![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-আল্লামা সোবহান
আজানু লম্বিত শ্মশ্রুধারী গোঁফেশ্বর ও পীঠাবরণী কেশাগুচ্ছের অধিকারী এক সিংহ পুরূষ ফকির মো: আলী শাহ। লালন আখড়ার মহান খাদেম এই শাহ সাাহেবকে সাংবাদিক ফিরোজ এহতেশামের ১৮টি প্রশ্নের জবাব চেয়ে এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। খাদেম সাহেব যিনি চার চারটি আরবী শব্দের নামে পরিচিতিবাহি মুসলিম পরিবারের কৃতি সন্তান যে সব জবাব দিয়েছেন তা বড়ই আপত্তিকর তৌহিদী জনতার জন্য। হয়ত বা গঞ্জিকাপায় থাকা অবস্থায় বেশামাল হয়েই দিক দাঁরা হারিয়ে বলে ফেলেছেন মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আ)-ই খোদা। সাংবাদিক ১০ নং প্রশ্নে বলেছেন বলা হয় যে ঈশ্বর তার আদলে বা রূপে মানুষকে তৈরী করেছে...। এর জবাবে ফকির আলী শাহ বলছেন, “হ্যাঁ তাই তো হইল। আদম তারই (ঈশ্বরের) প্রতিচ্ছবি। তাকে দেখেছেন আপনি? দেখা যায় না? যায় না। তো তারপরও দেখা যায়। কিন্তু তা দেখা যাওয়ার কথা বলা যাবেনা। এ হচ্ছে সাধার জিনিস, গুরু প্রদত্ত জিনিস। এখনই এমনি সাধারণ ধারায় আসেন, যদি আপনি স্বীকার করেন যে, তারই (ঈশ্বরের) প্রতিকৃতি এ আদম, তাহলে আদমই আল্লাহ। সাঁইজি বলছেন, যথা কাল্লা তথা আল্লাহ... কিন্তু সবাই মক্কায় খুঁজতে যায়! মক্কায় গেলে কি পাওয়া যায়!” এখন প্রশ্ন হল ফকির শাহের মতে যদি হযরত আদমই আল্লাহ হন তাহলে যে আল্লাহ আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সে আল্লাহ আর এই মানুষ আল্লাহ ধরলে তো দুই খোদা হয়ে যায়। শুধু এখানেই শেষ নয় ফকির শাহ সাহেব তো নিশ্চয় জানেন তিনি নিজেই বনি আদম বা আদম (আ)-এর বংশ। এখন আদম যদি আল্লাহ হন তাহলে বনি আদম বলতে কোটি কোটি মানুষ এবং তিনি নিজেও আদম আল্লাহর ছেলে হয়ে যায়। এটা কি কোনো ধর্মের কথা? এ ব্যাপারে তৌহিদী জনতার কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং ইত্তেফাক পত্রিকাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম তোফাজ্জল হোসেন এক জন কঠিন তৌহিদপন্থি ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে তার পত্রিকায় এ সাক্ষাৎকার কখনই প্রকাশ পেতো না বলে আমার বিশ্বাস।
লালন আখড়ার খাদেম সাহেব সাংবাদিক এহতেশামের প্রথম প্রশ্নের সিনা ও সফিনার অর্থ করতে গিয়ে বলেছেন সিনা আত্মা আর সফিনা হল বাহ্যিক। সিনা কখনই আত্মা হয় না কারণ এ সিনা হল দৃশ্যবান এবং আত্মা অদৃশ্যমান। সিনা শব্দটি উর্দু বাংলা নয়। সিনার আরবী ছদর বা বুক। অতএব এটি দেহেই একটি বাহ্যিক অঙ্গ যা গলদেশের নি¤েœ ও পেটের উধ্বের্র অঙ্গ। ফকির শাহ কিভাবে একটি বাহিক্য অঙ্গ কে আত্মা বলতে পারলেন? এমনিভাবে এ গোফেঁশ্বর ফকির আলী সাহেব সফিনা শব্দের অর্থ বলেছেন বাহিক্য। সফিনা শব্দটি মূলত আরবী শব্দ যার অর্থ নৌকা যাকে দেহ তরী বলা যায় নৌকায় আর নৌকার রহস্য খুঁজে বেড়ানোর জন্য সফিনার ভেদ সফিনার মর্ম কি তা ফকির সাহেব জানেন এবং এর ভেদ কি হতে পারে তাও তিনি জানেন কারণ একেবার কিছু না জানলে আখড়ার খাদেম হওয়া সম্ভব হত না। কিন্তু পরিস্থিতি অনুসারে অব্যাক্ত তাই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে অর্থ করেছেন। যাহা আছে ভান্ডে অর্থাৎ দেহে তাহা আছে ব্রহ্মান্ডে একথার ব্যাখ্যা চেয়েছেন ফিরোজ এহতেশাম। দেহ যদি ব্রহ্মান্ডের সবকিছুই লুক্কায়িত থাকে তাহলে দেহের মক্কা কোথায়? এ প্রশ্নের জবাবে শাহ সাহেব আবোল তাবোল উত্তর দিয়ে বলেছেন সেটা আপনি অনুসারী অনুরাগী না হলে বুঝতে পারবেন না।
অনুরাগী হলেই দেহের মক্কা দেখা যাবে বলায় শাহ সাহেব আসল তত্ত্ব গোপন করে গেছেন এ জন্য তো অনুরাগী হওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। লালন সাই তো স্পষ্টই বলেছেনÑ
তিল পরিমান জায়গায় উপর উর্ধ শহর এ মানুষ মক্কায়ে।
লালন সাঁই মক্কা শরীফের কাবার বিপরীতে মানুষ মক্কা বানিয়ে শেষে বলেছেন আদি ইমাম সেই মেয়ে।
১৮ টা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ফকির মো. আলী শাহ সত্রেুটিসের নো দাইসেলফ অর্থাৎ নিজকে চিনো কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, যখন নিজেকে মানুষ বিলীন করে দেয়। কিন্তু কোথায় কিভাবে বিলীন করে দেয় তা বলেননি। তার এ কথায় প্রশ্নই বরং বেড়ে যায়। তাহলো বিলীন অবস্থায় মানুষের তো কোনো জ্ঞানই থাকেনা তখন নিজকে চিনতে কেমন করে। চিনতে হলে তো জ্ঞান থাকা চায়। অবশ্য বলেছেন গুরু যেহেতু সর্বেসর্বা তখন মানুষ সবকিছু জানতে পারে। এখন এ গুরু মানুষ না বিধাতা গুরু তিনি লালন সাইয়ের একটা গানের উপর আস্থা রেখে ত্রিত্ববাদের ভাড়ঁ হয়ে বলেছেনÑ যে মুর্শিদ সেই রসুল ইহাতে নাই কোন ভুল খোদাও সে হয়।
এখানে আলী শাহ শেষ পর্যন্ত ত্রিত্ববাদের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। সাক্ষাৎকারের শিরোনাম মানুষের ভিতরে অসীম মানুষ বাস করে তারই প্রতিধ্বনী। লালন সাঁইকে অনেকে শাহ বলে লাইনচ্যুৎ হয়ে পড়েছেন। যেমন ফকির মো: নিজেকে শাহ নাম সংযুক্ত করেছেন। শাহ তো ফকীর তত্ত্বের ভাষাই নয়। ফকির তত্ত্বের শব্দ হবে সাইঁ। এ সাঁই গোসাঁই হতে সাঁই। তিনি র্মুশিদ রসুল ও খোদা তিন সত্তাকে একত্রিত করে দেখাচ্ছেন। তার এ বক্তব্যে নিজেকে শেষ পর্যন্ত ত্রিত্ববাদি মোশরেক হিসেবে চিহ্ণিত হচ্ছেন ।
ঈশ্বরের সাথে বিলীন হওয়া কি? এ প্রশ্নের ঁজবাবে ফকির মো আলী শাহ মুসলমানী নামের মানুষটি দুই খোদার অস্তিত্ব স্বীকার করে বলছেন ওই খোদাই এই খোদা। তিনি পরবর্তি উক্তিতে বলছেন, ঠিক মানুষই খোদা না, মুর্শিদ খোদা যার যার মুর্শিদ তার তার খোদা।
অত:পর এহতেশাম আর একটি প্রশ্ন করছেন যে, লালন মুলত কি বলতে চান? এর জবাবে তিনি বলেন, মানবতার ধর্ম উনার দর্শনের থিম হচ্ছে একজন মানুষের ভিতরে এক অসীম মানুষ বাস করে। নেই অসীম মানুষটার নৈকট্য পেতে হলে এই মানুষটিকে সাধন করতে হবে।
তাহলে এ মহাজনের কথায় তো আমরা বুঝতে পারছি যে, মানুষের সসীম দেহে অসীম মানুষ অর্থাৎ মানুষ খোদা বসবাস করছে। অথার্ৎ শাহ সাহেব মানুষকে খোদা বলছেন যেহেতু তিনি আদমের প্রতিকৃতি আর সসীম মানুষের মধ্যে অসীম মানুষটি অর্থাৎ লক্ষ কোটি মানুষের মধ্যে লক্ষ কোটি খোদা বিরাজ করার অপবিশ্বাস সৃষ্টি হচ্ছে (নাউজুবিল্লাহ)। কুরআন সুন্নাহের দাবিদার তৌহিদী জনতার এই বাতিল তত্ত্ববিদ শাহ ফকিরদের হতে সাবধান হওয়া একান্ত কর্তব্য।
কোনো মুসলিম পরিবারের সন্তান এই ফকিরের মত যদি পীর ও মুর্শীদকে খোদা বলে থাকেন কেউ যদি মানুষ খোদা ও অসীম খোদা মেনে দুই খোদার বিশ্বাসী হন তাহলে তাকে মুসলিম উম্মাহর বাইরের এক জন মোশরেক মানুষই বলা হবে। এই শাহ ফকির লালনের গান গেয়ে জীবন যাপন করে থাকেন, যিনি সরাসরি আদমকে আল্লাহ ভেবে থাকেন এবং আল্লাহকে আদম ছুরত ভেবে থাকেন- এই শেরেকী বিশ্বাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তৌবার দরজা এখনো খোলা আছে। কারণ যে বা যারা আদম কে আল্লাহ বলে বিশ্বাস করে সে মুসলিম হতে পারেনা।
সাংবাদিক ফিরোজ এই সাক্ষাৎকারটি ১৮টি প্রশ্নের জবাব প্রকাশ হওয়ায় ফকিরি তত্ত্বের অনেক গোপন রহস্য প্রকাশ হওয়ায় পাঠকদের অনেক অজানা বিষয় জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য সাংবাদিক সাহেবকে ধন্যবাদ জানানো যাচ্ছে।
ফকির মো আলী শাহ লালন আখড়ার প্রধান খাদেম ইসলামী আকিদার বিরূদ্ধে প্রশ্নাবলির যে সমস্ত উক্তি করেছেন তার জন্য কোনো মুসলিম নর নারীর নীরব থাকা সম্ভব নয়। যদি ফকির সাহেব উন্মুক্ত জনতার সমাবেশে তার বিভ্রান্তিকর উক্তির জন্য ক্ষমা না চান তাহলে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত সৃষ্টির ধারা তার বিচার হওয়ারও প্রয়োজন মনে করা হবে। তিনি যে সমস্ত উক্তি তার সাক্ষাৎকারে ব্যাক্ত করেছেন তা সবই আপত্তিকর। যেমনঃ
এক- সিনার ভেদ সিনায় সিনায়, সফিনার ভেদ সফিনায়। লালনের গানের এ উক্তির সঠিক অর্থ না করে ফকির শাহ বলেছেন সিনা অর্থ আত্মা বা অন্তর, এ অর্থটি ভুল। সিনা উর্দু ভাষা আরবী ছদ্র। ছদ্র আর আত্মা এক নয়। ছদ্রের মধ্যে থাকে নফছ। কোরআনে বলা হয়েছে ওয়ালাকিন তাঅমাল কুলুবুল্লাতী ফিছ ছুদুর। কলব (অন্তর চক্ষু) অন্ধ হয়ে থাকে, যা থাকে সিনার মধ্যে হজ্জÑ৪৬-এর আয়াতে অন্তর (কলব) ও সিনা (বুক ছদর) পৃথক সত্তা। ফকির সাহেব এ আয়াতের খবর না রেখে সিনা বা ছদরকেই আত্মা বলে সত্যের অপলাপ করেছেন, অর্থাৎ কুরআনের বিপরীত অর্থ করেছেন। সফিনা শব্দের অর্থ নৌকা এটিও আরবী শব্দ। ফকির সাহেবের এ অর্থকরণও সঠিক নয় কেননা তিনি সফিনার অর্থ নৌকা না বলে বাহ্যিক বলেছেন। (প্রশ্ন:১)।
৪নং প্রশ্নের জবাবে ফকির আলী শাহ মক্কার কাবার বিপরীতে দেহ কাবা থাকা স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ কাবার বিরুদ্ধে কাবা প্রতিষ্ঠা করা। এটিও সত্যের অপলাপ ইসলাম বিরুদ্ধ। কাবার বিরুদ্ধে কাবা খাড়া করা মানে কাবাঘরের দিকে মুখ না ফিরিয়ে গুরু কাবা মুখী হয়ে গুরুকে সিজদা করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। যা একেবারেই শিরক। ৮নং প্রশ্নের জবাবে বলেছেনÑ “মানুষই না, মুর্শিদ খোদা যার যার মুরর্শিদ তার তার খোদা।” তার এ উক্তিতে শাহ ফকির মানুষ গুরুকে সরাসরী খোদা বলে স্বীকতার করেছেন। তিনি ৯ নং প্রশ্নের জবাবে বলেছেন আপনার ভিতরে এক ঈশ্বর তো আছেই। যথা কাল্লা তথা আল্লাহ সবাই মক্কায় খুজতে যায় মক্কায় গেলে কি পাওয়া যায়। এ উক্তিতে তিনি মুসলমানদের কাবাকে তাচ্ছিল্য করেছেন।
নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত এ জন্য পাঁচ বার আযান দেয়া শরিয়তের বিধান। ফকির আলী শাহ দুই ওয়াক্ত নামাজের সন্ধান পেয়েছেন তিনি সাংবাদিক ফিরোজ এহতেশামের ১৪ নং প্রশ্নের জবাবে বলেছেনÑ
আমরা নামাজ পড়ি কিন্তু আমরা পাঁচবার পড়িনা দুইবার পড়ি সকাল ও সন্ধায়। কপালে কালো করার নামাজ নয় এটা দায়েমী নামাজ। ফকির কিভাবে দায়েমী নামাজ পড়েন যে দায়েম কথাটি কোরআনেই এসেছে আর এ দায়েমী নামাজ পড়তে হলেও আযান দিয়েই পড়তে হয়। মোয়াজ্জিন রাখতে হয়। এ পর্যন্ত দেখা যায়নি ঐ লালনের আখড়ায় দুই ওয়াক্ত দায়েমী নামাজে আযান হয়না। কোন মুয়জ্জিনও রাখা হয়না। এতে বোঝা যায় ইসলামী শরিয়তের নামাজ পড়া হয় না। লালন বলেছেন পড়গা নামাজ ভেদ বুঝে সুঝে করযখ নিরীখ না হলে ঠিক তোর নামাজ হয় মিছে। ফকির আখড়ার খাদেম হয়ে যে দায়েমী নামাজ দু ওয়াক্ত পড়েন তা বরযখি নামাজই পড়ে থাকেন। শরিয়তে পাচ ওয়াক্ত নামাজ যে রছুল (ছ) ও তার ছাহাবী গণ এবং বিশ্বের শত কোটি মুসলমানেরা পড়ে আসছেন ইনি নিজের নামে মহাম্মদ সংযুক্ত করে নিজেই আইন জারী করে দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ার স্পর্ধা রাখেন কি করে?
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫০
নিরীহ বালক বলেছেন: ধৈর্য হইলো না পড়ার । পাগলদের কথায় কান না দেয়াই ভালো -_-