নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক প্রকাশিত।

শূন্যতার প্রাপ্তি

মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক বাঙ্ময়। প্রকাশিত।

শূন্যতার প্রাপ্তি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুই আমার ছোট বোন, বড় আদরের ছোট বোন।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১০


যখন আমি খুব ছোট্টটি, হাফপ্যান্ট পড়ে দৌড়াতে শিখেছি তখন থেকেই মা এর চেয়ে খালামনির কোলই বেশীই পছন্দ করি। আমার মায়ের কোলে আবার ছোট একটা ভাই এসেছে। জানিনে সেই হিংসে করে মায়ের কাছে যাইনি, নাকি খালামনিকেই বেশী পছন্দ করতাম। খালামনির বান্ধবী ছিলো সাবিত্রী দিদি। ওদের দুজনের কাছেই আমার সারাটা দিন কাটতো। খুব আবছা আবছা মনে পড়ে সাবিত্রী দিদি আমাকে তিলক দিয়ে সাজাতো আর খালামনি তার উড়না দিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দিতো। খালামনিকে আম্মু ডাকতাম।
খালামনির এসএসসি পরীক্ষার পর ছুটিতে ময়মনসিংহ যাবে (আমার নানুবাড়ি)। মাকে ছেড়ে খালামনির সাথে চলে গেলাম। তখন তিন বা সাড়ে তিন বছর হবে আমার। শ্যামলা বর্নের খালামনি চেহারায় অত্যাধিক সুন্দরী ছিলো। ট্রেনে জানালার পাশে আমাকে বসিয়ে পাশের সীটে খালামনি। টিটি এলো টিকিট চেক করতে। টিকিট দেখতে দেখতে খালামনিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো,
:- বাবুটা আপনার?
:- আমার ভাগ্নী।
:- খুব মিষ্টি। বিয়ে হয়েছে আপনার?
:- না।
টিটি পাশের সীটে চলে গেলো। একজন হকার আসতেই খালামনিকে বলেছিলাম "আম্মু আম্মু, মিমি চুইংগাম কিনে দাও। " টিটি লোকটা পাশ ফিরে তাকিয়ে বলেছিলো "আজকালকার মেয়েরা বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত সাজতে পছন্দ করে।" খালামনি টিটি আর অন্যান্য যাত্রীদের মনে ঠিক কতোটা অপমান বোধ করেছিলো সেদিন না বুঝলেও আজ বুঝি।
যখন স্কুলে ভর্তি করানো হলো আমায় তার কয়েকদিন পরেই খালামনির বিয়ে হয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক বাড়ি পরেই। মাঝখানে বিশাল পুকুর। পুকুরের এপার থেকে ওপারে খালামনির বাড়ি দেখা যেত। আমি সারাদিন খালামনির কাছেই থাকতাম। ঘুমাবার আগে সাবিত্রী দিদি আমাকে মার কাছে নিয়ে আসতো। বছর দুয়েক পর থেকে মা আর আমাকে যেতে দিতোনা। তবুও ফাঁক ফোকর পেলেই পালিয়ে চলে যেতাম। হঠাৎ করে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখতাম খালামনি বাসায় নেই। আমাকে রেখেই কোথায় কোথায় বেড়াতে গেছে। কষ্ট পেতাম খুব। কেঁদে কেটে চোখ ফুলাতাম। খালামনি এসে শুনলে আবার আমায় নিয়ে যেতো। আমার যখন তেরো বছর বয়স তখন খালামনির মেয়ে সন্তান হলো। বিয়ের নয় বছর পর তাদের সন্তান। সবার মনে কতো আনন্দ। কিন্তু আমার আনন্দের পাশাপাশি কষ্টও হয়েছে ভীষণ। আমার প্রতি আদর টা কমে গেলো বুঝি। সবাই মার্জি কে আদর করে। সবাই বলতে শুরু করলো এবার থেকে মার্জি মা ডাকবে, আর তুমি খালামনি ডাকবে। আমার কান্না পেতো। পারতাম না। প্রথম প্রথম লজ্জা পেতাম। আম্মু বলেই ডাকতাম। ধীরে ধীরে কিভাবে যেনো আম্মু থেকে খালামনি হয়ে গেলো।
মার্জি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বোন আমার। তোর জন্য একসময় কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু তুই ও ঠিক হৃদয়ের মাঝখান টায় আছিস। তুই শুধু আমার বোন না রে, একজন মা যেমন তার সন্তান কে আগলে রাখে, আমিও তোকে সেভাবেই বুকে আগলে রাখি। তোর সাফল্যে আমার ঠোঁটে হাসি না এলেও, দু'ফোটা জল চোখের কোণ গড়িয়ে পড়বে আপনা আপনিই। দেখে নিস তুই..........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.