নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতা এবং সমসাময়িক সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে গঠনমুলক লেখা লেখি ও মুক্ত আলোচনা

ডঃ এম এ আলী

সাধারণ পাঠক ও লেখক

ডঃ এম এ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমন্বিত করে একটি একক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু প্রসঙ্গে

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩০


গতকালের সামুর পাতায় ধর্ম রাষ্ট ও জামাতের রাজনীতি শীর্ষক একটি প্রবন্ধের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে । লেখকের জ্ঞানগর্ব লিখা ও প্রস্তাবনাকে সাধুবাদ জানাতেই হয় । আমরাও মনে করি যে, দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বলতে আলাদা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার জন্য বর্তমান পর্য়ায়ে বিশেষ কোন যৌক্তিকতা নেই।
বছর পাচেক পুর্বে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত একুশে ফেব্রোয়ারী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি ছোট সুধী সমাবেশে এরকম একটি প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। সমাবেশে মাদ্রাসা ঘরানার লোকজনও থাকায় প্রস্তাবটি করার জন্য প্রস্তাবকারীকে যথেষ্ট নাজেহালও হতে হয়েছিল । মাদ্রাসা ঘরানার লোকদের মধ্যে যেহেতু ধর্মীয় আবেগটা একটু বেশী , সেহেতু প্রস্তাবটিকে একটু ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল । বলা হয়েছিল যেহেতু শিক্ষা পাঠ্য ক্রমটিই মুখ্য বিষয়, একই ছাদের নীচে যেখানে আধুনিক বাংলা , ইংরেজী , অংক, সমাজ, বিজ্ঞান ও ধর্ম শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব, সেখানে পৃথক পৃথক নামে ও বিভিন্ন সিসটেমে দুটি সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার যুক্তিকতাটা কি । একই লক্ষ্যে , একই উদ্দেশ্যে প্রয়োজনাধিক সময় ও অর্থ ব্যয় কারীদেরকে ইসলামে ‘কি নামে ডাকা হয়’ তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল । অনেকেই সোজা সাপটা উত্তরটা দিয়েছিলেন, আবার কয়েকজন নাউ জুবিল্লাহ নাউ জুবিল্লাও বলেছিলেন । যাহোক, ইংগীতটা যে সবাই বুঝতে পেরেছিলেন সেটাই যথেষ্ট ।
দেশপ্রেম ঈমানের একটি অংশ হিসাবে স্বিকৃত । দেশের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসাও নি:সন্দেহে ঈমানের একটি অংশ । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্কুল নামটি বিজাতীয় ইংরেজী শব্দ, শুনলেই কারো কারো গায়ে জ্বালা ধরে যায । মাদ্রাসাও একটি বিদেশী শব্দ । (Madrasa (Arabic: مدرسة‎, madrasah, pl. مدارس, madāris, Turkish: Medrese is the Arabic word for any type of educational institution,) ঈমানের ব্যকরণ অনুযায়ী এটাতেও একইরূপ অনুভুতি হওয়ার কথা । মাতৃভাষা বাংলায় প্রামিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্য়ালয় ,উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্ব বিদ্য়ালয় নামেই প্রস্তাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হওয়া সমিচীন। তবে যেহেতু মাদ্রাসা নামটির সাথে ধর্মের অফিসিয়াল ভাষা আরবীর সম্পর্ক আছে, সেহেতু মাদ্রাসা ও স্কুলকে সমম্বিত করে একিভুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম স্কুলের পরিবর্তে মাদ্রাসা রাখলে মনে হয় রক্ষনশীল সমাজের কাছ থেকে একটি বড় বাধা মোকাবেলা করা সহজ হবে। স্কুলের বর্তমান ছাত্র বা স্কুলে যে সমস্ত অভিবাবকেরা তাদের সন্তানদের পড়াশুনার জন্য পাঠান, তারা মাদ্রাসা পড়ুয়া ছা্‌ত্র বা অভিবাবকদের থেকে অনেক বেশী উদার বলেই ধারনা । মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র ও তাদের অভিবাবকেরা একটু বেশীই রক্ষনশীল । তাদের কাছে প্রস্তাবিত ইউনিফাইড শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম স্কুল সাদরে গৃহীত হবেনা বিবেচনায়, নতুন প্রস্তাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম মাদ্রাসা হিসাবে চালু থাকলে তা গ্রহনযোগ্য হবে কিনা তা জনমত যাচাই এর মাধ্যমে দেখা যেতে পারে ।
এটা সত্য যে, আমাদের ছেলেমেয়েরা শত শত বছর ধরে শৈশবে মক্তবে গিয়ে কায়দা-ছিফারা ইত্যাদি পড়েছে । সেভাবেই তারা এখনো ধর্মশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে । অভিভাবকরাো তাদের নিজেদের দায়িত্বেই এই কাজটি করতে পারেন । অভিবাবকেরা অবশ্যই এ কাজটি করবেন তবে তাদের বাচ্চাদেরকে যথাসময়ে সরকার নির্ধারিত নিয়মে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্য়ালয়ে পাঠিয়ৈ । শত শত বছর পুর্বে প্রাথমিক বিদ্যা শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিলনা বলে মক্তব শিক্ষা কার্যক্রম গড়ে উঠেছিল । কিন্ত এখন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বিধায় মক্তব শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে সহজেই প্রাথমিক পাঠশালা কার্যক্রমের সাথে সমন্বিত করা যায় ।
তাই মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে মক্তব পরিচালনার পরিবর্তে পার্ট টাইম শিক্ষক হিসাবে নিকটস্থ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে । স্কুলে আরবীতে কোরান পাঠ সহ ইসলাম ধর্মের উপর একটি পাঠ্যক্রম বর্তমানে তো চালুই আছে। কোরান শরীফ পড়ার জন্য় ও নামাজ পড়ার জন্য যতটুকু আরবী জানার প্রয়োজন তা স্কুলে নিয়মিত এক কি দুটি সেশনেই সম্ভব । খবরের কাগজে দেখলাম ৭ বছরের এক শিশু মাত্র ৩ মাসেই কোরানে হাফেজ হয়েছে । তিন মাসে যদি কোরানে হাফেজ হওয়া যায় তাহলে স্কুলে নিয়মিত একঘন্টার ধর্মীয় ক্লাশে কোরান শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় বিষয়ে অনেক কিছুই শিখানু সম্ভব । কোমলমতি বাচ্চাদেরকে জম্মের পরই তিনটি ভাষায় ( বাংলা আরবী ও ইংরেজী ) বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করাটাকে একটি বড় ধরনের শিশু নির্যাতন ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে । কোমলমতি শিশুদেরকে অল্প বয়সেই লেখা পড়ার জন্য় এত চাপ দেয়ার প্রয়োজনটাই বা কি , জম্মের পর ৭ বছর বয়স থেকে যেখানে নামাজ পড়া ফরজ । ৬ বছর বয়সে বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার পড় এক বছরের মধ্যে কোরান পাঠ শিখে এমনকি এক খতমও দিতে পারবে । রাজধানী ঢাকা সহ দেশের অনেক স্থানেই দেখা যায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাত্র ৩০ দিনেই সহি উচ্চারণে কোরান শরীফ পাঠ শিক্ষা দেয়া হয় । নামাজ পড়ার বয়স ৭ বছর হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত বাচ্চাকে ঘরেই বাবা মা ও আত্মিয়স্বজনেরা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দিতে পারবে । তার ধর্মীয় শিক্ষায় কোন ব্যাঘাত হবেনা ।
যাহোক প্রস্তাবনা গুলো এখনো শুধুমাত্র কিছু বিচ্ছিন্ন ধারনার মধ্যে সিমীত । এ নিয়ে যথাযথ পর্যায়ে বিস্তর আলোচনা ও জনমত গঠন প্রয়োজন । জাতীয় পর্যায়ে গঠনমুলক আলোচনায় একটি গ্রহণযোগ্য ইউনিফাইড শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্ভব হবে বলে আশা করি । এর ফলে রক্ষা পাবে আমাদের কোমলমতি শিশুরা শৈশবেই তাদের পিঠে ও মস্তিস্কের উপর চাপিয়ে দেয়া বিদ্যা অর্জনের গুরুভার থেকে ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩২

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: সরকার গণতান্ত্রিক নীতি-পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিশেষ সনদ অর্জনের জন্য আবশ্যক পাঠ্য/যোগ্যতা নির্ধারন করে দিতে পারে। তবে ধর্মীয় শিক্ষাটা মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়, এখানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া বা বাধা দেওয়া, কোনোটারই যুক্তি নেই। কোনো গোষ্ঠি যদি শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষাভিত্তিক মাদ্রাসা খুলতে চায়, আর অভিভাবকগণ যদি সেখানেই তাঁদের সন্তানদেরকে পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন, তাহলে সরকার বা মোড়ল-মাতব্বরদের তো কোনো অধিকার থাকতে পারে না তাতে বাধা দেওয়ার। 'সমন্বিত শিক্ষার' স্লোগান আধিপত্যবাদীদের জন্যও আকর্ষণীয়, তাই সাবধান থাকা আবশ্যক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.