![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক বাঙ্ময়। প্রকাশিত।
বিয়ের আগের রাতে খালামনিকে মিথ্যে বলে ডেকে নিয়ে গেলো মনির নামের একজন। এলাকায় তার প্রভাব খুব। বড় ভাই ওই এলাকার চেয়ারম্যান। তখন তাদের ভয়ঙ্কর দাপট এলাকায়। তাদের নামে থানায় কোন মামলা হতো না। রাজনৈতিক কারনে মামলা হলেও পুলিশ বাসায় আসার আগে কল দিয়ে জানিয়ে দিতো "আমাদের দায়ীত্ব পালন করতে আপনার বাসায় তল্লাশী চালাতে হচ্ছে, বিকেল অব্দি একটু সরে থাকবেন অথবা আজ রাতে আপনার বাসায় তল্লাশী হতে পারে, আজ রাত টা অন্য কোন জায়গায় থাকবেন।" তাদের কথায় এলাকার লোকজন উঠে বসে। সারাদিন ধরে আমাদের বাসায় বিয়ের আয়োজন চলছিলো। রাত ফুরোলেই ময়মনসিংহ থেকে রুপক মামা (বর) সবাইকে নিয়ে আসবে। বিয়ে হবে। সেই উল্লাসে বাড়িতে মেহমান আসা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যের পর পাশের বাড়ির শান্ত মামা এসে বললো "রুপা, জেঠিমা তোমাকে একটু যেতে বললো।"
খালামনি তখন আমাকে কোলে নিয়ে সাবিত্রী দিদির সাথে গল্প করছিলো। মা কে বলে আমাকে আর সাবিত্রী মাসিকে নিয়েই রওনা হলো তার জেঠীমার কাছে। আমাদের বাড়ির পর একটা পুকুর, তারপর দুটো বাড়ি(মনিরদের), তারপরেই জেঠিমার বাড়ি। মনিরদের বাড়ি পর্যন্ত যাবার পরপরই মনির সামনে এসে দাঁড়ালো। আমাকে কোল থেকে নিয়ে সাবিত্রী দিদির কোলে দিয়ে খালামনিকে হাত ধরে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো। পিছু পিছু সাবিত্রী দিদি। বাড়ির গেট বন্ধ করে দেয়া হলো। ভিতরে আরো কয়েকজন লোক। একজন দাড়িওলা পাঞ্জাবী টুপি পড়া (কাজী সাহেব) লোক ও বসা। বিয়ে হলো। খালামনি কে সহ সাবিত্রী দিদি আর আমাকে পাঠিয়ে দিল আমাদের বাড়িতে। শান্ত মামা এসে দিয়ে গেলো। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মা চিন্তা করছিলো। তবে খালামনি আর সাবিত্রি দিদির ফ্যাকাশে মুখ দেখে বুঝার আর বাকী রইলো না। তখন মোবাইল নামক জিনিস টা না থাকায় তাদের কে খবর দেয়া সম্ভব হয়নি।পরদিন বরযাত্রী এসে ফিরে গেলো। রুপক মামা রয়ে গেলো তবুও খালামনির উত্তরের আশায়। ছোট থেকেই খালামনিকে পছন্দ করতো। দুদিন পর রুপক মামাও ফিরে গেলো। আমার বাবার ও ইচ্ছে ছিলো রুপক মামার কাছেই বিয়ে দিবে। ইচ্ছে পুর্ণ হলোনা। খালামনির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো।
২০০৪ সালের শেষের দিকে। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। ফুপু একদিন চাচীকে দিয়ে খবর পাঠাল। তার আদরের বখাটে আদুভাই ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চায়। আমার মা আর খালামনি রেগেমেগে অস্থির। এখনি তো বিয়ের বয়স হয়নি। এমন ধনীর দুলালের কোন প্রয়োজন নেই। শুধুই টাকার বাহাদুরি হলে তো চলবেনা। শিক্ষা, শিষ্টাচার, ভদ্র, ভালো ছেলে ছাড়া হবেনা। এই নিয়ে চললো ঝুট ঝামেলা। বাবা বলে বসলো "আমার মেয়ে, আমি কোথায় বিয়ে দিবো না দিবো তাতে রুপার কি?" লোক মারফত আমার মতামত জানতে চাইলো। আমি চিন্তা করলাম এই ছেলেকে তো আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারবোনা। বাবার কথা মেনে নিলে এই বিয়েই করতে হবে। পড়াশুনা গোল্লায়। তাছাড়া খালামনির উপর আমার সম্পুর্ণ ভরসা আছে। জানিয়ে দিলাম " এই বিয়ে সম্ভব না।" সেদিন থেকে আমার সাথেও কথা বন্ধ হয়ে গেলো।
খালামনির বাসায় থেকেই পড়াশুনা করতে হলো। আমি বাড়ি গেলে তিনি বাড়ি থাকতেন না। বাবা বাড়ি থাকা অবস্থায় আমি গেলে, তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। ২০০৭ সালে এইচ এস সি রেজাল্ট যেদিন বের হলো বাজারে বকুল স্যারের সাথে বাবার দেখা। বাবাকে বললেন "আপনার মেয়ে তো ভালো রেজাল্ট করেছে, মিষ্টি কোথায়?" বাবা একবাক্যে উত্তর দিয়েছিলেন "আমার কোন মেয়ে নেই।" কতো সহস্রবার বাবা বাবা বলে পিছন থেকে ডাকতে ডাকতে অনেক দূর অব্দি হেঁটেছি। তিনি নিশ্চুপ। যেনো আমাকে চিনেনই না। তিনি এখন আলাদা বাড়িতে থাকেন। এখনো বাড়ি গেলে পথে যদি কখনো দেখা হয়ে যায় মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে করে চলে যায়। বাবার কোন ছবি নেই আমার কাছে। ব্যবসার লাইসেন্স এর ফাইল থেকে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপিটার একটা কপি নিয়ে রেখে দিয়েছি। মন চাইলে সেটাই দেখি। মাস খানেক আগে শুনেছিলাম বাবা নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। পায়ে সেলাই লেগেছে। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল দিলাম। রিসিভ করলো। হ্যালো না বলেই সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম "তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করেছো? খুব বেশি কি? কয়টা সেলাই লেগেছে?" উত্তর না দিয়ে জানতে চাইলো "আপনি কে?" নাম বললাম। শুনেই কেটে দিলো।
আজ বাবা দিবস। অনেকেই তাদের বাবাকে নিয়ে ছবি আপলোড দেয়। আমিতো পারিনা। আপলোড তো বহুদুর, বাবাকে নিয়ে ছবি তুলতে পারিনা।সবার মতো করে বাবার সাথে কথা বলতে পারিনা। বাবারা নাকি তাদের মেয়েকেই সবচেয়ে বেশি আদর করে। আদর পেয়েছি তো। ছোটবেলায় বাবা আমাকেও বাবা বলে ডাকতো। কখনো নাম ধরে ডাকতে শুনিনি। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে বাবার সেই ডাক শুনি ঃ- বাবা, বাবা............
০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:১৬
শূন্যতার প্রাপ্তি বলেছেন: বাবার জন্য কোন দিন মাস বছর লাগেনা। কষ্টগুলো তখনই জুড়ালো হয় যখন দেখি সন্তান তার বাবার হাত ধরে নিশ্চিন্তে হাঁটছে, বাবাকে সুখ দুঃখ শেয়ার করছে, কারনে অকারনে বাবার কাছে বায়না করছে, কোন বাবা তার সন্তানের খোঁজ খবর নিচ্ছে, বিশেষ দিনই হোক আর না হোক বাবার ভালোবাসার স্মৃতিগুলো যখন সব বন্ধুদের প্রোফাইলে শোভা পাচ্ছে।
আমার বাবা, বাবা আমার। আমি তার সন্তান। যখন তিনি নির্দ্বিধায় মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। তখন আর পৃথিবীর কিছুই ভালো লাগেনা।
২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৬
মিঃ আতিক বলেছেন: কোন না কোন কৌশলের আশ্রয় আপনাকে নিতেই হবে যদি সত্যি বাবা কে ভালবাসেন বা কাছে পেতে চান। আর ওনার সামাজিক কোন বাধা বা মনের উপর চেপে থাকা কোন বাধা আছে কিনা সেটাও জানার চেষ্টা করুন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৫৮
মিঃ আতিক বলেছেন: আপনি বাবার জন্য বেশী আফসোস করছিলেন নাকি ধারকরা দিবস তা পালন করতে না পারার জন্য আফসোস করছিলেন বোঝা গেলনা।
একটা মানুষ অনেকদিন কাউকে ছেড়ে থাকতে পারলে এতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। গল্প যদি বাস্তব হয়ে থাকে একটা অনুরধ করব, আপনার কোন সন্তান থাকলে তার কাছে পাঠান,দেখবেন দু একদিন অবহেলা করলেও বেশী দিন করতে পারবেনা। প্রবিন দের কাছে সন্তানের হাজারটা দোষ থাকে কিন্তু নাতি নাতনীরা সবসময় নিস্পাপ।