![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক বাঙ্ময়। প্রকাশিত।
১)
এলাকার ছেলে ঈব্রাহীম। তার যখন বিয়ের বয়স তখন আমার জন্মই হয়নি। এখন রাজনীতি করে, সুদর্শন। পারিবারিক সুত্রে তার সাথে আমাদের যোগাযোগ একটু বেশিই হতো। আমার কিশোরী বয়সটা থেকেই আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু কোন ভাবেই বুঝতে দেইনি কখনো। ভালো লাগতো খুব। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন আমাদের পরিবারের খুব খারাপ অবস্থা। তখন ইব্রাহীম আফসোস করে আমার মামীর কাছে বলেছিলো "আমি যদি অবিবাহিত হতাম তবে এই মুহুর্তে জিনাত কে বিয়ে করতাম। জিনাতের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। বুকের ভেতর কেমন জানি লাগে।" আর এই কথাটা আমি অনেক পরে শুনেছি।
চার পাঁচ বছর যাবৎ উনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে। মাঝে মাঝে হাই/হ্যালো, কেমন আছো/আছেন? এর বেশি কেউ কিছুই বলতে পারিনি। হঠাৎ একদিন মেসেজ দিলো "আমার খুব ইচ্ছে তোমায় নিয়ে একটা সম্পুর্ন দিন মোটর বাইকে ঘুরে বেড়াবো, কোথায় যাবো জানিনা, যতোদুর ইচ্ছে, যেদিকে ইচ্ছে, একটা বড় ভ্যানিটিব্যাগ নিবে, বাইকে তুমি বসার পর আমাদের মাঝে ওই ভ্যানিটিব্যাগ টা রাখবে। আমার সাথে কথা না বললেও হবে। নির্বাক হয়েই ঘুরবো। যমুনার দিকে যাবো। সাথে মোবাইল নিবো না কেউ। ইচ্ছাকৃত হারিয়ে যাবো।" কিছু বলিনি সেদিন। কিন্তু মনে মনে বলেছিলাম "যাবো একদিন।" এরপর অনেকদিন আর কথা হয়নি।
কিছুদিন আগে আমি ঢাকা থেকে ফিরছিলাম বাড়িতে। ছুটির সময়গুলোতে টাঙাইল রোডটায় প্রচন্ড জ্যাম হয়। উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো এই রাস্তাতেই যায়। সেবার এলাকায় পৌঁছাতে ভোর হয়ে গিয়েছিলো। ফজরের আজানের খানিক পর, ঠিক আলোও ফুটেনি, আবার আধারও নয়। বাস ষ্ট্যান্ড এ বাস থামলো। উপজেলা বাস ষ্ট্যান্ড। শীতের রাত। বাস থেকেই দেখতে পেলাম একটি চায়ের দোকান খোলা আর সামনে দুটো রিক্সাওয়ালা দাঁড়ানো। এছাড়া কেউ নেই। নামলাম বাস থেকে। বাস চলে গেলো। রাস্তার ওপারে ইব্রাহীম দাঁড়িয়ে। এভাবে আকস্মিক ভাবে আমাদের দেখা হয়ে যাবে তা আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি।
২০০৩ সালের পর এই প্রথম দেখা। বুঝতে পারলাম না শুধু লুঙ্গী পড়েই খালি গায়ে রাস্তায় কেনো বের হয়েছে এসময়। এই আলো আর আধারের আবছা আলোতেও ওর বুকের পশমগুলি ঠিক দেখছিলাম। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়েই ছিলাম রাস্তার এপার থেকে ওপার। সে নিজেই এক রিক্সাওয়ালাকে ডেকে বললো "পাঠান বাড়িতে রেখে আয়।" রিক্সা সামনে এসে দাড়াঁলো। চলে এলাম। ফেসবুক খুলে তার প্রোফাইলে ঢুকেই দেখি ষ্ট্যাটাস দিছে "ভোররাত, ঘুম ভেঙ্গে গেলো। খুব অস্থির লাগছে। কিছুতেই শুয়ে থাকতে পারছিনা। ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বাস এলো। বাস একটু থেমে চলে গেলো। রেখে গেলো আমার কল্পনার মানবী কে। মুহুর্তেই সব অস্থিরতা উধাও। এমন অস্থিরতা প্রতিদিন চাই।"
২)
গোসল সেরে নেভি ব্লু শাড়িতে মেজেন্টা রঙের কাজকরা শাড়ি টা পরছিলাম সেদিন। নানাভাই উঠানে এসে ডাকলো,
-কিরে, কইরে তোরা? বাড়ির সবাই কই?
-ঘরেই। রেডি হচ্ছি। ঢাকায় যাবে। (ঘর থেকেই জোরে জোরে বললাম।)
-আমিও তো যাবো, কিসে যাবি?
-ট্রেনে।
-আমিও ট্রেনেই যাবো। রেডি হয়ে আয়। একসাথে বের হবো।
-ঠিক আছে।
৩.৪০ মিনিটে ট্রেন। ৩.২০ মিনিটে নানাভাই নিজেই এসে হাজির। বের হয়ে জহিরুল কে দিয়ে ব্যাগ গুলি ষ্টেশনে পাঠিয়ে দিয়ে নানাভাইয়ের বাইকের পিছনে বসলাম। বাইকে ঘোরার মজাই আলাদা। তাও আবার নানা নাতী। পাখির মতো উড়ে উড়ে যাচ্ছিলাম। ভাবই আলাদা।
উপজেলা ডাকবাংলোর সামনে গিয়ে দেখি উল্টো দিক থেকে বাইকে করে ইব্রাহীম আসছে। দুই বাইক দুদিকে ক্রস করে চলে গেলো। ষ্টেশনে গিয়ে আমি আর নানা ভাই ট্রেনের অপেক্ষায়। দুই ষ্টেশন পার হয়ে ফেসবুক খুলে দেখি ইব্রাহীমের পোষ্ট।
"কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়াই রওনা হলাম ঢাকার পথে। বাইক টা ষ্টেশনে ফেলে এসেছি। #মঞ্জু বাইক টা বাসায় পৌঁছে দিও। পরের ট্রেনেই ফিরে আসবো।"
ষ্ট্যাটাসে লাভ রিয়েকশ্যান দিলাম। কিন্তু সেদিন আর তাকে দেখিনি। সে দেখেছিলো কিনা জানিনা। এরপর একেবারে সেই সুপারমুনের রাতে ২.৩০ মিনিটের দিকে ফ্যাসবুকে চ্যাটিং হলো। চ্যাটিং এ আমাদের সবসময় আবোলতাবোল কথা হয়। যার কোনই ভিত্তি নেই। আর বাস্তবে কথা হয়না কয়েক বছর।
(এটাও কি প্রেম? ভুল সময়ের প্রেম? যদি তাই হয় তবে এমন প্রেমই মধুর। কারন এ শুধুই চোখের দেখা বা দু'চার কথার আদান প্রদান।)
©somewhere in net ltd.