![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তিন বছর হল এখানে আছি।এই তিন বছরে অনেক কিছুই মানিয়ে নিয়েছি।আমার মত সকলেই মানিয়ে নিয়েছে।আর কিইবা করার আছে আমাদের?আমার এখনও মনে পরে সেই দিন টার কথা।যেদিন আমার সাত রাজার ধন আমাকে বলল,
।
।
ছেলে:মা,তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
আমি:বল বাবা।
ছেলে:না মানে,বলতে চাচ্ছিলাম যে, তুমি বাসায় সারা দিন একা একা থাক।আমি আর তোমার বৌমা সারাদিন চাকরি করি,তোমার তো একা একা লাগে।
আমি:হ্যা,তা তো একটু লাগেই।তবে তোদের ঘরের কাজ করতে করতে সময়টা কখন যে ফুরিয়ে যায় টেরই পাইনা।
সজিব(আমার ছেলের নাম):না মানে তোমার কষ্টটা কমিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ভাবছিলাম যে তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেব।সেখানে তোমার কখনও একা লাগবে না।
ছেলের মুখে বৃদ্ধাশ্রম কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।আমি কিছু বলছিনা দেখে সে আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল।এর পর থেকে আমি কখনও ওর ঘরে থাকার কথা বলিনি।কিন্তু যখনই ওর সাথে দেখা হয়েছে আমি শুধু ওর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকতাম।কিন্তু ও কখনই আমার চোখের ভাষাটা বুঝতে পারেনি।আচ্ছা, ওতো প্রেম করে বিয়ে করেছিল।তারপরও আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারলোনা?আমি কি এতটা পর হয়ে গেলাম ওর কাছে?তিন দিন পর ও ঠিকি আমাকে একটা নামি দামি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে চলে গেল।শেষ দিন ও আমাকে বলল,
।
।
---মা এখানে তোমার কোন কষ্ট হবেনা।আমি রোজ তোমাকে দেখতে আসবো।
আমি:বাবা নিজের ও পরি বারের খেয়াল রাখিস।সময়মতো কাজ করিস।আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস।
।
।
বৌ:ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা,আম্মা।আমি ওর খেয়াল রাখবো।
।
।
সজিব:মা,আমি এখন যাই।আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।
এরপর ওরা আমাকে রেখে চলে গেল।এরপর ওর আমাকে রোজ দেখতে আসার কথা থাকলেও পাঁচ মাসে একবার আসার সময় পেতনা।এরপর দূরত্ব টা আরও বাড়তে থাকলো।এখনতো বছরে মাত্র একবার আসে।ও এখানে আসলে আমি শুধু ওকে বুকে জরিয়ে রাখি।কিন্তু ও বিরক্ত বোধ করে বলে,আর জরিয়ে ধরিনা।তিন বছরে অনেক কিছুই সহ্য হয়ে গেছে।কিন্তু আমার খোকাটার কথা যে একদমি ভুলতে পারিনা।
এখানে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হল রাহেলা আপা।ওনি খুব গরিব ঘরের মেয়ে ছিলেন।ওনার বিয়ের দুই বছরের মাথায় ওনার স্বামি মারা যান।তারপর থেকে তিনি সারাজিবন কষ্ট করে তার ছেলেকে ডাক্তার বানিয়েছেন।আর এখন সেই ডাক্তার, ডাক্তার সাহেব হয়ে গিয়েছে।আর তাই তো এই বুড়ো মুর্খ মানুষটা কে নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে পারেনা বলে , এখানে রেখে গিয়েছে।
আচ্ছা খোকা,তুই কি বলতে পারিস আমি আর তোর বাবা,তোকে কখনও অপূর্ন রেখেছি?আর আমরা তো অশিক্ষিতও ছিলাম না।তাহলে কেন আমাকে এখানে রেখে গেলি?তোর বাবা যখন বেঁচে ছিলেন তখন কেন রাখলি না?তোর বাবা সহ আমি এখানে থাকতাম।তুই তোর বাবাকে প্রচন্ড ভয় পেতি।আর আমি তোর বাবাকে বকা দিতাম দেখে হেসে দিতি।তোর কি এগুলো মনে পরে?
।
।
।
শুনলাম তোর ছেলে হয়েছে আজ এক বছর।আমার যে এখন খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে রে!কেন যানিস?কারন আরতো মাত্র ষাতাসটা বছর।এরপর তুই আর আমি একসাথে থাকবো।কেমন?তখন কিনতু তুই তোর বৌয়ের সাথে থাকতে পারবিনা?তিনটা বছর পার করেছি তোকে ছারা।মনে হয়েছে যেন,আমি তিন যুগ পার করেছি।তুই যখন আমার কাছে আসবি,আমি তোকে ক্ষমা করে দেব।তারপর মা ছেলে মিলে খুব সুখে থাকব।
তোর জন্য আমার পাশে একটা বিছানা তৈরি করেছি।জানিস,নরম বালিসটা তোর জন্য রেখেছি।আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া।
হে আল্লাহ,আমাকে আর মাত্র সাতাষটি বছর বাচিয়ে রাখ। আমি যেন আমার ছেলের মুখটি দেখে শেষ নিঃশ্বাষটা ত্যাগ করতে পারি।
তোর ছেলে তোকে কবে এখানে তোকে রেখে যাবে?এই প্রতিক্ষাটাই করছি।তুই তারাতারি চলে আসিস।
-
নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটি থেকে অনুপ্রাণিত।
আমানুল ইসলাম।
©somewhere in net ltd.