নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

:):):)(:(:(:হাসু মামা

:):):)(:(:(:হাসু মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটা ভুয়া খবরে তৈরি হয়েছিল যে সুইসাইড ব্রিগেড

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৬


যুদ্ধের সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের এম এ শেষ পর্বের ছাত্র।৭ মার্চের ভাষণের সময় দলবেঁধে রেসকোর্স ময়দানে গেলাম। বঙ্গবন্ধু এলেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো পুরো ময়দান। মুরাদ বলে এক বন্ধু কোথা থেকে একটা ভক্সওয়াগন গাড়ি জোগাড় করেছিল। বম্বও বানিয়ে আনে। যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ভাষণকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা বিভিন্ন জায়গায় পজিশন নেয়। আমরা গাড়ি নিয়ে কয়েকটা চক্কর মারলাম শাহবাগের সামনে দিয়ে। এর মধ্যে আমাদের একজন মিলিটারি লক্ষ্য করে বম্ব ছুড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানিরা গুলি শুরু করে। আমরা হতাহত না হলেও গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকে পলাতক জীবন শুরু হয়ে গেছে। যমুনার চরে গুঠাইল বলে একটা এলাকা আছে। সেখান থেকে একসঙ্গে ১০০-এর মতো ছেলে সঙ্গে নিয়ে কয়েকদিন হেঁটে সীমান্তের কাছে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জে উপস্থিত হলাম। আমাদের মূল ট্রেনিংটা সেখানে শুরু হয়।

আমি একাধারে একজন গেরিলা যোদ্ধা ছিলাম সেইসঙ্গে নিজস্ব আগ্রহের কারণে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং মুক্তিযুদ্ধের সরকারি মুখপাত্র জয়বাংলা পত্রিকার সংবাদদাতা হয়েছিলাম ১১ নম্বর সেক্টরে। যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে পাঠাতাম। ছবি তুলতাম। মূলত যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে দেখলাম বন্ধুরা অপারেশনে যাচ্ছে কেউ ফিরছে, কেউ আর ফিরছে না। তখন মনে হলো- আহ যদি আমার একটা ক্যামেরা থাকত, তাদের মুখগুলো ধরে রাখতে পারতাম! ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা ডা. হুমায়ুন হাই ও কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম থেকে দুটো ক্যামেরা পেয়ে যাই। কর্নেল তাহের পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। উনার নেতৃত্বেই ১১ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়। আমি সেখানে। ক্যামেরা দুটো পাওয়ায় যুদ্ধের সময়ের কিছু দুর্লভ ছবি তুলে রাখতে পেরেছিলাম। একবার বন্ধুদের সঙ্গে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, জামালপুর এলাকায় একটা ব্রিজ ওড়ানোর জন্য যাচ্ছিলাম। সেখানে গিয়ে বড় ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে নেমে সবার একটা ছবি তুলে রাখি। সেই ছবির সবাইকে নিয়ে পরে বাড়ি ফিরতে পারিনি। আমার যুদ্ধক্ষেত্র ছিল মেঘালয় অঞ্চল। এটা এখন উত্তর ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, রংপুর- এসব এলাকা। ছবি ডেভেলপ করতে সেখান থেকে ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যেতে হতো ৫২ মাইল দূরে তোরা পাহাড়ে। সেখানে একটা ছোট্ট স্টুডিও চালাত এক নেপালি পরিবার। তাদের ফিল্মগুলো ডেভেলপ করতে দিয়ে আবার যুদ্ধে ফিরতাম। এই ছবিগুলোর খবর যুদ্ধের পর ১০-১২ বছর নেওয়া হয়নি। পরে আমার সন্তানরা সেগুলো সংগ্রহ করে।

প্রপাগান্ডা যুদ্ধের একটা অংশ। মুক্তিযুদ্ধেও তেমনটা হয়েছে। যেমন রওশন আরা নামের একজন বাঙালি নারী ঢাকায় বুকে মাইন বেঁধে পাকিস্তানি ট্যাংকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্যাংক উড়িয়ে দিল। খবরটা যথার্থ ছিল না। খবরটি ভুয়া হলেও এই খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হলে মানুষ যে উত্তেজিত হয়েছিল, অনুপ্রেরণা পেয়েছিল তা অবিশ্বাস্য। ‘রওশন আরা ব্রিগেড’ নামে একটা সুইসাইড ব্রিগেডই তৈরি হয়ে যায়। যুদ্ধে সমরাস্ত্রের পাশাপাশি প্রপাগান্ডা সারা বিশ্বেই চলে। মুক্তিযুদ্ধে প্রিন্ট মিডিয়া ও রেডিও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তান শাসনের কারণে রেডিও সীমিত ভূমিকা রাখতে পারলেও ইত্তেফাক, পূর্বদেশ, পাকিস্তান অবজারভার, সংবাদ, দৈনিক আজাদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া স্বাধীনতা ও গণআন্দোলনে যে ভূমিকা রেখেছে তা ইতিহাসের অংশ। মুক্তিযুদ্ধে সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে ৭০টির মতো অনিয়মিত পত্র-পত্রিকা বেরিয়েছে। মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোর ওপর ছিল পাকিস্তানের সেন্সরশিপ। সেই ক্ষতি পূরণ করেছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী ও সীমান্তবর্তী ওইসব অনিয়মিত পত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্বার্থে এগুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধে বেতার কর্মীদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। দেশের কোথায় কী ঘটছে তা জানতে সারা দেশের মানুষ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদের অপেক্ষায় থাকত। বিদেশিরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কী বলছে তা প্রচার হতো বেতারে। এ ছাড়া এম আর আক্তার মুকুলের চরমপত্র মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। আরেকটি ছিল নাটক। মুক্তিযুদ্ধের গান তো ছিলই। গোবিন্দ্র হালদারের ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ...’- এমন অসংখ্য গান হয়েছে যা মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত রেখেছিল।

৩ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। কামালপুরে একটা বর্ডার আউটপোস্ট। পাকিস্তানিরা সেখানে কঠোর প্রহরা বসিয়ে ব্লক করে রেখেছিল। কারণ, মুক্তিবাহিনী যদি সেখানে পাকিস্তানিদের হারিয়ে শেরপুর, জামালপুর যেতে পারে তাহলে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকার দিকে যেতে সহজ হবে। তখন ইন্ডিয়ান এক জেনারেল মুক্তিবাহিনীকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে তাদের কাছে আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে যাবে?’ তাতে লেখা ছিল একঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে সর্বাত্মক আক্রমণ করা হবে। তখন সঞ্জু, ছেলেটা এখনো আছে, আমাদের এলাকার ছেলে, সে রাজি হলো। সাদা পতাকা হাতে সারেন্ডার লেটার নিয়ে অসংখ্য মাইনের মধ্য দিয়ে সে গেল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। পরে আরও একজন গেল। আনিসুল ইসলাম। এক-দেড় ঘণ্টা পরে পাকিস্তানিরা হাত উঁচু করে এগিয়ে আসল। ১৫০ জন রেগুলার আর্মি, সঙ্গে রেঞ্জার ও রাজাকার তো ছিল। সেই মুহূর্তে তাদের ছবি তুলে রাখি।

লেখক পরিচিতি : হারুন হাবীব। মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধকালীন সংবাদপত্র ‘জয়বাংলা’ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যুদ্ধ সংবাদদাতা। অনুলিখন : শামীম আহমেদ

বিশেষ কৃতজ্ঞতা বিডি প্রতিদিন।

ছবি গুগোল ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হাসু মামা তোমার তো
বাঁচা হইছে ম্যালা!
বুঝতে পারলাম যুদ্ধে তুমি
কত পোহা্ইছো জ্বালা !!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৮

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: আমি না আমার বাপ চাচা আর মামা খালুরা পোহা্ইছো জ্বালা । :(

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: হারুন হাবীবের মিরপুরের বাসায় আমি গিয়েছি। তার একটা লম্বা সাক্ষাতকার করেছিলাম কোনো এক ঈদ সংখ্যায়।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো একটা করেছেন গুরু ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.