![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সফটওয়্যার ইঙ্গিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করছি।আর শখের বশে মাঝে মাঝে লিখি।
শপিং মলের বাইরের সাইডের সিঁড়িতে বসে বাদাম চিবুচ্ছি। ঠিক সামনে রাস্তার উপরে এক লোক দিল্লি কা লাড্ডু বিক্রি করছে।বানানোর পদ্ধতি আর কাঠিতে সেই গোলা তুলে দেওয়াটা যেন এক অন্যরকম ম্যাজিক এর মত মনে হয়।
ছোটকালে আমাদের পাড়ায় এক বুড়ো দাদু দিল্লি কা লাড্ডু বিক্রি করতে আসত।তার পরনে থাকত পাঞ্জাবি মাথায় থাকত লম্বা টুপি আর দাড়ি সবমিলিয়ে দিল্লি কা লাড্ডু আর সে যেন একাকার হয়ে যেত।তাকে লাড্ডু দাদু বলে ডাকতাম।
খেয়াল করে দেখলাম একটা ছেলে পরনে ময়লা হাফপ্যান্ট এসে খুব মনোযোগ সহকারে দিল্লি কা লাড্ডু বানানো দেখছে।বানানো দেখা এবং পাশের মানুষের খাওয়ার দৃশ্য খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে।দেখছে আর ছেলেটার মুখের রং পরিবরতন হচ্ছে।কিছুখন পরে ছেলেটি সেখান থেকে চলে গেলে আমারও মনোযোগ পরিবর্তন হল।
তারপর দিন আমি একই জায়গায় বসে আছি।লাড্ডুর দোকানের সামনে দেখি আবার সেই ছেলে দাড়িয়ে আছে,দাড়িয়ে লাড্ডু বানানো আর মানুষের লাড্ডু খাওয়া দেখছে মনে হয় যেন কেউ লাড্ডু খাচ্ছে এটা দেখেই সে খুব শান্তি পাচ্ছে।
কি মনে হল উঠে দাঁড়ালাম লাড্ডু ওয়ালাকে বললাম আমাকে একটা দেন ত।আমার জন্য গোলা বানানো টা ও খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে।কাঠিটা দেওয়ার পরে ছেলেটিকে বললাম কিরে ব্যাটা খাবি নাকি?
ছেলেটি অভিভুত আমি ওর দিকে কাঠিটা এগিয়ে দিলাম ও কখনও চিন্তাও করেনি যে জিনিস সে এত মনোযোগ সহকারে দেখছে তাকে সে জিনিস কেউ অফার ও করতে পারে।খাওয়ার পর বললাম আর একটা খাবি মাথা নেড়ে না বলল।
আমি বললাম কালকে এই সময় আছিস।লাড্ডু বিক্রেতার কথায় সম্বিত ফিরে পেলাম ভাই আপনার জন্য আর একটা বানাব বললাম বানাও।দিল্লি কা লাড্ডু মুখে দিতেই শেষ।খুব ভাল লাগছে সাথে পুরাতন অনেক কথায় ভেসে আসছে মনের পর্দায়।
রথের মেলায় বাবার হাত ধরে সবসময় মেলার ভেতরে সরব হয়ে উঠতাম বিশেষ করে দিল্লি কা লাড্ডু বা সন্দেশের জন্য।আমার প্রত্যেকটি আবদার খুশি মনেই পূরণ করতেন তিনি।আর আমাকে আদর করে বুড়া বলে ডাকতেন।
জন্মের সময় আমি নাকি বেশ কিছু সাদা চুল নিয়ে জন্ম নিয়েছিলাম তাই বাবার আদরের ডাক ছিল বুড়া।ভালই লাগত শুনতে।বাবা এখন আমাকে আমার ডাক নাম ধরে ডাকে।কিন্তু আমি ঐ নামটাকে খুব মিস করি।
আমার ছোট থেকে ছোট এবং বড় যে কোন আবদার তিনি অবশ্যই অবশ্যই পূরণ করেন এখনও।যখন কোন সমস্যায় পড়ি তখন পথপ্রদর্শক এর মত এখন পথ দেখান।বছর দুয়েক আগে বাবার সাথে মেলায় গিয়েছিলাম।
যদিও মায়ের জন্য কিছু সংসারের ব্যাবহার এর জন্য ছোটখাট জিনিস কিনতে।হঠাৎ বাবা বলল মোটরসাইকেল রেস হচ্ছে দেখবি।ছোটকালে বাবার কাধে চড়ে মোটরসাইকেল রেস দেখছি আজ বাবার এই কথায় সেই পুরনো বাবাকে দেখতে পেলাম যেন।
স্মিতভাবে হাসলাম বললাম চলেন দেখে আছি।এক সাথে দুইজন দাড়িয়ে রেসের কলাকৌশল দেখছিলাম।বাবার মুখের যে হাসি আর দ্রতি তা প্রকাশ করার ভাষা আমার নাই।তিনি খুশি কারণ তার বুড়ো তার সাথে আবার মেলায় এসেছে আবদার করে যে জিনিসগুলো দেখতে চাইত সেগুলা সব দেখছে।
বাবা আনন্দিত আসার সময় বললাম বাবা চিনির মিছরি খাব।খুবই আনন্দের সাথে কিনলেন এক সাথে খেতে খেতে মায়ের জন্য কিছু জিনিস হাতে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।কিন্তু সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল হয়ে ফুটে আছে।
আমার জন্য যে ভালবাসা তার চোখে মুখে ফুটে উঠে তা দেখতে পারা এবং স্রষ্টার কাছে ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন কিছু বলার নাই।আমাকে যেদিন তিনি প্রথম বাড়ি ছেড়ে বাইরে যাবার উদ্দেশে তুলে দিতে এলেন তখন তার অশ্রুসজল চোখ আর সেটা লুকাবার অব্যর্থ চেষ্টা যেটা আমার চোখের কোনায়ও জলের ফোটাকে নিয়ে এসেছিল সেই ক্ষণকে এখনও মনে পরে।
এই পৃথিবীর আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আমার বাবা।বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসি।
কিন্ত মুখ ফুটে কখনই বলি নাই।কারন এই ভালোবাসা প্রকাশের কোন উপুযুক্ত ভাষা আমার জানা নাই।
©somewhere in net ltd.