নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধবী

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২


ছয়

আমার বন্ধু লিপুর বৌ মনার ফুটফুটে একটি মেয়ে হয়েছে। আমি হাসপাতালে মা - মেয়েকে দেখতে এসেছি। পরে এই হাসপাতালেই আমার ছেলে নীল জন্ম নেয়।আমার পরিস্কার মনে আছে, যখন প্রথমবার ওকে কোলে তুলে নিই, কি যে আনন্দ হয়েছিল! মাধবীকে হারানোর কষ্ট অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছিল নীল।গত দু'বছর আমি ওকে দেখিনা, বুকে জড়িয়ে ধরিনা, চুমু খাইনা।মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। বিনা অপরাধে মাধবী আমাকে এত নির্মম শাস্তি কেন দিল? কি করে দিতে পারল? মেয়েদের মন বোঝা ভার- এটা সত্যি। মাধবীর মন বোঝা ভার - এটা তিন সত্যি। অপরিবর্তনীয় সত্যি ও বলা যায়। মাধবী ইচ্ছে করে আমাকে ভুলে গেছে- আমার মন এটা মানতে নারাজ। যদি তাই হত, তাহলে ও কখনো আমার সাথে কথা বলতনা, দেখা করতনা।মাঝে মাঝে নিজেকে আমার "ভূত ভূত" মনে হয়।একা থাকি, কারো সাথে কথা বলিনা, কোথাও বেড়াতে যাইনা, কোন কিছুতে উৎসাহ নেই। বড় আপা বার বার ফোন করে। ধরিনা। কল ব্যাকও করিনা।শুধু জীবনের তাগিদে জবটা এখনো করি। জবের সুবাদে যাদের সাথে কথা না বললেই নয়, তাদের সাথে বলি।বন্ধুদের সাথেও কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। মাঝে মাঝে প্রযুক্তির কল্যাণে ছেলের সাথে ভিডিও চ্যাট করি, ওকে দেখি।মাধবীকে তো দেখতেও পেতামনা।
মাধবীর বেশী সন্তান পছন্দ ছিল।ও বলত, "আমাদের বেবী হবে ৪ টা। ২ টা তোমার মত, ২ টা আমার। এর কম হলে তোমার 'বাবাত্ব' বাতিল।" আমি ঠাট্টা করে বলতাম, "এত কম? আরো গোটাচারেক হলে মন্দ কি? যাও, তোমাকে ছাড় দিলাম। আটটাই তোমার মত।" মাধবীর ২ ছেলেমেয়ে। বড় মেয়েটা দেখতে অবিকল মাধবীর মত হয়েছে। ছেলেটা পেয়েছে বাবার আদল।আমাদের বিয়ে হলে এই ফুটফুটে বাচ্চাদুটো আমাদের হতে পারত। নিয়তি। বড় নিষ্ঠুর। তারচেয়েও নিষ্ঠুর মানুষ। মানুষ জেনেশুনে মানুষের যে কি ভীষণ সর্বনাশ করতে পারে, আমি আর মাধবী তার প্রমাণ।

লিপু- মনা আমার খুব কাছের মানুষ।আমার যখন মাধবীর শোকে "পাগল পাগল" অবস্থা, তখন এরা দু'জন বুক পেতে দিয়ে আমার কষ্ট ভাগ করে নিয়েছে, সান্তনা দিয়েছে, শেষ রক্ষা করার জন্য মাধবীর সাথে কথাও বলেছে। কোন লাভ হয়নি।
আজ ওদের খুব আনন্দের দিন। ওরা মহা খুশী। আমি দেখলাম হাসপাতালের রুমটা ভীষণ পরিস্কার। টেবিলের উপর ফুলদানিতে তাজা ফুল হাসছে। এরা সৌন্দর্যের চাষ করে। অফিস, শিক্ষা- প্রতিষ্ঠান, দোকান, রাস্তা, বাড়ী - সবকিছু পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে- তকতকে। এরা নোংরা কোনকিছু পছন্দ করেনা।এরা বিশ্বাস করে, শুধু পেটে হবেনা, মনের খোরাকও সমান জরুরী। সামারে যখন সূর্য "মন খারাপ মন খারাপ" ভাব ছেড়ে মেঘের সাথে প্রেম করে, তখন এখানকার কাউন্সিলগুলো রাস্তার ধারে, ফাঁকা জায়গায়, পার্কে মৌসুমী ফুলের চাষ করে, অপ্রয়োজনীয় গাছ ও আগাছা পরিস্কার করে সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগায়, গাছের পাতার ময়লা পরিস্কার করে। প্রায় সব বাড়ীতে বাগান তো করেই। আর আমরা গাছ, পাহাড় কাটি, পাখি ধরে খাই, বন্য প্রাণী পাচার করি, নদী, খাল-বিল, পুকুর, খেলার মাঠ, আকাশ- বাতাস-পানি, এমনকি সুন্দরবন খেয়ে ফেলি।
একদিন সকালবেলা কাজে যাবার পথে একটি পাখিকে হাঁটতে দেখে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। উড়তে পারছেনা, সরেও যাচ্ছেনা। আমি কি করব বুঝতে পারছিলামনা। পুরো ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। পাখিটা পাশের ঝোপের মধ্যে ঢুকে যাবার পর আমি কাজে গেছি। আমাদের দেশে হলে দেখামাত্র যে কেউ পাখিটাকে ধরে জবাই করে খেত।
প্রথম প্রথম এদেশে আসার পর রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে বা দোকানে যখন দেখতাম মায়েরা বুক খুলে কোলের শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে, তখন আমি লজ্জা পেতাম। সারাজীবন দেখেছি আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ীর আঁচল বা ওড়না দিয়ে ঢেকে বা আড়ালে গিয়ে দুধ খাওয়ায়।দিনে দিনে বুঝেছি ওটাই এদের কাছে অতি সাধারণ বিষয়।শিশু মায়ের দুধ খায়, খাবে, এতে কোন অশ্লীলতা নেই।ওটাই স্বাভাবিক।তাই কেউ বাজে দৃষ্টি নিয়ে মায়ের বুকের দিকে তাকাবেনা। একই কারণে বিকিনি পরে মেয়েরা যখন সমুদ্রে বা পুলে নামে, কেউ কৌতুহল নিয়ে তাকায়না।তাকাবে যদি দেখে কেউ শাড়ী বা সালোয়ার কামিজ বা বেশী পোষাকে নামছে। ভাববে, একি অদ্ভূত কাণ্ড! ইহা কিহা??
আমি দেখেছি আমাদের দেশের পুরুষরা বিশ্রীভাবে মেয়েদের শরীরের, বিশেষ করে বুকের দিকে তাকায়, তা সে যে বয়সেরই হোক। নিজের প্রেমিকা বা স্ত্রীর শরীর দেখার যুক্তিসংগত কারণ থাকে। কিন্তু অন্য মেয়ের? এদেশে দেখেছি , খুব স্বল্প পোষাকে কোন মেয়েকে দেখলেও পুরুষরা সেভাবে তাকায়না।এরা মেয়েদের বুকটাকে শরীরের একটা অংশ ছাড়া আলাদা কিছু ভাবেনা।
আমি দেখেছি বইমেলায় আমার বন্ধুদের কেউ কেউ ভীড়ের সুযোগে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।কেন তারা এটা করে? আমি এর কারণটা অনুমান করি এরকম: আমাদের দেশের পুরুষরা বিয়ের আগে সেক্স করতে পারেনা সমাজের নিষেধের কারণে। সবার প্রেমিকা থাকেনা, থাকলেও পূর্ণ তৃপ্তির সুযোগ থাকেনা। পতিতালয় আছে।সেখানে যাবার মানসিকতা, সুযোগ, সামর্থ সবার থাকেনা।পরকীয়া বা রেপ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শরীরের চাহিদাটা থেকে যায় মোক্ষমভাবেই।ফলে তারা সুযোগ খোঁজে, কোথাও যদি নারীদেহের স্পর্শে নিজেকে একটু হলেও তৃপ্ত করা যায়।আর সেটুকুও কপালে না জুটলে চোখই ভরসা।
এদেশে আঠার বছর বয়স হলেই সেক্স করার অবাধ স্বাধীনতা পাওয়া যায়, কেউ তাতে বাধা দেয়না।তার আগে কিছুটা বাধা থাকে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী স্কুল- কলেজ থেকে ফ্রি দেওয়া হয়। এমন কি কিভাবে সেক্স করলে সর্বোচ্চ তৃপ্তি পাওয়া যাবে তা সেক্স এডুকেশনে স্কুলেই ছেলেমেয়েদের শেখানো হয়। আমাদের দেশের বেশীরভাগ পুরুষরা সেক্স করার সময় তার পার্টনারের প্যাসিভ রোলের কারণে তৃপ্তি পায়না। ছেলেরা তবু কিছুটা হলেও তৃপ্তি পায়, মেয়েদের অবস্থা আরো শোচনীয়। ছেলেরা নিজেরা তৃপ্তি পেলেই খুশী, তার পার্টনার তৃপ্তি পেল কি পেলনা, সেটা নিয়ে তারা মোটেও ভাবেনা। এদেশে দুজনেই দুজনকে সর্বোচ্চ তৃপ্তি দেবার চেষ্টা করে। আমাদের দেশে সেক্স হল লজ্জার বিষয়, এদের কাছে আনন্দের।

চলবে.......

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১

প্রামানিক বলেছেন: অনেক কিছুই তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

সিফটিপিন বলেছেন: সাত কই?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আছে। পাবেন। সাত, আট, নয়,....... সাতচল্লিশ....। আপনাদের ধৈর্য্য থাকলে হয়...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.