নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লামা সোবহান

আল্লামা সোবহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাঁদরেল আলেম মুহীউদ্দীন খানের নবী তত্ত্ব

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৩

হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী (রহ) মাআরেফুল ক্বোরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় এক জাঁদরেল আলেম অল্লামা মুহীউদ্দীন খান। ইনি তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় নবী সংক্রান্ত বিষয়ের উপর এমন এমন উক্তি করেছেন যা নবীর পরিচয় সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারেন নি। তার অনুবাদে সরাসরী মুল ব্যাখ্যাকারীর মতামতই যদি প্রকাশ করেন তবুও তিনি দায়ী বলে গণ্য হবেন। আর যদি নিজেই ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন তার জন্য তো দায়ী থাকবেনই। আমি তার নবী স¤পর্কীয় কতিপয় আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার অংশ বিশেষ তুলে ধরছি যেমন:

এক: ওয়ামা আরছালনাকা ইল্লা রহমাতাল লিল আলামীন। সুরা আমবিয়া-১০৮।

অনুবাদ: আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।

ব্যাখ্যা: আলামীন শব্দটি আলমের বহু বচন।

মানব জ্বীন, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, জড় পদার্থ সমুহ সবই এর অন্তর্ভূক্ত। রসুলুল্লাহ (স) সবার জন্যেই রহমত স্বরূপ ছিলেন। কেননা, আল্লাহর যিকর ও এবাদত হচ্ছে সমগ্র সৃষ্ট জগতের সত্যিকার রূহ। এ কারণেই যখন পৃথিবী থেকে এই রূহ বিদায় নেবে, তখন পৃথিবীতে আল্লাহ বলার কেউ থাকবেনা। ফলে সব বস্তুর মৃত্যু তথা কেয়ামত এসে যাবে। যখন জানা গেল যে, আল্লাহর যিকর ও এবাদত সব বস্তুও মৃত্যু তথা কেয়ামত এসে যাবে। যখন জানা গেল যে, আল্লাহর যিকর ও এবাদত সব বস্তুর রূহ তখন রসুলুল্লাহ (সা) যে সব বস্তুর জন্যে রহমত স্বরূপ তা আপনা আপনিই ফুঁটে উঠল। পৃ: ৮৯২।

দুই: হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষী সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তার দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ। আহযাবÑ ৪৫-৪৬

ব্যাখ্যা: সিরাজ অর্থ প্রদীপ মুনির জ্যোতির্ময় রসুলুল্লাহর পঞ্চম গুণ ও বৈশিষ্ট্য এই বলা হয়েছে। যে তিনি জ্যোতির্মান প্রদীপ বিশেষ। পৃ: ১০৮৮

তিন: আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ মানূষ তা জানেনা।

ব্যাখ্যা: আলোচ্য আয়াতে রেসালাতের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বের সমগ্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জাতিসমুহের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন। কাফফাতাল লিন্না-ছি শব্দটি মাখী বাক পদ্ধতিতে সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এতে কোন ব্যতিক্রম থাকেনা। বাক্য প্রকরণে শব্দটি ‘হাল’ (ক্রিয়া বিশেষ্য) বিধায় লিন্না-ছি কাফফাহ বলাই সঙ্গত ছিল। কিন্তু রেসালাতের বর্ণনার লক্ষ্যে শব্দটিকে আগে রাখা হয়েছে। পৃ: ১১১২

ঢাকা নগরীর জাঁদরেল আলেম আল্লামা মহী উদ্দীন খান সুরা আমবিয়ার ১০৮ আয়াতে রসুলুল্লাহ (সা)-কে আলামীন শব্দের বিশ্ব জগত অর্থ করে শেষ পযর্ন্ত মানব, জিন, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, জড় পদার্থ সকলের জন্য রহমত বানিয়ে বুঝাতে কি চেয়েছেন তা তিনি নিজেও উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ জাগে। আল্লাহর নবী এসেছেন মানুষের জন্য যেমন সুরা নিছার ৭৯ আয়াতে বলা হয়েছে

“ওয়া আরছালনাকা লিন্না-ছি রসুলা ওয়া কাফা বিল্লা-হি তাহীদা।”

আর আমি পাঠিয়েছি তোমাকে নাছ বা মানুষের জন্য আর আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।

এরপর আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ডেকে বলতে বলেছেন, ইয়া আইয়ুহান নাছু ইন্নী রসুলুল্লাহি ইলাইকুম জামিয়া।Ñ আরাফ ১৫৮

তুমি বল হে মানব, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর পরিপুর্ণ রছুল (হয়ে এসেছি)।

এ আয়াতে ইয়া আইউহান্নাছ হে মানব: কিন্তু জাঁদরেল সাহেব যে বলেছে তিনি জ্বিন জীব জন্তুর জন্য রহমত। এ আয়াতের মত কি আর একটি আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রমান আছে কি যে নাছ শব্দের মত ইয়া আইউ হাল জ্বিন বা ইয়া আইউ হাল হাইওয়ান, তা নেই। অতএব, এ আয়াতের ইলাইকুম দ্বারা আরব জাতি বুঝায়। যাদের নাছ বলা হয় তাদেরকেই সরাসরি তাদেরই ভাষায় ডেকে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এভাবে যেহেতু রসুলুল্লাহ মানুষের জন্য তখন ছুরা আমবিয়ার যে আয়াতে আলামীন ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থও মানুষেরই বহু জাতি বুঝাবে। সমগ্র পৃথিবী জীবজানুয়ার বুঝাবেনা। রসুল যদি প্রাণীকুলের রহমত হন তাহলে তিনি তো হালাল পশু জবাই করে খেয়েছেন অতএব সেই পশু সকলের জন্য রসুলুল্লাহ রহমত হবেন কি করে?

হারাম পশু শুয়োর কুকুর বাঘ ভালুকের জন্যই বা কি ভাবে রসুলুল্লাহ রহমত হতে যাবেন। ইসলামের বুঝ যদি এই-ই হয় তাহলে কল্পনা ধর্মী হওয়ার আর কি বাকি থাকে? ৪০ বছর পূর্তির আগ দিন পর্যন্ত যে নবীর ঈমান বিষয়ে ধারণা ছিলনা কিতাব সম্পর্কে জ্ঞান ছিলনা (সুরা শুরা) তখন কি করে আলামীনের রহমত হন। যে নবী তাঁর নিজের জন্য নামাজের দুই সিজদার মধ্যে ওয়ার হামনী, আমাকে দয়া কর বলে দোআ চেয়েছিলেন তিনি কিভাবে বিশ্বজগতের রহমত হতে পারেন? আর যদি বিশ্বজগতের রহমত হয়েই থাকেন তাহলে আল্লাহর রহমতের আর প্রয়োজন থাকে কি করে?

রহমত পবিত্র কুরআনের একটি নাম হওয়ায় আলামীন অর্থে মানব জাতির রহমত হলে দোষ কোথায়? সুরা বনি ইসরাঈলে রহমাতুল লিল মুঅমিনীন কুরআনকেই বলা হয়েছে। সুরা জাছিয়াতে কুরআনকে হুদা ও রহমত বলা হয়েছে সুরা তাওবার ৬১ আয়াতে রসুলুল্লাহকে ঈমানদারাদের রহমত বলা হয়েছে যেমন, ওয়া রহমাতুল লিল্লাজীনা আমানু মিনকুম। Ñ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তিনি তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। জাঁদরেল আলেম আল্লামা মুহীউদ্দীন এমনি ভাবে সুরা আমবিয়ার আয়াতের পর সুরা মায়িদার আর একটি আয়াতে রসুলুল্লাহকে জোর্তিময় সত্তা হিসেবে অনুবাদ করেছেন।

অর্থাৎ নুর শব্দের দ্বারা রসুল বুঝিয়েছেন যার কারণে পাঠকদের কাছে রসুল মানুষ না জোতির্ময় ফেরেস্তা কোনটা বিশ্বাস করবেন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই জাঁদরেল সাহেব এত বড় কেতা দুরস্ত আলেম হয়ে সুরা সাবার ২৮ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহরও ত্রুটি ধরতে তোয়াক্কা করেননি। তিনি তার অনুবাদে লিখেছেন। যে,

কাফফাতাল লিন্নাছি শব্দটি আরবী বাক পদ্ধতিতে সবকিছুকে অন্তর্ভূক্ত করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এতে কোন ব্যতিক্রম থাকেনা। বাক্য প্রকরণে শব্দটি হাল বিধায় লিন্নাছি কাফফাহ বলাই সঙ্গত ছিল। কিন্তু রেসালতের ব্যাপকতা বর্ণনার লক্ষ্যে শব্দটি কে আগে রাখা হয়েছে। এমনি ভাবে জাদরেল আলেম রসুলে কারীম (সা)-কে বিশ্বের সমগ্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জাতি সমুহের প্রতি প্রেরিত হওয়ার দলীল হিসেবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর আয়াতের ও লোট পালট দেখিয়েছেন।

এ পর্যন্তই যে শেষ তা নয়। এই জাঁদরেল আলেম সুরা আল ইমরানের ৮১ আয়াতের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে নবী তাত্ত্বিক আকিদার সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। তিনি যে অনুবাদ রেখেছেন তাহল এইÑ “আর আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অত:পর তোমাদের নিকট কোন রসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেওয়ার জন্য, তখন সে রসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, আমরা অঙ্গীকার করছি। তিনি বললেন তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমি ও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। জনাব খান সাহেব এ আয়াতের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে,

“কোরআনের এ সামগ্রিক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স) সম্পর্কেও এমনি ধরনের অঙ্গীকার পুর্ববর্তি পয়গম্বরগণের কাছে থেকে নিয়ে থাকবেন। জাঁদরেল আলেম এ উক্তির পরে আল্লামা সুবকীর মত সমর্থন করে বলেছেন।

এ আয়াতে রসুল বলে মুহাম্মদ (স) কে বুঝানো হয়েছে এবং এমন কোন পয়গম্বর অতিবাহিত হননি যিনি স্বীয় উম্মতকে মুহাম্মদ (স) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে ও সাহায্য করতে নির্দেশ দেননি। যদি মহানবী (স) সে সব পয়গম্বরের আমলেই আবির্ভূত হতেন, তবে তিনিই সবার নবী হতেন এবং তারা সবাই তার উম্মত হতেন। এতে বোঝা যায় যে, তিনি শুধু নিজের উম্মতেরই নবী নন নবী গণেরও নবী। Ñপৃ: ১৮৪

বরই আফসোস! যে, আল্লামা মুহীউদ্দীন খান রছুলুল্লাহকে যে নবী গনের নবী বলা স্পর্ধা পেলেন কি করে। যে নবী হযরত ইব্রাহীমের মিল্লাতের অনুসারী সেই ইব্রাহীম (আ)-কেও তো নবী গণের নবী বলার কোনো সুযোগ নেই এবং তিনি কি ভাবে আল্লামা সুবকীর মত অনুযায়ী উল্লেখ্য ৮১ নং আয়াতের ছুম্মা জায়াকুম রছুলুম-এর রছুল নবী মহাম্মদকে কিভাবে সমর্থন করলেন? কারণ ছুরা আহযাবে নবী মহাম্মদও যে প্রতি¯্রুত নবী তা ‘মিনকা’ শব্দ দিয়ে প্রমানিত হয়েছেন। ছুম্মা জায়াকুম রছুলুন এ রছুল তো প্রতিশ্রুতি বদ্ধ নন। অতএব, আল্লামা সুবকীর হয়ত এ কথা জানা ছিল না। কিন্তু জাঁদরেল খান সাহেবের তো জানা উচিৎ ছিল? নবীতাত্ত্বিক এহেন গুজামিল মন্তব্য রেখে মারেফুল ক্বোরআন তফছির খানি যাচাই বাছাই না করে সৌদি সরকারই বা কি করে খরচ বহন করলেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৬

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: মহিউদ্দিন সাহেবের প্রতি আপনার এত গোস্সার কারন কি জানতে পারি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.