে। বি.কম পাশ করেছে রিসেন্টলি। ওর বাবা আমার বন্ধু। গত বছর আগষ্টের জোরপূর্বক স্কুল থেকে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ (!)। আমার অফিসে একটা সিভি জমা দিতে আসছিলো। সিভির খামটা হাতে নিয়ে বসে আছি। কোথায় চাকরি দেবো?
তিনঃ
ছোট মাামা গত সপ্তাহ থেকে মোবাইলে কল দিচ্ছে। আমি ইচ্ছে করেই কল রিসিভ করিনা। কারন ফোন ধরলেই বলবে- “তোরা তোর মায়ের জমিটা বিক্রি করলে আমার কাছেই বিক্রি করবি কিন্তু। দেখিস না, তোর বড় মামা আমাকে ঠকিয়েছে” গত পাঁচ বছর ধরে ছোট মামা প্রত্যেক বার মোবাইল করে কথা শেষ করার সময় এই বাক্য বলবেই। মহাবিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলামঃ
- হ্যা মামা বলো. .. . .
কাহিনি হইলো- ছোট মামার একমাত্র শালা তাবলীগ জামাতের সাথে ইজতেমায় গিয়া দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছিলো। ট্রিটমেন্ট নিয়ে বাড়িও চলে গিয়েছিলো। ইদানিং অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। ওখানকার ডাক্তার পিজি হাসপাতালে রেফার করেছে। এখন ফোন করে আমার বাসায় তার শালাকে নিয়ে দুই তিনদিন থাকতে চায়।
আমি আমার বৌয়ের সাথে বিষয়টা আলাপ করেছি। তার সাফ কথা তোমার ছোট ভাইয়ের ওখানে উঠতে বলো।
চারঃ
হেড কনষ্টেবলল (নিরস্ত্র) পদে পদোন্নতি পেয়ে হায়দার আলী সৈয়দপুর থেকে বদলী হয়ে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবিনগর থানায় এসেছিলো ২০২২ সালে। গত নভেম্বর মাসে ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামী ধরতে গিয়ে আসামী পক্ষের অতর্কিত হামলার শিকার হয় হায়দার আলী।
আহত হায়দার আলি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আবারো রাজারবাগ হাসপাতালে আসছিলো গত শনিবার। আামাকে জানিয়েছে সে এই চাকরি আর করবেনা। রিজাইন দিয়ে লাল মোহন চলে যাবে। তার চাচাতো ভাইদের সাথে শেয়ারে একটা ইলিশ মাছ ধরার ট্রলার কিনে ইলিশ ধরার বিজনেন শুরু করবে। চাইলে আমি তার পার্টনার হইতে পারি।
সমস্যা হলো তার বৌ রাহেলা বেগম হায়দার আলীর চাকরী ছাড়ার বিষয়ে কিছুতেই রাজি না।
পাঁচঃ
গফুর সাহেব দোতলার ভাড়াটিয়া। একটা লিজিং কোম্পানীতে এ্যাকাউন্টসে চাকরী করে। গফুর ভাইয়ের সাথে এই বাসায় থাকার সুবাদেই পরিচয়। মাসে একবার একসাথে মাছ কিনতে কাওরান বাজার আড়তে যাই। আসা যাওয়ার রিক্সা ভাড়া একটা আমার আরেকটা উনার। আড়তে গিয়ে মাছ কিনলে একটু সাশ্রয় হয়। তার পর দুই জনের কেনা মাছ বটিওয়ালাদের কাছে নিয়ে কাটিয়ে আনি।
গফুর ভাইয়ের দুইটা ছেলে। বড়টা পুরান ঢাকার একটা কলেজে পড়তো। গত মাস দুয়েক আগে দুই কলেজের মারামারিতে মাথা ফাটিয়েছে। বারোটা সেলাই লাগছে মাথায়।
গফুর ভাই ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলেকে তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেবে। তার ছোট ভাই দক্ষিন আফ্রিকায় থাকে। ছেলেন জন্য অলরেডি প্রসেসিং শুরু করেছে। আশুলিয়ায় দুই কাঠা জমি আছে উনার বৌয়ের নামে। সেই জমি বিক্রি করে টাকা পয়শা ম্যানেজ করতে হবে। আমার কাছে ভালো গ্রাহক থাকলে একটু খোঁজ জানাতে বলেছে গফুর ভাই।
ঢাকা,
০৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২
প্রত্যহিকী-৩
প্রাত্যহিকী-৪
প্রাত্যহিকী-৫
প্রাত্যহিকী-৬
প্রাত্যহিকী-৭
প্রাত্যহিকী-৮
২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:২৬
মোগল সম্রাট বলেছেন:
শুভকামনা জানবেন।
২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩০
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সত্যি খুব সুন্দর লিখেছেন ।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:২৭
মোগল সম্রাট বলেছেন:
অনুপ্রাণিত হলাম।
শুভকামনা নিরন্তর।
৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৩৬
জনারণ্যে একজন বলেছেন: সুখপাঠ্য লেখা - পড়তে ভালোই লাগে, সম্রাট। কিন্তু প্রতিটা ঘটনাই কষ্টকর। পড়া শেষ করার পর মন খারাপ হয়ে যায়।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:২৯
মোগল সম্রাট বলেছেন:
অনেক চেষ্টা করি মন খারাপের গল্প গুলো লিখবো না। কিন্তু শেষমেশ সত্যিই মন খারাপ হয়েই যায়।
আপনার জন্য শুভকামনা সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬
কামাল১৮ বলেছেন: জীবনের প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা।সাধারন ঘটনা কিন্তু খুব সুন্দর করে লিখেছেন।