![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। চুক্তি বাতিলের পক্ষে বিশ্ব ব্যাংক যুক্তি দেখিয়েছে, এই প্রকল্পে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ মিলেছে।
‘দুর্নীতির’ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানানোর পরও যথাযথ সাড়া না মেলায় প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, “দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক কখনো অন্ধ হয়ে থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয় এবং থাকবেও না।”
গত বছরের এপ্রিলে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং আইডিবি ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ তথ্য-প্রমাণ গত সেপ্টেম্বর এবং এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া হয় বলে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন এক দফা তদন্তের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানিয়েছিল, মূল সেতু নির্মাণে প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি। তবে, পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে।
এর আগে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
ওদিকে, পদ্মা সেতুর পরামর্শক হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ উঠলে তা নিয়ে কানাডায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ‘দুর্নীতি’ তদন্তে কানাডা পুলিশের একটি দল গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুসন্ধান করে গেছে।
রয়্যাল কানাডীয় পুলিশ এরইমধ্যে সে দেশে এসএনসি-লাভালিন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কোম্পানির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ এবং পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেফতার করেছে।
দুর্নীতি তদন্তের অংশ হিসেবে এরইমধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী এবং জাতীয় সংসদের হুইপ নূর আলম চৌধুরী লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
অর্থমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণাকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন , “বিজ্ঞপ্তিতে যে ভাষা এবং ভাব ব্যক্ত করা হয়েছে বিশ্বব্যাংক সে রকম বিবৃতি তাদের কোনো সদস্য দেশ সম্বন্ধে দিতে পারে কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এই বিবৃতি আমরা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। আমার মনে হয় এটি বিশ্বব্যাংকের মন্তব্য নয়। “”
যোগাযোগমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : পদ্মা সেতু প্রকল্প বাতিলে বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন “এটা শুধু দুঃখজনকই নয়, রহস্যজনকও। ”
রহস্যজনক বলার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ আসা মানেই দুর্নীতি প্রমাণ হয়ে যাওয়া নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন এ নিয়ে তদন্ত করছে। তার মধ্যেই বিশ্ব ব্যাংকের এই ঘোষণা এল।”
মেনন বললেন ‘কারণ রাজনৈতিক’
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করার ঘোষণাকে ‘রাজনৈতিক কারণ’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মেনন বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা যেতে পারে। তাই বলে অর্থায়ন বন্ধ করে দিতে পারে না। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পরও তা নির্মাণে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের অর্থ দেয়ার সময় অনেক কঠিন শর্ত থাকে। তাদের শর্ত জাতীয় অর্থনীতি এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর প্রভাব পড়ে। সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হলে সে অর্থ না নেয়াই উচিত।’
পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করার ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
আলোচনার পরামর্শ : দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের ঘটনাকে দুঃখজনক বললেও সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান এবং এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
মালয়েশিয়ার অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে আকবর আলী ও মির্জ্জা আজিজ দু’জনেরই মত, “এতে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। যার দায় দেশের মানুষ ও সরকারকে বহন করতে হবে।”
অন্য যে কোনো ব্যবস্থার চেয়ে বিশ্ব ব্যাংকের মতো অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর অর্থে এই সেতু নির্মাণ করা দেশের জন্য মঙ্গল বলে মনে করেন সাবেক সচিব আকবর আলী।
তিনি বলেন, “মালয়েশিয়া বা অন্য যে কেউ পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করলে তারা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিয়োগ করবে। তারা বাণিজ্য করার জন্য আসবে। কীভাবে বেশি মুনাফা করা যায়, সেটাই থাকবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের মানুষের কথা তারা চিন্তা করবে না। তারা দেখবে তাদের লাভ।”
মির্জ্জা আজিজও বলেন, “এখন যদি সরকার মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে, তবে এর ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তখন আর এই সেতুর মালিকানা সরকারের হাতে থাকবে না, বেসরকারি খাতে চলে যাবে। তখন তারা তাদের মুনাফার জন্য টোল আদায় করবে যার মাশুল দিতে হবে দেশের মানুষকে।”
৬ কিলোমিটার পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক গত বছর অর্থায়ন স্থগিত করলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করে সরকার। গত ১০ এপ্রিল মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত ২৮ জুন চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে খসড়া প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া।
মির্জ্জা আজিজ বলেন, “মালয়েশিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে তারা পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে ৩৯ বছর এই সেতুর মালিকানা তাদের হাতে থাকবে। তখন তারা তাদের মতো করে সেতু পরিচালনা করবে। টোল নির্ধারণসহ সবকিছুই থাকবে তাদের হাতে।”
মালয়েশিয়ার অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিও আপত্তি জানিয়ে আসছে। মূল অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক চুক্তি বাতিল করলেও তাদের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়ে আকবর আলী বলেন, “আমি মনে করি এখনো সময় আছে। বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।”
©somewhere in net ltd.