নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তা এখানে মুক্ত

আলমগীর_কবির

মুক্ত চিন্তা করুন, অন্যকে মুক্ত চিন্তা করার স্বাধিনতা দিন এবং সকলকে ভাল বাসুন।

আলমগীর_কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিনাশে বিস্তার।

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৬



এক

বাঁশের চাটাইয়ে নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া মসজিটি কিছুদিন আগে ওয়াক্তিও মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হত। ছওয়াবেরর আশায় যারা মসজিদকে বাঁশ অনুদান হিসাবে দিয়েছেন তারা সকলেই যে নামায পড়েন তা নয়। তবুও ছওয়াবের আশায় তা করেছেন। বিগত কয়েক মাস হলো এই মসজিদদে এখন জুম্মার নামায আদায় করা হচ্ছে। কথিত আছে এই মসজিদের ইমাম হিসাবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনি নাকি আফগানিস্থান থেকে জিহাদি প্রশিক্ষণ নিয়ে এসছে। হয়তো এই কারণেই গ্রামের সকলে এই ইমাম সাহেবকে খুব মান্য করে। ইমাম সাহেব যখন পথ দিয়ে হেটে যান তখন শিশুরা দূর থেকে দৌড়ে এসে ইমাম সাহেবকে সালাম দেয়। ইমাম সাহেবের চেয়ে বয়সে যারা বড় তারাও দূর থেকে এসে হুজুরকে সালাম দেন। ইমাম সাহেবের শারিরিক কাঠামো দেখলেই বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছা করে যে উনি আফিগানিস্তান থেকে জিহাদী প্রশিক্ষণ নিয়ে এসছেন।



শুক্রবার পাড়ার অনেক লোকই এখানে নামায পড়তে এসেছে। পাড়ার বলছি কারণ মসজিদ কমিটি নিয়ে গন্ডগোল হওয়ায় গ্রামে চারটি মসজিদ স্থাপিত করা হয়েছে।



ইমাম সাহেব মিম্বরের উপরে দাঁড়িয়ে খুতবার বই হাতে নিয়ে জিহাদ সম্পর্কে নানান বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

-হে ঈমানদার বান্দাগণ। আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর এবং তাঁহারই নৈকট্য লাভ করিবার উপায় তালাশ কর এবং এই লক্ষ্যে আল্লাহর পথে জিহাদ করিতে থাক সম্ভত: (এই উপায়ে) তোমরা সফলকাম হইতে পারিবে। (সুরা মায়িদাহ : ৩৫)। সুরেলা কন্ঠে আরবি পড়ে বাংলা অর্থ বলে শুনালেন।



পড়া শেষ করে মিম্বরের উপর বসে পড়লেন এবং একটু দম দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং বিরাট শক্ত কিছু বলবেন মুখাকৃতি দেখে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।



অতঃপর-

-যে সমাজ, যে সরকার আল্লাহুর প্রভূত্ত্ব ও সার্বভৌমত্ত্ব স্বীকার করেনা, কালেমা বিশ্বাসী কোন মানুষ সেই সমাজ বা সেই সরকারের প্রভূত্ত্ব স্বীকার করতে পারেনা। আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি এই সরকারে বিরুদ্ধে কোন কথা বলছিনা। যে সব সরকার আল্লাহু দ্বীন কায়েম করার জন্য কাজ করেনা আমি সেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। তাই ভাই, বন্ধু, সাথীরা দেশের ইসলামী শাসন কায়েম করার জন্য আমাদেরকে জিহাদের পথ বেছে নিতে হবে। নিজের জানকে কোরবাণী দিতে হবে। তা নাহলে কাল হাশরের ময়দানে আমরা কি জবাব দেব?



মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিগণের মধ্যে বেশ কয়েকজন বয়স্ক মুসল্লি ইমাম সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই সমস্বরে সকলে বলে উঠলেন-



-হ্যাঁ, হ্যাঁ, যারা আল্লাহ রাসুলের তরিকা অনুযায়ী চলেনা আমরা তাকে মানিনা।



কয়েকজন মুসুল্লির সহমতপোষণে ইমাম সাহেবের আত্মবিশ্বাস কয়েকগুন বেড়ে গেলো। সেই বর্ধিত আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ পরবর্তী বক্তৃতায় বোঝা গেলো।



-আপনারা আপানাদের ছেলে মেয়েদেরকে একই স্কুলে পড়াচ্ছেন, হাইস্কুলে পড়াচ্ছেন। যেখানে পড়াচ্ছেন সেটা হলো শয়তানের বাসা। ওখান থেকে এক একটা শিশু শয়তান হয়ে বেরুবে। আল্রাহুর খাশ বান্দা হয়ে বেরুতে পারবে না। আপনারা আপনার সন্তানকে ইংরেজী শেখাচ্ছেন কিন্তু আল্লাহ্-রাসুলের ভাষা আরবি শেখাচ্ছেন না। আপনারা আপনার সন্তানকে কোন দ্বিনের কাজ শেখানোর সুযোগ দিচ্ছেন না। আপানারা যখন মারা যাবেন তখন আপনার ছেলে আপনার জন্য দোয়াও করতে পারবে না। ছেলে মেয়েদেরকে এক সাথে পড়ানোতে তারা নানান অশালিন ও অসামাজিক কার্য-কলাপে লিপ্ত হচ্ছে। আপনারা জানেন এই গ্রামে একটি মাদ্রাসা আছে যেখানে দ্বিন শিক্ষা দেওয়া হয়। আপনারা আপনার সন্তানকে দ্বিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে শয়াতানের বাসায় পাঠাচ্ছেন।



-আপনারা কি চান? আপনার সন্তান মানুষ হোক না শয়তান হোক।



-মানুষ হোক। কেউ কেউ বলে উঠলেন।



-এই গ্রামে যে মাদ্রাসা আছে সেখানে আপনার সন্তানকে ভর্তি করে দিবেন। এখানে পড়া-লেখা করাতে কোন খরচ হয় না। অথচ শয়তানের বাসায় পড়ানোতে অনেক খরচ হয়। টাকা খরচ করে শয়তান বানাবেনে অথচ বিনা পয়সায় দ্বিন শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর খাস বান্দা বানাবেন না তাহলে আমরা কত বোকা?



-এই দ্বিন শিক্ষা প্রসারে যারা সামিল হতে চান, যারা ইহজগতের জন্য মরণের পরে স্থায়ী বাড়ী আছে, যেখানে আপনার সু-স্বাদু ফল অপেক্ষা করছে, যেখানে আপনার জন্য সুন্দরী সুন্দরী হুরপরী অপেক্ষা করছে আপনার সেই স্থায়ী সুন্দর মহা-সুখময় জীবনের জন্য আমি শুধু আপনাদেরকে একটিই অনুরোধ করব যাদের সামর্থ্য আছে তারা শুধু তাদের সাধ্যমত অর্থ-কড়ি দিয়ে এই মাদ্রাসাটি গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবেন। যাদের সামর্থ আছে তাদেরকে বলছি যাদের নেই তাদের কে বলছিনা। এখানে মুক্তমনে দান করুন সেটা হবে আপনার জন্য সাদগায়ে জারিয়া। যার ফল আপনার সারা জীবন ধরে পাবেন। সেটা ইহ জীবনে এবং পরলৌকিক উভয় জীবনে।



অনন্ত:জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দের আশায় অনেকেই হুজুরকে আর্থিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। অনেকই তার সন্তানকে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিলেন। উপস্থিতি মুসল্লিদের মধ্যে দু’একজন হুজুরের সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করবে বলে চিন্তা করছিল তারা শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ট সমর্থক না পাবার আশঙ্কায় বিরোধিতা করলেন না।



ছয় মাসের মধ্যে চাটাইয়ের মসজিদ এখন স্থানীয় জনগণের অনুদানে এবং ইউরোপ প্রাবাসীর টাকায় শক্তপক্ত এক ছাদের বিল্ডিং-এর পরিণত হয়েছে। গ্রামের দারিদ্রকে পরিহাস করে মাদ্রাসাটি তাল গাছকে ছাড়িয়ে মাথা উচুঁ করে আধুনিক শিক্ষাকে কটাক্ষ করতে শিখেছে। মসজিদের ইমাম সাহেবের পরিচয়, সম্মান; আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চিতার গতিতে মানুষের মননে স্থায়ী আশ্রয় গেড়ে ফেলেছে। ফারাক্কা বাঁধের ন্যায় তথ্য বিশ্লেষনের ঔদার্য ক্ষমতা আজ বাঁধাগ্রস্থ।



দুই

ছোট্ট একটি চাকুরীর সূত্রের আমাকে বাইরে থাকতে হয়। সেল ফোনের সুবিধায় গ্রামের কোন তথ্যে পেতে সমস্যা হয়না। আদর্শহীন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে গ্রামের মানুষ আজ দু’ভাগে বিভক্ত। সতত মারা-মারি, হানা-হানিতে লিপ্ত। শুনেছি গ্রামের যে কোন খানা-পিনা তা সেটা মৃত্যূকে কেন্দ্র করে হোকে বা বিবাহকে কেন্দ্র করে হোক বা চায়ের দোকানে চা-পানে হোক সবকিছুই জাতীয় রাজনীতির কুপ্রভাবে জনগণ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের এই নন্দনহীন দ্বন্দ মেটানোর একটা পথ আছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। বই পড়া। তাই চিন্তা করলাম গ্রামে একটা লাইব্রেরী করলেল অন্ততঃ নতুন প্রজন্ম বই পড়ার অভ্যাস করবে। সেখান থেকেই হয়তো মানুষ চিন্তার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে। পুরাতন একটি বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। প্রথমে অর্থ-একটি বড় সমস্যা মনে হচ্ছিল। কিন্তু প্রবাসীদের টাকায় পর্বত সমান উচ্চতার মসজিদ এবং সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাঁদায় তৈরী হওয়া মাদ্রাসা আমাকে উৎসাহ জোগালো। যেমন চিন্তা তেমন কাজ, ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে এসে হাইস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের একজায়গায় করার চেষ্টা করলাম, কিছু ছাত্র আসল। যারা আসল তাদের উৎসাহের ঘাটতি দেখলাম না।

-আমরা যদি বই পড়ার অভ্যাস না করি তাহলে আমাদের মননের বিকাশ ঘটবে না। আমরা আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলেয়ে চলতে পারব না। তাই আমি চিন্তা করেছি এই গ্রামের বাজার সংলগ্ন স্কুলের সাথে একটি লাইব্রেরী করব। সেখানে সবাই দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগেজিন এবং নানান ধরনের বই পড়ার সুযোগ পাবে। যার যেটি পছন্দ হবে সেটি নিয়ে পড়বে। এবং সামর্থ অর্জ্ন করতে পারলে এখানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে তথ্য পাওয়া এবং তথ্য বিশ্লেষন খুব সহজতর হবে। হ্যাঁ কথা সথ্য এর সাথে প্রচুর পরিমাণে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও পাওয়া যাবে।



-ভাই এখানে কোন ধর্মীয় বই থাকবে? একজন জিজ্ঞাসা করল।



-এখানে সব ধর্মের বই থাকবে। প্রশ্ন শুনে উৎসাহ নিয়ে বললাম। সবারই অধিকার রয়েছে তার ধর্মের বই পড়ার। তাছাড়া তুমিও অন্য ধর্মের বই পড়তে পার। তুমিও জানতে পার অন্য ধর্ম কি বলছে? আজকে যে দায়িত্ব তোমরা নিজেরা নিয়েছে তা সঠিক ভাবে পালন করার চেষ্টা কর। আমি আবার আবার যখন আসব তখন আমাদের ছোট্টে একটা ঘর তৈরী হয়ে যাবে এবং ছোট্টা পরিসের লাইব্রেরীটাও শুরু করা যাবে ইনশাল্লাহ।

-ভাই আমার একটা প্রশ্ন আছে, করতে পারি?

-হ্যাঁ, কর।

-আমরা কি এই ভাবে টাকা তুলে লাইব্রেরী করতে পারব?

-কেন পারব না? এই ভাবে এই গ্রামে চারটি মসজিদ তৈরী হয়েছে। একটি বড় মাদ্রাসা তৈরী হয়েছে। লাইব্রেরী করতে আমাদের এখন যে পরিমাণ টাকা লাগবে তা ঐ মসজিদের একটা পিলারের সমপরিমাণ। তাছাড়া লাইব্রেরী গড়ে তোলাও তো একটি মহৎ কাজ। কারণ আল্লাহ কোরানুল-কারিমেও পড়ার কথা বলেছেন।



তিন

ইমাম সাহেব আজ একটা সাদা পাঞ্জাবী পরে নামাজ পড়াতে এসেছেন। সাধারণত কখনও চশমা পরতে দেখা যায়না। আজ চশমা পরে এসেছেন। চোখে কোন সমস্যা হবে হয়তো? মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে পড়লেন। খুতবার বইটি আজ হাতে নেননি।

-আজ আমি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায় আপনাদের সাথে।

-করুন। উপস্থিত মুসল্লিগন সমবেত স্বরে বললনে।

-শুনলাম এই গ্রামে একটি লাইব্রেরী গড়ে তোলা হবে। এর পরিণাম কি জানেন? (সম্ভবতঃ লাইব্রেরীর পরিণাম বিষয়ে কেউ অবগত নয়। কিন্তু পরিণাম কি সে বিষয়ে কেউা জিজ্ঞেসও করছে না। হুজুরের সামনে না বলে কেউ নিজের স্বল্প-বুদ্ধিত্র পরিচয় দিতে চাইছে না। আবার হ্যাঁও বলতে পারছেনা। তাই সকরল চুপচাপ রয়েছে।) আপনারা এর পরিণাম বুঝতে পারছেন না? এর পরিণাম হলো, এখানে বিধর্মীদের বই পড়ানো হবে। বিশেষ করে হিন্দু লেখকদের বই পড়ানো হবে। যারা মুর্তী পূজা করে তাদের বই পড়া কি ঠিক হবে?

-না। সমস্বরে প্রায় সকলে বলে উঠলেন।

-বই যদি পড়তেই এই মসজিদে এসে পড়ুক। এখানে পবিত্র কোর-আন আছে, হাদীসের বই আছে। আর তাছাড়া তারাও নানান ধরনের ইসলামী বই কিনে এখানে দিতে পারে, এই লাইব্ররীটাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। তাহলে সকলেই সেই বই পড়ার সুযোগ পাবে। মসজিদে বই কিনে রাখলে তাদের লাইাব্রেরী তৈরী করার খরচও বেঁচে যাবে। কি আপনারা কি আমার সথে একমত?

-জ্বি, একমত

-তাছাড়া ঐ সব বই পড়লে অনেকে নাস্তিক হয়ে যেতে পারে বা মুরতাদ হয়ে যেতে পারে। আপনার সন্তান যদি ভুল শিক্ষার কারণে নাস্তিক বা মুরতাদ হয়ে পড়ে তাহলে আপনি কিন্তু আল্লাহর কাছে তার হিসাব দিতে পারবেন না। বলেন নাউজুবিল্লাহ।

-নাউজুবিল্রাহ। সকলে সমস্বরে

-ঐ সব বই পড়ে আজকের যুব সমাজ বিপথে চলে যাচ্ছে বলে সমাজে এত বিশৃঙ্খলা। যদি তারা আজ মাদ্রসায় পড়তো, হাদীস কোরানের বই পড়তো তাহলে তারা বিপথে যেতো না। দেশে এত প্রাকৃতি দূর্যোগ, সমাজে এত বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকতো না। আমিন চাচা শুনলাম আপনার ছেলেই নাকি এসব করছে। এমনিতেই সে নাকি যেখানে চাকুরী করে তারা মানুষকে খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তিরত করে। সে বাইরে যা করে করুক। আমরা সে বিষয়ে কেউ বাধা দিতে যাব না। কিন্তু এই গ্রামে এসব আমরা হতে দেবনা। আমরাও আল্লাহুর কাছে দায়বদ্ধ। কেউ ইসলাম বিরোধী কিছু করে তবে আমরা তাকে সম্মিলিত ভাবে প্রতিহত করব, প্রয়োজনে জীবন দেব। আপনার ছেলে আমার ভাইয়ের মত। আপনি তাকে ভাল-ভাবে বোঝাবেন। আমরা কোন প্রকার সংঘাতে জড়াতে চায়না। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহ ও রাসুলের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আমরা তাকে ছেড়ে দেব না।



চার

যাদেরকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সে ব্যাপারের খোঁজ নেওয়ার জন্য ১ মাস পরে যখন বাড়ীতে গেলাম মোবাইলে যোগাযোগ করে কয়েকজনকে ডেকে এক জায়াগায় করার চেষ্টা করলাম।

সবাই বলল ভাই বিকাল ৫টার মধ্যে স্কুল মাঠে এসে হাজির হচ্ছি। কিন্তু এখন বিকাল সাড়ে ৫টা বাজে আমি অপেক্ষা করছি কেউ আসছেনা। এক ধরনেরর হতাশা কাজ করছে। এমন সময় তাকিয়ে দেখি কেউ একজন আসছে। কিছুটা আশান্বিত হলাম; যে আসছে সে আমারই ছোট ভাই। ওকে একটা দায়িত্ব দেওয়া ছিল।

-যাক তাহলে তুই এসেছিস?

-হ্যাঁ আসলাম।

-যার যে দায়িত্ব ছিল সবাই কি ঠিক-ঠাক ভাবে পালন করেছে?

-সবাই দায়িত্ব ঠিক-ঠাক ভাবে পালন করেছে কিনা জানিনা। তবে আমি আমার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে আসলাম।

-করতে আসলাম মানে?

-তোর তো দায়িত্ব----- কথা শেষ করতে না দিয়েই

-হ্যাঁ ছিল। কিন্তু এখন নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। আব্বা নতুন দায়িত্ব দিয়েছে।

-কি দায়িত্ব।

-তুমি যে উদ্যোগ নিয়েছো। তা থেকে সরিয়ে আনা দায়িত্ব।

-কেন আমি কি খারাপ কিছু করছি? যে সরে আসব?

-সেটা জানিনা। আব্বা এসব করতে না করেছে, আর সে কথা জানাতেই আসলাম।

-এসব করতে না করেছে কেন?

-ইমাম সাহেব জুম্মার নামাযের দিনে এবিষয়ে তুমি যেন আর কিছু না কর সে বিষয়ে আব্বাকে সতর্ক করে দিয়েছে। তাই আব্বা আমাকে বলে দিল যেখানে চাকুরী করছে সেখানে যা খুশি করুক। গ্রামে এসে কোন ঝামেলায় জড়ানোর দরকার নাই।

-বললেই হল নাকি?

-বল্লেই হল। তুমি ডেকে দেখো, কেউ তোমার ডাকে আসবে না।



ছোট্ ভাইয়ের কথাই সত্যি মনে হলো। কারণ এখনও পর্যন্ত কেউ আসেনি। যে এসেছে, তার কথাতো বললাম। বুঝতে পারছিনা কেন একজন ইমামের কথায় এমন একটি মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাবে? নাকি ইমাম সাহেবেদেরর প্রভাবমুক্ত সমাজ গড়ার পথে, সমাজ এখনও এগোতে পারিনি? হতাশ হয়ে বাড়ীতে ফিরে গেলাম। এবিষয়ে বাড়িতে গিয়ে আব্বার অনেক বকাঝকা শুনতে হলো। চুপ করে শুধু শুনেই গেলাম। অনেক কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও বল্লাম না। বুঝলাম, আমার বাবা এখন একধরনের বিশ্বাসে আটকে আছে। তার কাছে অষ্টম শ্রেণী পাশ ধর্ম গুরুর ধর্মীয় কপট ধ্বজা পুরটাই বিশ্বাসযোগ্য। আমার বাবার মত এই দেশের কোটি কোটি লোকের আস্থা বিশ্বাস সাদা টুপি ও কুর্তার মধ্যে আটকে আছে। আটকে আছে দেশের উন্নয়ন। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রবাহিত তথ্য ঐ টুপি ও কুর্তার মধ্যে আটকে গেছে। হাজার বছরের বাঙালী চেতনা পরিবর্তনের চেতনায় রুপান্তর করা সম্ভব হয়নি। সমাজের কুসংস্কারের আধুনিকতায় রুপান্তরও টুপির মধ্যে আটকে আছে।



পরের দিন সকালে ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলাম। যেখানটিতে মাদ্রাসার বিল্ডিং গড়ে তোলা হয়েছে রাস্তার পাশস্ত এই জমিতে অনেক ভাল ভাল ফসল উৎপাদন হতে দেখিছি। এই জমির প্রকৃত যিনি মালিক ছিলেন তিনি নিজে চাষ করতেন না। যারা অতিদরিদ্র তাদেরকে বর্গা দিতেন। পরবর্তিতে জমির মালিক প্রায় দুই একর জমি এই মাদ্রাসার নামে দান করে দেন। প্রবাসি এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি বিল্ডিং গড়ে উঠেছে; কয়েকটি টিনের চালের ঘরও আছে। একটিতে ইমাম সাহেব তার পরিবার নিয়ে থাকেন অন্যগেুলোতে ক্লাশ নেওয়া হয় এবং কিছু বিল্ডিং-এ ছাত্রদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা রয়েছে।

-আসসালামু আলাইকুম। ইমাম সাহেবকে দেখে সালাম দিলাম।

-ও আলাইকুম আস সালাম।

-এই চেয়ার এগিয়ে দে। একজন ছাত্রকে বলল। যে ছাত্রকে চেয়ারটা এগিয়ে দিত বলল সেই ছাত্রটি হালকা নীল রঙের তিলে ধরা পাঞ্জাবি পরে আছে এবং মাথায় যে টুপিটা পরা সেটাও বয়সের ভারে, ময়লার ভরে মুল রং হারিয়েছে।

-আসসালামু আলাইকুম। আমাকে দেখে ছেলেটি সালাম দিল। চোখে মুখে প্রচন্ড ভিতির ছাপ দেখতে পেলাম। একটু ভুল হলেই তাকে অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে, এ ব্যাপারে ছাত্রটা যথেষ্ঠ সচেতন।

-ও আলাইকুম আস সালাম। তোমার নাম কি?

-মো: আব্দুল জব্বার।

-আব্বার নাম কি?

-মো: মন্টু মিয়া। বলে ছেলেটি দৌড়ে চলে গেলো। সম্ভবত আরও অনেক অতি সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়ার ভয়ে দৌড়ে পালাল।

-তার পরে কি মনে করে? ইমাম সাহেব আমাকে প্রশ্ন করলেন।

-আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায়।

-বল।

-আমার লাইব্রেরী করার ব্যাপারে আপনি আমার আব্বার সাথে কিছু বলেছেন?

-যা বলেছি নিশ্চয় শুনেছো।

-আমি লাইব্রেরী করলে আপনার সমস্যা কোথায়?

-আমার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা শিশুদের। যারা বেড়ে উঠছে। ঐ লাইব্রেরী থেকে যা শিখবে---

-খারাপ কিছু শিখবে? আপনি দ্বিন শিক্ষা দিচ্ছেন দেন তাতে আমার আপত্তি নেই। আমি এলাকার মানুষকে চোখ কান খোলাতে চাই।

-কে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এ দেখার দায়িত্ব তোমার নয়। আল্লাহ এ দায়িত্ব নিবে। এই দুনিয়াতে কে কি শিখবে? কে বিজ্ঞান শিখবে? কে কোরান শিখবে? কে ভাল থাকবে? আর কে মন্দ থাকবে? এর ফয়সালা আল্লাহ নিজেই করে।



চলে আসলাম। কোন কথা বলার ইচ্ছা করল না। রাত্রে শুয়ে চিন্তা করতে থাকলাম তাহলে আমি কি জীবনের অন্যান্যা ক্ষেত্রের মত এখানেও পরাজয় বরণ করতে যাচ্ছি। জীবনে জয় বলতে তেমন কিছু নেই পরাজয়টা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে এখন আর কোন পরাজয় মেনে নিতে ভাল লাগেনা। ইমাম সাহেবের সামাজিক মর্যাদা ও প্র্র্রভাব যা তাতে উনি যা বলবেন সেটাই এ সমাজ করবে।



ইহলৌকিক উচিত্যবোধের চেয়ে পরলৌকিক বৈতরণী পার হওয়া যাদের ধর্ম। সৃষ্টিকর্তাকে, বিনাশের অব্যবহিত পরে সৃষ্টি করা আরাধণীয়। সৃষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টি স্রষ্টার প্রতি ভালাবাসার ব্যবচ্ছেদ। যারা নন্দিত হতে চায় চিন্তা ও মননের পরাধীনতায়। বিদ্যাবত্তার এত বৈপিরত্য যেখানে সেখানে সৃষ্টির সুখ সৃষ্টি করতে চাওয়া মরুতে গোলাপ প্রস্ফুটনের অপপ্রয়াস মাত্র। তারা বোঝেনা সৃষ্টিতে স্রষ্টা পাওয়ার আনন্দ।



চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রাতে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। দুর্বল গাছের ডালগুলো আমার লাইব্রেরী করার স্বপ্নের মত ভেঙে পড়েছে। চার পাশে ধ্বংসের চিহ্ন রয়ে গেছে। মনে হচ্ছে একুবিংশ শতকের কোন হরতালের পিকেটিং শেষ হল।সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ে প্রাতকর্ম সেরে বুকভরা হতাশা নিয়ে কর্মস্থলে চলে আসার প্রস্তুতি শেষ করলাম। কেন জানি মনে হলো ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করে তার সম্মতি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে কিছু করা যায় কিনা? কারণ আমার মত দূর্বল লোকের জন্য সকল সমস্যা সমাধানের জন্য একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথই খোলা থাকে। যাদের শক্তি ও সাহস থাকে তারাই কেবল মাত্র বিপ্লব ও আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে পায়। আমি সেই সৎ সাহসি দলের কেউ নই।



টিনের চালার তৈরী মাদ্রাসার একটি ক্লাস রুম ভেঙে পড়ে আছে। একপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। চিৎকার করে মুখে মুখে কি যেন বলছে আর কান্নাকাটি করছে। বেশ কিছু উৎসুক মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের মধ্যে কি যেন আলাপ করছে। কাছে এগিয়ে গেলাম। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছি কিন্তু কেউ ভ্রুক্ষেপ করছে না। নিজেদের আলাপ চারিতায় বেশ মগ্ন মনে হচ্ছে। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। কিছু একটা হয়েছে বোঝা গেল। আরও কাছে গিয়ে দেখি ইমাম সাহেবের হাতে হাত কড়া পরানো। একজন পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম-

-কি হয়েছে?

-আপনি কে? দাম্ভিক গলায় জিজ্ঞেস করল।

আমি আমার পরিচয় দিলাম। আমার পরিচয়ে সম্ভবত রাজনৈতিক কোন পদবি না থাকায় পুলিশটা আমার প্রশ্নের কোন জবাব দিলনা। ওখান থেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুপরিচিত একজনকে হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

-ইমাম সাহেব কে পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কেন?

-টিনের চালের উপর গাছের একটা বড় ডাল ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। তাতে চালের নিচেই শুয়ে থাকা দু’জন শিশু গুরুতর আহত হয়েছে।হুজুর তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে সারা রাত পানি পড়া খায়িছে এবং ঝাড় ফুক দিয়ে রেখে দিয়েছে। কেটে যাওয়া স্থানগুলো কাপড় দিয়ে বেধে দিয়েছে। একজন বিষন্ন কন্ঠে বলল। তাই ঐ ছেলে দুটোর বাবা খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে এসেছে। এছাড়াও ফতুয়া দিয়ে একজন হিল্লা বিয়ে দিয়েছে, আরেকজনকে ফতুয়ার মাধ্যমে তালাক নিশ্চিত করেছে। এই সব অভিযোগে তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে ---------



কথা শেষ হতে না হতেই দেখি ইমাম সাহেবকে পুলিশে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার পাশাপাশি আসতেই চোখে চোখ পড়ল। প্রতিশোধ নেওয়া এরকম মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করার মত উদারতা দেখানো আমার দ্বারা সম্ভব হলো না।

-এই দুনিয়াতে কে ভাল থাকবে? আর কে মন্দ থাকবে? এর ফয়সালা আল্লাহ নিজেই করে। ইমাম সাহেবের চোখে চোখ রেখে বল্রাম।



এক সপ্তাহ পর।

বাসায় মেয়েকে নিয়ে বসে আছি। এমন সময় ফোন কল আসল। ফোন কল রিসিভ করলাম। ফোন ধরতেই হো হো করে হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম।

-হো হোক করে হাসছিস কেন?

-মসজিদে নতুন ইমাম সাহেব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ও পাশ থেকে ছোট ভাই ফোনে বলল। এই ইমাম সাহেব নাকি কওমী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছে। ইনি নাকি দুনিয়ার কোন কাজই করেননা। যা করেন সবকিছুই দ্বীনের কাজ। উনার মতে দুনিয়ার কাজ করার জন্য পৃথিবীতে আল্রাহু অনেক লোক পাঠিয়েছেন। আর আল্লাহ উনাকে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র দ্বীনের কাজ করার জন্য। মাদ্রাসার দায়িত্বও এই হুজুর নিয়েছেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৩

বৃক্ষ বলেছেন: আধুনিক লাল-সালু। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে যে ঐ হুজুর গ্রাম ছাড়া করে নাই, আপনার সৌভাগ্য।

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫৭

আলমগীর_কবির বলেছেন: ভাই আমিতো গ্রামে থাকিই না তা গ্রাম ছাড়া করবে কি করে।

২| ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২৭

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: বিষয়টা কি সম্পূর্ণ সত্য ? সত্য হলে ভীষণ ইন্টারেস্টিং

তারপর লাইব্রেরির কি হল ?

০৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:২৪

আলমগীর_কবির বলেছেন: সত্য এবং কিছুটা গল্পের প্রয়োজনে বানানো ঘটনার মিশ্রণ আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.