নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লামা সোবহান

আল্লামা সোবহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরা?

২১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৬



-আল্লামা সোবহান

মাআরেফুল কুরআন নামের তফছির গ্রন্থটি বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে সমাদৃত হয়ে আছে। পবিত্র কোরআনের এই তফছির গ্রন্থের মুল উর্দু ব্যাখ্যাকারী হলেন পাক ভারত উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ তফছিরকারক আল্লামা মুফতি মহাম্মদ শফি। সৌদি আরবের মহামান্য শাসক খাদেমুল হারামাইনিশ শারিফাইন বাদশা ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজিজের নির্দেশে ও পৃষ্ট পোষকতায় পবিত্র কোরআনের এ তরজমা ও তফছির গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়েছে এবং বাদশার পক্ষ থেকে ওয়াকফ লিল্লাহ হাদিয়া স্বরুপ প্রদত্য বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবীন স্বনামধন্য আলেম ওস্তাজুল আসাতিজাহ লেখক ও সাংবাদিক মওলানা মহীউদ্দীন খান উর্দু ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করে বাংলা ভাষী মুসলমান নরনারীর জন্য একটি মুল্যবান উপহার দিয়েছেন। তফসীরকারকগণ কোরআনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের ধারণা প্রসুত মন্তব্য করে থাকেন। এ ব্যাপারে মাআরেফুল ক্বোরআনের ব্যাখ্যা কারীও কতিপয় আয়াতের প্রকৃত বুঝ (ফাহম) প্রতিষ্ঠা করতে কুন্ঠা বোধ করেন নি।

আমি এই তফছিরে ছুরা আছরা (বনি ইসরাঈলের)-এর ৭০ আয়াতের উপর দৃষ্টি রেখেছি। এ আয়াতে সরল অর্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যায় বিপরীত মন্তব্য দেখেছি। তাই পাঠকদের জন্য এ আয়াতের বুঝটি সঠিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবা।

আয়াতটির অনুবাদ করতে গিয়ে যা খান সাহেব যে অনুবাদ করেছেন ও ঐ অনুবাদের যে ব্যাখ্যা লিখেছেন তা এই। আয়াতটি হল এই-

ওয়ালাকদ কাররামনা মিন বনি আদামা ওয়া হামালনাহুম ফিল বাররি ওয়াল বাহরি ওয়া রযাকনাহুম মিনাত তইয়ি বা-তি ওয়া ফাদ্দালনাহুম আলা কাছিরিম মিম্মান খলাকনা তাফদীলা।

-নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি। তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। পৃ: ৭৮৪।

জনাব খান সাহেব এ আয়াতের শেষোক্ত অংশের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ে যা তুলে ধরেছেন তাতে তার আয়াতের অনুবাদের বিপরীত হয়ে গেছে। তিনি লিখেছেনÑ

“ অধিকাংশ সৃষ্ট জীবের উপর আদম সন্তানের শ্রেষ্ঠত্ব কেন? ৭০ নং আয়াতে অধিকাংশ সৃষ্টজীবের উপর আদম সন্তানদের শ্রেষ্ট উল্লেখিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুটি বিষয় প্রাণিধান যোগ্য। (এক) এই শ্রেষ্ঠ কি গুণাবলী ও কি কারণের উপর নির্ভরশীল? (দুই) অধিকাংশ সৃষ্টজীবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানের কথা বলে কি বোঝানো হয়েছে। প্রথম প্রশ্নের উত্তর এই যে, আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানদের বিভিন্ন দিক দিয়ে এমন সব বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, যে গুলো অন্যান্য সৃষ্ট জীবের মধ্যে নেই। উদাহরণতঃ সূশ্রী চেহারা, সুষম দেহ, সূষম প্রকৃতি এবং অঙ্গঁ সৌষ্ঠব। এগুলো মানুষকে দান করা হয়েছে যা অন্য জীবের মধ্যে নেই। এছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করা হয়েছে। এর সাহায্যে সে সমগ্র উর্ধ্ব জগত ও অধঃজগতকে নিজের কাজে নিয়োজিত করতে পারে।

আল্লাহ তায়ালা তাকে বিভিন্ন সৃষ্ট বস্তুর সংমিশ্রণে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করার শক্তি দিয়েছেন সেগুলো তারা বসবাস চলাফেরা, আহার্চ ও পোশাক পরিচ্ছদে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন আদম সন্তানকে অনেক সৃষ্ট জীবের উপর শ্রেষ্ঠ করার অর্থ কি? এ ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই যে, সমগ্র উর্ধ্ব জগত ও অধ: জগতের সৃষ্ট জীব এবং সমস্ত জীব জন্তুর চাইতেও আদম সন্তান শ্রেষ্ঠ। এমনি ভাবে বুদ্ধি ও চেতনার মানুষ সমতুল্য জিন জাতির চাইতেও আদম সন্তানের শ্রেষ্ঠত্ব সবার কাছে স্বীকৃত। প্রথম শুধু ফেরেস্তাদের ব্যাপারে সুচিন্তিত কথা এই যে, মানুষের মধ্যে যারা সাধারণ ঈমানদার ও সৎ কর্মী, যেমন আওলিয়া দরবেশ তারা সাধারনত ফেরেস্তাদের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। কিন্তু বিশেষ ফেরেস্তা যেমনÑ জিব্রাঈল মিকাইল প্রমুখ তারা সাধারন সৎকর্মী মুমিনের চাইতে শ্রেষ্ঠ। বিশেষ শ্রেনীর মুমিন যেমন পয়গম্বর শ্রেনী তারা বিশেষ শ্রেনীর ফেরেস্তাদের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। পৃ:৭৮৫। মাআরেফুল কুরআনের উর্দ্ধু অনুবাদক ও ব্যাখ্যা, আল্লামা মুফতী মহাম্মদ শাফীর অনুবাদের বাংলা অনুবাদক মওলানা মহিউদ্দীন খান যিনি বর্তমানে শয্যাগত। ইনি যখন তারকা চিহ্ণ দিয়ে যদিও উর্দ্ধু অনুবাদ ও ব্যাখ্যার কোনো মন্তব্য করেননি তখন প্রমানিত হচ্ছে যে খান সাহেবও শাফী সাহেবের সাথে মানুষ সৃষ্টির সেরা কথাটির সঙ্গে একমত পোষন করেছেন। মানুষ সৃষ্টির সেরা একটি ইউনির্ভাসাল ট্রুথ হিসেবে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধ, মুসলমান কেউ বাদ নেই সকলের একই মত মানুষ সৃষ্টির সেরা। আমাদের আলেমগণও একমত এ ব্যাপারে ড: জাকির নায়েক জামায়াত প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবুল আলা মওদুদী হতে শুরু করে দেশের কওমিয়া আলিয়ার হুজুরগণ মাত্রেই মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা বলে থাকেন তখন কোন সাহসেই বা মহিউদ্দীন খান উক্ত আয়াতের কাছীর শব্দের অর্থ অধিকাংশ বলেও ব্যাখ্যায় জীন ফেরেস্তার উর্ধ্বে সৃষ্টি বলতে কুন্ঠাবোধ করেননি।

অধিকাংশের বা সকলব্যাক্তির কথা যদি কুরআনের বিরুদ্ধে যায় তা বিশ্বাসীরা মেনে নিতে পারেননা। কুরআনে অধিকাংশ সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠ বলায় আরবী শব্দ কালিল বা অল্প সৃষ্টি শক্তিতে হোক আর গুনগত হোক মেনে নিতে পারেনা। আর এর প্রমান হাদীস। আশরাফুল মাখলুকাত যদিও আরবী বাক্য কিন্তু আমাদের জানা মতে এ বাক্য হাদীসে নেই এবং ছাহাবাগনের আমলেও ব্যবহৃত হয়নি। কাছীর শব্দ যতই ঘোরানো যায় কাকিল বা অল্পকে মেনে গিয়ে কাছীর বলবৎ থাকবে। অধিক হলেই অল্পাধিক থেকেই যায়। ফলে এ আয়াতে কাছীরা শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অধিকের উপর অল্পাধিক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের উর্ধ্বেই থেকেই যায়।

অনেকে যুক্তি দেন যে ফেরেস্তাগন হজরত কে সিজদা দিয়েছেন তাতেই প্রমানিত হয় মানুষ শ্রেষ্ঠ।

এ কথারও একটি জবাব আছে আর তা হলো সিজদা শব্দের পরে আদমের সাথে লি হরফ ব্যবহৃত হওয়ার জন্য সিজদা আদম (আ) এর কারণে আল্লাহর দিকেই বর্তায়। আর অন্য অর্থে ‘লি’ হরফ (অব্যয়)টি জায়েদা বা অতিরিক্ত হওয়ায়Ñ আদমের ও তার সন্তানদের পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকা বুঝায়। ফলে এ সিজদায় ফেরেস্তাদের থেকে আদম শ্রেষ্ঠ হওয়ার অবকাশ থাকেনা ফেরেস্তারা আদম থেকে যে মর্যাদাশীল তা প্রমান করে শয়তানের ওয়াছওয়াছার শর্ত থেকে। যেহেতু শয়তান আদম ও হাওয়া উভয়কেই বলেছিল তোমরা দুজনেই যদি এই গাছ খাও তাহলে ফেরেস্তা হয়ে যাবে। আদম ও হাওয়া প্রথমেই ফেরেস্তা হবার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। সুরা আরাফের ২০ আয়াতে বলা হয়েছে ইল্লা আন তাকুনা মালাকাইনি- (গাছ খাইলে) তোমরা উভয়েই ফেরেস্তা হয়ে যাবে।

ফালাম্মা জাকাশ শাজারাতা

যখন তারা ঐ গাছ ভক্ষণ করান আর অমনি তাদের কাপড় খুলে গেল।

সুরা আরাফের এ বর্ণনায় প্রমান হয়না যে মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব।

মুফতী শাফি ও বাংলা অনুবাদক এ আয়াতটি ফয়ছালা গ্রহণ না করে এ হেন দশার সৃষ্টি করেছেন।

আমাদের উপর ফেরেস্তাদের বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের শর্ত নয় বরং ফেরেস্তাদের উপর ঈমান আনাই আমাদের মানব জাতির ঈমানের শর্ত। এ সব বুঝে সুঝে এ আয়াতটির তফছির হয়নি বলে ব্যাপারটি জটিল হয়ে গেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.