নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক প্রকাশিত।

শূন্যতার প্রাপ্তি

মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক বাঙ্ময়। প্রকাশিত।

শূন্যতার প্রাপ্তি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সে রাতে কার সাথে কথা হয়েছিলো আমার?

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:১৯

সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। সেদিন খুব বৃষ্টি ছিলো। দিনের বেলাতেই অন্ধকার হয়ে এলো। পুরো আকাশ মেঘে ঢাকা। বাসায় কেউ নেই। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে একা একা ঘরে বসে আছি। কারেন্ট ও চলে গেলো। এদিক সেদিক হাতরিয়েও গ্যাস লাইট টা পেলাম না। ওটাতে টর্চ লাইটের মতো আলো জ্বালানোর সুবিধে ছিলো। আমার রুমের ঠিক দু-রুম পরে বা-দিকে রান্না ঘর। বারান্দা দিয়ে যেতে হয়। বারান্দার অর্ধেক টার বেশী অংশ বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। সাড়ে তিন মাসের মেয়েটাকে নিয়ে ওদিক দিয়ে যাওয়াটা সুবিধের না। বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলে ঠান্ডা লেগে যাবার সম্ভাবনা আছে। বড় অসময়ের বৃষ্টি। আবার এদিকে ক্রমেই অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে। বিজলী চমকাচ্ছে।

শাশুড়ি মা ডাক্তারের কাছে গেছে। মনে মনে রমিছা খালার প্রতি বিরক্ত হচ্ছিলাম। জানেই যে বাচ্চাটাকে নিয়ে একা বাসায়। এসময় একটু বেশীক্ষণ থেকে গেলো কি হতো?মেয়েকে কোলে নিয়ে খাটের উপর বসে রইলাম। দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। উঠোনে কেউ একজন এসেছে মনে হচ্ছে। হয়তো আম কুড়াতেই এসেছে। উঠোনে মস্ত বড় আমের গাছ। আর বাড়ির পিছনে তো গাছ-গাছড়ার অভাবই নেই। যেই হোক না কেনো তাকে দিয়ে ঘরের আলোর ব্যবস্থা তো অন্তত করানো যাবে। জোরে বললাম,
-কে ওখানে?
-আমি।
-আমি কে? উর্মেলী?
-হু
-ওহ, এদিকে আয় তো একটু।
জড়োসরো হয়ে কাছে এলো। চাদর দিয়ে পুরো শরীর ঢাকা। মুখের অংশ অল্প একটু হয়তো বের হয়ে আছে। এতো কম আলোতে ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা। পেডিকোটের মতো কিছু একটা পড়েছে, পায়ের পাতা অবদি ঢাকা। মনে হচ্ছে পৌষের শীত যেনো তাকে ভর করেছে। এদিকে বৃষ্টিতে সারা শরীর ভিজে একাকার তার। ঘরের দরজার সামনে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বললাম,
-রান্না ঘরে চুলোর পাশেই মেছ (দিয়াশলাই) আছে। থালাবাসন রাখার তাক টার উপরে মোমবাতি আছে। ধরিয়ে এনে দেতো।
-আমি কি খুঁজে পাবো আলো?
-আলো কিভাবে পাবি। আগে মেছ আর মোমবাতিটা বের কর।
-আমি ওখানে যাবোনা।
-কেনো?
কথা না বলে চুপ হয়ে রইলো। একেবারে মাথা নিচু। বিরক্তকর।

মেয়াটা এবার কান্না শুরু করে দিলো। এইটা সেইটা করে কান্না থামালাম। তবুও কেমন যেনো করছে। কিছুক্ষন পর আবার বললাম,
-যা না, বাচ্চা টা কে রেখে যেতে পারছিনা যে।
-বাচ্চা কে আমার কাছে দিন।
-তোর শরীর তো ভিজা।
-কিছুই হবেনা। দিন আমার কাছে।
-এতো কথা বলিস কেনো? বললাম না তোর শরীর ভিজা।

ওর একঘেয়েমি আর ভালো লাগছেনা। বিরক্ত লাগছে। মেয়েটা ঘুমিয়েছে। বললাম,
-এখানে এসে মেয়েটার পাশে দাড়া, আমি আলো জ্বালিয়ে নিয়ে আসি।
মেয়েকে শুইয়ে দিবো, অমনি শাশুড়ির গলা।
-বৌ, ও বৌ, বাড়ি ঘর অন্ধকার করে রাখছে। একটু যে আলো জ্বালাবে তা নয়। কই থাকো?
-মা, এইতো আমি এই ঘরে।
-মোবাইল টাও বন্ধ করে রাখছো। কল দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেলাম। ভিজে তো গোসল হয়ে যাচ্ছে, গেট টা খুলো।
-গেট কি বন্ধ নাকি? গেট তো খুলাই।
-আমি কি তোমার সাথে ইয়ার কি করতেছি।
-আচ্ছা মা, ঘরের পেছন দরজায় আসেন।
মেয়ে কে কোলে নিয়েই ঘরের ভিতর দিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। শাশুড়ি মায়ের হাতে টর্চ লাইট জ্বালানো। শাশুড়ি মা আর উর্মেলী ঘরে ঢুকলো। মনে পড়লো, উর্মেলী তো শাশুড়ি মায়ের সাথেই গিয়েছিলো ডাক্তারের ওখানে। ভয়ে শিউরে উঠলাম। তাহলে আমার রুমের দরজায় কে? বাড়ির গেট ও তো বন্ধই ছিলো। টর্চ টা নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার রুমের দরজায় গেলাম। কই? কেউই তো নেই। তবে কার সাথে এতোক্ষন কথা বললাম?

কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু মেয়েটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.