![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভারতের উত্তর প্রদেশে নেপাল সীমান্ত ঘেঁষা জেলাগুলিতে চলছে মুসলিম স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে বুলডোজার অভিযান। গত কয়েক দিনে বাহরাইচ, শ্রাবস্তী, সিদ্ধার্থ নগর, মহারাজগঞ্জ, বলরামপুর এবং লখিমপুর খেরি জেলায় অন্তত ২০টি মসজিদ ও মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিল ভারতীয় গণমাধ্যম ক্লারিওন ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রশাসনের দাবি তারা 'রাজস্ব কোডের ৬৭ ধারা' অনুযায়ী অবৈধ দখল উচ্ছেদ করছে। কিন্তু মুসলিম নেতাদের অভিযোগ, এ অভিযানের লক্ষ্য আসলে মুসলিম সমাজকেই নিশানা করা। স্থানীয় মুসলিম মানবাধিকার কর্মী ইমরান খান বলেন, 'এটা শুধু দখল উচ্ছেদের নামে হচ্ছে না, এটা মুসলিমদের পরিচয়ের উপর সরাসরি আঘাত। সরকার চাইলে নিয়মে এনে বৈধ করতেই পারত, কিন্তু তারা ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছে।'
শুধু শ্রাবস্তী জেলাতেই ১৭টি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই দরিদ্র শিশুদের জন্য শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ সেলিম আক্ষেপ করে বলেন, 'এসব মাদ্রাসা গরিব ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় শিক্ষা দিত। সরকারি কাগজপত্রের ঝামেলা মেটানোর মতো টাকা তাদের ছিল না, কিন্তু বছরের পর বছর তারা সমাজের সেবা করে যাচ্ছিল। আজ সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।'
সিদ্ধার্থ নগর থেকে লক্ষ্মীপুর খেরি—সর্বত্র একই চিত্র। সরকারি নথিতে এগুলোকে 'অবৈধ' বলা হলেও বাস্তবে মসজিদ-মাদ্রাসাই মূল টার্গেট হয়েছে। মাওলানা আরশাদ হুসেন প্রশ্ন তুলেছেন, 'যদি কোনো মন্দির অবৈধ হয়, সেখানে কি বুলডোজার যায়? তাহলে শুধু মুসলিম স্থাপনাগুলোকেই কেন ভাঙা হচ্ছে?'
অভিযান থেমে নেই। মহারাজগঞ্জে এখনও মামলাগুলি আদালতে বিচারাধীন, তবুও বুলডোজার চলছে। বলরামপুরে ৭টি স্থাপনার মধ্যে কিছু জায়গা লোকজন নিজেরাই ছেড়ে দিয়েছে, আর বাকিগুলো জোর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা ভারতীয় মুসলিমদের মনে গভীর ক্ষোভ ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার আলম বলেছেন, 'আজ বুলডোজার হয়ে উঠেছে মুসলিম নিপীড়নের প্রতীক। এভাবে ভয় দেখিয়ে আমাদের স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে।'
শিক্ষক শায়েস্তা পারভীন বলেন, 'আমাদের মসজিদ, মাদ্রাসা, এমনকি ঘরবাড়িও আর নিরাপদ নয়। আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রাখা হয়েছে।'
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এই পদক্ষেপকে সংবিধান লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করেছে এবং ধ্বংস হওয়া স্থাপনাগুলোর পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্কের আইনজীবী দীপা কৌলও বলেছেন, 'এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ নিয়ে সরব হতে হবে।'
শ্রাবস্তীর মাওলানা আব্দুল মালিক বলেছেন, 'ওরা আমাদের মসজিদ ভাঙতে পারবে, ঈমান ভাঙতে পারবে না। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করেই দাঁড়াবো।'
সীমান্তবর্তী মুসলিম পরিবারগুলো এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বাহরাইচের বৃদ্ধ আব্দুল রহমানের বেদনা জড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো যেন গোটা মুসলিম সমাজের ক্ষতচিহ্নই তুলে ধরে: 'এটা শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নয়, আমাদের ওপর আস্থার ভিত্তিটাই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ওরা।'
©somewhere in net ltd.