নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তা এখানে মুক্ত

আলমগীর_কবির

মুক্ত চিন্তা করুন, অন্যকে মুক্ত চিন্তা করার স্বাধিনতা দিন এবং সকলকে ভাল বাসুন।

আলমগীর_কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেতনার রাজনীতিকরণ

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩

প্রায় 200 মানুষের প্রাণ অবসান+প্রায় 400 মা বাবার বিলাপ+সহস্রাধিক মানুষের স্বজন হারানোর বেদনা+(650 কোটি টাকাহরতালের দিন সংখ্যা)+আরও অন্যান্যা ক্ষতি < দুই নেত্রীর সংলাপ বিলাসিতা। [/si]



আইটেম গান সংযোজন সিনেমার ব্যবসায়ীক সফলতার এমন একটি অবলম্বন বা কৌশল যা স্ব-সংস্কৃতিবিরুদ্ধ বা স্বল্পবসনা পোষাকে অপ্সরাদেরকে অনাবৃত্ত করে রুচিহীন দর্শককে সিনেমাহলে নিয়ে যেতে প্রবৃত্ত করে। এহেন কৌশলে প্রযোজক ভদ্রমহোদয়গণ সিনেমা ব্যবসায়ের সফলতার অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন। রাজনীতিতে হরতাল বিষয়টি আইটেম গানের মতই সম ভূমিকা পালন করে থাকে। যে দল বা জোটই বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকুক কেন হরতালকে আইটেম গানের মত করে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়। তাতে ধরে নেওয়া হয় হরতালকারী জোট সফল হয়ে থাকে কারণ পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে হরতালকারীগণই নির্বাচিত হয়েছেন আর এটাকেই সফলতার মানদন্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

সম্প্রতি সারাদেশজুড়ে দিনে 650 কোটি টাকার (৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখের জনকন্ঠ সংবাদপত্রের মতে 1 দিন হরতালে 650 কোটি টাকার ক্ষতি হয়) দামের বেশ কয়েকটি হরতাল পালিত হয়ে গেল। সাথে প্রায় শ’দুয়েক লোকের প্রাণনাশ। এই সবকিছুর পেছনে বিরোধীদল যে হাতিয়ার ব্যবহার করলো সে হাতিয়ারের তার নাম চেতনা এবং এই হরতাল প্রতিহত করার জন্য সরকারীদল যে হাতিয়ার ব্যবহার করলো তার নামও চেতনা। এই সুযোগে চেতনা কি জিনিষ উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত সংজ্ঞা এখানে তুলে ধরা হলো। ‘(চেতনা (ইংরেজি: Consciousness) মনের একটি ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যাকে আরও অনেকগুলি মানসিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি হিসেবে গণ্য করা হয়, যেমন আত্মমাত্রিকতা, আত্মচেতনা, অনুভূতিশীলতা, পৃথকীকরণ ক্ষমতা, এবং নিজের সত্তা ও আশেপাশের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতা।) সরকারী দলীয় জোট ব্যবহার করলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বিরোধী দলীয় জোট ব্যবহার করলেন ধর্মীয় চেতনা। দেশের মানুষের এই দু’টি মহান চেতনার প্রতি শ্রদ্ধার কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় দেশের দুই রাজনৈতিক জোট রাজনৈতিক শোভনীয়তা ও শিষ্টাচার পদদলিত করে এই চেতনা দু’টিকে চরিত্রায়ন করেছে রাজনৈতিক নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে, স্বার্থ হাসিলের নিমিত্তে।দুই চেতনার মাঝে পড়ে জনগণের আত্মমাত্রিকতা বা আত্মচেতনা লুপ্ত বিলুপ্ত প্রায়।তবে সন্দেহ নেই জনগণের চেতনা যায় হোক সচেতনতা সম্ভবত সন্তোষজন পর্যায়ে যেতে জাতিকে এখনও অনেক সময় ব্যয় করতে হবে কারণ রাজনৈতিকদলগুলো জনগণকে উপরোক্ত দু’টি চেতনার বিষ প্রয়োগ করে জনগণকে বর্ণবৈকল্য রোগীতে পরিণত করে ফেলেছে। বিবেকের রেটিনার আলোকসংবেদী কোষ সক্রিয় নেই, দুই চেতনার বিষ প্রয়োগ করে সেটি সংহার করা হয়েছে। দুই চেতনায় উদ্বুদ্ধ দুই শ্রেণীর জনগণ তাদের অনুসারী দল যেভাবে যে রঙ চেনায় সেই রঙ সেই ভাবে চেনে। তারা এখন সাদাকে সাদা দেখেনা কাল কে কাল দেখেনা।

জনগণের বর্ণবৈকল্যের কিছু দৃষ্টান্ত যদি বিশেল্ষণ করি তাহলে দেখা যাবে। প্রজন্ম চত্ত্বর থেকে যুদ্ধ অপরাধীদের ফাসিঁর দাবি তোলা হয় এবং ফাঁসিরদাবীকৃত ব্যক্তিগণ নিজেদেরকে ধর্ম নিরপেক্ষ বলেও প্রচার করে। অতঃপর যা হবার তাই হলো মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী এদেরকে রীতিমত নাস্তিক বানিয়ে ছাড়লেন। আমাদের দেশের জনগণ আরেকবার বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা বুঝলেন; ধর্মনিরপেক্ষতা মানে নাস্তিকতা। আর যারা ধর্মীয় মৌলবাদের রাজনীতি বিশ্বাস করেন তারা মুসলমান। এইভাবো চূড়ান্তভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা শব্দটি নাস্তিকতার রুপ পরিগ্রহ করল আর ধর্মীয় মৌলবাদ পেল মুসলমানের রুপ।ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক জোট এ বিষয়ে কম যায়না; রাজাকারকে নব্য রুপে রুপায়ন করল। যারা তাদের বিরুদ্ধবাদী তাদেরকে নব্য রাজাকার বা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী নয় বলে প্রচার করল।

যখন পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান শোষিত হচ্ছিল তখনকার ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও কলাম লেখক পারভেজ হুদভয়ের একটি উদ্ধৃতি সামান্য পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যায়-‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছি সত্য কিন্তু এক জাতি হয়ে উঠতে পারিনি’।অভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ে থাকার ফলে নৈতিক ও দার্শনিক চেতনার মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদের বোধদয় হয় তা আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেনি। ৪২ বছরে এখনো পর্যন্ত জাতীয়তাবোধ নিয়ে রাজনীতির নোংরা খেলা বন্ধ করতে পারিনি। এখনও পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক চেতনার মধ্যে সংযুক্ত করতে পারিনি বরং ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চেতনার সাথে ধর্মীয় চেতনার একটি কাল্পনিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে সেটাকে সামাজিক দ্বন্দ্বে রুপান্তর করা হয়েছে। সেই সামাজিক দ্বন্দ্ব চূড়ান্তভাবে সামাজিক সহিংসতায় পরিণত হয়েছে। এই সামাজিক সহিংসতা কোনভাবেই কল্পিত দ্বন্দ্বের বাইরে এর বাস্তব ভিত্তি আছে বলে ব্যাখ্যায়িত করা সম্ভব হবে না।

সহিতংসতাগুলো আত্মপ্রকাশ যখন করছে তখন হরতাল নামের গণতান্ত্রিক অধিকারের ছদ্মবেশে। সহিংসতাগুলো এতটায় ব্যপক হচেছ যে বানের পানির মত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে; যা সারা দেশের প্রচুর জানমাল ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করছে এবং ভবিষ্যতে করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখের জনকন্ঠ সংবাদপত্রের মতে একদিনের হরতালে আনুমানিক প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। যে সপ্তাহে জামায়াতে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদি’র ফাঁসির রায় হয় সেই সপ্তাহে প্রায় ২০০ মানুষের প্রাণহানী ঘটে এবং জনকন্ঠের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ৬৫০ কোটি টাকা করে ক্ষতি হয় এবং পরবর্তীতে আরও কয়েকটি হরতাল পালিত হয় এবং সেখানেও প্রাণ হানি ঘটে। এই প্রাণহানি এবং হরতালে আর্থিক ক্ষতি রোধে এদেশের বিভিন্ন দলীয় পোষাকপরা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি এবং নির্দলীয় বুদ্ধিজীবিগণ দুই নেত্রীকে সংলাপের বসার পরামর্শ দেন। তাহলে শুধুমাত্র মার্চ ২০১৩ মাসের পরিসংখ্যানটি এমন হতে পারে-

প্রায় 200 মানুষের প্রাণ অবসান+প্রায় 400 মা বাবার বিলাপ+সহস্রাধিক মানুষের স্বজন হারানোর বেদনা+(650 কোটি টাকা × হরতালের দিন সংখ্যা)+আরও অন্যান্যা ক্ষতি < দুই নেত্রীর সংলাপ বিলাসিতা।



সকলকে ধন্যবাদ

3/22/2013 2:08 AM

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.