নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাল- হেলাল ৭৩

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান

মোহাম্মদ আতীকুর রহমান

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আখিরাতে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা-

২৮ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৭

আখিরাতের ধারণা যেভাবে মহানবী (স) আমাদের জন্য পেশ করে গেছেন, তার আগেকার নবীগণও ঠিক তেমনি করে তা পেশ করে এসেছিলেন এবং প্রত্যেক যামানায় মুসলমান হওয়ার জন্য এটা ছিল অপরিহার্য শর্ত। যে ব্যক্তি আখিরাতকে অস্বীকার করেছে অথবা সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছে, সকল নবীই তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করেছেন। মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা এই যে, কাউকে যখন কোনো কাজের কথা বলা হয়, তখন সবার আগে তার মনে প্রশ্ন জাগে; এ কাজ করলে কি লাভ হবে, আর না করলেই বা কি ক্ষতি হবে? এ প্রশ্ন কেন জাগে? যে কাজে কোন লাভ নেই, মানুষ তাকে মনে করে অর্থহীন। যে কাজ সম্পর্কে মানুষের অন্তরে বিশ্বাস রয়েছে যে, তাতে কোন ফায়দা হবে না, তা করার জন্য মানুষ কখনো তৈরি হবে না। অনুরূপভাবে এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে রাজী হবে না, যাতে কোন ক্ষতি হবে না বলে প্রত্যয় রয়েছে। যে কাজের লাভ সম্পর্কে কারো সন্দেহ রয়েছে, তাতে সে কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারবে না। কোনো কাজ ক্ষতিকর কিনা, সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকবার জন্য সে কোনো বিশেষ চেষ্টা করবে না। শিশুদের দিকে তাকালেই তার প্রমাণ মেলে। শিশুরা আগুনে হাত দেয় কেন? তার কারণ হচ্ছে, তাদের মনে এ বিশ্বাস জন্মেনি যে, আগুন পুড়িয়ে দেয়। আবার পড়াশুনা থেকে তারা কেন দূরে থাকতে চায়? তার কারণ হচ্ছে, তাদের গুরুজনরা এ থেকে যেসব কল্যাণ প্রাপ্তির কথা তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন, তা তাদের মনে ভালো লাগছে না। অনুরূপ কারণেই যে লোক আখিরাতে বিশ্বাসী নয়, সে আল্লাহকে মানা ও তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী চলাকে মনে করে নিস্ফল। তার কাছে আল্লাহর আনুগত্যে যেমন কোনো লাভ নেই, তেমনি তার না-ফরমানীতেও কোনো ক্ষতি নেই। কাজেই মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল ও কিতাবের মাধ্যমে যেসব আদেশ দিয়েছেন, তার আনুগত্য করা তার পক্ষে কি করে সম্ভব হবে?



এখানেই ব্যাপারটি শেষ নয়। আরো ভাল করে চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায় যে, আখিরাতের স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি মানুষের জীবনে চূড়ান্ত প্রভাব বিস্তার করে আছে। আমরা একটু পূর্বে বলে এসেছি, মানুষের স্বভাবই হচ্ছে এমনি যে, সে যে কোনো কাজ করার বা না করার সিদ্ধান্ত করে তার লাভ-ক্ষতির দিক বিবেচনা করে। এখন এক ব্যক্তির নযর কেবল দুনিয়ার লাভ-ক্ষতির উপর নিবদ্ধ। এমন কোনো সৎকাজের প্রবণতা তার মধ্যে কখনো দেখা যাবে না, যার কোনো লাভ এ দুনিয়ায় প্রাপ্তির আশা নেই, আবার এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকবে না, যা থেকে এ দুনিয়ার বুকেই কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকবে। অপরদিকে আর এক ব্যক্তি রয়েছে, যার নযর রয়েছে কাজের শেষ পরিণামের উপর। দুনিয়ার লাভ-ক্ষতিকে সে মনে করে ক্ষণস্থায়ী। সে আখিরাতের স্থায়ী লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করেই সৎকর্মের পথ অবলম্বন করবে আর অসৎকর্মের পথ বর্জন করে চলবে, তাতে সৎকর্ম করায় তার যত বড় ক্ষতিই আসুক আর অসৎকর্ম থেকে যত বেশি লাভের সম্ভাবনাই থাকুক। চিন্তা করা দরকার এদের দু’জনের মধ্যে কত বড় পার্থক্য। একজনের কাছে সৎকাজ হচ্ছে তাই, যার ফল সে পাবে এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে, যেমন কিছু টাকা তার মিলবে, কিছু জমি-জমা তার অধিকারে আসবে, হয়ত কোনো পদ-পদবী, সুনাম-সুখ্যাতি ও মানুষের বাহবা মিলবে, হয়ত কোনো লালসা চরিতার্থ হবে, কিছুটা আকাঙক্ষা তার পূর্ণ হবে, হয়ত কিছুটা ভোগের পরিতৃপ্তি সে পাবে। তার ধারণা অনুযায়ী অসৎকাজ হচ্ছে তা-ই যাতে এ জীবনে কোনো খারাপ পরিণাম আসে অথবা আসার ভয় থাকে; যেমন-ধন-প্রাণের ক্ষতি, স্বাস্থ্যহানি, সরকারের পক্ষ থেকে শাস্তি, কোনো রকম দুঃখ-কষ্ট অথবা অবাঞ্ছিত অবস্থা। পক্ষান্তরে অপর ব্যক্তির কাছে সৎকাজ হচ্ছে তা-ই যাতে আল্লাহ খুশী হন, আর অসৎকাজ হচ্ছে তা-ই যাতে আল্লাহ নাখোশ হন। সৎকাজের ফলে দুনিয়ায় যদি তার কোনো লাভ না হয়, বরং কোনো ক্ষতি হয়, তবুও সে তাকে সৎকাজ মনে করে এবং বিশ্বাস রাখে যে, শেষ পর্যন্ত তার সৎকাজের জন্য প্রাপ্য সে আল্লাহর কাছে পাবে। অসৎকর্ম থেকে যদি তার কোনো ক্ষতি নাও হয়, কোনো ক্ষতির ভয় না থাকে বরং তার ফলে তার কাছে কেবল সুযোগ-সুবিধাই আসতে থাকে, তবুও সে তাকে অসৎকর্মই মনে করে এবং বিশ্বাস করে যে, যদি দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে শাস্তি থেকে বেঁচেও যায় এবং কিছুদিন মজা লুটবার সুযোগও পায়; তবু শেষ পর্যন্ত আযাব থেকে তার রেহাই নেই।



এ দু’টি বিপরীতমূখী ধারণার প্রভাবে মানুষ দু’টি বিপরীতমূখী পথ অবলম্বন করে। যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে না, তার পক্ষে ইসলামের পথে এক পাও অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। ইসলাম বলে, ‘আল্লাহর পথে গরীবকে যাকাত দাও’। জবাবে সে বলে, যাকাত দিতে গেলে আমার সম্পত্তি কমে যাবে’। আমার অর্থের উপর আমি সুদ নেবো এবং সুদের ডিক্রিতে তাদের ঘরের শেষ কর্পদকটি পর্যন্ত ক্রোক করে নেবো। ইসলাম বলে, ‘সর্বদা সত্যকথা বলো, আর মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকো, সত্য ভাষণে তোমার যতই ক্ষতি হোক আর মিথ্যা ভাষণে যতই লাভ হোক’। জবাবে সে বলে, এমন সত্যকে গ্রহণ করে আমি কি করব, যাতে আমার কেবল ক্ষতিই হবে, কোনো লাভ হবে না? আর এমন মিথ্যা থেকে আমি বিরত থাকব কেন, যা আমার জন্য লাভজনক হবে এবং যাতে কোনো দূর্নামের ভয় পর্যন্ত নেই? এক নিঃসঙ্গ পথ অতিক্রম করতে করতে তার নযরে পড়ছে একটি অতি মূল্যবান বস্তু, অমনি ইসলাম তাকে বলে, ‘এ তোমার সম্পত্তি নয়, কিছুতেই তুমি এ জিনিস গ্রহণ করতে পারো না’। সে তার জবাব দেয়, আপনা-আপনি যে জিনিস আসে তা কেন ছেড়ে দেব। এখানে তো এমন কেউ নেই, যে দেখে পুলিশকে খবর দেবে অথবা আদালতে সাক্ষ্য দেবে অথবা লোকের কাছে আমার বদনাম করবে। এরপর কেন আমি কুড়িয়ে পাওয়া অর্থ থেকে লাভবান হবো না? এক ব্যক্তি গোপনে তার কাছে কিছু জিনিস আমানত রেখে মারা যায়। ইসলাম তখন তাকে বলে, ‘আমানত বিনষ্ট করো না, যার ধন তার সন্তান-সন্ততির কাছে পৌঁছে দাও’। সে বলে উঠে, কেন? মৃত ব্যক্তির ধন যে আমার কাছে রয়েছে, তার তো কোনো সাক্ষী নেই, তার সন্তান-সন্ততিও এ খবর জানে না। সহজেই যখন আমি কোনো আইনের ভয় না করে, কোনো বদনামীর আশংকা না করে আত্মসাৎ করতে পারি, তখন কেন তা করব না? সোজা কথায় জীবনের পথে প্রত্যেক পদক্ষেপে ইসলাম তাকে এক বিশেষ পথে চলার নির্দেশ দেবে, আর সে তার সম্পূর্ণ বিপরীত পথ অনুসরণ করে চলবে। কেননা ইসলামে প্রত্যেকটি জিনিসের কদর ও মূল্যমান নির্ধারিত হয় আখিরাতের স্থায়ী ফলাফল বিবেচনায়; কিন্তু সে ব্যক্তি প্রত্যেক ব্যাপারে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে এ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের পাওয়ার মত ফলাফলের উপর।

আখিরাতের উপর ঈমান পোষণ ব্যতীত মানুষ যে কেন মুসলমান হতে পারে না, তা এখন সুস্পষ্টরূপেই বুঝতে পারা যায়। মুসলমান হওয়া তো দূরের কথা, প্রকৃতপক্ষে আখিরাতকে অস্বীকার করে মানুষ মনুষ্যত্ব থেকে নেমে গিয়ে পশুত্ব অপেক্ষাও নিম্নতর স্তরে চলে যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.