নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক সুবোধ বালক /অবুঝ শিশুর মতো /মোর চলন বলন/খাই-দাই ফুর্তি করি / সাধ্যমত লিখি-পড়ি /আর কিছু নেই কথন।

আমানউল্লাহ রাইহান

তোমাকেই জ্বালাতে হবে আশার রবি, সোনালি প্রভাতের রাঙ্গা ছবি, তোমাকেই আঁকতে হবে......

আমানউল্লাহ রাইহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শব্দবিভ্রাট : প্রসঙ্গ সর্বজনীন

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০১

সর্বজনীন দূর্গাপূজা,
হিন্দুভাইদের দাবি হলো,সর্বজনীন অর্থ "সর্বলোকহিত"।মানে, সকলের মঙ্গল কামনা করা।যেহেতু এই পূজায় ধর্ম-বর্ণ,জাতি নির্বিশেষে সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়,আর এটা সব ধর্মের অন্যতম শিক্ষা-সে হিসেবে তারা দুর্গাপূজাকে সর্বজনীন বলেন।অতএব,এই অর্থে সর্বজনীন পূজা বলতে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু দেখার বিষয় হলো,বাস্তবেই কি সর্বজনীনের সঠিক ব্যাখ্যা এটা??সে কথা পরে হবে।

ধরুন,কিছুক্ষণের জন্য মেনে নিলাম যে এটাই সর্বজনীন শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা,যা দাদাবাবুরা আমাদের দিয়েছেন।তাহলে বলবো,এটা অনেক পুরানা বাসি বয়ান।উত্তর আধুনিক এই ডিজিটাল যুগে সে বয়ান অচল।কারণ,দিন যতই গড়াচ্ছে সবকিছুতেই পরিবর্তনের হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে।যা থেকে ভাষাও মুক্ত নয়।পূজার আয়োজন কাঠামোতে যেমন পরিবর্তন হচ্ছে, ঠিক তেমনি এই সর্বজনীন শব্দের ব্যবহারেও পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়।অন্যান্য অনেক শব্দের ব্যবহারেও একই ঘটনা ঘটছে।

একটি বিষয় সর্বস্বীকৃত যে,সময় পরিবেশের পালাবদলের সাথে পালা করে ভাষার ব্যবহারেও বদল হয়।সে হিসেবে সামান্য মুনাসাবাত ও অর্থমিল পেলেই পূর্বের অর্থ বাদ দিয়ে নতুন অর্থে কোনো শব্দের নূতন প্রকাশ ঘটে।

যেমন "রাজাকার"শব্দটাই ধরুন!এর অর্থ হচ্ছে,স্বেচ্ছাসেবক বা স্বতস্ফুর্তঃভাবে কাজ করা।এটা একদিকে যেমন তার মূল অর্থ,অন্যদিকে শব্দটা একটি সুন্দর অর্থবহও বটে। কিন্তু,সময় ও যুগের পরিবর্তন কিংবা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এটাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে একটি নতুন অর্থে দাঁড় করিয়েছে।এটা এখন গালিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশবিরোধী ঘাতক-দালাল অর্থে ব্যবহার হচ্ছে।মূল অর্থে মিল কোথায়?
ওই যে, স্বেচ্ছায়,স্বতস্ফুর্তঃভাবে দেশবিরোধী কাজে অংশগ্রহণ।

ঠিক তেমনি "জঙ্গি"। যার মূল অর্থ যোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধা।যা এখন সন্ত্রাস অর্থে পরিণত হয়েছে।তারপরও আগের অর্থের সাথে কিছুটা হলেও মিল আছে।উভয়ের কাজ প্রায় একই।উভয়ই অস্ত্র ধরে,যুদ্ধ করে।তবে উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন।মোটকথা,এসব অর্থ-পরিবর্তনশীল শব্দের পূর্ব-পরের অর্থাৎ মূল অর্থে ও রূপক অর্থে কিছুটা হলেও সামঞ্জস্য পাওয়া যায়।

অভিধানে সর্বজনীন শব্দের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্থ বলা হয়েছে সকলের জন্য বা উদ্দেশ্যে কৃত অনুষ্ঠান বারোয়ারি।
অর্থাৎ,এমন আচার-অনুষ্ঠান যা সকলের উপযোগী।কিন্তু,সর্বজনীনের এই অর্থদ্বয়ের সাথে দূর্গাপূজার বাস্তবিকই কোনো মিল নেই।কারণ,এই দুর্গাপূজা কেবল হিন্দুদের নির্দিষ্ট কিছু গোত্রের পূজা।স্বয়ং হিন্দুধর্মেরই সব গোত্র বা জাতি এই দূর্গার পূজা করেনা।তাদের মধ্যে এমন জাতিও আছে,যারা দূর্গার কথিত বিপক্ষশক্তি অসুর খ্যাত মহিষাসুরের পূজা করে।এমতাবস্থায়,যে দূর্গাপূজা স্বয়ং হিন্দুধর্মেই সর্বজনীন হতে পারে নি, সেটা ধর্ম-বর্ণ,জাতি নির্বিশেষে সকলের উপযোগী বা সকলের জন্য কৃত বারোয়ারি অনুষ্ঠান হয় কি করে??

তাছাড়া এটা নিছক কোনো অনুষ্ঠান নয়,বরং হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধনা ও উপাসনা।সুতরাং এটা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের আচার-অনুষ্ঠানযোগ্য হবে কোন যুক্তিতে?সাধারণ কোনো অনুষ্ঠান হলে মেনে নেওয়া যেত।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো,"ধর্ম যার যার উৎসব(পূজা)সবার"-এই কুফরি শ্লোগানের আড়ালে একশ্রেণীর অতি শিক্ষিত,গোমূর্খ থেকে নিয়ে নেতা-খেতারা পর্যন্ত পূজাকে
মুসলিমদের জন্য হালাল করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।ঈদের সময় বা আমাদের অন্য কোনো উৎসবের সময় তাঁদের মুখে এসব বলতে শুনা যায় না। বুঝাই যায় এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এখন আসি দাদাদের সর্বলোকহিতের ব্যাখ্যা নিয়ে।হিন্দুভাইরা সর্বলোকহিতের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে এটার কোনো যৌক্তিকতা বা এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা অভিধানবিদদের বরাতে দেখাতে পারবেননা ইনশাআল্লাহ।ওপারের দাদাদের জাতিঅভিধান সংসদে সর্বজনীনের অর্থ লিখেছে,সকলের পক্ষে হিতকর।
যেমন বলা হয় সর্বজনীন প্রচেষ্টা।বাংলা একাডেমির দাদাবাবুও একই অর্থ লিখেছে,সকলের জন্য মঙ্গলজনক।এখন দেখার বিষয় হলো,বাস্তবেই কি এই পূজা সকলের পক্ষে হিতকর বা মঙ্গলজনক?অবশ্যই না এবং তার প্রশ্নই আসেনা। কোরান-সুন্নাহ তো আছেই,এমনিতেও এই পূজা-আর্চনায় আমাদের কোন মঙ্গল নেই।বরং দুনিয়া-আখেরাতে এর ক্ষতির পাল্লাই বেশ ভারি।

দূর্গাপূজায় হিন্দুভাইদের লাভ কি? আর না করলে ক্ষতিই বা কী?যাক্, সেটা তাদের ধর্মীয় ব্যাপার।এক্ষেত্রে কিছু না বলাই শ্রেয়।
তবুও প্রশ্ন তো থেকেই যায়,দূর্গার কল্পিত মূর্তিপূজায় আসলেই কি কোনো কল্যাণ নিহিত আছে বা তার আর্চনা ছেড়ে দেয়ায় কোনো ক্ষতির ঘটনা কি কোথাও ঘটেছে?
চারপাশে যেসব মূর্তিপূজাবিরোধী হিন্দু বা অন্য কেউ আছে কিংবা দূর্গার শত্রু মহিষাসুরের যেসব ভক্তবৃন্দ
আছে,আজ পর্যন্ত দূর্গা কি তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পেরেছে বা পূজা না করায় কোনো
প্রতিশোধ নিয়েছে? বোঝা গেলো,এই পূজার সাথে মঙ্গল কিছু যেমন নেই তেমনি অমঙ্গলেরও কিছুনেই।তাই এই পূজাকে সর্বজনীন বলা কোনো অর্থেই সঠিক নয়।

পরিশেষে অভিধানবিদদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আমরা যখন "সর্বজন" শব্দটা বলি তখন এর অর্থ কিংবা এমনিতেও অভিধানে এর অর্থ হলো সকল।যেমন,সর্বজনশ্রদ্ধেয় ইত্যাদি।কিন্তু এটাকে যখন বিশেষণে রূপ দিয়ে "সর্বজনীন" বলা
হবে,স্বাভাবিকভাবেই এর অর্থ হবে সকলের,সর্বজনস্বীকৃত, সর্বলোকের জন্য"বারোয়ারি"।
তো এখানে সরাসরি হিতের অর্থ আসে কিভাবে? সর্বজনীন কোনো বিষয় বে-হিতও তো হতে পারে।
সুতরাং এটাকে আমভাবে ব্যাপক রাখাই কাম্য।

বি:দ্র:-সর্বজনীনকে সার্বজনীন
লেখা সর্বজনীন ভুল।

প্রথম প্রহর।
দারুল হাদিস, দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম
হাটহাজারি, চট্টগ্রাম।
10 /10 /2016 ঈ.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.