নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা থামানো সম্ভব। কিভাবে?

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬



ছবিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির। তিনি  তিন মাস আগে আত্মহত্যা করেছেন এবং তাঁর দেহ দিয়ে গেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে।

আত্মহত্যা থামানো সম্ভব

আমরা জানি, সবার সহ্যশক্তি সমান নয়। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতারও পার্থক্য আছে মানুষে মানুষে। কেউ কেউ আবার একটু বেশীই আবেগপ্রবণ। ফলে কোন কোন মানুষ ব্যর্থতা, দুঃখ, হতাশা, অভিমানের কারণে আত্মহত্যা করে। পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষা খারাপ, তীব্র আর্থিক সংকট, অন্যায়ের বা নির্যাতনের প্রতিকার না পাওয়া, টিভি সিরিয়াল দেখতে না দেয়া, বা পাখি ড্রেস, সাইকেল, মোবাইল কিনে না দেয়া- এরকম ছোট বা বড় যে কারণেই মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিক না কেন, সবার ক্ষেত্রে একটি বিষয় কমন- প্রত্যেকেই তার কষ্টের কথা কাউকে না কাউকে বলে তার কষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং সে আর বাঁচতে চায়না, বাঁচার কোন অর্থ নেই, বেঁচে থেকে কি লাভ, মরে যেতে ইচ্ছে করছে- এ ধরণের কথা বলে। এ কথাগুলো সে হুমকি দেবার জন্য বলেনা। সত্যি সত্যি সে মরে যাবার কথা ভাবছে বলেই বলে, যদিও তার মরার ইচ্ছে নেই। কোন মানুষই মরতে চায়না। মানুষ আবেগের তাড়নায় কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বা কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার জন্য আত্মহত্যা করে।

যেকোন আত্মহত্যাই দুঃখজনক। হুমায়ূন আজাদ একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের সম্পর্ককে 'সেতু' বলেছেন। মানুষ মারা গেলে এই সেতু ভেংগে পড়ে, শূন্যতা তৈরী হয় যা ভুক্তভোগীরা হাড়ে হাড়ে টের পান। জীবন থেমে না থাকলেও প্রতি পদে পদে হারিয়ে যাওয়া মানুষটার অভাব বেঁচে থাকা আপনজনদের কষ্ট দেয়। সম্প্রতি আকতার জাহানের আত্মহত্যা আমাকে একটু বেশীই নাড়া দিয়েছে। ওনার মত এরকম প্রতিষ্ঠিত, মেধাবী, অভিজ্ঞ, বয়সী মানুষ যখন এপথ বেছে নেন, তখন আমাদের আর একবার ভাবতে হয় তাদের কথা যারা তাঁর তুলনায় অনেক অনেক অসহায় অবস্থায় আছে। প্রেমে ব্যর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহননের খবরও আমাকে হতাশ করে খুব। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম ঢাকা চারুকলার ছাত্রী সিমির আত্মহত্যার খবর শুনে। তার পড়াশুনার কারণে দেরীতে বাড়ী ফিরতে হত বলে রোজ কোন না কোন বন্ধুর সাথে ফিরত। এজন্য পাড়ার বখাটেরা তাকে অপমান করে। সিমি পারিবারিক, পাড়ার মাতব্বর, এমনকি পুলিশের সাহায্য না পেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কারণ সবাই সিমিকেই দোষারোপ করে, কেন মেয়ে হয়ে সে দেরীতে ফিরবে, তাও আবার একেক দিন একেক ছেলের সাথে।

অনেক মেয়ে ইভটিজিং বা রেপের অপমানের কষ্ট থেকে বাঁচে মরে গিয়ে। ফাহিমার কথা আপনাদের মনে থাকবার কথা।পৃথিবীর সব দেশেই মানুষ আত্মহত্যা করে। এলাকা বা দেশ ভেদে কোথাও কোথাও এর প্রকোপ বেশী, কারণ ও আলাদা। তবে কারণ যাই হোক, আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব। কিছু মানুষ অল্পতেই আত্মহত্যার কথা বলে। এদেরকে 'আত্মহত্যাপ্রবণ' বলা হয়। এ প্রবণতা বংশগত। বাবা- মার জিনের মাধ্যমে আমরা এ বৈশিষ্ট্য পাই। বাবা-মার সহ্যশক্তি বেশী থাকলে সন্তানদেরও তাই থাকে। তাই বাবা-মার উচিত সন্তানদেরকে ধৈর্যশীল হতে শেখানো, কষ্ট সহ্য করা, যেকোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার মানসিকতা তৈরী করে দেয়া। আত্মহত্যা আবার লোকে অনুকরণ ও করে। যেমন, অমুকে করে কষ্ট থেকে বেঁচেছে, তাই আমিও করব।

কোন নেতিবাচক ঘটনা ঘটার পর প্রথম আটচল্লিশ ঘণ্টা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টা পেরিয়ে গেলে মানুষের কষ্টের পরিমাণ কমে আসে, সহ্যসীমার মধ্যে চলে আসে। ফলে তখন সে আর আত্মহত্যার কথা ভাবেনা। এই আটচল্লিশ ঘণ্টা কাউকে সাপোর্ট দিতে পারলেই আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব।

সতীদাহ প্রথায় স্বামীর মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই তড়িঘড়ি করে সতীকে ঢাকঢোল পিটিয়ে সহমরণে পাঠানো হত যাতে শোক কেটে গেলে সতী মরতে আপত্তি করতে না পারে বা তার না মরার আকুতি কেউ শুনতে না পায়। একজন সমস্যাগ্রস্ত মানুষ যখন মরার কথা বলে, তখন কি করা উচিত আমরা জানিনা। ফলে তাদেরকে বাঁচাতেও পারিনা।

আমাদের করণীয়:

কিছু আত্মহত্যা খুব সহজে ঠেকানো যায় আইনের কঠোর ও দ্রুত প্রয়োগ দিয়ে যেগুলোর সাথে অপরাধ জড়িত।

প্রিয়জন যদি আত্মহত্যাপ্রবণ হয় তাহলে কলহ হলে তাকে সরি বলুন। তার অভিমান ভাঙ্গান। তাকে বেশীক্ষণ রাগ করে থাকতে দেবেননা। কথা বলুন। স্বাভাবিক করে তুলুন।রাতে একা ঘুমাতে দেবেননা।কারণ বেশীরভাগ মানুষ রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে বা একা ঘরে থাকলে আত্মহত্যা করে।

সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করুন, কিছু করতে না পারলে অন্তত মন দিয়ে সহানুভূতির সাথে তার কষ্টের কথা শুনুন, সমব্যথী হোন।

তাকে সান্তনা দিন। বলুন যে এমন সমস্যা আরো অনেকেরই আছে।

পজিটিভ ভাবতে সাহায্য করুন। যাই ঘটুক, তাকে কাটিয়ে উঠে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দিন। অন্যের প্রতি, বিশেষ করে তার নিকট আত্মীয়দের প্রতি তার দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিন।

একা থাকতে না দিয়ে সবার সাথে কথা বলতে দিন। দরকার হলে পরিবেশ বদলানো উচিত। এতে ঘটনার তীব্রতা কম অনুভূত হয়। যেমন, প্রেমে ব্যর্থ ছেলেমেয়েদের রুমমেট বা বন্ধুদের উচিত তাকে মানসিক শক্তি যোগানো, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া বা বাড়ী পাঠিয়ে দেওয়া। কোনভাবেই তাকে একা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবেনা, সে চাইলেও না।

সমস্যাগ্রস্ত ব্যাক্তির সাথে রাগারাগি, দোষারোপ না করে সহমর্মিতা দেখানো দরকার। সম্ভাব্য সমাধান বাতলে দিতে হবে। না পারলে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

ভালবাসা প্রকাশ করুন। বলুন সে আপনার বা আপনাদের কাছে কতটা কাংখিত, গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য।

এড়িয়ে না গিয়ে সমস্যার কারণ জানুন। দরকার হলে গায়ে পড়ে কথা বলুন যাতে সে কষ্টের কথা বলে মনকে হালকা করতে পারে।

বেশীরভাগ সময়ে আমরা না জেনে এসবের ঠিক উল্টো আচরণগুলো করি। যাঁরা লেখাটি পড়বেন, দয়া করে আপনার আশপাশের বিপদে পড়া মানুষের প্রতি এই আচরণগুলো করুন। আপনিও পারেন কারো মূল্যবান জীবন বাঁচাতে।

সরি, আকতার জাহান আপা, সরি। আমি অনেকবার আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েও 'একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়' বলে বলিনি। কেন জানিনা মনে হয়, বললে হয়ত আপনি এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারতেন না।


হাসপাতালে জলি আপাকে লাশঘরে দেয়া এবং মায়ের সাথে একমাত্র ছেলের ছবি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: লাভ এন্ড মিস ইউ জলি আপা.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.