![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি স্বপ্ন দেখি। সত্য সুন্দর আলোর পথে চলতে চাই। লিখতে চাই অন্য রকম কিছু।
গা শিরশির করা ভূতের গল্প পড়তে ছোট্ট বন্ধুদের ভালো লাগে। অদ্ভুত এক মজার অনুভূতি কাজ করে তখন। এখন কেউ যদি ভূত শব্দটি বানান করতে গিয়ে লেখে 'ভুত' তখন ভুল হবে। হ্যাঁ, মারাত্মক ভুল। আবার কেউ যদি ভুল শব্দের বানান লেখে 'ভূল' তখন তো হবে জঘন্য। আচ্ছা, আমরা যারা ছোট আমাদের ভুল হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। একদিন ভুল করতে করতে আমরা সঠিক বানান শিখি, শিখব। কিন্তু এখন অনেক বড় মানুষও বাংলা লিখতে গেলে ভুল করেন। এটা করেন অনেকটা কারণে অকারণে। একটু সচেতন হলে অনেক বানান আমরা আয়ত্তে আনতে পারি। কিন্তু এমন অনেক বাঙালি আছেন যারা সচেতন হওয়া দূরে থাক উল্টো বলে বেড়ান, 'বাংলা বানান অনেক জটিল, কঠিন, শক্ত...।' তোমরা একটু আশপাশে চোখ বুলালে এমন মানুষের খোঁজ পাবে। এতে যারা এসব কথা বারবার শোনেন তারাও সংক্রমিত হয়ে পড়ে। মনে এ ধারণা গেঁথে যায় যে, বাংলা বানান আসলেই কঠিন। তাই আর শেখার চেষ্টা করাটা বৃথা। কিন্তু ব্যাপারটা একেবারে পানির মতো সহজ। শুদ্ধ বানানের জন্য চাই মনোযোগ, চাই ভালোবাসা।
আমাদের বাসে, রেলে, টেম্পোতে, ট্যাক্সির পেছনে, দোকানের পরিচিতিফলকে, দেয়াললিখনে, প্রতিদিনের কাগজে, টেলিভিশনের পর্দায় এমনকি পাঠ্যবইয়ে ভুলের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এসবে প্রধানত বানান ভুল হয়। এরপর দেখা যাবে বাক্যগঠন, যতিচিহ্নের ব্যবহার, শব্দ চয়ন ইত্যাদি ভুল। যেমন কোনো কোনো দেয়ালে লেখা দেখবেন-
'এখানে প্রস্রাব করবেন। না করলে জরিমানা।' হয়তো কর্তৃপক্ষ লিখতে চেয়েছিলেন, 'এখানে প্রস্রাব করবেন না। করলে জরিমানা।'
এ রকম ভুল হয়ে যায় বিলকুল। তাই হয়তো প্রবাদে আছে 'মানুষ মাত্রেই ভুল'। সব ভুল কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। ধরা যাক মুমূর্ষু রোগীর অস্ত্রোপচার চলছে। তখন যদি চিকিৎসক ভুল করে রোগীর পেটে ছুরি-কাঁচি রেখে সেলাই করে দেন। কিংবা ধরো একচোখ অন্ধ রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসক ভালো চোখটি ভুলে ফেলে দিলেন। তখন এ ভুল মেনে নেওয়া যায়? আবার ধরো কোনো জেলখানায় দুই আবদুল আছে। একজনের বাড়ি করিমগঞ্জ অপরজনের বাড়ি সুনামগঞ্জ। এখন সুনামগঞ্জের আবদুলের ফাঁসির আদেশ হলো। ভুলে যদি করিমগঞ্জের আবদুলের ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হয় তখন? এভাবে কিছু ভুল আছে মেনে নেওয়া যায় না। বড় কষ্টের। তেমনি বাংলা বানানে ভুল হলে মেনে নেওয়া কষ্টের। কেন? বলছি-
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার মর্যাদা রায় বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক ভাই। তাঁদের রক্তে পিচঢালা কালো রাজপথ লাল হয়েছে। এখন যদি আমরা বাংলা বানান ভুল করি, উচ্চারণ ভুল করি বাংলা শব্দের তবে তাঁদের আত্মা কষ্ট পাবে। তোমরা কি একমত? নিশ্চয়ই। তাই আমাদের উচিত সঠিক বানানে লেখা। এতে বাংলা বানানে যে নৈরাজ্য চলছে, অসুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, বিভ্রান্তির ছড়াছড়ি দেখছি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে -সব দূর হবে। অভিজ্ঞমহলের মতে, তাই হওয়া উচিত। তবেই বাংলা ভাষা টিকে থাকবে বিশ্বের বুকে।
বাংলা বানান শেখা কি খুব কঠিন কাজ? আমি এখন বলতে পারি মোটেই না। তাহলে আমরা সঠিক বাংলা বানান শিখব কীভাবে? যদি জাদুকর হতাম তাহলে জাদু দিয়ে কাচের গ্লাসে পুরো এক গ্লাস শরবত পান করতে দিতাম। যা খাওয়ার পর আর বাংলা শব্দের বানান ভুল হতো না। বন্ধুরা, এখন বলো তো কাচ বানান কেমন। কেউ লিখবে কাচ, কাঁচ, কাছ, খাচ, খাছ ইত্যাদি। তবে বেশিরভাগই ভুল করে লিখবে ‘কাঁচ’। অথচ কাচ লিখতে চন্দ্রবিন্দু লাগে না। এই যে বেশি কিছু দিয়ে ভুল করা হয় এটা একটা কারণ। এভাবে আমরা বেশি দিয়ে ফেলি 'ব্যাক্তি', 'ন্যাক্কারজনক', 'পরিপক্ক', 'পাঁপড়ি', 'স্বার্থক', 'ধূলিস্যাৎ', 'ব্যাথা', 'স্বপরিবার', 'স্বত্ত্বাধিকারী' ইত্যাদি লিখতে গেলে। এগুলো হবে ব্যক্তি, ন্যক্কারজনক, পরিপক্ব, পাপড়ি, সার্থক, ধূলিসাৎ, ব্যথা, সপরিবার, স্বত্বাধিকারী ইত্যাদি। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন: 'শুধুমাত্র', 'অনেকগুলো', 'সখ্যতা', 'সব শিশুরা' ইত্যাদি হবে-শুধু, অনেক, সখ্য, সব শিশু ইত্যাদি।
দেখতে দেখতে অনেক সময় আমরা ভুল বানান শিখে ফেলি। যেমন আমি কর্ণফুলীর পারে অভয়মিত্রঘাটের ভাড়া বাসায় ছিলাম কিছু দিন। প্রতিদিন কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার সময় একটি ভবনের পরিচিতিফলকে চোখে পড়ত '...পৈত্রিক নিবাস' কথাটি। অনেকবার শব্দটি লিখেছি প্রয়োজনের খাতিরে। পরে একদিন বাংলা অভিধানে দেখলাম শুদ্ধ বানানটি হচ্ছে 'পৈতৃক'। এখানো হাসি পায় শব্দটি লেখার সময়। অবশ্য এটাকে মানে এ পদ্ধতিতে ভুল শেখার প্রবণতাকে আমি নাম দিয়েছি 'প্রদর্শন প্রভাব'। মানে দেখে দেখে ভুল শেখা। এভাবে আমরা চোখ ফেরাতেই চোখে পড়ে ভুল বানান। এ তালিকায় আছে-ফটোষ্ট্যাট, পোষ্টার, ষ্টোর্স, ষ্টেশন, ষ্ট্যান্ড, ষ্টিকার এসব ভুলের ছড়াছড়ি। কিন্তু মনে রাখা সহজ বিদেশি শব্দের বানানে 'ষ্ট' স্থলে হবে স্ট।
এবার তরতাজা একটি ঘটনার কথা বলি। গত ৮ মার্চ (২০০৯) মধ্যরাতে আমার বন্ধু সাংবাদিক মিয়া মুস্তাফিজকে নিয়ে গেলাম কর্ণফুলীর বুকে জ্যোৎস্না দেখতে। কী অপরূপ দৃশ্য। রাত সাড়ে ১২টায় ফিরছি হেঁটে হেঁটে। কোতোয়ালি থানার ফটকের দণি পাশের দেয়ালে চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা হয়েছে 'বিরোদ্ধে'। একটু সামনে গেলাম থানা পশুসম্পদ কার্যালয়। সেখানে চাঁদের আলোয় পষ্ট দেখলাম লেখা হয়েছে 'কার্য্যালয়'। আরেকটু সামনে বৈদ্যুতিক আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে একটি খাবার দোকান। সেখানে লেখা 'ব্রীজ'। আমি নিশ্চিত যদি প্রদর্শন প্রভাব কার্যকর হয় তবে এ পথে যেসব কোমলমতি শিশুরা আসা-যাওয়া করে তারা ভুল শিখবে শব্দগুলো। এভাবে সব অলিগলি আর রাজপথে দেখবে ভুলের ছড়াছড়ি।
আরেকদিনের ঘটনা। কাজ করছি তো করছি। হঠাৎ এলো 'ভূজ' শব্দটি। মনে পড়ল দণি নালাপাড়ার দুর্গাপূজার স্মরণিকার কাজ করার সময় দশভুজা বলে একটি শব্দ পেয়েছিলাম। যার অর্থ দশ হাত বা বাহু। এভাবে লেখা হয় ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ ইত্যাদি। তখন আমি বললাম, এটা তো 'ভুজ' হবে। পরে অভিধান দেখে পেলামও। তখন একজন বললেন, গোটা ছাত্রজীবন মনে হয় ত্রিভুজ 'ঊ-কার' দিয়ে লিখে এসেছি! তারপর হাসির রোল পড়ে যায়।
এবার একটি গড় প্রবণতার কথা বলি। অনেকে মনে করেন সব বানান 'ই-কার' দিলে আধুনিক হয়ে যাবে। যেমন: পাখি, শাড়ি, বাড়ি, গাড়ি, নাতি, নানি, দাদি, ধমনি, ধরণি, দরদি, দাবি, আসামি, কেন্দ্রিক, দেশি, জবানবন্দি, মুখোমুখি ইত্যাদি। কিন্তু কিছু বানান আছে 'ঈ-কার' হবে। যেমন: নীড়, নীরব, ইদানীং, ধনী, ধরিত্রী, দেশব্যাপী, মনীষী, মহীয়সী, সামগ্রী, মর্মভেদী, দীর্ঘজীবী, আকাশচারী, কেন্দ্রীয়, দেশীয়, শান্তিকামী, বন্দী, বহুমুখী, নারী ইত্যাদি।
অনেক কথা হলো। আর কথা বাড়াব না। সময়ের একটা মূল্য আছে না! এখন সঠিক বানান শেখার কিছু পদ্ধতি বলে দিলে কেমন হয়। শুনতে চাও?
অভিধানকে বন্ধু বানাতে হবে। কারও কথার ওপর পুরোপুরি আস্থা না রেখে বানান নিয়ে সন্দেহ হলেই অভিধানে শব্দটি খুঁজতে হবে। তারপর লিখে রাখতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে অভিধানে যদি ভুল থাকে। হ্যাঁ, ছাপাখানার ভূত-বলে একটি কথা আছে। তবে কিছু কিছু অভিধান আছে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমীর অভিধানগুলো অনেকটা নির্ভরযোগ্য। কিনতে পারেন সংসদ বাঙ্গালা অভিধানও। মজার ব্যাপার হলো-
আমরা অনেক বড় বড় ডিগ্রি নিলেও অনেকেই পারি না বাংলা বর্ণমালা (স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ)। অথচ অভিধান দেখতে হলে প্রথমে দরকার বর্ণমালার জ্ঞান। তদুপরি, কয়টি বাসায় বাংলা অভিধান পাওয়া যায় তা নিয়ে জরিপ চালানো যেতে পারে। অবাক ব্যাপার হলো, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পড়ার টেবিলে কিন্তু পাওয়া যাবে ইংরেজি ভাষার অভিধান।
দ্বিতীয়ত, বানান শেখার জন্য চাই একটু মনোযোগ। কারণটা খুলে বলি। বাংলা ভাষায় শব্দের খেলাটা দারুণ জমে। যেমন কেউ শিখলেন প্রতিযোগী বানানটি। এখন যদি এর সাথে 'তা' যোগ করতে হয় তখন হয়ে যাচ্ছে প্রতিযোগিতা। কী দারুণ খেলা! এভাবে সহযোগী হয়ে যাচ্ছে সহযোগিতা। ম্যাজিকের মতো। একই ভাবে ধূলা, পূজা হয়ে যাচ্ছে ধুলো, পুজো। আবার রবি শব্দের সাথে ইন্দ্র মিলে হবে রবীন্দ্র। এটা সন্ধি। তাই একটু মনোযোগ দিলে বানানের ম্যাজিকটা ধরা সহজ। এরপরও কথা থেকে যায়, আমরা আলোচনা করছি খেলতে খেলতে কীভাবে বানান আয়ত্তে আনা যায়। এখন ধরা যাক, কোথাও দেখা পড়া কোনো শব্দের বানান ভুল মনে হচ্ছে। মনে হওয়ার সাথে সাথে অভিধান দেখতে হবে। এমন হতে পারে হাতের কাছে অভিধান নেই ঠিক সেই মুহূর্তে। তখন মনে রাখুন শব্দটি, সম্ভব হলে কোথাও লিখে রাখুন। বাসায় এসে অভিধান দেখুন। এভাবে শেখা হবে অনেক বানান। আবার আলোচনার মাধ্যমে অনেক বানান শেখা যায়। কৌতূহলী বন্ধুদের সঙ্গে বানান নিয়ে আলোচনা করা দরকার। এক্ষেত্রে আড্ডায় অনেক বানান শেখা সম্ভব। তবে বানান শিখতে হবে নিজে নিজে। নিজের অদম্য আগ্রহ থাকা চাই। কয়েকদিন আগে সিসিএলে একটি নাটক দেখছিলাম 'আমি আজ ভেজাবো চোখ'। সেখানে একটি চরিত্র পুরো ইংরেজি অভিধান মুখস্থ করে ফেলেছে। অবশ্য বই মুখস্থ করা কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। ১৪-১৫ শত বছর ধরে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরান মুখস্থ করে আসছেন হাফেজরা। কিন্তু আমরা বাংলা বানান শেখার জন্য অভিধান মুখস্থ করতে বলছি না। বলছি অভিধানকে বন্ধু বানাতে আর একটু মনোযোগী হতে। তাই অনেকে বলতে পারেন-কেউ সব বানান জানবেন না। তবে আমি হয়তো পাঁচ হাজার শব্দ জানব। আরেকজন সাড়ে চার হাজার। কিন্তু এর মধ্যে হয়তো দুজনেরই কিছু নতুন শব্দ থাকবে। যা আলোচনার মাধ্যমে শেখা সম্ভব। হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন কর্মশালার অভিজ্ঞতা বলতে পারি। সেখানে শুধু পথনির্দেশ করা হয়ে থাকে। বাকিটা নিজের ওপর।
আর কথা বাড়াব না। এটুকু পড়ার পর তোমাদের যদি শুদ্ধ বানানের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়, তাহলে বলব, চলো আজ থেকে আমরা সচেতন হবো। আমরা ভুল দেখলে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করব। অভিধান দেখব। শিক্ষক-বড়ভাই-মা-বাবার সাহায্য নেব।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩২
সন্ধি মুহিদ বলেছেন: খুব ভাল পোস্ট